প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব
সপ্তম পর্ব
অষ্টম পর্ব
নবম পর্ব
মুসলমান অধ্যুষিত মিডল ইস্টে ছোট একটি রাষ্ট্র হলেও ইসরেলকে স্পর্শ করতে পারে না কেউ। ইসরেল প্রতিষ্টার সময় ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে আরবদের সঙ্গে ইসরেলের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধগুলোতে ইসরেল এগিয়ে যায়। আরবরা কিছুই করতে পারেনি বরং অনেক সময় নিজেদের জায়গা হারিয়েছে।প্যালেষ্টিনিয়ানদের নিজ আবাস ভূমি থেকে উৎখাত করে জুইশ কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদায়ের নিজস্ব আবাসভূমি ইসরেল সৃষ্টি ও তাকে রক্ষা করার প্রতিটি পর্যায়ে পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা, সবসময়ই সর্বাত্মক সমর্থন যুগিয়ে এসেছে।
ইসলামের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে হিজরতের পর। ইসলামের শেষ নবী চিরাচরিত কিবলা মক্কাকে পিছনে ফেলে দীর্ঘ ১৭ মাস মসজিদুল আকসাকে কিবলা ঘোষণা করেন এবং সে অনুসারে নিজে এবং অনুসারিগণ তথা সমস্ত মুসলমান মসজিদুল আকসার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। ইহুদি-খৃষ্টান মূলত মুসলমানদের এই প্রতিশ্রুত নতুন আইনেরই আওতাভূক্ত এক অভিন্ন জাতি; তাদের মূল ইসলামের আদি সত্তায় প্রোথিত এবং নামে ইহুদি ও খৃষ্টান হলেও তাদের আত্মার উৎস রয়েছে ইসলামে এবং নতুন অবতীর্ণ কোরআনের সাথে - এই সংবাদ তাদেরকে এই কেবলা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে এর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলো বনি ইসরাঈল। বনি ইসরাঈল অস্বীকার করেছে ঈসা (আঃ)-কে। তৌরাতের সাথে কোরাআনের সম্পর্কের বিষয়ে তারা পূর্ব হতেই অবগত এবং অপর পক্ষে খৃষ্টানগণ তাদেরই তৌরাতকে তাদের পুস্তকের অংশ হিসেবে মান্য করে। সুতরাং বনি ইসরাঈলের ঈমান আনয়ন খৃষ্টান ও অপরাপর পৌত্তলিকদের প্রভূতভাবে সাহায্য করতে পারে। বনি ইসরাঈল (এবং খৃষ্টানগণও) বিশেষভাবে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম ও আগমনের বিষয়ে পূর্বাহ্নেই অবগত ছিলো। তারা নবীজী (সাঃ)-এর আগমন প্রতীক্ষায় মক্কায় ও ইয়াসরিবে (মদীনায়) দলে দলে ভিড় জমিয়েছিলো। আল্লাহপাক তাদের এই পূর্ব আয়োজন ও প্রস্তুতিকে কোরআনের বাণীতে মোহরান্কিত করে রেখেছেন - “ পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে অবশ্যই ইহার (কোরআন) উল্লেখ আছে। । বনি ইসরাঈলের পণ্ডিতগণ পূর্বাহ্ণেই ইহা অবগত আছে - ইহা কি উহাদিগের জন্য নিদর্শন নহে?” ইহুদিরা অত্যন্ত আত্মাভিমানি জাতিতে পরিণত হয়ে যায়। তারা দাম্ভিকতায় পৃথিবীতে যারপরনাই বাড়াবাড়ি করতে শুরু করে। তাদের দাম্ভিক প্রত্যাশা ছিলো - শেষ নবী তাদের বংশেই এবং ইহুদি ঔরসেই জন্ম নেবেন। বনি ইসরাঈলের এই দাম্ভিকতার কারণ ছিল যে ইতিহাসের শক্তিশালী নবীগণ তাদের মধ্যে এসেছে সুতরাং তারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতি, আল্লাহ পাকের একমাত্র পছন্দপাত্র জাতি হিসেবে তারা পৃথিবীতে চির উন্নত। ইসরাঈলের বাইরে স্বর্গীয় দয়া নেই এবং শেষ নবী যা তৌরাতে বহুল প্রতিশ্রুত, সে নবীর জন্ম তাদের ভিন্ন অন্য কোন জাতিতে নয়। অথচ ইতোমধ্যেই তারা হয়ে পড়েছে সীমা লংঘনকারী। যখন তারা দেখলো যে দিনক্ষণের নির্ধারিত জন্মটি ইহুদি পরিবারে নয়, একটি আরব পরিবারে, তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। শেষ নবীর আগমন নিয়ে মাতামাতি