জাগো গো ভগিনী জাগো। ভাবতে ভালোই লাগে আমাদের ভগিনীরা আজ জেগেছে। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই বাছাই করে দেখার সুযোগ পাচ্ছি আমাদের ভগিনীদের। তারা আমাদের সামনে অর্ধনগ্ন হচ্ছে। কখনও হেটে দেখাচ্ছে, তো কখনও হাসি মুখে নেচে গেয়ে দেখাচ্ছে। শরীরের ভাঁজগুলো যেন স্পষ্টরুপে প্রকাশিত হয়; সেই দিকেও তারা যথেষ্ট যত্নশীল। আমরা দেখছি আমাদের ভগিনীদের শরীরের প্রতিটি অংশ কত নিখুঁত ভাবে, কত সুন্দর করেই না ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। আমরা মুগ্ধ হচ্ছি। কার চেয়ে কে বেশি সুন্দর সেটা নির্ণয় করার অধিকার আমাদেরকে তারা দিয়েছে। রূপের ঝলক দেখাতে এতটুকু কার্পণ্যতা নেই কারও মাঝে।
মহাশয়, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমাদের চারিত্রিক নৈতিকতা ঠিক রাখতে হবে। চোখ দিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে, নির্ণয় করা যাবে কার চেয়ে কার শারীরিক গঠন বেশি আকর্ষণীয় কিন্তু নিজের চরিত্র ঠিক রাখতে হবে। না হয়; ঠিক রাখলাম নিজেদেরকে সংযমী হয়ে কিন্তু সমাজে কতজন মানুষের পক্ষে তার সংযম ধরে রাখা সম্ভব হয়। যার কারণে নৃশংসতার স্বীকার হতে হয় রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করা আমাদের সাধারন সুন্দরী ভগিনীটিদেরকে। যাদের কাছে সৌন্দর্যের প্রধান উপসর্গ হয়ে দাঁড়ায় প্রসাধনী। কোন প্রসাধনী কোম্পানি হয়ত বলছে গায়ের রঙ ফর্সা হওয়াই প্রকৃত সৌন্দর্য, অন্যদিকে আবার কেউ হয়ত বলছে ফ্রেশ থাকা মানেই হলো সুন্দর। সেখানে কাউকে কৃষ্ণকলি বলে অবহেলা করা ঠিক নয়। আর যখন আমাদের ভগিনীরা সেই সব প্রসাধনী গায়ে মেখে সুন্দর হয়ে প্রস্ফুটিত হচ্ছে তখনই শুরু হয় প্রতিযোগিতার পালা। সবাই সুন্দরী হলেও নির্দিষ্ট কাউকে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী হতে হবে।
একটা সময় ছিলো যখন বিয়ের জন্য পাত্র পক্ষ পাত্রী দেখতে গেলে; ভগিনীদের পায়ের নখ থেকে শুরু করে চুলের ঘনত্ব পর্যন্ত যাচাই বাছাই করত। শুধু তাই নয় রান্না বান্না থেকে শুরু করে কাপড় কাঁচার পারদর্শিতা পর্যন্ত যাচাই বাছাই করে নেয়া হতো। অধিকার আদায়ের দাবীর মুখে সেই সব দিন শেষ হয়েছে। আর এখন! অধিকার মানেই হলো বিয়ের জন্য পাত্র পক্ষের সামনে র্যাম্প না করে; বরং জনসন্মুখে অর্ধনগ্ন হয়ে র্যাম্প করা। সেখানে নিজের নানা ধরনের পারদর্শিতার কথা তুলে ধরা। কারণ প্রতিযোগিতায় মুকুট মাথায় দিয়ে সেরা সুন্দরী খেতাব জয় করতে পারলেই ভাগ্যের চাকা খুলে যাবে। উন্মুক্ত হবে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র।
অতীতে একটা সময় ছিলো; যখন দস্যূরা বিভিন্ন বাড়ি বাড়িতে ডাকাতি করে ঘরের সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে দিতো। তারপর হাট বসত। হাটে সেইসব মেয়েদেরকে নগ্ন করে নিলামে উঠানো হতো। তারপর দরদাম করে মিলে গেলে, দাসত্ব বরণ করে নেয়াই ছিলো সেইসব অধিকার বঞ্চিত মেয়েদের জন্য ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। কিন্তু সেই যুগ শেষ হয়েছে অধিকার আদায়ের দাবীর মুখে তীব্র সংগ্রাম করার পর। এখন অবশ্য যুগ বদলেছে। এখন অধিকারের মূল লক্ষ্যই হলো; সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করা ভগিনীদের জন্য নেয়া ভোটিং পদ্ধতি। যার জন্য যত বেশি ভোট সেই জয়ী। তারপর নিজেকে বিলিয়ে দেয়া কর্পোরেট সংস্কৃতিতে। অবশ্য এই ভোটিং পদ্ধতির জন্য আমাদের মোবাইল কোম্পানিগুলো কিছুটা হলেও অর্থ উপার্জনের মুখ দেখছে।
আমার শুধু আফসোস হয়; পতিতালয়ের সম্ভ্রম বিক্রি করে যারা নিজেদের পেট চালায় তাদের নিয়ে। তারাও ভালো খদ্দের পেতে সুন্দর করে সাঁজে, নগ্ন হয়, হাসি ভরা মুখ করে শরীর বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ তাদের উচিত প্রসাধনী গায়ে মেখে সুন্দর হয়ে, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো। তাহলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়। কেউ আর তাদের সমাজের আবর্জনা বলে গালি দেয়ার মতো মূর্খতা প্রদর্শন করতে পারবেনা।
যাই হোক আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চাই। আমরাও আমাদের ভগিনীদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই। কারণ সোনালি পর্দায় আমাদের সুন্দরী ভগিনীরা জলের রাজ্যের জলকন্যা হয়ে জয় করে নেয় অজস্র দর্শকের মন।
হ্যাঁ, আমাদের অবশ্যই আমাদের ভগিনীদের উন্মুক্ত শরীরের দিকে নিখুঁত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে। আমাদের একটি মহামূল্যবান ভোটের জন্য, আমাদের ভগিনীরা তাদের রূপের ঝলক দেখাতে কার্নিভালে যেখানে কার্পণ্যতা করছেনা, সেখানে আমাদের কোন অধিকার নেই ভগিনীদের অধিকার আদায়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবার।
প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ হতে পারে, রাস্তা ঘাটে চলতি ফিরতি মেয়েদেরকে ইশারায় শিশ দিয়ে সুন্দরী বলা অপরাধ হতে পারে, কিন্তু রূপালী পর্দায় ভগিনীদের রূপের ঝলক দেখে ভোট দেয়া মোটেও অপরাধের কিছু নয়।
অতএব, হে আমাদের সুন্দরী ভগিনীরা মনঃকষ্ট নেবার কিছু নেই। আপনাদের অধিকারের প্রতি যথাযথ সন্মান রেখেই আমরা বলতে চাই; লুলামী আমাদের লুলতান্ত্রিক অধিকার।
জাগো গো ভগিনী জাগো...