একটা ছোট্ট গ্রাম নাথাং৷ সাকুল্যে পঞ্চাশ-ষাটটি ঘরবাড়ি নিয়ে এর ব্যাপ্তি৷ বাড়িগুলোর টিনের চালে ঝুরো ঝুরো বরফকুচি৷ তিব্বত থেকে ইয়াক পালকেরা নাথাং উপত্যকায় আসে৷ ইয়াকদের বিস্তীর্ণ চারণভূমি এই সুরম্য উপত্যকাভূম৷ কিছু ছোটখাটো পাহাড়ি ঝোরা রয়েছে৷ কিছু আবার জমে বরফ৷ এর সৌন্দর্যে কটা দিন হারিয়ে যেতে পারলে মন ভাল হয়ে যাবেই৷
কী দেখবেন?
একটি হিন্দু মন্দির ও একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি রয়েছে নাথাং ভ্যালিতে৷ পতপত করে উড়ছে বৌদ্ধ প্রার্থনাপতাকা৷ গাছপালাহীন আদিগন্ত বরফশোভিত এই উপত্যকায় গান ও ছন্দ উৎসব যেন৷ কেমন বুঁদ হয়ে যেতে হয় এই শহুরে বাহুল্যবর্জিত বরফ এলাকাটিতে৷ এই সিকিমেরই ছাঙ্গু, ইয়ুমথাং-এ তুষার দর্শনের জন্য পর্যটকমহলের যে ভিড় থাকে, তার ছিটেফোঁটাও নাথাং-এ নেই৷
আরও মাইল পাঁচেক উত্তরে বিখ্যাত ঈগল নেস্ট বাঙ্কার থেকে ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্যপটে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, পশ্চিম ভুটান, পশ্চিমবাংলার কিছুটা অংশও চিন ও তিব্বত৷ ব্রহ্মপুত্র নদটিও দিগন্তে মিশে গিয়েছে যেন৷
মেঘেদের একরাশ আলস্য নিয়ে রয়েছে আরেকটি গ্রাম৷ নাম লুংথাং৷ এই গাঁওটি নাথাং উপত্যকা থেকে মিনিট কুড়ি দূরের যাত্রাপথে৷ মাঝেমাঝেই মেঘ এসে ঢেকে দেয় পর্যটকদের যাত্রাপথ৷ আবার চকিতে আকাশ একদম ঝকঝকে৷ ভয়ংকর সুন্দর অনুভূতি এ সব পথে-প্রান্তরে৷ গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে মাঝে মাঝেই লুটিয়ে পড়ছে মেঘের আঁচল৷ গাড়ি থামিয়ে সটান নেমে পড়তে পারলে সারা গায়ে মেঘের চাদর জড়িয়ে নেওয়া যাবে৷ গাড়ি থেকে নেমে না দেখলে চারপাশের সৌন্দর্য না-দেখার অসম্পূর্ণতা থেকে যায়৷ নিচে ছোট ছোট গ্রাম৷ কখনও কুয়াশা, এসে ঢেকে দিচ্ছে নীচের দৃশ্যাবলি৷ পরক্ষণেই একটু রোদ্দুরের কৃপাদৃষ্টি পেয়েই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ছবির মতো চরাচর৷
এইখান থেকে প্রায় ১৪,৪০০ ফুট উচ্চতায় নাথুলা থেকে ইন্দো-চিনের সীমান্তের প্রবেশদ্বার দু’টিও দেখে নেওয়া যায়৷
কীভাবে যাবেন?
শিয়ালদা বা হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউজলপাইগুড়ি৷ সেখান থেকে গাড়ি বুক করে নাথাং যাওয়া যেতে পারে৷ গ্যাংটক থেকে নাথাংয়ের দূরত্ব 60 কিলোমিটার৷ বিমানে গেলে কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে গাড়ি বুক করে নিন৷ শেয়ারে যাওয়ার জন্যও গাড়ির ব্যবস্থা থাকে৷
কোথায় থাকবেন?
অনেকেই নাথাং-এ রাত্রিবাস করেন৷ এক রাতের থাকায় দেখে নেওয়া যায় জোড়পোখরি, গ্রিন লেক, ছাঙ্গু লেক এবং মেমেনচো লেক৷ এইসব পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষরা বড় সরলমনা৷ এখানে তো হোটেল-রেস্তোরাঁ বলে তেমন কিছুই নেই৷ তাই রেশম পথের কিছু কিছু অঞ্চলে হোম স্টের উপরই ভরসা৷ সেখানে সিকিমিজ মালকিনের হাতে তৈরি তাওয়া রুটি, টম্যাটো-পেঁয়াজ-রসুন দেওয়া ডিমের ঝোল অথবা মুরগির কারি, চা-কফি-মোমো, পুরি-সবজি সবই পাওয়া যাবে৷ খাবারদাবারই বলুন কিংবা মাথা গুজরানের মতো থাকা অতি সাধারণ মানের হলেও এদের আন্তরিকতা কিন্তু আজীবন ঋণী রাখে৷ দূরপ্রবাসে বেড়াতে এসে সেটাই যথেষ্ট মনে হয় তখন৷
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১