কেটে যায় কিন্তু সমস্যার সূচনা হয় কেবল যখন মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়তের বাণী প্রচার শুরু করেন। তারা মুহাম্মদুর রসুল (সাঃ)-কে অস্বীকার করে। আল্লাহপাক ঘটনাটি কোরআনে লিপিবদ্ধ করে দেন - “ উহা কত নিকৃষ্ট যাহার বিনিময়ে তাহারা তাহাদের আত্মাকে বিক্রয় করিয়াছে উহা এই যে, আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন, ঈর্ষান্বিত হইয়া তাহারা তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিত শুধু এই কারণে যে, আল্লাহ তাঁহার বান্দাদের মধ্য হইতে যাহাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তাহারা ক্রোধের পাত্র হইল।
কোরআনের বাস্তব প্রায়োগিক পদ্ধতি একজন রাসুল (সাঃ)-এর দ্বারা ব্যবহারিক বলয়ে সাধারণ মানুষের জীবন ব্যবস্থায় কিভাবে যোগ্যতা ও কৃতকার্যতার সাথে কাজ করে, তার উদাহরণ সেই রাসুল (সাঃ) ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে কোন অতিপ্রাকৃতিক ব্যবস্থার আশ্রয় নেন নি। তিনি ছিলেন একজন রাসুল (সাঃ) যাঁর জীবন ছিল অন্যান্য সাধারণ মানুষেরই মত, ক্ষুধা, দুঃখ, যন্ত্রণা, অসুস্থতা, ব্যর্থতা, যুদ্ধ, শান্তি, জ্ঞান, শিক্ষা, বিনয় ইত্যাদি যা কিছু কল্পনা করা যায় অপরাপর মানুষের জীবনের জন্য- সেই সমস্ত ব্যবহারের সমষ্টিতেই। এমনি স্বাভাবিক ব্যবহার, প্রয়োজন ও সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনা করেই উৎসারিত হয়েছিল ইসলামের জীবন ব্যবস্থা। তারপর অর্ধ বিশ্ব বিজয় করেছিলো মুসলমান তাঁরই শেখানো পদ্ধতিতে। আল্লাহ্পাক এই রাসুলের (সাঃ) পদ্ধতিতেই ইসলামের বিজয় দেবেন এই প্রতিশ্রুতি করেছিলেন- “কাতাবাল্লাহু লাআগলিবান্না আনা ওয়া রাসুলী”- এই আয়াতে। বিজয় যখন অর্ধেক- তখন মুসলমান পথচ্যুত হল, পরিণামে পদচ্যুত হল। যদি বিপর্যয় আসে, মুক্তি কোন পথে তারও পদ্ধতি দেয়া হলো- ‘জিহাদ’। কিন্তু মুসলমান আর আল্লাহর সৈনিক হিসেবে নিজ অবস্থান রক্ষায় সমর্থ হলো না। যখন মুসলমান ব্যর্থ হলো- তখন দায়িত্ব চলে আসে স্বয়ং আল্লাহর; তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পূর্ণ বিজয়ের। যদি মুসলমান ব্যর্থ হয়ে যায়, তবে পরিণতিটির গতি প্রকৃতি কী হবে, তা-ও কোরআন ও হাদীছে বর্ণিত রয়েছে নিখুঁতভাবে। তারই ক্রমধারায় নেমে আসবে দু’টি ঘটনা বা ‘ফেনোম্যানন’ বা প্রপঞ্চ যার একটি দাজ্জাল এবং অপরটি ইয়াজুজ মা’জুজ। পৃথিবী দাজ্জালের ফিৎনায় ভেসে যাবে, ইসলাম ইয়াজুজ মা’জুজের হাতে মার খাবে। ইসলাম হতে জিহাদী চেতনা যখনই বিদায় নেবে, তখনই ইসলাম আক্রান্ত হবে এ দু’টি প্রপঞ্চ দ্বারা। মানুষ উদাসীন হতে হতে চরম সীমালংঘনকারী হয়ে যাবে- যা আজকের নিত্যদিনের দৃশ্য। আর দূর্ভাগ্যজনকভাবে সীমালংঘন উৎসবে যোগ দেবে মুসলমান। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও অনৈসলাম এ দুয়ের পার্থক্য বিলীন হয়ে পড়বে এ দু’টি আঘাতে। স্রষ্টার অস্তিত্ব, প্রত্যাবর্তন, স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, আনুগত্য, ভয় ইত্যাদি বিলুপ্ত হবে। ইসলাম যতটুকু বেঁচে থাকবে - ইসলাম হিসেবে নয়, একটি স্মৃতি হিসেবে। ইসলামের মৌলিকতা হারিয়ে গিয়ে অমৌলিক বিবেচনা সমূহ হবে ঘোরতর বিবেব্য বিষয়। ইসলামের প্রকৃতি প্রাকৃতিক গতিতে হারিয়ে বসবে মুসলমান, তাকে ধরে রাখতে প্রয়াসী হবে না আর। আল্লাহ পাক স্বয়ং তাতে হস্তক্ষেপ করবেন। মুসলমানদের পরিণাম যখন অতি সংকটজনক হবে, আবির্ভাব হবে ইমাম মাহদী (আঃ) এবং তারপর হজরত ঈসা (আঃ) যিনি অকাতরে শেষনবী (সাঃ) উম্মত হবার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। হজরত ঈসা (আঃ) এর আগমন ও তাঁর পরবর্তী ঘটনার ফলাফল হবে যে পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত আর কোন মতবাদ থাকবে না। আল্লাহ পাকের প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণ হবে।
