আপিলেড ডিভিশানে কাদের মোল্লা সাহেবের আপিল শুনানী শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে আজকে শেষ বক্তব্য রাখবেন এটর্নি জেনারেল মাহবুব সাহেব। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে সকল স্বাক্ষ্য প্রমান আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গ্রহন করেছে সেটা আপিলেড ডিভিশানে টিকবেনা বলে মনে করেন আসামী পক্ষের আইনজীবি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। স্বাক্ষীদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আর মিথ্যাচারের যে সয়লাব আদালতের এজলাশে বয়ে গিয়েছিল আসা...মী পক্ষের আইনজীবিদের জেরায় সেটা বহু আগেই প্রমানিত হয়েছে। সেটা আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বিচারকরা বোধ করেননি কারন স্বাক্ষ্যের ভিত্তিতে না হোক, এটা তাদের কাছে দিবালোকের মতো সত্য যে, জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধী। কিছু দিন পরে হয়তো শুনা যাবে যে, জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়াটা ডকট্রিন অব নেসেসিটির অধিনে পরেছে।
এই বিচারটি যে আবেগ আর কথিত চেতনার নৌকায় পাল তুলে প্রতিবেশি একটি রাষ্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুদূঢ় প্রসারী চিন্তাচেতনার ফসল সেটা অভিজ্ঞমহলের কাছে মোটেও অজ্ঞাত নয়। এই কারনে দেশের নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবিরা এই বিচারের মান এবং গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিদেশের আর্ন্তজাতিক মানবাধীকার সংগঠন ও মিডিয়া গুলো সোচ্চার হয়ে এই বিষয়ে যতটা নৈতিক দায়িত্ব্য পালন করেছে আমাদের দেশের কথিত সুশিল নিরপেক্ষ মিডিয়া যদি তার এক ভাগও দায়িত্য পালন করতো তাহলে দেশের আদালত পাড়া সন্ত্রাসী আর ক্ষমতাশীনদের দলিয় কার্যালয়ে রুপ নিতো না এবং সাধারন মানুষ অমানবিক নির্যাতন থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতো। কিন্তু এটা বাংলাদেশ , এখানে এমন স্বপ্ন দেখা পাপ কারন হচ্ছে পা চাটা, কর্পোরেট কোম্পানীর টাকায় চলা মিডিয়া আর তাদের গর্ভ থেকে ভুমিষ্ট হওয়া বহুজাতিক পদার্থ দ্বারা গঠিত বিশেষ প্রানী হলুদ সাংবাদিকদের কাছ থেকে এমন আশা দুরাশাই বটে।
সর্বশেষ খবর হচ্ছে কাদের মোল্লার শাস্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল আইনের সংশোধনী প্রযোজ্য হবে কিনা সেই বিষযে মতামত দিয়েছেন দেশের কথিত সিনিয়র আইনজ্ঞরা। আওয়ামী আইনজিবী লকব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতামত নিয়ে আপিলেড ডিভিশান সেই একই পথে হাটলেন যেই পথে বিগত চার বছর ধরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল হেটেছে। আওয়ামী আইনজীবিরা জামায়াত বিরোধীতায় সব অপকর্মকে হালাল ফতোয়া দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এসব পা চাটা গোলাম আইন বিশেষজ্ঞরা দেশের প্রয়োজনে কোন ভুমিকা না রাখতে পারলেও নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারে এবং বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করতে তারা সব কিছু করতে পারেন। সময় মতো এরা খোলশ পাল্টে ফেলেন। তাদের অপকর্মে দেশের আইন আর আদালত গুলো দলিয় লেজুর বৃত্তির খোলশে ডুকে গেছে। সাধারন মানুষ মনে করেন যে, সাধারন পন্যের মতো টাকার বিনিময়ে বিচারকরা তাদের ঈমান বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং এই টাকার কাছে এখন রায় বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। মাননিয় প্রধান বিচারপতি জেলা জজদের কে যেদিন ঘুষ খোর বলে ফতোয়া দিয়েছে সেদিনই এদেশের বিচারক আর এজলাশের প্রতি সাধারন মানুষের ঘৃনা জন্মে গেছে।
