I am Horus, and I traverse millions of years. - The Egyptian Book of the Dead
যীশুর ৩০০০ বছর আগে বিশ্বাস করা হত মিশরীয় দেবতা হোরাস জন্ম নেন কুমারী মা দেবী আইসিস এর গর্ভে। হোরাসকে আকাশের দেবতা বলা হয়ে থাকে যার ডান চোখ হলো সূর্য আর বাম চোখ চাঁদ। সূর্য অপেক্ষা চাঁদের উজ্জ্বলতা কম হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় হোরাস এবং শেঠের মধ্যাকার দ্বৈরথ অমীমাংসিত থেকে যাওয়াকে। যেখানে শেঠ ছিল মিশরের উচ্চ পর্যায় থেকে এবং হোরাস ছিল নিম্ন পর্যায় থেকে। শেঠের বিরুদ্ধে হোরাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছিল মিশরের জনগণের স্বার্থে যেখানে ঈশ্বর ছিলেন হোরাসের পক্ষে। কথিত আছে যে হোরাসকে ক্রুশে বধ করে হত্যা করা হয় কিন্তু মিশরীয় পুরাণের বিশ্বাস অনুযায়ী হোরাস বেঁচে আছে এবং মিশরের জনগণের কল্যাণে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী; ঈসা (আঃ) এখনও জীবিত আছেন এবং তিনি কেয়ামতের পূর্বে ফিরে আসবেন যে বয়সে তাকে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল ঠিক সেই বয়সেই। তারপর তিনি পুরো পৃথিবী জুড়ে ইসলাম ধর্ম কায়েম করবেন। যদিও ঈসা (আঃ) এর জন্মের বহু আগে থেকেই মিশরের পুরাণে বর্ণিত হোরাসের কাহিনী প্রচলিত ছিল তবু দুটি কাহিনীর মধ্যে রয়েছে এক অভূতপূর্ব মিল।
কিন্তু দুটি কাহিনী যাই হোক না কেন; হোরাস কিংবা ঈসা (আঃ) বেঁচে আছেন হাজার হাজার বছর ধরে এবং তারা আবারও ফিরে আসবেন যুবক অবস্থাতেই; এমনটাই বিশ্বাস করা হয়। কোরআন-হাদিস অনুযায়ী এটাও বিশ্বাস করা হয় যে কেয়ামতের পর পরকালে যে জীবন মানুষ পাবে সেটা হবে অনন্ত কালের জন্য। সেখানে মানুষকে চিরদিন যুবক অবস্থাতেই থাকতে হবে। পৃথিবী থেকে বৃদ্ধ অবস্থাতে মৃত্যু হলেও পরকালে ফিরে পাবে মানুষ অনন্ত যৌবন।
ইসলাম ধর্মমতে; খিজির (আঃ) নাকি আবে হায়াত নামক ঝর্ণার জল পান করে অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি এখনও বেঁচে আছেন এই পৃথিবীতে। ধর্মের সাথে আমি বিজ্ঞানকে মেলাতে না চাইলেও বিজ্ঞানী স্যার আইজেক নিউটন কিন্তু পিছিয়ে থাকেন নি মোটেও। সেই গাছ থেকে আপেল পতিত হবার পর থেকে তিনি বল বিদ্যা আর গতি বিদ্যার উপর যে যুগান্তকারী সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন আর যার জন্য আজকের এই আধুনিক পৃথিবী সেই তার মূল নেশা কিন্তু ছিল অনন্ত জীবন প্রাপ্তির প্রতি আকাংখা। আর সে কারণেই তিনি দিন রাত এক করে দিয়ে আলকেমি নিয়ে গবেষণা করতেন। আর যার ফলশ্রুতিতে তিনি একসময় মানসিকভাবে ভেঙেও গিয়েছিলেন। আবার বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ছিলেন আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে। তিনি দেখিয়ে গেছেন যে মানুষ যদি আলোর বেগে ছুটতে পারে তাহলে নাকি সময়ের পরিবর্তন সম্ভব।
এবার আসুন দেখা যাক; দাজ্জাল সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো পৃথিবীতে ৪০ দিন সে অবস্থান করবে। তার প্রথম একদিন হবে এক বছরের সমান, এরপর একদিন হবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান, বাকী দিন গুলো আমাদের দিনের মতোই হবে। হাদিসে যেহেতু বাকী ৩৭ দিন আমাদের দিনের মত বলা হয়েছে, কিন্তু প্রথম ৩ দিনকে বছর, মাস আর দিনের সমান তুলনা করা হয়েছে, সুতরাং প্রথম ৩ দিনের ব্যাপ্তি বা ডাইমেনশন মূলত পৃথিবীর সময়ের চেয়ে ভিন্ন। কোরআনে আখেরাতের সময় এর যে সকল উল্লেখ আছে, তার মধ্যে আখেরাতের ১ দিনের সমান দুনিয়ার ১০০০ বছর; এই ব্যাপ্তিটাই দাজ্জালের ১ম দিনের ব্যাখ্যা হিসেবে বণর্না করেন অনেক স্কলার। অর্থাৎ, তার ১ম দিন দুনিয়ার হিসেবে ১০০০ বছরের সমান। সুতরাং তার হায়াৎ ১০০০ বছরের চেয়েও বেশি। তবে সে তার হায়াতের শেষ ৩৭ দিন যা আমাদের সময়ের সমান ডাইমেনশনে প্রবেশ না করা পযর্ন্ত আমরা তাকে আমাদের চোখে দেখতে পাবোনা কিংবা চিনতে পারবো না বলে ধরে নেয়া যায়।