হাদীছে রয়েছে - এ সময় পৃথিবীজুড়ে সামাজিক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা ব্যাপক হবে। মানুষ হামলার শিকার হবে। বয়োজৈষ্ঠ্যরা কনিষ্ঠ্যদের কোন স্নেহ মমতা দেখাবে না। কনিষ্ঠ্যরাও বয়োজৈষ্ঠ্যদের সম্মান সমীহ করবে না। নবী রাসুলের আগমন তো আর হবে না। তাই আল্লাহ তায়ালা মুজাদ্দিদ বা সংষ্কারক সৃষ্টি করবেন। যুগের প্রয়োজনে তাই-ই হবে। তারা ঈমান, বিশ্বাস আকীদাগত ভ্রান্তি - এসব নিয়ে সংষ্কার করে যাবেন। খন্ডখন্ডভাবে, পৃথিবীজুড়ে তারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। রসুল সাঃ বলেছেন - এ সময় মারামারি হানাহানি ব্যাপক হবে। যুদ্ধ বিগ্রহ সন্ত্রাস ইত্যাদি ব্যাপক হারে দেখা দেবে। এক পর্যায়ে মনে হবে ঐ বুঝি শেষ হলো, কিন্তু না, ঐটি-ই শেষ নয়! অন্যদিক থেকে আরেকটি অশান্তি দেখা দেবে। এবং ওগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বংশে জন্ম নেয়া ইমাম মাহাদী আঃ আত্মপ্রকাশ করবে।
ওপরের হাদীছে যেমনটা রয়েছে - নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। যুদ্ধ, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, মারামারি হানাহানি ইত্যাদিতে কোন কোন দেশ হয় সম্পূর্ণভাবে নতুবা আংশিকভাবে বিপর্যস্ত হবে। ইদানীং নতুন একটি শব্দ গুচ্ছ চালু হয়েছে। তা’ হচ্ছে - ব্যর্থ রাষ্ট্র হাদীছের বক্তব্যের সাথে অনেকটা মিলে। আর সাধারণভাবে মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণে দেশান্তরি হবে। মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে নিহত হবে। যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে উদ্বাস্তু হবে - যা’ এখন এখন হরহামেশাই দৃষ্টিগোচর হয়।
ইরাক ও দামাসকাস (সিরিয়া) এর উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ হবে।
রসুল সাঃ বলেছেন - এমন ঘটতে পারে যে ইরাক ও সিরিয়ার জনসাধারণ তাদের খাদ্যদ্রব্য টাকাপয়সা লেনদেন ও বিনিময়ে অসুবিধের সম্মুখীন হবে। সাহাবীরা রাঃ জিজ্ঞেস করলেন - “কারা এটি করবে?”। জবাবে তিনি সাঃ বললেন ‘অনাররবা’ অর্থাৎ আরবের বাইরের লোকেরাই তাদের বাধা দেবে। অন্য হাদীছে এসেছে - এ কাজে বাধা দেবে ‘রোমানরা’ অর্থাৎ ইউরোপীয়রা।
আবু হোরাইরা রাঃ বর্ণিত - রসুল সাঃ বলেছেন - এমন এক সময় আসবে যখন ইরাককে (ইরাকবাসীকে) খাদ্যদ্রব্য (কাফজি) এবং টাকাপয়সা (দিরহাম) কোন কিছুই দেয়া হবে না। সিরিয়ার প্রতিও অনুরূপ আচরণ করা হবে। তোমরা ইসলামের একেবারে শুরুর-দিকের অবস্থায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ দূর্বল ও নিঃস্ব হবে।
আমরা এখন জানি ইরাকরে উপর ঐরূপ অবরোধ ইতোপূর্বেই আরোপিত হয়েছে। প্রায় এক দশক ইরাক ইউরোপ-আমেরিকার বানিজ্য অবরোধ সহ্য করেছে। সিরিয়ার প্রতিও ঐরূপ করা হয়েছে।
সিরিয়া ও মিশরের শাসন কর্তাকে হত্যা করা হব।
ইমাম মাহাদী আঃ আগমনের পূর্বে সিরিয়া ও মিশরবাসীরা তাদের শাসন কর্তাকে হত্যা করবে।
