এখানে ঠিক দুপুরে শুকনো পাতা বিছিয়ে গাছে হেলান দিয়ে বসে কিংবা হ্যামকে ঝুলে কান খাঁড়া করে জঙ্গলের অর্কেস্ট্রা বুঁদ হয়ে শুনে,দুনিয়ার অন্য সব কিছু ভুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো যায়। যারা মোজার্ট শুনে ব্যাকুল তাঁদের বলছি, জীবনে ব্যাকুল হওয়ার আরও অনেক কিছুই আছে। এ এক দারুন মেডিটেশনের, গভীর থেকে আরও গভীরে যাওয়ার আদর্শ স্থান।গভীর মনোযোগী হতে হবে। কোনও শব্দ করা চলবে না। চারদিকে অনেক কিছুই আছে আর অনেক কিছুই ঘটে চলছে, শব্দ পেয়ে অনেক দূরে চলে যাবে সব। এঁদের সবই কিন্তু দেখা যায় না। কল্পনা শক্তি বাড়িয়ে বিশ্বাস করতে হয়।
ফাল্গুনের এ সময় ঝরা পাতায় সয়লাব চারদিক। হাঁটলে মচ মচ একটা শব্দ হতে থাকে। জঙ্গলের ভিতরে টানা হাঁটতে থাকলে একটা দারুন ছন্দ তৈরি করে। বিশেষ করে একা হাঁটলে সেটা অনেক ভালো ধরা যায়। দুপুরে এলো মেলো হাঁটতে হাঁটতে হটাত আকাশ থেকে পাতা খসে মাটিতে পড়ার দৃশ্য দেখে থমকে যেতেই হয়। ঋতু গুলোর রুক্ষ থেকে রোমান্টিক যে আলাদা আলাদা চেহারা আছে সেটা আদমপুর ফরেস্টে খুবই স্পষ্ট। এলাকায় দেহ প্রবেশ মাত্রই অনুভূতেতে পরিবর্তনের সুস্পষ্ট টোকার শব্দ টাক টাক করে জানান দ্যায়।
বাংলাদেশের অনেক ফরেস্টের সঙ্গেই আদমপুরের স্বাদ পুরো মেলেনা। বেশি পছন্দের জঙ্গল এবং পছন্দের জায়গা হওয়ায় অনেক সময় অনেক বেশি বাড়িয়ে বলে আরাম পাই। বাংলাদেশের অন্যান্য রেইন ফরেস্টের সঙ্গে এটার গঠনগত তেমন হয়ত পার্থক্য নেই। চরিত্রগত অমিলও হয়ত কম !!! অন্য রেইন ফরেস্টের মতো একই ধরনের গাছ, ঝোপ,লতা, ফুল এবং সেগুলোর বেড়ে উঠাও প্রায় একই রকম। রেইন ফরেস্টের গাছ গুলো অনেক একহারা এবং বিশাল হয়। তবে আদমপুরের গাছ গুলোর তুলনা শুধুই আদমপুর। আহ বড় বড় সুন্দর সবগাছ তারচেও বড় নিস্তব্ধতা নিয়ে ফাল্গুন হাওায় দুলছে!এখানকার মধ্য দুপুরের গাছ দুলানো হাওয়ারও কোনও তুলনা নাই। অনেক মানুষের দাপাদাপি জায়গাটাতে এসে পৌঁছেনি এখনো, তাই ভীষণ চুপচাপ। আর এ জন্যই এটা আলাদা। অনন্য ! দারুন !
টিলার উপরে সুন্দর এই বন বিভাগের বাংলোয় সকাল ১১.৩০ এসে নেমেছিলাম আমরা ৫ জন।টিমের প্রত্যেকেই দুর্দান্ত প্রকৃতি প্রেমি মানুষ, মজা কখন ফোঁটায় ফোঁটায় উপভোগ করতে হয় আর কখন ঢক ঢক করে সেটা খুব ভালো জানে। একদমই জনমানব শুন্য, ভয়ংকর নিস্তব্ধ একটা স্থান।ছোটবেলায় জঙ্গল নিয়ে গল্প পড়া, সিনেমা দেখা কল্পনার সঙ্গে মিলে যায় । কল্পনার সুনীল-সত্যজিতরা এসে দাড়ায় সামনে। টিলার নিচে বাংলোর কেয়ারটেকার হাবিব ভায়ের বাসা থেকে দুপুরে দুর্দান্ত সব খাবার খেয়ে আমরা পরবর্তী প্ল্যান নিয়ে কথা বলছিলাম বাংলোর বারান্দার সোফায় বসে। আসলে প্ল্যানের ফাঁকে দারুন একটা আড্ডাই হয়ে গিয়েছিলো।
প্লানতো ম্যালা। গভীর জঙ্গলে ক্যাম্প করা হবে, পরিকল্পিত ট্র্যাকিং হবে, এলোমেলো ট্র্যাকিংও হবে; দিনে হবে,মাঝ রাতে হবে, খাওয়া হবে,পানীয় হবে সবশেষে আবার একদিন আসব বলে আদমপুর ছেড়ে ঢাকায় ফিরে যাওয়াও হবে। এর মাঝে একটা দেশী ভাল্লুকের সাক্ষাৎ হলে তো কথাই নাই!আপাতত দুর্দান্ত হামকটাতে ঘণ্টা তিনেক ঝুলে চোখ বন্ধ করে দুলতে দুলতে দেখি জীবনের নতুন কোনও মানে পাওয়া যায় কিনা। দুরে কয়েকটা ‘জায়ান্ট স্কইরেলস’ দৌড়া দৌড়ী করছে, চোখ বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না।
নোট: ফেসবুক নোট থেকে
ছবি কৃতিত্ব ঃ যীশু, মিশু, দেবী, রকি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৯