বুর্জুয়া রাজনীতি বলতে কে কি বুঝেন আমি ঠিক জানি না। আমি যতটুকো বুঝেছি তাহলো, সকল অবৈধ কর্মকান্ডকে পলিটিকেল রং দেওয়ার অন্যতম উপায় যেটা সেটাকে বুর্জয়া দল বলে। দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো বুর্জুয়া রাজনীতি। কেউ একমত হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন।
ইসলামী দলগুলো বাদে দেশের অন্যান্য বুর্জুয়া দলগুলোর অস্তিত্ব কিসের ওপর টিকে আছে বলতে পারেন ? জন সমর্থন ? উন্নয়ন কর্মকান্ডের ওপর ? মননশীল আদর্শিক কারনে ? কোনটাই না। এদের কোনটাই নেই।
জন সমর্থন বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা বেশির ভাগ দলের প্রকৃত পস্তাবে নেই। স¤পূর্ণ আবেগ আর দৃষ্টি ভংগির পার্থক্যের কারনে মানুষ বিভিন্ন দলের পক্ষাবলম্বন করে থাকে। তরুন আর যুব সমাজকে তাদের র্দবলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নেয় বুর্জূয়া নেতারা। তরুন আর যুবকদের স্রোত যেদিকে যায়, স্বাভাবিক ভাবেই আম জনতার স্রোতও সেদিকে থাকে। স্রোতের বাইরে যাওয়ার চিন্তা খুব কম মানুষই করে থাকে। বিশেষত যাদের কাছে আদর্শের সঠিক ধারণা নেই, আদর্শ লালন করার মতো শিক্ষাও যাদের নেই তারা তো চোখ কান বন্ধ করে জনবহুল দলের সাপোর্টার বনে যায়। দাওয়াতী কাজে নামলে বিষয়টির সততা উপলদ্ধি করতে পারা যায়। কোন সাধারন ব্যক্তিকে যদি ইসলামী রাজনীতির গুরুত্ব্য বুঝিয়ে কিছুক্ষন বয়ান করেন দেখবেন অত্যান্ত সহমর্মিতার ভাব নিয়ে জবাব দিবে, ভাই আপনাদের কথা ঠিক আছে কিন্ত আসলে আপনাদের কে ভোট দিয়ে লাভ নেই, বরং ভোটটা নষ্ট হবে। আপনারা ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। আপনাদের দলের সাপোর্টার হলে কোন লাভ নেই। সকল কাজের ভাগ বাটোয়ারা তো নেতা কর্মীরাই পাবে। আপনাদের তো সেই ক্ষমতা নেই।
তরুন আর যুবক শ্রেণীকে বশে রাখার জন্য কতিথ এসব দেশপ্রেমীক দলগুলো মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি আর টেন্ডার বানিজ্য কে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগায়। দুনিয়ার উন্নত প্রতিটি দেশে টেন্ডার কে অনলাইন করা হয়েছে। ই-টেন্ডার এখন উন্নত দেশগুলো তে অতি গুরুত্ব্যপূর্ণ বিষয়। মাদক কে কোন কোন দেশ সর্ম্পুন নিষিদ্ধ করে দিয়ে মাদক বহন ও বিপনন কে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার মতো অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। চাঁদাবাজির চিন্তা উন্নত দেশগুলো তে নেই বললেই চলে। অথচ আমাদের উন্নয়নশীল দেশের বুর্জয়া নেতারা টেন্ডার বাজিকে নিজেদের দলের ফান্ড মেকারের ভূমিকায় নামিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক দলের যেসব কর্মী আর নেতারা বিল বোর্ড রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে বিষয়টির সততা খুজে পাওয়া যায়। যারা বিলবোর্ডে নেতার ছবি আর প্রশংসা বাক্যের সাথে নিজের পরিচয় তুলে ধরে থাকেন খোজ নিয়ে দেখুন তাদের অধিকাংশ হয় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নতুবা টেন্ডার দখলের মতো অপরাধের সাথে জড়িত অথবা টেন্ডার দখলের অপেক্ষায় ক্ষমতার প্রহর গুনছে। বুর্জুয়া দলের পদ পদবির এত কদর কেন বলতে পারেন ? তারও একমাত্র কারণ এই টেন্ডার বাজি, চাঁদাবাজি আর মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষেত্র তৈরি করা। প্রতিষ্টিত দলের ওয়ার্ড সভাপতির পদের জন্য কুটি টাকা খরচ করার ইতিহাস সম্ভবত এই বাংলাদেশেই আছে। তার কারণও সেই একই।