আমরা জানি - ১৯৮১ সালে মিশরে এক সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সা’দাত-কে (১৯৭০-৮১) হত্যা করা হয়। অন্যদিকে যে সমস্ত মিশরিয় নেতা নিহত হন তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বুট্রোস ঘালি ও মাহমুদ নুকরাশি পাশা
সিরিয়া, ইরাক ও আরব উপদ্বীপে দুঃখ কষ্ট ছড়িয়ে পড়বে।
নবী করিম সাঃ বলেছেন সেখানে (সিরিয়া) এমন দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা দেখা দেবে যে কেউই আশ্রয়ের জন্য এতটুকু জায়গাও পাবে না। ঐসব দুঃখ কষ্ট সিরিয়া হয়ে ইরাকে ছড়িয়ে পড়বে। এবং তা’ আরব উপদ্বীপের নানান জায়গায় ষ্পর্শ করবে। মুসলমানরা যুদ্ধ করবে। কিন্তু তাদের জন্য কেউই দুঃখ প্রকাশ করবে না। সহানুভূতি দেখাবে না। তারা একটা শেষ হতে-না-হতেই আরেকটা দুঃখ কষ্টে জড়িয়ে পড়বে।
ইরাক তিন ভাগে বিভক্ত হবে।
নবী করীম সাঃ এর মতে - ইরাক বা ইরাকের জনগণ তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এক ভাগ লুটতরাজে লিপ্ত থাকবে। একটি গ্রুপ পরিবার পরিজন ছেড়ে পালিয়ে যাবে। এবং আরকেটি গ্রুপ যুদ্ধ করবে এবং যুদ্ধ করতে করতে নিহত হবে। এই সব অবস্থা যখন স্বচক্ষে দেখতে পাবে, তখন কেয়ামতের জন্য প্রস্তুত থেকো। সাম্প্রতিক উপসাগরীয় যুদ্ধে আমরা এর সত্যতা অনেকটা দেখেছি।
মুসলিমরা ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে - এই ৭৩ দলের মধ্যে একটি দল মুক্তি পাবে, যারা সঠিক ইসলামের উপর কায়েম থাকবে। বাকী ৭২টি দল জাহান্নামী হবে। বাতিল বলে গণ্য হবে। আরো বলা হয়েছে - বহুধা বিভক্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আসল মুসলিম দলটি অপরিচিত/আজনবী হয়ে যাবে। অনুল্লেখ্য হয়ে যাবে। তারা সংখ্যায়ও হবে খুবই কম। ইসলামের একেবারে শুরুতে যে হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে এ ধর্মের সূচনা হয়েছিলো, কেয়ামত পূর্ববর্তী সময়ে অনেকটা সেরকম হয়ে যাবে। এরকম অবস্থায় কিছু লোক ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন। এদিকে ইমাম মাহদী আঃ তখন মদীনাতেই অবস্থান করবেন এবং ইমামতের (নেতৃত্বের) দায়িত্ব পালনে নিজেকে অসমর্থ মনে করে মক্কা মুকার্রমায় চলে যাবেন। মক্কার কিছু লোক তাঁকে চিনতে পারবে। তারা তার কাছে এসে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসবেন এবং তার হাতে হাত রেখে জোরপূর্বক বাইয়াত হতে থাকবেন (নেতৃত্বে বরণ করে নেবেন), যদিও মন থেকে তিনি তা’ চাইবেন না। এই বাইয়াত (শপথ) মকামে ইব্রাহীম ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। (হজরত ইমামকে তাওয়ায় করাতে করাতে এই বাইয়াত গ্রহণ করানো হবে)। যখন ইমাম মাহদী আঃ এর খিলাফতের খবর ছড়িয়ে পড়বে, তখন সিরিয়া হতে এক সৈন্যবাহিনী তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করবে। এই বাহিনী ইমাম মাহদী আঃ এর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে চলন্ত অবস্থায় মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী “বীদা” নামক স্থানে ভূমিধ্বসে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে জীবন্ত সমাধিস্থ হয়ে যাবে। এ ঘটনার খবর শুনে শাম (সিরিয়া) ও ইরাকের পরহেজগার লোকেরা তার খিদমতে উপস্থিত হবেন। তাদের মোকাবিলা করার জন্য কুরাইশী গোত্রের বনী কলবের লোকেরা এক বাহিনী প্রেরণ করবে। এদের সাথে মাহাদী আঃ এর বাহিনী যুদ্ধ করবে এবং এ যুদ্ধে মাহাদী বাহিনী জয়লাভ করবে। এ বর্ণনা মিশকাত শরীফ/আবু দাউদের বর্ণনা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর হজরত ঈসা আঃ এর আগমনের আগ পর্যন্ত ইমাম মাহাদী আঃ মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে যেতে থাকবেন। মুসলিম উম্মাহ্কে সংগঠিত করে যাবেন। