‘যদি আমাকে শরিয়ত অনুমতি দিত তাহলে আমি খসরুকে আমার সাথে একই কবরে সমাহিত করতে বলতাম’।‘ কেউ যদি আমার রউজা (কবর) জিয়ারত করতে আসে, তাহলে সে যেন প্রথমে আমীর খসরুর রাউজা আগে জিয়ারত করে’। এ কথা গুলো ভক্ত হযরতআমীরখসরু ( রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তার গুরু হযরত নিযামউদ্দিন আউলিয়া।এমনই আশেক ছিলেন হযরত আমীর খোসরু ( রাঃ) তার গুরুর প্রতি। গুরু ভক্তি এবং সাধনার কালোত্তীর্ণ কিংবদিন্তি নিদর্শন। ভারতীয় গুরু ভজনকে আরেক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান হযরত আমীর খাসরু ( রাঃ) । স্রষ্টা প্রেম মাসগুল হয়ে গুরু বন্দনা তার সৃষ্টির এক বড় প্রেরনা। এতটা প্রতিভাবান আসেক আর দুনিয়াতে আসেনি।আমীর খাসরুর হাতে তুর্কি পারশ্য সঙ্গীত ধারার সঙ্গে ভারতীয় ধারার মিলনে নতুন এক অমৃত সুধা বর্ষণ হয়ে ভারত তথা বিশ্ব সঙ্গীতকে উর্বর করে যায় । নানা বাদ্য যন্ত্র তার হাতে নতুন প্রান পেয়েছে, নতুন রাগ রাগিণী সৃষ্টি হয়েছে। খোদা আর তার রাসুল প্রেমে মশগুল হয়ে কতো শত হাজার সায়ের তিনি রচনা করেছে তার আর হয়তো আজ সব হিসাবও নাই। অন্তরে কতটা প্রেম রস আর কতোটা ছন্দ থাকেলে এমন কবিতা রচনা করা যায় তা এক বিস্ময় !! খোদা আর তার রাসুলের প্রতি প্রেম কতো হাজারো দৃষ্টি ভঙ্গিতে, কতো শত ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপনা করা যায় হযরতআমীরখাসরু ( রাঃ)এরপ্রতিটিকবিতাতার বিস্ময়কর উদহরন। সে আধ্যাত্মিক প্রেম কবিতার মায়া জালে ঘুরতে ঘুরতে কখনো মানবিক প্রেমেও বিলিন হয়ে একাকার হয়ে গেছে। কবিতায় সুর ছুঁইয়ে তৈরি করেছেন আর এক মায়ার জগত নাম তার কাওয়ালী। ভীষণ সতন্ত্র এবং প্রভাবক একটি ধারা। পুরো ভারতবর্ষ মজে আছে তার পরবর্তী পরিবর্তিত ছোঁয়ায়। দিল্লী তে যে কাওয়ালীর বেড়ে উঠা সুদুর বাংলাতেও তার পথ চলা দেখা যায়। কিছু উৎসাহী শ্রোতার সঙ্গীত সুধা মেটানোর জন্য কাওয়ালী গান ফার্সি উর্দু ভাষা ছেড়ে আজ বাংলায়ও শোনা যায়। শ্রোতাদের এইসুধা ছড়িয়ে দিচ্ছেন যারা তাদেরই একজন কাদের কাওয়াল।
কাদের কাওয়ালের গান বাল্যকাল অনেক শুনেছি। শুনেছি বলতে, কখনই ক্যাসেট কিনে শোনা হয়নি কিন্তু রাস্তা ঘাটে অনেক শুনা যেত আগে। বাসস্ট্যান্ডের হোটেল কিংবা সিনামা হলের পাশের পানের দোকানে প্রচুর বাজত। গানগুলো কেমন যেন লাগত। ভাঙ্গা এবং কিছুটা ফ্যাস ফ্যাসে কণ্ঠ চড়া গলায় যা গাইত ছোটবেলায় সেটা হয়তো খুব একটা ভালো লাগত না কিন্তু ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করত, হয়তো এই বাতিক্রমি গায়কীর জন্য। পথ ঘাট থেকে তার গান গুলো হারিয়ে গেলো। হয়তো হিন্দি গানের দাপটে কিংবা অন্য কোন কারনে।ধীরে ধীরে গান গুলো হারিয়ে গেলো সচেতন মন থেকেও। ইউটিউব মহাশয়ের কল্যাণে বুঝলাম কিছুই হারিয়ে যায় না।কোন একজন যত্ন করে গান গুলো আপলোড করেছে আর আমাদের মতো ইউটিউব অভিযাত্রীরা সেটা খুঁজে বের করেছে। হটাত অনেকদিন পর শুনে পুরনো দিনের রাস্তায় ঘোরা ঘুরির কথা মনেপড়ে গেলো। এই গায়ক সম্বন্ধে বলতে গেলে কিছুই জানি না। নেটে অনেক ঘুরেও তেমন কিছুই পেলাম না। তার একটা গানের লিঙ্ক দিলাম। হয়তো তাকে নিয়ে কেউ একদিন একটা বিস্তর লিখা লিখবে এবং আমরা অনেক অজানা, মজার কিছু ইতিহাস জানবো।
https://www.youtube.com/watch?v=c_RIvtlFI9Y
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৬