দেশের পুলিশ প্রশাষনের বেশির ভাগ সদস্য মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ আর রাজনৈতিক র্দুবৃত্তদের টাকায় মজা নিচ্ছেন। এসব রাজনৈতিক র্দুবৃত্তরা সমাজের অসহায় মানুষগুলো কে বিভিন্ন ভাবে শোষন করে থাকে। কারো জমি দখল করে, কারো ব্যবসা বানিজ্যের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে লাভের টাকা ভাগ বাটোয়া করে, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক চাদা বাজির উৎসব করে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক বনে যায়। এসব লোকদের পথ অনুসরন করে তরুনরাও সেই একই পথে বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এসব দলের দায়িত্ব্য হাতে তুলে নেয়। এমন কোন জায়গা পাওয়া যাবে না যেখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ার মাদকের ব্যবসা হচ্ছে না। আর টেন্ডার বাজির কথা তো বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক স্বিদ্ধান্ত ছাড়া, ওপরের নেতাদের কে টেন পার্সেন্ট কমিশান দেওয়া ছাড়া নিজের দলের কর্মীরাও টেন্ডার পেতে পারে না। সেখানে সাধারন ঠিকাদাররা কি করে কাজ পাবে।
সাধারন একজন ছাত্র যখন দেখে তার সমপর্যায়ের একজন মাত্র কয়েক মাসে কুটি পতি বনে গেছে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এমন সব দলের নেতৃত্ব্য পেতে তারও ইচ্ছা জাগবে। কেউ চাইবে না সামজিক ভাবে পিছিয়ে থাকতে। এই সব দুর্বলতা কে কাজে লাগায় র্দুবৃত্তায়নে লিপ্ত বুর্জূয়া রাজনৈতিক নেতারা। তারা তরুন দের কে নেশা আর মাদকের টোপে ফেলে দেয়। রাতারাতি কুটি পতি বনে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর তরুন আর যুবকরা তখন নেতাদের অন্ধ আনুগত্য করতে থাকে। এই সব তরুনরা কেবল মাত্র তাই বুঝে যা তাদের কে বুঝানো হয়। তারা কেবল মাত্র তাই বলতে পারে যা তাদের কে বলতে বলা হয়। আদর্শের বুলি এখানে স¤পূর্ণ ঠকবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে একজন একজন করে কর্মী বাহিনী তৈরি করা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য অত্যান্ত কঠিন কাজ বৈ আর কি হতে পারে। সাত তবক জমিন থেকে হিরা উদ্ধার করা যতটা না কঠিন কাজ, তার চেয়ে আরো বেশি কঠিন কাজ হচ্ছে এসব বুর্জূয়াদের কবল থেকে তরুন আর যুবক দের কে উদ্ধার করা। বর্তমান সমাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তরুনদের কাছে ইসলামকে তুলে ধরতে হলে আরো কঠিন এবং যুগপযোগী কর্মপন্থা নির্ধারন করতে হবে। ফাকা ফাকা বুলি আউরিয়ে তারুন্যের এই স্রোতকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে না। এর জন্য চাই সমন্বিত পরিকল্পনা এবং ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ জনবহুল দলেল অধিনে থাকতে চায়, চাই তারা যেমন আদর্শেরই হোক না কেন।
দেশ বিধ্বংষী এই সকল কর্মকান্ডকে বৈধতা দিয়ে এর গায়ে দেশপ্রেম আর তারুন্যের শ্লোগান উঠাতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলছে কর্পোটে হাউজের দালাল মিডিয়াগুলো। একটি কথা স্বতস্বিদ্ধ যে, দেশের প্রতিটি কোনে যত গ্রাম নেশার দ্রব্য বিক্রি হয় তার প্রতিটি পয়সাকে চারটি অংশে বিভক্ত করা হয়।