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা এবং সামর্থ বলে বলীয়ান হয়ে ৭ বছর সফলতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থান করে তিনি সার্বিকভাবে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন এবং পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করবেন। সমগ্র মুসলিমদের কেন্দ্র ও মনোযোগ তখন জেরুজালেম কেন্দ্রিক খেলাফত। এ সময় রোমানরা বিকৃত ক্রসভিত্তিক বিশ্বাস খৃষ্টান ধর্মের উপর বিজয় লাভ করবেন এবং মুসলিম সাথে মৈত্রীতে আবদ্ধ হয়ে একীভূত হয়ে যাবেন। এক পর্যায়ে ঐ মৈত্রীতে ফাটল ধরবে। ওদিকে অনেক ইউরোপিয়ান এ সময় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবে ও অন্য মুসলিমদের সাথে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হবে। ওদিকে মিত্র থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়া রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। এ যুদ্ধে মুসলিমরা সিরিয়ান শহর এলেপ্পোতে প্রায় লক্ষাধিক রোমান সৈন্যের সাথে বিজয়ী হবে।
মুসলিমদের একটি গ্রুপ ভারত আক্রমন করবে। অপর গ্রুপটি রোম জয় করবে। এ সময় তুরস্কে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মুসলিমরা এগিয়ে আসবে। ইস্তাম্বুলকে (তুরস্ক) দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করার পর মুসলিমরা দাজ্জালের ফেতনা / নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করার জন্য সিরিয়া অভিমূখে রওয়ানা হবে। এ সময় সারা পৃথিবী জুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তিন বছর বৃষ্টির দেখা মিলবে না। এ রকম অবস্থায় পূর্বদিক থেকে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হবে। দাজ্জালের ডান চোখ কানা, অন্য চোখটি সবুজ। সে পৃথিবীতে ইচ্ছেমত দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টি সৃষ্টি করতে সমর্থ হবে। যে সমস্ত দেশ তার নির্দেশ অমান্য করবে, তার মতবাদ, ইচ্ছে বাস্তবায়ন না-করবে, তাকে খোদা না-মানবে, সে ঐ সমস্ত দেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টি সৃষ্টি করবে। সে একাদিক্রমে ৪০ দিন পর্যন্ত অসহনীয় দুর্দশা ও ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে। হাদীছে বলা হয়েছে - ঐ ৪০ দিনের প্রথম দিন হবে ১ বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে ১ মাসের সমান, তৃতীয় দিন হবে ১ সপ্তাহের সমান এবং তারপরের দিনগুলি স্বাভাবিক দিনের মতোই দীর্ঘ হবে। ধোকাবাজ দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে আল্লাহ প্রেরিত হিসেবে ঘোষণা করবে। তারপর সে নিজেকে “সৃষ্টিকর্তা” দাবী করবে। সে মৃতকে জীবিত করতে পারবে। তবে তা’ হবে কেবল একবারের জন্য। অর্থাৎ একবার মৃতকে জীবিত করার পর দ্বিতীয়বার আর করতে সক্ষম হবে না। মানুষকে দুই টুকরো করে তাৎক্ষণিক জোরা লাগাতে সক্ষম হবে। ভেল্কিবাজি, ধোকাবাজি এবং মন্ত্রমুগ্ধ করে সে ঈমানদারদের বেঈমানে পরিণত করবে। নিজেকে “সৃষ্টিকর্তা” মানার জন্য ঐ ক্ষমতা সে মানুষের উপর প্রয়োগ করবে। স্যাটেলাইট যোগাযোগের মত সে পৃথিবীর সকলের সাথে যোগাযোগ করতে সমর্থ হবে। বিমানের মত বাতাসের গতিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে সমর্থ হবে। সে “বৃষ্টি” নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হবে। তার সাথে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও পানীয় থাকবে। এবং সমগ্র পৃথিবীতে সীমাহীন নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা এবং মানুষের জন্য নিদারুন কষ্ট ও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে দাজ্জাল নামক এই সাক্ষাৎ শয়তানকে যে বা যারা “সৃষ্টিকর্তা” মানবে, তাদেরকেই কেবল সে ঐ খাদ্য ও পানীয় ভোগ করার সুযোগ দেবে। এই দাজ্জালের ব্যাপারে হজরত নূহ (আঃ)-ও তাঁর সম্প্রদায়কে সতর্ক করে গেছেন। মোটকথা, দাজ্জাল পৃথিবীতেই জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থা তৈরী করতে সক্ষম হবে। কিন্তু ঐ জান্নাত ও জাহান্নাম মূলত ইল্যুশান বা বিভ্রম। তার সৃষ্ট ঐ জান্নাত আসলেই ‘জাহান্নাম’ এবং জাহান্নাম প্রকৃতপক্ষে ‘জান্নাত’। অর্থাৎ যে লোক দাজ্জালের জান্নাতকে বেহেশত্ মনে করে তাতে প্রবেশ করবে, তা’ আসলে জাহান্নাম। তার জাহান্নাম হবে আসলে জান্নাত। হাদীছে এসেছে, এ সময় যারা পবিত্র কোরানের সুরা কাহাফ এর প্রথমাংশ পাঠ করবে, তারা দাজ্জালের ফেৎনা থেকে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হবে। তার দু’চোখের মধ্যখানে ‘কাফির’ ( ক্বাফ, ফা, রা ) লেখা থাকবে। হাদীছে রয়েছে, ইস্পাহানের (ইরান এর একটি শহর) প্রায় ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) ইহুদি ও ইরানী তার সেনাদলে যোগদান করবে।
এ সময় প্রচন্ড এক ভূকম্পন সৃষ্টি হবে। ঐ ভূকম্পনে সমস্ত হিপোক্রিট/ভন্ড মুসলিম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে মক্কা-মদীনা থেকে বেরিয়ে আসবে। দাজ্জাল ও তার বাহিনী সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে আল্লাহর ফেরেশতারা তাতে বাধা দেবেন। ফলে দাজ্জাল মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। খুব ভোরে ফজরের নামাজের সময়ে দাজ্জাল ও তার বাহিনী সিরিয়ার দামাস্কাসের উমাইয়াড মসজিদ ঘেরাও করে অবরুদ্ধ করে ফেলবে। এ সময় ফজরের আযান শুনা যাবে। ইমাম মাহাদী আঃ ঐ জামাতে ইমামের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হবেন। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে এ সময় মসজিদের সাদা মিনারের কাছে হজরত ঈসা আঃ আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।
উল্লেখ্য হজরত ঈসা আঃ আবির্ভাব কেয়ামত-পূর্ববর্তী অন্যতম বড় নিদর্শন। ইমাম মাহাদী আঃ ঈসা আঃ-কে ফজরের নামাজের ইমামতির জন্য অনুরোধ করলে তিনি আঃ মুসলিম নেতৃত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার আগে শেষকর্তব্য হিসেবে ইমাম মাহাদী আঃ-কেই ইমামতি করে যেতে বললেন। জাফরানী রং এর আলখাল্লা পরিহিত এবং চুল থেকে ফোটা ফোটা ঘাম ঝরতে থাকা অবস্থায় হজরত ঈসা আঃ দু’জন ফেরেশতার পাখায় ভর করে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। তিনি লড্স্ গেটের কাছে (বর্তমান রামাল্লার নিকটবর্তী এয়ারপোর্টের সন্নিকটে) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। বর্ণনায় রয়েছে, এ সময় দাজ্জাল পানি সিক্ত লবনের মতো বিগলিত হয়ে মৃত্যু বরণ করবে। আশেপাশের সমস্ত কাফির বা অবিশ্বাসীরা ধ্বংস হবে। বর্ণনায় রয়েছে, এ সময় কিছু কিছু কাফির আত্মগোপন করতে চাইলেও তা’ তারা করতে পারবে না। পাহাড় বা গাছ যার আড়ালেই তারা আত্মগোপন করতে চাইবে, তারা তা’ প্রকাশ করে দেবে। কোন কিছুই ঈসা আঃ এর শত্রুদের আত্মগোপনের সুঝোগ দেবে না। সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈসা আঃ দাজ্জালের অনুসারীদের হত্যা করে হজরত মোহাম্মদ সাঃ এর সুন্নাহ্ ও কোরানের শাসন চালু করবেন। খৃষ্টানদের ক্রস ধ্বংস করবেন, শুকর ধ্বংস করবেন, জিযিয়া কর তুলে দেবেন। সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে ইসলামের আলোয় আলোকিক করে ঐক্যবদ্ধ করবেন। এদিকে এসব ঘটনার পরপরই খবর চাউর হয়ে যাবে যে ইয়াজুজ্ মা’জুজ নামে ভয়ানক হিংস্র এক মানব গোষ্টি যুলকারনাইন দেয়াল দ্বারা অন্তরীণ থাকা থেকে মুক্ত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এরা সংখ্যায় এত বেশী হবে যে খুব দ্রুত তারা ‘সী অব্ গ্যালিলি”র পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে।
ইয়াজুজ-মাজুজ এ পৃথিবীতে নজিরবিহীন নারকীয় হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও অনবরত দাঙ্গা-ফাসাদ করতে থাকবে। এদিকে হজরত ঈসা আঃ তার সাথীদের নিয়ে তূর পাহাড়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন অতিবাহিত করতে থাকবেন। পরিস্থিতি এমন সংকটজনক অবস্থায় পৌঁছুবে যে, সামান্য বস্তুর দাম একশত দীনারের চেয়ে বেশী মনে হবে। এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে হজরত ঈসা আঃ ও তার সাথীরা ইয়াজুজ মাজুজের বিনাশের জন্য আল্লাহর কাছে কাতর প্রার্থনা জানাবেন। আল্লাহতায়ালার দরবারে তার প্রার্থনা মঞ্জুর হবে। আল্লাহতায়ালা ইয়াজুজ মাজুজের উপর ভেড়া ও উটের নাক দিয়ে বেরুনো ‘নাগফা’ নামক ব্যাধিত তাদের উপর ছড়িয়ে দেবেন। ফলে তাদের ঘাড়ে বড় বড় ফোস্কা বেরুবে। এতেই তারা একসাথে সবংশে নির্মূল হয়ে যাবে। তাদের অবস্থা দেখলে মনে হবে যে, বাঘ এসে সবাইকে চিরে-ফেরে ফেলে দিয়ে গেছে। তারা ধ্বংস হয়ে যাবার পর আল্লাহর নবী হজরত ঈসা আঃ ও তার সঙ্গী সাথীরা তূর পাহাড় হতে বেরিয়ে আসবেন। তখন এ পৃথিবীর মাটিতে এক বিঘত জায়গাও থাকবে না। যে স্থানটি ইয়াজুজ মাজুজের চর্বি ও দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকবে। সেজন্য আল্লাহর নবী হযরত ঈসা আঃ তার সঙ্গীদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে কাতর প্রার্থনা জানাবেন। ‘হে আল্লাহ! তাদের চর্বি ও দুর্গন্ধের কবল থেকে আমাদের রক্ষা কর’। সেজন্য আল্লাহ উটের ঘাড়ের মতো লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট বড় বড় আকারের শকুন পাঠিয়ে দেবেন। তারা ইয়াজুজ মাজুজের মৃতদেহগুলি উঠিয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে ফেলে দিয়ে আসবে। তারপর আল্লাহ বৃষ্টি পাঠাবেন। সেই বৃষ্টি থেকে ধরনীর কিছুই বাদ পড়বে না। তা’ সমগ্র পৃথিবী পৃষ্ঠকে ধুয়ে আয়নার মতো পরিষ্কার করে দেবে। এরপর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তার সাথীদের নিয়ে এ ধরনীতলে সুখে শান্তিতে বসবাস করবেন। আল্লাহতায়ালা তাদের উপর বড়ই কৃপা ও অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। সেই মতো আল্লাহর পক্ষ থেকে মাটিকে আদেশ দেয়া হবে যে মাটি থেকে ফল ফলাদি বের করে দাও। ফলে জমিতে খুব ভাল ফল (ফসল) উৎপাদন হবে। পরিণামে একটি দলের জন্য একটি আনারই যথেষ্ট হবে। কেননা সে আনার যথেষ্ট বড় হবে এবং তার ছাল দিয়ে তারা ছাতা বানাবে। এবং দুধেও বড়ই অনুগ্রহ বর্ষণ করা হবে। এমন কি, একটি উটের দুধ বড় একটি দলের জন্য পেট ভরার জন্য