আমরা অনেকেই হয়তো চাই পেছনের দুঃসহ স্মৃতিগুলিকে ভুলে যেতে। চাইলেও তা আমরা পারি না। কিন্তু মানুষ অনেক সময় তার পেছনের প্রিয় মুহূর্তগুলো, স্মৃতিগুলো ভুলে যায় ! যে রোগের কারনে এটা হয়ে থাকে তার নাম এমনেশিয়া ! এমনেশিয়া হল এমন একটি রোগ যা হলে আপনি আপনার পেছনের সমস্ত স্মৃতি ভুলে যাবেন আর না হলে নতুন করে কোন স্মৃতি আপনার তৈরি হবে না !
কেন হয় এই এমনেশিয়া?
সাধারণত তিনটি কারনে এমনেশিয়া হতে পারে।
০১।
মাথায় গুরুতর আঘাত থেকে।
০২।
মানসিক আঘাত থেকে।
০৩।
বড় ধরণের কোন শারীরিক আঘাত থেকে।
এছাড়াও ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি এবং অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনেও মাঝে মাঝে এমনেশিয়া হতে পারে।
ধরনঃ
রোগীদের সাধারণত দুই ধরণের এমনেশিয়া দেখা যায়। রিট্রোগ্রেড এমনেশিয়া ও এন্টিরোগ্রেড এমনেশিয়া। রিট্রোগ্রেড এমনেশিয়া হলে মানুষ তার পেছনের সব স্মৃতি ভুলে যায়। আর এন্টিরোগ্রেড এমনেশিয়া হলে মানুষ তার পেছনের স্মৃতি মনে করতে পারে, কিন্তু নতুন করে কিছু মনে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। রিট্রোগ্রেড এমনেশিয়া ও এন্টিরোগ্রেড এমনেশিয়া আসলে একে অপরের বিপরীত।
এছাড়া আরও কয়েক ধরনের এমনেশিয়া হতে পারে। যেমনঃ
পোষ্ট ট্রামাটিক এমনেশিয়াঃ এটা সাধারনত মাথায় গুরুতর আঘাত থেকে হতে পারে। এটা সাধারণত অস্থায়ী হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী কিংবা মিশ্রও হতে পারে।
ডিসোসিয়েটিভ এমনেশিয়াঃ মাথায় বা শরীরের অন্য কোথাও আঘাত দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে। একে অরগানিক এমনেশিয়াও বলা হয়ে থাকে।
ল্যাকুনার এমনেশিয়াঃ ল্যাকুনার এমনেশিয়া সাধারণ কোন একটি নির্দিষ্ট ইভেন্টের উপর হয়ে থাকে। এটা হলে রোগী কোন একটি নির্দিষ্ট জিনিস/স্মৃতি ভুলে যায়।
চাইল্ডহুড এমনেশিয়াঃ অনেক সময় শৈশবের অনেক কিছুই মনে থাকে না, কিংবা চাইলেও মনে করতে পারে না এ ধরনেই রোগীরা। শৈশবে মস্তিষ্কের উন্নয়নে বাঁধা পেলে এমনটা হতে পারে।
ট্রানজিয়েন্ট গ্লোবাল এমনেশিয়াঃ মেডিকেল সায়েন্সে এই ধরনের এমনেশিয়া বহুল প্রচলিত। এই ধরনের এমনেশিয়ায় আক্রান্ত রোগী তার কয়েক মিনিট আগের স্মৃতিও ভুলে যায় !
সোর্স এমনেশিয়াঃ এ ধরনের এমনেশিয়ার রোগী আমরা কম বেশি সকলেই ! আগে কোন একটি বিষয়ে জেনেছেন, কিন্তু প্র্যাক্টিকালি যখন করতে যাবেন তখন অনেক সময়ই সেই বিষয়ে আর কিছু মনে করতে পারছেন না। এমনটি অনেক সময়ই আমাদের হয়ে থাকে। একেই সোর্স এমনেশিয়া বলে।
প্রোসোপ্যামনেশিয়াঃ এ ধরনের রোগ হলে রোগী তার সামনের মানুষটিকে চিনতে বা মনে করতে অসমর্থ হয় !
চিকিৎসাঃ
এমনেশিয়া রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। সাধারণত এটা আপনা আপনিই ভালো হয়ে যায়। তবে ডাক্তাররা কিছু থেরাপিও ট্রাই করে থাকেন। যেমন রোগীর সাথে লম্বা সময় ধরে কথোপকথন চালিয়ে গেলে রোগী তার কতোটুকু মনে রাখতে পারেন সেটা নির্ণয় করা হয়। পুরনো ক্যালেন্ডার, ছবি এগুলি অনেক সময় স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। কখনো পুরো স্মৃতি ফিরে আসে কখনোবা খানিকটা।
তথ্য সুত্রঃ ইন্টারনেট