প্রথম অংশ পায় পুলিশ প্রশাষন যারা এদের কে যতœ করে লালন করে যাতে তাদের ইনকামে কোন সমষ্যা তৈরি না হয়। বুর্জুয়া রাজনীতিকে এই প্রশাষন সব সময় প্রমোট করে থাকে। এর বিপরিতে উত্থিত যে কোন আদর্শিক আন্দোলন কে এরা জমের মতো করে ভয় পায়। কারণ অপরাধ না হলে, সামজিক অবক্ষয় সৃষ্টি না হলে নিজেদের ছেলে মেয়েদের কে মাসিক হাত খরচ বাবদ দুই তিন লাখ টাকা কিভাবে দেওয়া হবে। নিজের সন্তানদের কে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মাসিক এক লক্ষ টাকা খরচ করে কিভাবে পড়ানো যাবে। একজন পুলিশ কর্মকতা যখন সর্ব সাকুল্যে ত্রিশ হাজার টাকার বেশি বেতন ভাতা পান না, সেখানে তিনি একটি ছেলে বা মেয়ের জন্য কিভাবে প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা খরচ করেন এটা দেখার কোন অথরিটি কি আছে ? মোটেও নেই, এসব দিকে বুর্জয়ারা তাকায়ও না কারণ চোরের স্বাক্ষি মাস্তুত ভাই। প্রত্যেকেই তো নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত। দেশপ্রেম আর গনমানুষের দল বলে যেসব শ্লোগান ফেরি করা হয় তার প্রতিটি শব্দে মিশে আছে শঠতা আর প্রতারনা।
দ্বীতিয় ভাগটি পায় স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। যারা এতদিন এই সকল তরুনদের কে দেশপ্রেম, আলোকিত জীবন আর তারুন্যের জয়গানের মন্ত্র শুনাতেন। তাদের বিনিয়োগ তারা সুদে আসলে তুলে নিতে আর দেরি করেন না।
তৃতিয় অংশটি যায় মিডিয়া নামের দেশদ্রোহী প্রতিষ্টান এর কর্নধার বা স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিক নামধারী জানোয়ার দের ভাগে। প্রতিটি অপকর্মের পিছনে এদের হাত থাকে। এদের দ্বারা অপরাধীরা সমাজে প্রতিষ্টিত হয়। এদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের তরুনদের কে বুর্জুয়া রাজনীতির সমর্থক বানানো হয়। এইকাজের প্রথম ধাপ হচ্ছে বুর্জূয়া রাজনীতি বিরোধীদের বিষয়ে নতুন প্রজন্মের কানে উদ্ভট এবং ভয়ংকর চিত্র অংকিত করে তাদের থেকে দুরে সরিয়ে দেওয়া। এই কাজে তারা নিজেদের স্বার্থ্যইে অংশ নেয়। কারণ তাদের রোটি রুজির একমাত্র পথ হলো তরুনদের বখে গিয়ে বুর্জূয়া রাজনীতির ধারক হওয়া। মিডিয়া গুলো খারাপ কে লালন করে, নেশা আর মাদকের বিরুদ্ধে কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। দুর্নিতী বাজদের কে নিজেদের স্বার্থ্যরে অনুকুলে থাকলে লালন করতে থাকে। এই সব মিডিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ না করে কেউ বুর্জয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেনি। তবে হ্যাঁ, আদর্শিক কারনে দুচারটি মিডিয়ার জন্ম নিলেও তাদের কে বিভিন্ন ভাবে ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয় যাতে তাদের কথার ভেলূ কমে যায়।
চতুর্থ অংশটি স্বাভাবিক ভাবেই তারা পায় যারা এতদিন ধরে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, নেতাদের পায়ে নিজের দেশপ্রেম আর ঈমানকে বিলিয়ে দিয়ে রাজনীতি করে আসছিল। যারা কুটি টাকা খরচ করে ওয়ার্ডের সভাপতির পদ অলংকৃত করেছে। যারা লক্ষ টাকার বিল বোর্ড ছাপিয়ে কেবল মাত্র নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার পেছনে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে। তাদের এই অংশটির উন্নতি আর বিত্তবান হওয়ার পক্রিয়া যে কোন ফিল্মের গল্প কাহিনীকেও হার মানায়। এসব বলতে গেলেই তো বিপদ। বিভিন্ন ধরনে উপাধি রেডি করে রাখা হয় যাতে তরুনরা ভয়েও সেই সব আদর্শিক পথ আর মতে দিকে ভুলেও ধাবিত না হয়। যদি কেউ ভুল ক্রমে সেই পথে চলেও যায়, তাকে হেনস্তা করার জন্য তো গোলাম মিডিয়া আছেই। এভাবেই তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যায় একটি জাতি। বিশেষ করে মুসলিম জাতি। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য বিক্ষিপ্ত কোন প্রচেষ্টা কাজে আসেব না। মুসলমানদের কে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এর প্রতিরোধ করতে হবে।