somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাজহাব নিয়ে আর কতকাল লড়বেন। এবার থামেন।

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাজহাব মানে হচ্ছে কোরআন হাদিস পালন করতে গিয়ে কারো মতামত কে অনুসরন করা, এটা থেকে মানুষকে বিরত রাখা যায় কিভাবে এই বিষয়টি আমার মাথায় আসে না। এক জন অজ্ঞ রিকসাওয়ালা বা খেটে খাওয়া মজুরের পক্ষে কি করে সম্ভব হবে কোরআন হাদিসের ওপর তাহকিক করে আমল করা। নিরপেক্ষ ভাবে বলতে গেলে মাজহাব এর বিরুদ্ধে বলার কোন যুক্তি নেই। কারো যদি এতটুকো দক্ষতা বা সক্ষমতা তৈরি হয় যে, তিনি দ্বীনের সুক্ষè থেকে সুক্ষè মাসয়ালার তত্ব উদ...ঘাটন করতে পারেন, অথচ বর্তমান যে কোন বিষয়ে তার ইজতেহাদ প্রদান করে সঠিক নির্দেশনা হাসিল করতে পারেন, তাহলে তার উচিত হবে নিজের জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আমল করা এবং যেখানে তিনি তাহকিক করতে ব্যর্থ হবেন সেখানে পুর্ববর্তি ইমাম দের কোন একজন কে ফলো করবেন। এটা বাস্তব সম্মত কথা। মাওলানা মওদূদী রহ কে একজন প্রশ্ন করেন যে, আপনি কোন মাজহাব মানেন, আপনার ইমাম কে ? তিনি বলেন, আমার একমাত্র ইমাম হচ্ছেন হযরত মোহাম্মাদ (স)। কিন্তু যে সকল বিষয়ে আমার পক্ষে গবেষনা করার সুযোগ থাকেনা বা সময় হয়ে উঠে না, সেসব ক্ষেত্রে আমি ইমাম আবু হানিফা রহ কে অনুসরন করি, কেননা তার অধিকাংশ রায় আমি আমার প্রকৃত ইমাম হযরম মোহাম্মদ (স) এর হুকুমের অতি নিকটবর্তি পেয়েছি। (রাসায়েলে মাসায়েল)

হযরত শাহ ওয়ালী মুহাদ্দিসে দেহলবীও (রহ) তাকলিদের বিষয়ে আলেমদের জন্য ঠিক এরকম ফতোয়াই প্রদান করেছেন। মাকতুবাত গ্রন্থ্যের এক জায়গায তিনি লিখেন - বর্তমান জামানায় যেন ইজতেহাদ কে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের জামানার লোকেরার ইজতেহাদের কথা শুনলে ক্ষেপে উঠে। এদের নাকে উটের দড়ির মতো বাধা আছে। এরা জানে না, কোন দিকে যাচ্ছে। এদের ব্যাপারই ভিন্ন। ঐসব ব্যাপারে বুঝার যোগ্যতাও এদের নেই।( মুসাফ্ফা প্রথম খন্ড -১০ পৃষ্টা)।
তাফহিমাতের এক স্থানে তিনি লিখেন- এই যুগের আরো একটি অন্যতম রোগ হলো এই যে, প্রত্যেকে নিজের মত অনুযায়ী চলছে। এরা লাগামহীন ভাবে চলছে, কোন নিয়ন্ত্রন নেই......................।

বিংশ শতাব্দিতে যিনি ফিকহি মাসয়ালার ক্ষেত্রে স্বাধীন রায় প্রদান করে অনেক বুজুর্গের চোখের শুল হয়ে গিয়েছিলেন সেই মওদূদী রহ যখন দ্ব্যার্থহীন ভাবে মাজহাব অনুসরন করার ওপর জোড় দিতে পারেন সেখানে অন্যান্য সাধারন আলেমদের ক্ষেত্রে এ কথা কি করে বলা যেতে পারে যে, আপনি সরাসরি কোরআন হাদিস বুঝে আমল করুন। আমার ছোট্ট জ্ঞানে এটাকে একধরনে অজ্ঞতা এবং কারো কারো ক্ষেত্রে ইসলামের বিরুদ্ধে এক প্রকার মৌন ষরযন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো অতি মাত্রায় হাদিস প্রিতী দেখাতে গিয়ে ইজতেহাদ এবং তার উপকারিতা কে প্রায় অস্বিকার করেছেন। তাদের জানা দরকার যে, হাদিসের ক্ষেত্রে যেসব বিরোধ পরিলক্ষিত হয় সেখানে মিমাংসা করার জন্য একজন মুহাদ্দিস কে অনুসরন করতে হয় বা যে কোন ইমামের রায় কে সামনে আনতে হয়। নতুবা এটা কি করে সম্ভব হবে যে, একটি বিষয়ে মতবিরোধ পুর্ন হাদিস উপস্থিত থাকবে অথচ লোকজন মতবিরোধ করবে না। সহিহ বুখারীর বিভিন্ন হাদিসও একটির সাথে অন্যটির বাহ্যিক কিছু পার্থক্য নির্দেশনা করে, এক্ষেত্রে ইমাম দের অনুসরন করা সাধারন তো বটেই অনেক বিজ্ঞ আলেমদের জন্যও জরুরী হয়ে পড়ে।

