অগ্রণী ব্যাংকে পরিক্ষা দেবার নিমিত্তে দুপুরে জুম্মার নামাজ পড়িয়া লাঞ্চ সারিয়াই বাসা হইতে বাহির হইলাম। ফাল্গুনের জন্য রোদের মাঝে ঠায় দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিয়া করিয়া যখন আষাঢ় শ্রাবণ চলিয়া আসিবার উপক্রম হইলো ঠিক তখন উইনারের দেখা পাইলাম। লাফ দিয়া উঠিয়া পরিলাম। অবাক হইলাম যখন উইনারে একটি সীট পাইলাম বসিবার জন্য ! (কেন বলিলাম যাহারা উইনারে রেগুলার যাতায়ত করিয়া থাকেন তাহারাই ভালো জানিবেন। )
চিল্লালিল্লিতে যখন ঘুম ভাঙ্গিল তখন দেখিলাম সিটি কলেজের সামনে।:-< ক'টা বাজে জানার জন্য পকেটে হাত দিতেই মনে পরিল মোবাইল বাসায় রাখিয়া আসিয়াছি আর হাত ঘড়িটা কিছু দিন আগেই ইন্তেকাল করিয়াছে। অজ্ঞতা এক ডিজুস ছেলেকে সময় জিজ্ঞেস করতেই এমন একটা ভাব ধরিলো যেন পৃথিবীর একমাত্র ঘড়িটিই তার হাতে আছে। ( মনে চাইছিল ঠাটায়া একটা চড় দেই, সময় স্বল্পতার কারণে আর হয়ে ওঠে নি )
যাই হোক জানিতে পারিলাম মাত্র ১৫ মিনিট বাকি আছে ৪ টা বাজিতে। ইডেন কলেজের সামনে বাস থামিতেই লাফ দিয়া পড়িয়া চায়ের দোকানের সামনে গিয়া দাড়াইলাম। মাথা ব্যাথার ঔষুধ (চা-টা) খাইতে থাকিলাম আর পর্যবেক্ষণ করিতে লাগিলাম। সবাই দেখি কাউকে না কাউকে নিয়ে আসিয়াছে। নিজের কিঞ্চিত খারাপ লাগিলো, কিন্তু কিছুই করার নাই। এক লোককে দেখিলাম একটা লেডিস ব্যাগ নিয়া বিরস বদনে বসিয়া রহিয়াছে। সময় স্বল্পতার কারণে তাহাকে খোঁচাইতে না পারিবার দুঃখে কিঞ্চিত ব্যাথিত হইলাম।
যাহা হউক দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষে প্রবেশ করিলাম সেই ইতিহাস বিখ্যাত ইডেন কলেজে। ভেতরে ঢুকিতেই দেখিলাম কিছু মানুষ জড়ো হইয়া কি যেন অবলোকন করিতেছে। ভাবিলাম ইহারা বুঝি সাপ খেলা বা বায়স্কোপ দেখিতেছে। ভাবিলাম যাই আমিও উহাদের সাথে যোগদান করিয়া কিছু বিনোদন লাভ করি। কাছে গিয়া বুঝিতে পারিলাম যে তাহারা আসলে সিট নাম্বার খুঁজিতেছে। ( আমি খুবই হতাশ হইলাম সাপ খেলা/বায়স্কোপ দেখিতে না পাইয়া। সিট নাম্বার তো বাসা থেকেই জানিয়া গিয়াছিলাম। )
যাহা হউক একাডেমিক ভবনের তিন তলায় ৩১৪ নাম্বার রুমের কাছে গিয়া হাজির হইলাম। রুমে ঢুঁকিতেই এন্সার স্ক্রিপ্ট হাতে লইয়া সীট খুঁজিতে লাগিলাম। সিট খোঁজা শেষ হইলে আমি একবার পুরো হলের দিকে চোখ বুলাইলাম। কি দেখিলাম ? ! তাহা আর নাই বা বলি। আচ্ছা পাঠকের মন রক্ষার্থে তাও বলিতেছি। পুরো হলে সব আঙ্কেল আর আন্টিতে ভরপুর। তাহারা সবাই তাহাদের ভাতিজাকে অবলোকন করিতেছে আর আমি আমার আঙ্কেল আন্টিদের। এ এক আনন্দ ঘন মুহূর্ত। দেখা দেখির পর্ব শেষ হইতেই গোল আলু ম্যাডাম প্রশ্ন দিয়া দিল। উত্তর দাগাইতে দাগাইতে চোখ চলিয়া গেল ম্যাডামের এসিস্ট্যান্ট এর দিকে। :#>আসলে উনি কি শিক্ষিকা নাকি ছাত্রী বুঝিতে বুঝিতে আমার এক ঘন্টা সময় ই কাটিয়া গিয়াছিল। :!>:#>
পরিক্ষা যখন চলিতেছে তখন আমার পাশের আঙ্কেল আমার দিকে ট্যারায়া ট্যারায় চাইতেছিল। আমি তাহাকে আনন্দের সহিত দেখাইলাম। কারণ কথায় আছে " গুরুজন সেবিছে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর" কিন্তু কিছুক্ষন পর যখন আমি সেই গুরজনকে জিজ্ঞেস করিলাম সে উল্টো বদনে আমার সহিত পল্টি লইয়া এন্সার সিট ঢাকিয়া রাখিল।
এরপর মনে মনে কইলাম যে আঙ্কেল সাধারণ জ্ঞানে তুমি ভালো হইতে পারো, কারণ আমার জ্ঞান তোমার মতো সাধারণ না, আমার জ্ঞান অতি উচ্চমার্গীয় অসাধারণ। কম্পিউটার, ইংরেজি আর ম্যাথে আমারটা দেখিতে আইসো। এক্কেরে ভালো কইরাই দেইখাইয়া দিবো।
পরিক্ষা শেষ হইলে সেই আপু থুক্কু ম্যাডাম আমার কাছে আসিতে লাগিল। :!>সে আসিবার পূর্বেই তাহার হাতে আমার সিট দিয়া বাহির হইয়া কিছুক্ষন ইডেন কলেজ পর্যবেক্ষণ করিতে লাগিলাম। পর্যবেক্ষণের ফলাফল আর নাই বা বলিলাম।
অনেক যুদ্ধ করিয়া তিনতলা থেকে নিচ তলায় আসিয়া শেষ বারের মতো পিছন ফিরিয়া চাহিয়া একটা মুচকি হাসি দিয়া বাহির হইয়া আসিলাম।
আর এইভাবেই শেষ হইলো আমার ইডেন দর্শন।
উৎসর্গঃ সকল বুঝদার অবুঝ বাংলাদেশীদের।