মেঘনা পাড়ের মসজিদের ইমাম সাহেব বলেই চলেছেন আর শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন- ’পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর সমভূমি মাত্র এক ভাগ। সুতরাং মেঘনায় নেমে গেলে আপনি বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পৌঁছে যাবেন এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এবার হাত তুলুন কে কে মেঘনায় ঝাঁপ দেবেন।’
শ্রোতারা সবাই হাত তুললেন। ইমাম সাহেব খুশিতে গদগদ। তিনি ভেবেছিলেন হয়ত দু’একজন হাত তুলবেন।
দিন-তারিখ অনুসারে সবাই মেঘনা পাড়ে এসে হাজির। কয়েকজনকে একটু চিন্তিত মনে হচ্ছিল। ইমাম সাহেব অভয় দিয়ে বললেন, ’কোন টেনশন নেবেন না। উপরে আল্লাহ আছেন। বিপদে পড়লে উনাকে ডাকবেন।’
বিসমিল্লাহ বলে ইমাম সাহেবের শ্রোতারা সবাই মেঘনায় ঝাঁপ দিলেন। সবার মনে আশা আর স্বপ্ন তারা নায়াগ্রা জলপ্রপাতে যাচ্ছে। কিন্তু না, শ্রোতারা সবাই মেঘনার ভয়াল স্রোতে তলিয়ে গেল। তাদেরকে শুধু স্বপ্ন দেখানো হয়েছে যে কোন ভাবে মেঘনায় নামতে পারলেই হল, নায়াগ্রা জলপ্রপাত নিশ্চিত। তাদেরকে বলে দেয়া হয়নি কীভাবে, কোন পথে গেলে কত সহজে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পৌঁছা যায়। কীভাবেই বা বলে দেবে যেখানে স্বয়ং ইমাম সাহেবও কখনো নায়াগ্রা জলপ্রপাতে যাননি। তারা আল্লাহকে ডেকেছিল আর আল্লাহকে তো সবাই ডাকে কিন্তু সাড়া কি সবাই পায়?
পৃথিবীতে এরকম হাজার হাজার ইমাম/পুরোহিত/ভান্তে/পাদ্রী নামের অন্ধ বের হয়েছে যারা প্রতিনিয়ত মসজিদে/মন্দিরে/প্যাগোডায়/গির্জায় অহরহ প্রচার চালাচ্ছে এই এই আমল/পূজো/চীবর/প্রার্থনা করলে জান্নাত/স্বর্গ/নির্বাণ/প্যারাডাইজ নিশ্চিত। আর যায় কোথায়। সহজ-সরল মানুষগুলো নেমে পড়ে ইবাদত/আরাধনা নামের কঠিন সাধনায়। কিন্তু তাদের শেখানো হয় না যে শুধু আন্দাজে সাধনা করলেই তো হবে না। সবকিছুর একটা রূপরেখা আছে। জীবনভর ইবাদত/আরাধনা করলাম কিন্তু ঐ পারে বলা হল তোমার কোন ইবাদত/আরাধনা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তুমি ইবাদত/আরাধনা করেছ শুধু ছোওয়াবের জন্য আর জান্নাতের আশায় এবং সাথে সাথে এই এই অন্যায় গুলোও করেছ তাই তোমার জন্য আজ দুঃখ। তখন উপায়? জান্নাত/স্বর্গ দূরে থাক নরকের অনলই তখন হবে শেষ ঠিকানা। ইমাম/পুরোহিত/ভান্তে/পাদ্রী এরা সবাই জান্নাত/স্বর্গ/নির্বাণ/প্যারাডাইজ সম্পর্কে শুধু পড়েছে কিংবা শুনেছে কেউ কিন্তু সেখানে যায়নি বা দেখেনি। এমনকি জানেও না যে জান্নাত/স্বর্গ/নির্বাণ/প্যারাডাইজ আসলে কী। সবাই শুধু সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেই চলেছে কিন্তু তাঁর জবাবের আশায় কেউ নেই।
পুনশ্চঃ বাংলাদেশের মসজিদ গুলোতে লেফট-রাইট মতবাদ তথা সালাফি/ওয়াহাবি ইত্যাদি মতবাদের হাওয়া লেগেছে। তাই আমি কোন ওলি-আল্লাহর মাজার সংলগ্ন মসজিদে জুমার নামায পড়তে চেষ্টা করি। এখন দেখছি সেখানকার মসজিদগুলোও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কিত ওয়াজের আখড়া হয়ে গেছে। পাশে যে একজন ওলি-আল্লাহ শুয়ে আছেন এবং তিনি কেন ও কীভাবে আজ এত মর্যাদাশীল এবং কেন আল্লাহ ওনাকে পাঠিয়েছেন সেই সম্পর্কিত কোন আলোচনা নেই। যে দেশে গুণীর সম্মান নেই সে দেশে গুণীরা জন্মায় না, জন্মায় অন্ধ আর বাটপাররা।