অধুনা আমাদের কিছু ভাইরা মাজহাব ছেড়ে দিয়ে সহিহ হাদিস অনুসরনের দিকে জোড় দিয়েছেন। তাদের ভাষ্য মতে হানাফি মাজহাবে দুর্বল হাদিস এবং ইজতেহাদ বা কেয়াসের আধিক্য বেশি পরিমানে রয়েছে। তারা কতিপয় বিষয়ে এই বিরোধ কে তুংঙ্গে তুলে নিয়েছেন। অথচ তাদের জানা উচিত যে, ইমাম আবু হানিফা সাহাবায়ে কেরামের আমল স্বচক্ষে দেখেছেন। এবং তখনো শরীয়াতের মধ্যে কোন বিকৃতি বা বিরোধ তৈরি হয়নি বললেই চলে। ইমাম আবু হানিফা রহ কুফার অধিবাসী ছিলেন। কুফা মুসলিমদের ইলম চর্চার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্টিত করা হয়েছিল এবং সেখানে বিপুল পরিমান সাহাবার উপস্থিতি ছিল। সেখানে ফিকহের সব চেয়ে বড় সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) ফিকহি তালিম দিতেন। তার হাজারো ছাত্র সেখানে রয়েছে। বলা চলে জ্ঞান চর্চার অন্যতম স্থান হিসেবে কুফা বিবেচিত হতো। অসংখ্য সাহাবী সেখানে খেলাফতের বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব্য পালন করেছেন। সহিহ সনদে জানা যায় যে, বিশিষ্ট অনেক সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) মতের অনুসারী ছিলেন। কোন বিষয়ে তারা সরাসরি ফতোয়া না দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) রায়ের অপেক্ষায় থাকতেন। এমনি এক সমাজে হযরত ইমাম আবু হানিফা ফিকহের জ্ঞান লাভ করেন। সেখানে শরীয়াতের প্রতিটি আমল সাহাবায়ে জামায়াতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের তত্বাবধানে অনুষ্টিত হতো। এমন এক মোবারক জামানায় ইমাম আবু হানিফা ফিকহি মাসয়ালায় বুৎপত্তি অর্জন করেন এবং ইবনে মাসউদ রা এর ফতোয়ার অধিকাংশ তিনি ধারন করেন এবং প্রচার করেন। ইবনে মাসউদ রা এর জ্ঞানএবং মর্যাদা সম্পর্কে যাদের নুন্যতম ধারনা নেই তারা কি করে আবু হানিফার রায় কে পছন্দ করবেন। হাদিসের অনুপস্থির কারনে যে সকল মাসয়ালায় তিনি কেয়াস করেন, পরবর্তিতে সেই বিষয়ে তার কেয়াসের অনুকুলে হাদিস মজুদ হয়ে যায় আর এতেই প্রমানিত হয়ে যায় যে, তার কেয়াসেও মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিলো। এ বিষয়ে লিখতে গেলে দীর্ঘ প্রবন্ধ দরকার হয়ে পড়ে। আলোচনার মুল উদ্ধেশ্য হলো যারা কারো অনুশরন কে শিরক বলেন তারা যেন নিজেদের মতামত কে যাচাই বাছাই করে কথা বলেন। অযথা মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা থেকে বিরত থাকেন।

নামাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে কেউ কেউ তাদের আমলের পরিবর্তন করাকে পছন্দ করেছেন এবং সেই বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন কিন্তু তাদের কেউ ইমাম আবু হানিফার রায় কে বাতিল বলার ধৃষ্টতা দেখাননি যেমনটি অধুনা কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ দেখাচ্ছেন এবং তাদের শাগরেদ দের কে ইমাম আবু হানিফার রহ পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন। অথচ খোজ নিলে জানা যায় যে, তারাও হাদিসের যাচাই বাছাই ক্ষেতে আলবানী রহ বা অন্যকোন মুহাদ্দিস কে অনুসরন করেন। তারাও অনুসরন করছেন এবং তাও যাচাই বাছাই ছাড়াই। এ ক্ষেত্রে তাদের কাছে জানার ইচ্ছে জাগে যে, তারা কেন আরেক জনের রায় কে সহিহ বলছেন এবং সেটা কোন পেরামিটারের ভিত্তিতে ? উত্তম তিন যুগে প্রায় এক হাজার বছর পরে জন্ম নেওয়া একজন মানুষ যদি কোন একজন তাবেয়ীনের শরীয়াত উপলদ্ধির ক্ষেত্রে অগ্রগামী হয়ে যান এবং তাকেই আমরা নির্ভর যোগ্য মনে করে চোখ কান বন্ধ করে অনুসরন করার দাবি জানাতে থাকি তাহলে গ্রাম্য ভাষায় বলতে হবে যে, আমাদের ঘরও মিছা কারও মিছা।

আল্লাহ তাদের কে হেফাজত করুন। আমাদের কে সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×