এখনো বিচার আর বিচারকদেও ওপর যেটুকো সম্মান আর ইজ্জত মানুষ প্রদান করছে সেটা শুধু মাত্র কতিপয় ইনসাফ পরায়ন বিচারকদের সততা আর ন্যায় নিষ্টার কারনে। এ জাতিয় বিচারকদের সংখ্যা অনেক কম হওয়াতে তারা এ সেক্টরের সম্মান উদ্ধারে কোন ভুমিকা নিতে পারছেন না। অন্য দিকে দলিল লেজুর বৃত্তি না করাতে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকোও তারা পান না। এর কারন হচ্চে দলিয় বিবেচনায় বিচারক েিনয়াগ দেওয়া। আর দলিয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা দলের আনুগত্য করবেন এটাই স্বাভাবিক। গত কয়েক দিন আগেহ আমাদের সাবেক স্বৈরশাষক হু মু এরশাদ আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, তিনি মহাজোট নেত্রীর কাছে জাতির পার্টির কোটায় একজন বিচারক চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাননি। স্বভাবতই ধরে নেওয়া যায় যে, যারা নিয়োগ পেয়েছেন তার সবাই আওয়ামী লীগের দলিয় কোটায় পেয়েছেন। এ জাতিয় বিচারকরা আদালত পাড়ায় শুধু রায় বানিজ্য বাড়াতে পারেন, আদালতের সম্মান বাড়ানোর কোন ক্ষমতা তাদের নেই।
বিগত কয়েক বছরে আইন এবং আদালতের এজলাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলিতে দেশের কৃষক শ্রমিক জনতা থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিটি ব্যাক্তি মাত্র বুঝতে পারেন যে, এ দেশের আদালত গুলোতে হাওয়া দেখে রায় দেওয়ার প্রবনতা রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে দমন করতে, নিজেদের ক্ষমতা কে নিস্কৃলস করতে, ভবিষ্যতের ক্ষমতায় যাওয়া পথ পরিস্কার করতে, বিরোধী মত ও পথকে দমন করতে যুগে যুগে প্রত্যেক স্বৈরাচাররা এই সব আদালত কে ব্যবহার করেছেন আর আদালতগুলো স্বপ্রনোধিত হয়ে তাদের কে সহায়তা করেছে। প্রত্যেক সামরিক শাষককে বৈধতা দিয়েছে এই সকল আদালতগুলো। প্রত্যেক স্বৈরাচার অথবা সামরিক শাষকদের কে শপথ পাঠ করানোর বিষয়টি তো সবাই জানেন। প্রতিপক্ষের ওপর মামলার খরগ ঝুলিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে চরম মানবতা বিরোধী কাজের ওপর আইনের সিল মারার কাজটিও কিন্তু আমাদের আদালত গলো করেছে এবং করে চলছেন নিশ্চিন্তে। বিশিষ্ট আইনজীবি খ্যাত ব্যারিষ্টার রফিকুল হক বলেছেন, দেশে বিচারকরা রাজনৈতিক হাওয়া দেখে রায় পড়েন। তারা ইনসাফ করার চিন্তাও করতে জানেন না।
এই অবস্থায় দেশের কোন আদালতে মজলুম মানুষরা ন্যায় বিচার পাবেন এটা আশা করার মতো বোকা আমি নই। আমার দেশের সংসদ কৃর্তক সেডিষ্ট, বদ্ধউ¤œাদ, মানসিক রোগী খেতাব পাওয়া ব্যক্তিরা যখন আপিল ডিভিশানের মর্যাদাকর চেয়ারে আসিন হন তখন বুঝেই নিতে হয় এ জাতির সম্মানিত লোকেদের কপালে বিপদ আছে। কোরআনে আল্লাহ পাক রানী বিলকিসের একটি মুল্যবান কথাকে কোড করেছেন এভাবে- জালিমরা যখন কোন জনপদের কতৃত্ব পায় তখন তারা দুটি কাজ করে, দেশের সম্মানিত লোকদের কে অপদস্ত করে, দেশের শান্তি শৃংখলার ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিশৃংখলা করার সকল কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করে। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা আমাদের কে আবারো সেই মহাসত্যের ওপর আস্থাশীল করে দিয়েছে। এই কথাটি যথার্থতা আল্লাহ পাকের নিকটও যথার্থ ছিল, তাইতো তিনি এভাবেই কথাটি কে কোরআনের ভিতর লিখে দিলেন।
আমাদের দেশের বর্তমান আইন এবং বিচার ব্যাবস্থা কে তামাশার সাথে তুলনা করে জনৈক লেখক বলেছিলেন যে, তামাশার দেখার সৌভাগ্য তাদের হয় যাদের টাকা আর ক্ষমতা রয়েছে। অন্যরা এই আদালতের মঞ্চে তামাশার পাত্র মাত্র। যেমন খুশি তেমন সাজোর মতো এক একজন সাধারন লোককে সাজানো হয় জোকারের মতো আর প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত বিচারের নামে প্রসহন করা হয় তাদের সাথে। প্রহসনের এই মাত্রা এতটাই দীর্ঘ যে, অনেক বিচার তো বংশ পরস্পরায় চলতে থাকে। আদালত আসে আদালত যায়, থেকে যায় কেবল তারিখ। বিচারক আর উকিলদের কালো কোর্টের ভিতর কতোটা অন্ধকার বিরাজ করছে সেটা বুঝবেন তারাই যারা মামলা মোকাদ্দমার ফাদে নিজেদের জীবনের মুল্যবান কিছু সময় কোর্টের চত্তরে কাটিয়েছেন। সেদিন এক ভদ্রলোক তার ভাইয়ের নামে মামলা করার চিন্তা নিয়ে এক উকিলের কাছে আসেন। উকিল সাহেব ইসলামী মাইন্ডের হওয়াতে তিনি তাকে মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে বললেন যে, এই মামলায় আপনার কোন লাভ হবে না। বিচার তো পাবেনই না,বরং সামান্য আঘাতে যতটা রক্ত আপনার দেহ থেকে ঝড়েছে তার হাজার গুন রক্ত আপনার ছেলে মেয়েদের শরীর থেকে ঝরবে। কেননা কয়েক বছর পরে এই মামলা আপনার ছেলে মেয়েদের কেই সামলাতে হবে তখন আপনি কবরে থেকে আফসোস করবেন।
কাদের মোল্লার আইনজীবিরা যতই আশ্বাম্বিত হন না কেন, তাদের মনে রাখা দরকার যে, এটা রাজনৈতিক বিচার। আর রাজনৈতিক বিচারে বরাবর সংগ দিয়েছে দেশের উচ্চ আদালত। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। যখন ট্রাইবু্নালের গেট থেকে একজন স্বাক্ষীকে পুলিশ দিয়ে অপহরন করে গুম করে ফেলার পরেও আদালত কোন ব্যবস্থা নেয়নি তখন জামায়াত নেতাদের বুঝা উচিত ছিল যে, এটা রাজনৈতিক আদালত। এই আদালতে ইনসাফ পাওয়া মুশকিল। আদালত কি রায় দেবেন সেটা অনুমান করতে পারেন আমাদের দেশের সাধারন জনতা। তারা বলছেন যে, ফাসিঁ এখন ডাল ভাত হয়ে গেছে। আদালতের রেওয়াজ হলো হাজারো খুনি আইনের ফাক পেয়ে ছাড়া পেয়ে গেলেও সমষ্যা নেই, একজন নিরাপরাধী যেন শাস্তি না পায়। আজকে আমাদের আদালতের বিচার ব্যাবস্তার সাবমিশন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বর্তমান বিচারকরা যখন আসামীর মুখ আর দলিয় পরিচয় দেখেই বুঝে নিতে পারেন তিনি অপরাধী কিনা তখন এত যুক্তিতর্কে যাওয়ার কি দরকার ছিলো। তদপুরি দেশের বিচার বিভাগের ওপর জামায়াত নেতারা যে আস্থার পরিচয় দিয়েছেন সেটা ইতিহাসে লিখা হয়ে থাকবে এই কারনে যে, পাকিস্তান সরকার কতৃক শেখ মুজিবর রহমানের নামে আগরতলা ষরযন্ত্র মামলাটি আইনগত ভাবে মোকাবেলা না করে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করেছিল ততকালিন আওয়ামী লীগ, অথচ জামায়াত সেই পথে না গিয়ে বিচার আর বিচারকের ওপর আস্থাশীল থেকেছেন। তখন হয়তো বিচার ব্যাবস্থা এতটা সংকির্নতায় ভুগেনি যতটা আজকের বাংলাদেশে হচ্ছে। বিচার আর আদালতের তামাশার মঞ্চে দারুন উপভোগ্য চিত্রনাট্যের প্রদশনী দেখার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে গোটা জাতি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচারের আশায় পথ চেয়ে থাকা জামায়াতের নেতাকর্মীদের জন্য সহানুভুতি প্রকাশ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। শুভ কামনা রইল জামায়াতের জন্য।