৫৩ ঘন্টার মিশন ! কিছু শীতার্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে আমরা সামহোয়্যারইন ব্লগের ব্লগাররা নেমেছিলাম মিশনে ! গত ৯ জানুয়ারি রাত ৯ টার সময় শীত বস্ত্র ভর্তি একটি ট্রাকে আমরা ভলান্টিয়াররা মিরপুর থেকে যাত্রা শুরু করি। যমুনা সেতু পাড় হবার পর বুঝতে শুরু করি শীত কাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি !
ঘন কুয়াশাতে জ্যাকেট, মাফলার ভিজে চুপচুপ ! সাথে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। রাত দেড়টার দিকে একটা খাবার হোটেলের সামনে গাড়ি থামিয়ে খেতে গিয়ে দেখি শুধু পরোটা আর ডিম আছে। তাই দিয়ে রাতের খাবার শুরু করি। হাত ধুতে গিয়ে মনে হচ্ছিল কলের পানি বুঝি খুব গরম ! খাবার যখন মাঝ পথে তখন হোটেলের ময়দাই শেষ হয়ে যায় ! শেষে কি আর করা? অর্ধ ভোজন শেষে চা খেয়ে আবার গাড়িতে উঠে পরি।
মনে হচ্ছিল সাইবেরিয়া যাবার আগে প্র্যাকটিস সেশনে আছি ! ভোর চারটার দিকে আবার একটি হোটেলের সামনে গাড়ি থামিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নেই। এরপর আবার চলতে শুরু করি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর অনুভব করতে লাগলাম আমার হার্ট পাম্প করছে খুব ধীরে ধীরে। মনে হচ্ছিল এখনই বুঝি বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে দেখি চারিদিকে ফর্সা হতে শুরু করেছে। আরও ঘন্টাখানেক পর আমাদের গাড়ি রংপুর এসে পৌঁছে। সেখানে নেমে ফ্রেশ হয়ে সাথে দুই রংপুরের ব্লগার ব্যাক পকেটের চিঠি ও আড়িয়াল খাঁ কে সঙ্গে করে আবার যাত্রা শুরু করি নীলফামারীর উদ্দেশ্যে। বেলা পৌনে একটার সময় আমরা নীলফামারীর গোড়গ্রামে এসে পৌঁছাই। সেখানে আমাদের রিসিভ করেন ব্লগার পলাশ ভাইয়ের ছোট ভাই পল্লব ভাই। ট্রাক থেকে বস্তা নামিয়ে আমরা যাই পলাশ ভাইদের বাড়িতে। সেখানে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে যাই ধোবাডাঙ্গা হাই স্কুল মাঠে। বিতরণ করতে করতে প্রায় রাত হয়ে আসে।, এরপর রাতে আমরা আবার পলাশ ভাইদের বাড়িতে ফিরে আসি। সকালে পলাশ ভাইদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যাই ব্লগার আমিনুর ভাইদের বাড়িতে। সেখানে সকালের নাস্তা করে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই দুপুর পৌনে একটায়। রংপুরে এসে ব্লগার আড়িয়াল খাঁ ও ব্যাক পকেটের চিঠি নেমে যায়। আর বগুরা এসে ব্লগার মাগুর ভাইও নেমে যায়। যমুনা সেতু পাড় হয়ে পড়ি বিশাল জ্যামে। এর সাথে যোগ হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আমরা নেমে এরপর কিছুক্ষণ হাঁটি, তারপর জ্যাম ছেঁড়ে গেলে আবার ট্রাকে উঠি। রাত ২ টার দিকে বাসার সামনে এসে পৌঁছাই। সব মিলিয়ে এক এডভ্যাঞ্চারাস ৫৩ ঘন্টা !
এতো কষ্টের পরও ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমাদের কষ্টের বিনিময়ে আমরা কিছু অসহায় মানুষের মুখে উষ্ণতার হাসি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি।
ট্রাক থেকে স্কুল প্রাঙ্গনে শীতের কাপড় নামানো হচ্ছে।
ট্রাক থেকে কাপড়ের বস্তা নামাচ্ছে ব্লগার স্বপ্নবাজ অভি।
একটু উষ্ণতার আশায় !
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার কাণ্ডারি অথর্ব।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা ও পল্লব ভাই।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার স্নিগ্ধ শোভন ও ব্লগার আমিনুর রহমান জুনিয়র।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার দুঃখিত।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার জেরিফ।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন সজিব ভাই।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার আড়িয়াল খাঁ।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার মাগুর।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার ব্যাক পকেটের চিঠি।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার মৈত্রী।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার স্বপ্নবাজ অভি।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন ব্লগার একজন আরমান।
শীতবস্ত্র বিতরণ করছে নাজমুল হোসেইন সুজন। এই পিচ্চি ছেলেটাকে নিয়ে কিছু বলি। ও সাভার বিপিএটিসি স্কুল এন্ড কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পরে। এতো শীত আর কষ্টের একটা জার্নি শুধু এই পিচ্চি ছেলেটা মাতিয়ে রেখেছিল। ওর মতো ডেডিকেটেড কিছু ছেলেপেলেই আমাদের ভবিষ্যৎ। পুরো জার্নিতে সবার মধ্যমণি ছিল ও।
উষ্ণতায় হাসি মুখ !
ভালো কাজে বরিশাল-নোয়াখালীও এক !
ফেসবুক ফটো এ্যালবাম