তাহলে এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় কি করে হোরাস কিংবা ঈসা (আঃ) এখনও বেঁচে আছেন ঠিক একই বয়স নিয়ে ? তাদের উভয়ের বয়স বাড়ছেওনা কিংবা কমছেওনা। তাহলে কি তাদের উভয়ের ক্ষেত্রে সময়কে থামিয়ে রাখা হয়েছে ? সময়কে থামিয়ে রাখার তাহলে কি কোন বিশেষ উপায় রয়েছে নাকি কোন মেডিসিন দিয়ে তাঁদেরকে জীবিত করে রাখা হয়েছে ? হাদিস অনুযায়ী আমরা জানি যে ঈসা (আঃ) যখন পৃথিবীতে ফিরে আসবেন তখন তার মাথার কেশ মোবারক থেকে যেন মনে হবে বিন্দু বিন্দু পরিমান জল ঝরবে। তাহলে কি তাঁকে ফরমালিন জাতীয় কোন দ্রব্যের মধ্যে দ্রবীভূত করে রাখা হয়েছে যে দেখে মনে হবে সদ্য গোসল করে উঠে এসেছেন ?
আমি সেই তর্কে যাবো না। এখানে মূল বিষয়টা হলো সময় নিয়ে। কি করে এতকাল ধরে একজন মানুষ একই বয়স নিয়ে বেঁচে আছেন আর কি করেই বা পরকালে মানুষ অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হবে। নাকি সবাইকে তখন আবে হায়াতের ঝর্ণার জল পান করিয়ে নেয়া হবে, নাকি আলকেমির মেডিসিন প্রয়োগ করা হবে ?
এখানেই সময়ের প্রশ্ন আসে। প্রকৃত পক্ষে পৃথিবীর সময় আর পরকালের সময় এক নয়। টাইম ডাইমেনশনের পার্থক্যটা এখানেই। যখনই এই টাইম ডাইমেনশন পরিবর্তিত হয়ে যাবে তখনই সব কিছুর সমাধান সম্ভব।
নর্সের পুরাণ অনুযায়ী রাতের দেবী নট তার ঘোড়া নিয়ে পরিভ্রমণ করে রাতের সময় নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু আমরা জানি চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবী তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে বলেই দিন আর রাত আসে। পূর্ণ হয় সম্পূর্ণ একটা দিনের। এভাবে সপ্তাহ থেকে মাস, তারপর বছর; এভাবে গঠিত হয় মহাকাল। এই চাঁদের উপর নির্ভর করে আরবী মাস গণনা করা হয়, এই সূর্যের উপর নির্ভর করেই ইংরেজীতে আমরা বর্ষ উদযাপন করে থাকি মহা ধুম ধাম করে। সমুদ্রে যে জোয়ার-ভাটা হয় সেটাও এই চাঁদ আর সূর্যের কারণেই হয়ে থাকে। এখন যদি সূর্য আর পৃথিবীর মাঝে চাঁদকে একই সরলরেখায় রেখে তাদের সকল প্রকার ঘূর্ণন চিরদিনের জন্য থামিয়ে দেয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি কোন পর্যায় গিয়ে দাঁড়াবে ?
দেখা যাবে পৃথিবীর এক প্রান্তে যুগের পর যুগ ধরে রাত আর অন্য প্রান্তে মহাকাল ধরে দিন চলে আসছে। সূর্যকে দেবতা ভেবে অনেকেই পূজা করে অনেকেই আবার তার আদরের প্রিয় সোনামণির কপালে চাঁদের টিপ পরিয়ে শঙ্কা মুক্ত হয়। কিন্তু এই মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির অভাব নেই। এখন সব গ্যালাক্সি নিশ্চয় এই চাঁদ আর সূর্যের উপর নির্ভর করে না। কিংবা সব গ্যালাক্সিতে যে এই চাঁদ আর সূর্যই রয়েছে এমনটাও নিশ্চয় নয়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় সেখানে দিন আর রাত কিভাবে হয় ? সেখানে টাইম ডাইমেনশনটা কেমন ? আর যদি সেখানে চাঁদ আর সূর্য না থেকে থাকে তাহলে সূর্য দেবতা আর চাঁদ মামার কি হবে ? তাহলে অবশিষ্ট গ্যালাক্সিগুলোর পরিচালক কে ?
