[কোরআন যেরূপ অলৌকিক এবং অসীম এক জ্ঞান ভান্ডার থেকে আগত হয়েছে তদ্রুপ হাদীসও সেই অলৌকিক এবং অসীম জ্ঞান ভান্ডারের সাথে সংযুক্ত। সুতরাং একে আয়ত্ত কিংবা ব্যাখ্যা করতে হলেও অলৌকিক এবং অসীমের জ্ঞান অর্জন করতে হবে নচেৎ ভুল ভুল ব্যাখ্যা আর হযবরলে কোরআনের মতো হাদীসও আক্রান্ত হবে যা আমরা বর্তমানে দেখছি]
ধারাবাহিকটির ১ম পর্বে আমরা আজ মুসলিম শরীফের ৭৪৬৩ (২৯৭৯) নং এবং তিরমিযী শরীফের ২৩৫১ নং হাদীস দুটো নিয়ে আলোচনা করব। হাদীস দুটো হল-
”মুহাজিরদের দরিদ্রশ্রেণীর লোকেরা ধনশালীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতে প্রবেশ করবে” [হাদীস-৭৪৬৩ (২৯৭৯), শাহি মুসলিম (ইংরেজি সংস্করণ), ৭ম খন্ড, দারুসসালাম, সৌদি আরব]
”মুহাজিরদের দরিদ্রশ্রেণীর লোকেরা ধনশালীদের চেয়ে পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে”[হাদীস-২৩৫১, জামি আত-তিরমিজি (ইংরেজি সংস্করণ), ৪র্থ খন্ড, দারুসসালাম, সৌদি আরব]
নিরীশ্বরবাদীদের অভিযোগ মোল্লারা হাদীসটি প্রচার করে গরীব ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আরো গরীব বানানো আর ধনী ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অর্থহীন করে নিজেরা বিত্তশালী হতে। নিরীশ্বরবাদী বলি আর মোল্লা বলি আসলে কেউই হাদীসটির অন্তর্নিহিত ভাব বুঝেনি। এই না বুঝার কারণেই নিরীশ্বরবাদী আর মোল্লারা একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেই আছে! এবং সেটা মারামারি-খুনোখুনি পর্যন্ত গড়িয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে এদের উভয়ের বোধীর উন্মেষ প্রার্থনা করছি।
ইসলামিক মতবাদ তথা ধর্মে কি ধনী-দরিদ্রের কোন ব্যবধান আছে? না থাকলে কেন আবার বলা হল দরিদ্রশ্রেণীর লোকেরা ধনশালীদের চেয়ে পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে? ধনীর অপরাধটা কী? দরিদ্রেরই বা কী এমন আলাদিনের যাদুর চেরাগ আছে যে সে ধনীর পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে? দরিদ্র হলে কি তার জন্য সাত খুন মাফ? ধর্মের কোন বিধিবিধান কি দরিদ্রের জন্য ছাড় দেয়া হয়েছে? অনেকে ’হজ্বের’ কথা বরতে পারেন। না জনাব, হজ্ব সামর্থ্যবানদের (কোরআন ৩:৯৭) জন্য আবশ্যিক, ধনীদের জন্য নয়। সামর্থ্যবান মানে হল ঈমানে-আমলে পরিপূর্ণ। ভুল ব্যাখ্যার কারণে এখন পয়সাওয়ালা দেহ প্রদর্শনকারী নায়িকারাও হজ্বে যায়!
হাদীস ঠিকই আছে। ভুল হচ্ছে আমাদের বোধগম্যতার। দরিদ্র, ধনী, চল্লিশ বছর, পাঁচশত বছর, ক্বিয়ামত আর জান্নাত এ রূপক শব্দগুলোর ব্যাখ্যা অবহিত হলেই বুঝা যাবে কেন দরিদ্রশ্রেণীর লোকেরা ধনশালীদের চেয়ে পাঁচশত বছর কিংবা চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি সম্পূর্ণ দেহতত্ত্ব বিষয়ক। এখানে দরিদ্র বলতে সমাজের নিম্নবিত্তদের যেমন বুঝোয়নি তেমনি জান্নাত বলতেও কোন হুর-পরীদের বালাখানা বুঝানো হয়নি। চল্লিশ বছর কোরআনে পাবেন কিন্তু পাঁচশত বছর পাবেন না। পাবেন হাজার বছর কিংবা মাস। কথা হল কেন শুধু চল্লিশ বছর কিংবা পাঁচশত বছর বলা হল, এটা তো বিশ বছর বা একশত বছরও হতে পারত। না পাঠক, এখানে হিসেব করেই সবকিছু বলা হয়েছে। আরো খেয়াল করার বিষয় হল যেখানে চল্লিশ বছর বলা হয়েছে সেখানে ক্বিয়ামতের কথা আছে কিন্তু যেখানে পাঁচশত বছর বলা হয়েছে সেখানে নেই। কারণ আছে। আর এসব জানতে হলে আপনাকে অধ্যাত্মবাদে আসতে হবে। নচেৎ মৌনতা অবলম্বনই শ্রেয়।