somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভবঘুরে এলোমেলো চিন্তায় মুন্সিগঞ্জের এক লোক কাহিনি

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেন বংশের রাজারা তাদের প্রবল প্রতাপের সঙ্গে চরম আতঙ্ক নিয়ে রাত দিন পার করছেন তখন। ভারতবর্ষে তুর্কি যোদ্ধারা ঢুকে পড়েছে এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ তুর্কিদের যতই যবন বলে তাচ্ছিল্য করুকনা কেন একটা জায়গায় সবাইকে একমত হতেই হবে যে তারা ছিল ভীষণ সাহসী যোদ্ধা, দুর্ধর্ষ বীর । ওদের সঙ্গে কলিজা ছিলনা ছিল শুধু নিজ দেশের ক্ষুধা তৃষ্ণায় জর্জরিত জীবন যুদ্ধের কঠিন ইতিহাস আর শীর্ণ শরীরে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা।বখতিয়ার খলজির সামনে এগিয়ে যাওয়া, বাংলা জয় করা ছাড়া অন্যকোন কোন উপায় কি আর ছিল? হয় মরো নয়ত মারো।শক্তি দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হবে তো।টিকে থাকার চিন্তাই তো হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে জীবন যুদ্ধে এই মুল্লুকে আসার প্রেরনা দিয়েছে।সেই চরম আতঙ্ক নিয়েই লক্ষন সেন বাংলার ইজ্জতের নাককেটে কাপুরুষের মতো নদিয়া থেকে পূর্ববাংলায় পালিয়ে কোনমতে জান বাঁচিয়ে প্রমান করেছেন মানুষ আসলে নিজেকেই বেশি ভালবাসে। পূর্ববঙ্গেও যবন আতঙ্ক তখন ভয়াবহ। এমনই কোন এক যবন আক্রমন আতঙ্কের যুগে আদম শাহ্‌ নামে এক ধর্মপ্রচারক বিক্রমপুরে আসে ধর্ম প্রচারে ।আতঙ্কে তখন কে ধর্ম প্রচারক আর কে আফগান/তুর্কি ডাকাত তার ভেদাভেদ করার সুযোগই থাকেনি। কিংবা হয়তো সেই ধর্মপ্রচারকও যুদ্ধের সকল প্রস্তুতি নিয়েই শান্তির বানী প্রচারে এসেছিলেন!কেউ কাউকে বিশ্বাসই তো করতে পারছেনা।কাজেই যুদ্ধ অনিবার্য।আর তাই আদম শাহ্‌র সঙ্গে হিন্দু কোন এক রাজার যুদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। হিন্দু রাজা যুদ্ধে যাবার আগে তার পরিবারবর্গ কে বাড়ির চত্বরে এক বিশাল আগুন জ্বালাতে বললেন। একটা পায়রা নিজের কোমরে বেঁধে সবাইকে বললেন ‘যুদ্ধে যাবার পর যদি পায়রাটা বন্ধন মুক্ত হয়ে উড়ে তোমাদের কাছে আসে তাহলে বুঝেনিও আমি আর বেঁচে নেই, যবনদের হাতে ধরা পরার চে তোমারা সবাই আগুনে আত্মহুতি দিও’। নাটকীয় ভাবে যুদ্ধে হিন্দু রাজারই জয় হয় কিন্তু পায়রাটা কিভাবে যেন বন্ধন মুক্ত হয়ে চলে যায় পরিবারের কাছে । তারপর যা হবার তাই হোল। রাজা বাড়িতে এসে পরিবারের শোকে নিজেও যা করার তাই করলেন। আদম শাহ মসজিদটি এখনও টিকে থেকে কি এই কাহিনিকেই সমর্থন করে যাচ্ছে? কতো সুন্দর একটা ফিকশন ঢাকা থেকে খুব সামান্য দূর মুনশিগঞ্জে লুকিয়ে আছে। কয়জনই বা এই কাহিনী জানে। আমিও জানতাম না যদি বিখ্যাত সেন বংশের কোন এক উত্তরসুরি যিশু সেন সেটা না বলতো।

মুনশিগঞ্জ ঢুকলেই পুরনো একটা গন্ধ ভেসে আসে। মনে হয় হুট করে ৪/৫ শ বছর আগের কোন এক শহরে এসে ঘুরে বেরাচ্ছি। আর কারও এমন হয়কিনা জানিনা কিন্তু আমার হয়। বারবার এসেছি এবং বারবারই এমনই অনুভূতি হয়েছে। মুনশিগঞ্জে আসলে প্রথমেই মনে হয় বজ্রযোগিনীর অতিশ দিপঙ্করের কথা। ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়ে জেনেছি তিনি অনেক জ্ঞানী মানুষ ছিলেন । আসলে কতো বড় জ্ঞানী ছিলেন সেটা বুঝতে বয়সে অনেক বড় হতে হয়েছে আর কিছুটা পড়াশোনাও করতে হয়েছে। তার একটা ছবিও দেয়া ছিল বইয়ে । দেখে গৌতম বুদ্ধের মতো মনে হতো। আর দুইজন লোকের কথা অনেক পড়েছি বইয়ে, একজন হচ্ছেন লক্ষন সেন আরএকজন বল্লাল সেন। বাংলার ইতিহাসে এই দুইজন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তখন সেটাও বুঝিনি কিন্তু এখন বুঝি। এখন এটাও বুঝি মুনশিগঞ্জও ঐতিহাসিক ভাবে কি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা থেকে মুনশিগঞ্জ খুবই কাছে তারও কাছে আরশি নগর। সে নগরে এক পরশি বসত করে,আমি একদিননা দেখিলাম তারে।শুনেছি সে পড়সি দেখতে বিশ্বাসী মন লাগে আর লাগে সাধনা। আমার কোনটাই নেই। আমার মনও সবসময় ‘বিশ্বাস’কে মিথ্যা আর কপটতার আশ্রয় কেন্দ্র বলে বিশ্বাস করতে চায়। মন যে আসলে কি চায়!
'যারে খুঁজি তারে পাইনা
চাইনা যারে তারে পাই,
যে জন ঘুরে আমার পাশে
তারে আমার দরকার নাই’
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×