আমার ভাগ্য নির্ধারকের ভাগ্যটা নির্ধারণ করে কে ? আমার সময়ের নির্ধারকের সময়টা নির্ধারণ করে কে ?
অবশ্যই এর পেছনে মহাপরাক্রমশালী কোন শক্তি অবশ্যই আছে। নতুবা সব কিছু এত স্বাভাবিক নিয়মে চলছে কি করে ? সূর্য আর চাঁদ যদি দেবতা নাই হয়ে থাকে তাহলে এই যে এতটা নিয়মমাফিক সময় করে পরিভ্রমণ এর পেছনে অবশ্যই কোন শক্তি কাজ করছে। যার নিয়ন্ত্রণে সব কিছু, সব গ্যলাক্সি এবং মহাকাল।
এখন যদি এই চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবীর এই ঘূর্ণিত কক্ষপথের বাইরে কিংবা বিপরীতে অবস্থান নেয়া যায় তাহলে টাইম ডাইমেনশনের অবস্থাটা কি হতে পারে ?
এই কক্ষপথের বাইরে কিংবা বিপরীতে অবস্থান নেয়ার অর্থই হলো সেই মহান শক্তির নিকটবর্তী হওয়া। যেখানে পৃথিবীর টাইম ডাইমেনশনের সাথে কোন মিল নেই। দিন কিংবা রাতের হিসাব সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটাই অনন্ত কালের হিসাব। এখন সেখান থেকে ঘুরে পৃথিবীর সময়ে ফিরে এলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক যে হাজার বছর ধরে ঘুরে আসা হয়েছে অথচ আমার টেবিলের উপর রেখে যাওয়া চায়ের কাপ এখনও গরমই রয়েছে। তাহলে এখন পরিস্থিতি এই দাঁড়ায় যে চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবী বেচারা ত্রয়ীকে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণনে পরিবর্তন না আনিয়ে পৃথিবীতে সময়ের গতির পরিবর্তন করা আদৌ সম্ভব নয়।
সবশেষে, একটা ছোট্ট কাহিনী দিয়ে শেষ করছি। একদা অনেক শখ করে একটা চারা রোপণ করা হলো। উদ্দেশ্য হলো এই চারা একদিন বড় হয়ে ফুল দেবে, ফল দেবে, ছায়া দেবে। প্রচুর যত্ন আর পরিচর্যা করা হলো। একদিন প্রচন্ড এক ঝড় এসে চারা হতে সদ্য প্রস্ফুটিত নবীণ গাছটিকে উপড়ে দিয়ে চলে গেল। বেচারা কৃষক এর মধ্যেই কোন মঙ্গল নিহিত আছে বলে মনে করে পুণরায় নতুন করে এক চারা রোপণ করল। কিন্তু ভুলটা তার সেখানেই হলো। এমন এক জায়গায় কৃষকটি বাস করে যেখানটা হলো ঝড় প্রবণ এলাকা। অতপর আবারও সেই ঝড়ে সব কিছু লন্ড ভন্ড। কিন্তু কৃষকটির পক্ষে এমন কোন স্থানে চলে যাওয়া সম্ভব নয় যেখানে গেলে ঝড় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সে ভাবল পৃথিবীতে আদৌ কি এমন কোন স্থান আছে যেখানে ঝড় হয়না। অনেক ভেবে যখন সে দেখল যে কোথাও এমন ঝড় বিহীন স্থান পাওয়া সম্ভব নয়; এই ঝড়ের মধ্যেই বেঁচে থাকতে হবে তখন তার আর ধৈর্য ধারন করার ধৈর্য অবশিষ্ট রইলো না। পুরোপুরি হতাশ এই কৃষক এবার কৃষি কাজ ছেড়ে দিয়ে জেলে হবার স্বপ্নে বিভোর হলো। মাছ বেঁচে জীবনটা বেশ কেটে যাবে এমন আশ্বাস নিয়ে নতুন করে শুরু হলো তার পথ চলা। কিন্তু মানুষের সব স্বপ্ন পূর্ণ হয়না। আশা আর নিরাশার মাঝে ধৈর্য নিয়ে স্বপ্ন দেখা কোন বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। একদিন মাছ নিয়ে নৌকা করে বাড়ি ফেরার পথে আবারও সেই ঝড়। অতপর সলীল সমাধী...