যথেষ্ট হবে। একটি গরুর দুধ বড় একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি ভেড়ার দুধ ছোট একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সাত বছর পৃথিবীতে অবস্থান করবেন। বিয়ে করবেন। সন্তানাদি হবে। এবং রসুলুল্লাহ সাঃ এর পাশে তার দাফন হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলমানেরা এমনই আয়েশ, আরাম, সুখ ও শান্তির মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে থাকবে। (ইতোমধ্যে কেয়ামত নিকটবর্তী হবে, যেহেতু কেয়ামত খোদাদ্রোহীদের উপরই কায়েম হবে, সেহেতু) আল্লাহ এমন মধুর একটি হাওয়া প্রেরণ করবেন, যা’ মুমিনের শরীর স্পর্শ করা মাত্রই তার (শান্তিদায়ক) মৃত্যু হবে। বাকী থাকবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকেরা। তারা গাধার মতো নির্লজ্জভাবে মহিলাদের সাথে প্রকাশ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ব্যভিচার/যৌনক্রিয়া করবে। তাদের উপর কেয়ামত নেমে আসবে। (মুসলিম শরীফ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের পরে মূর্খতা ও ধর্মবিমুখতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে, এমন কি, এ ধরাপৃষ্টে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিকৃষ্ট শ্রেণীর লোকদেরই অস্তিত্ব প্রকট হয়ে উঠবে এবং তাদের উপরেই কেয়ামত নেমে আসবে। এই সময়কালের মধ্যে কেয়ামতের অনেক বড় বড় আলামতও প্রকট হয়ে উঠবে। যে সমস্ত আলামতের কথা হাদীছে স্পষ্টভাষায় বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত হুজাইফা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দশটি আলামত / লক্ষণ স্পষ্টরূপে প্রকাশ না-হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘঠিত হবে না। সেগুলি যথাক্রমে -
১. ধোঁয়া পূর্ব দিক থেকে প্রকাশিত হয়ে পশ্চিম দিকে বিস্তৃতি লাভ করবে। ঐ ধোঁয়া ৪০ দিন স্থায়ীত্ব লাভ করবে। এতে ঈমানদাররা খুব কষ্ট পাবে। কাফির খোদাদ্রোহীরা বেহুঁশ হয়ে পড়বে।
২. দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ
৩. দাব্বাতুল আর্দ (ধরিত্রীর জীব) এর আত্মপ্রকাশ।
৪. পশ্চিম দিকে সূর্যোদয়। পশ্চিম থেকে উদিত হওয়ার পর যখন সূর্য মধ্য-আকাশে উঠে আসবে, তারপর আবার ফিরে পশ্চিমেই অস্ত গিয়ে আবার আগের মতোই স্বাভাবিকভাবেই পূর্ব আকাশে উদিত হবে। পশ্চিম দিকে সূর্য উঠার পর মানুষ আরো এক শ’ কুড়ি বছর পৃথিবীতে জীবিত থাকবে, তারপর কেয়ামত আসবে।
উল্লেখ্য পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়ার পর আর কোন তওবা বা অনুশোচনা গৃহীত হবে না।
৫. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর আকাশ হতে অবতরণ।
৬. ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব।
৭. পূর্বে ভুমিধ্বস
৮. পশ্চিমে ভূমিধ্বস
৯. আরবে ভূমিধ্বস।
১০. সবশেষে ইয়েমেন থেকে আগুন বেরুবে। সে আগুন লোকদের হাশর ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। হাশর ময়দান হবে বর্তমান সিরিয়ায়। সেখানেই হযরত ইস্রাফিল আঃ সিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। সেদিন হবে সপ্তাহের শুক্রবার।
হজরত ঈসা (আঃ) পর শত বছর কিংবা আরো অনেক বছর পার হয়ে যাবে - ততদিনে মানুষ আবার পূর্ণ গোমরাহীতে ফিরে যাবে। সে সময়টি দ্রুত ধাবিত হবে মহাঘটনার দিকে - কিয়ামত বা কারিয়া। ধ্বংস হয়ে যাবে এই সুন্দর পৃথিবী। ইতিহাস শেষ হবে এখানেই।
( শেষ হয়েও যেন হলনা শেষ )