‘এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি
সারারাত দখিনা বাতাসে
আকাশের চাঁদের আলোয়
এক ঘাই হরিণীর ডাক শুনি
কাহারে সে ডাকে
.....................
আজ এই বিস্ময়ের রাতে’
রেমা-কালেঙ্গায় এসে মাথা নষ্ট হবার দশা! সারা দিন যা দেখলাম আর যে শুধাপান করলাম তার ঘোর না কাটতেই এখন রাতে মাথার উপরে একটা বেশ সাইজের চাঁদ উঠে গণ্ডগোলের পরিমাণটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাইনা বিশাল সাইজের গাছ গুলোও বাতাশে তার সাথে ভালোই তাল দিচ্ছে।সুযোগ পেলে দেখি কেউই ছাড়ে না। জানিনা কপালে আরও কি আছে। এই জঙ্গল পার হলেই নাকি ভারতের ত্রিপুরা ।মাথা নষ্ট হয়ে যদি ওদিকে চলেই যাই তাহলে বিষয়টা আসলেই ভালো হয় না। আমার কাছে কোন ভিসা নাই, শুনেছি ভিসা ছাড়া গেলে ডাকাতে ধরে।
সকাল ৭.৩০ এ ঢাকা থেকে এলিওনের পিঠে চড়ে যীশু ভাই, মিশু ভাই, জাহেদুল ভাই আর আমি শুরু করলাম কালেঙ্গার পথে যাত্রা। আর একটা জঙ্গল কাব্য রচনা হবে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পর্যন্ত রাস্তা ভালই ছিল এরপর ১০/১২ কিমি এলিওন নিয়ে যাওয়ার জন্য নিশ্চিত ভাবেই ভীষণ খারাপ রাস্তা। দুপুর ১ টার দিকে কালেঙ্গা এসে দেখি টিলার উপরে সুন্দর ফরেস্টের বাংলোটা আমাদের জন্য একদম প্রস্তুত । নিসর্গের লাসু ভাইয়ের রান্না মুরগীর ঝোল, আলু ভর্তা, ডাল আর ভাজি দিয়ে ভালো একটা দুপুরের খানা মেরে দিলাম সবাই। আশে পাশে একটু ঘুরে চা চু খেয়ে বিকেলে বাংলোতে ফিরে রাতের প্ল্যান হোল। বরাবরের মতো নাইট সাফারি হবে। আদমপুর জঙ্গলে, গাজীপুর জঙ্গলে রাতের ট্র্যাকিং অনেকবারই হয়েছে। রাতে জঙ্গলে ঘুরার মজা একদমই অন্যরকম।রাতে জঙ্গলের চেহারাও পুরাই চেঞ্জ। প্রতিমুহূর্তে ডাকাত আর ভুতের ভয়।হাহাহাহা
সন্ধার পরপরই অলৌকিক এক চাঁদ উঠে পড়লো। আমাদের সুক্ষ অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য এর চে বেশি কিছু লাগেনা। এরকম সময় মনে হবে কল্পনার সব ঘটনাই আজ রাতে ঘটবে। উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় বাংলোর সামনের খোলা ঘাস বিছানো মাঠে তাঁবুতে একজন শুয়ে তার জীবনের মানে খুঁজছে। তাঁবুর বাইরের গুলোও প্রকৃতির উদার দানে মুঘধ হয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে। চাঁদের আলো ছাড়া এই জগতের আর কোনও আলো নেই সেখানে। এ এক অসহায় মুহূর্ত যখন আসলে কি করলে ভালো হয় বুঝে উঠা যায় না। কেউ একজন হারমনিকায় হাল্কা ব্লুস সারা জঙ্গলময় ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে। পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষও সেই কাঁচা হাতের ব্লুসে বিমুগ্ধ হয়ে ব্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। সবই সম্ভব কালঙ্গার জঙ্গলে চাঁদনী রাতে। মুরগী পুড়িয়ে খেয়ে রাত ঠিক ১.৩০ এ জঙ্গল ভ্রমনে বের হলাম নিসর্গের রহিমের সাথে। ভালো ছেলে রহিম। আহা সেকি রুপ সেই রাতের জঙ্গলের।বিশাল বিশাল গাছ দেখছিলাম, সাথে পাখি আর প্রানির ডাক শুনছিলাম। শুকনো পাতায় হাঁটলে বেশ শব্দ হয়। চেষ্টা করছিলাম সেটা কম করতে। আমরা বলার মতো কোনও কিছুই দেখিনি কিন্তু রাতের জঙ্গলের নতুন স্বাদ পেয়েছি চাঁদের আলোয়। প্রায় ৩.৩০ ঘণ্টা নানা দিকঘুরে যখন ওয়াচ টাওয়ারে এসে বসলাম তখন রাত ৪.৩০ । যীশু ভাই আর আমি একটা গান না ধরেই পারলাম না
‘ বড় বড় গাছ গুলো সব বুড়ো বলে বাদ দিয়না গো…..’
জানি না তখন শহরের কোনও মানুষও রাতজেগে ঠিক এই গানটাই শুনছে কিনা। আমরা আসলে কিছুই জানিনা। ভালো লাগে তাই ভালবেসে যাই। এ ভাবেই ভালবেসে জীবনের মানে খুঁজতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫২