somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(الطَّاغُوتِ) তাগুত কি এবং কেমন ? - ৫

২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্বে তাগুতের শ্রেণী বিন্যাশ করার সময় প্রথম শ্রেণীর তাগুত শয়তানের বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করেছি। আজকে এই শয়তানের পোষ্টমোর্টের করার ইচ্ছে আছে ইনশায়াল্লাহ। লেখাটি কিঞ্চিত বড় হয়ে যাবে। বিষয়টি পরিস্কার না করে মাঝ পথে আলোচনা ছেড়ে দিলে বিভ্রান্তী বেড়ে যেতে পারে বিধায় এই বিষয়ের ওপর আলোচনা সমাপ্ত করতে হলো। আশা করছি পাঠকরা মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং মুল্যবান সংশোধনী দেবেন।

শয়তান বলতে আমরা একমাত্র বিতারিত ইবলিশকেই বুঝি। কেউ কেউ আবার ধারণা করেন যে, শয়তান কেবল মাত্রই একজনই, সেটা হলো ইবলিশ। অথচ এটা স¤পূর্ণ ভুল ধারণা। শয়তান একা নয়, বরং জ্বীন এবং ইনসানের মধ্যে তার বিপুল পরিমান জনশক্তি রয়েছে। এটা কোরআন এবং সুন্নাহ সমর্থিত রেওয়াত। কোরআন আমাদের কে বলছে যে, শয়তানের সংঙ্গী সাথীরা মুমিনদের কে গোমরাহীর দিকে টেনে নিতে চেষ্টার কোন কমতি রাখে না। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ

وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ

প্রকৃতপক্ষে যারা মুক্তাকী, তাদেরকে যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎ চিন্তা স্পর্শও করে যায় তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে উঠে তারপর তারা নিজেদের সঠিক কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়।

আর তাদের অর্থাৎ (শয়তানের ) ভাই-বন্ধুরা তো তাদেরকে তাদের বাঁকা পথেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তারা কোন ত্রুটি করে না। সুরা আ’রাফ-২০১-২০২।

অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে।

فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَٱلشَّيَـٰطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّۭا

সুতরাং আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে(বহুবচনে) একত্রে সমবেত করব, অতঃপর অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চারপাশে উপস্থিত করব। সুরা মারইয়াম -৬৮।

অন্যদিকে সুরা নাস এ অত্যান্ত স্পষ্ট ভাষায় ওসওয়াসা প্রদানকারী শয়তানের শ্রেণী বিভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কোরআন বলছে-

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا ۚ وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ ۖ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ

" আর এভাবে আমি জিন শয়তান ও মানুষ শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবী শত্রু বানিয়ে দিয়েছি তারা পরস্পরের কাছে মনোমুগ্ধকর কথা ধোঁকা ও প্রতারণার ছলে বলতে থাকে। " -আল আন আম- ১১২

অন্য জায়গায় বলা হচ্ছে-

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ

مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

(আশ্রয় চাও) এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে

যে বারবার ফিরে আসে যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে , সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে। সুরা নাস-৪-৬।

এখানেও শয়তানের শ্রেণী বিভাগ করে জ্বীন শয়তান ও মানুষ শয়তান থেকে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে বলা হয়েছে। শয়তানের কাছ থেকে পানাহ চাওয়ার অর্থ এই নয় যে, আমরা প্রতিদিন সকাল সন্ধায় হাজার বার আউজুবিল্লাহ পড়বো। বরং শয়তানের কাছ থেকে পানাহ চাওয়ার অর্থ হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুশরন থেকে বেচেঁ থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা এবং শক্তিশালী ওসওয়াসা থেকে হেফাজত থাকার জন্য অবিরাম আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। আর এই সাহায্য কামনার দোয়া হিসেবে আমরা আউজুবিল্লাহী মিণাশ শাইত্বোনির রাজিম পড়বো।

মানুষরূপী শয়তানের চক্রান্তে ষোল আনা শরীক হয়ে, আল্লাহর দ্বীনের শত্রুদের সাথে সখ্যতা করে, জীবনের বিস্তৃত অংঙ্গনে শয়তানের দেখানো পদাংক অনুশরন করে, আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানের পরিবর্তে মানুষরুপী শয়তানের দেওয়া বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে, আল্লাহর দ্বীনকে কটাক্ষকারীদের সাথে রমরমা সখ্যতা রেখে এবং শয়তানের মতবাদ প্রতিষ্টার পক্ষে প্রতক্ষ ও পরোক্ষ্য ভাবে সহায়তা করে কেবল মাত্র মসজিদের কোন কোনে বসে কয়েক লক্ষ বার আউজুবিল্লাহর জিকির করায় কোন ফায়দা নেই। এসব হচ্চে আল্লাহর সাথে তামাশার বস্তুর মতো। মদিনার মুনাফিকরা একদিকে মসজিদে প্রথম কাতারে সুন্নাতী পোষাক পড়ে রাসুলুল্লাহর ইমামতিতে নামাজ আদায় করতো,অন্য দিকে নিজেদের তাগুত বন্ধুদের সাথে মিলিত হলে তারা দ্বীনের শত্রুদের সাহায্য করতো। এই জাতিয় মুনাফিকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ

للَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ

যখন এরা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয়, বলেঃ “আমরা ঈমান এনেছি,” আবার যখন নিরিবিলিতে নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলেঃ “আমরা তো আসলে তোমাদের সাথেই আছি আর ওদের সাথে তো নিছক তামাশা করছি।” আল্লাহ এদের সাথে তামাশা করছেন, এদের রশি দীর্ঘায়িত বা ঢিল দিয়ে যাচ্ছেন এবং এরা নিজেদের আল্লাহদ্রোহিতার মধ্যে অন্ধের মতো পথ হাতড়ে মরছে । এরাই হিদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহী কিনে নিয়েছে, কিন্তু এ সওদাটি তাদের জন্য লাভজনক নয় এবং এরা মোটেই সঠিক পথে অবস্থান করছে না।

আলোচ্য স্থানে শয়তান শব্দটিকে বহুবচনে 'শায়াতীন' হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখানে "শায়াতীন' বলতে মুশরিকদের বড় বড় সরদারদেরকে বুঝানো হয়েছে । এ সরদাররা তখন ইসলামের বিরোধিতার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিল । সুরা বাকারা-১৪-১৬।

এই একই রোগে আমাদের কেও পেয়েছে। আমরা সারা দিন দ্বীনের মেহনতের তসবিহ জপি, রাতের বেলা ইসলামের দুষমনদের সাথে আতাত করি, জ্ঞাতসারে হোক আর অজ্ঞাতসারে হোক, তাদের কে নিজেদের সক্রিয় সমর্থন দিয়ে ইসলাম বিরোধী কাজ কর্ম চালাতে উৎসাহিত করি। এই রোগের কুফল বর্ননা করে শেষ করা যাবে না। এই সমস্ত লোকের ঈমান কোন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়, আমলের কথা তো বাদই দিলাম। এদের আমল গুলো কে উড়ন্ত ছাইর মতো বিনাশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈমানদার দের বৈশিষ্ট বর্ননা করনে এভাবে-

مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ

মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ। সুরা ফাতাহ-২৯।

আমাদের বর্তমান ঈমান হচ্ছে আমরা তাগুত ও তার সমর্থকদের প্রতি দয়ালু এবং ঈমানদার সম্প্রদায়ের ওপর কঠোর। এ যেন স¤পূর্ণ উল্টো চিত্র। অথচ ঈমানদারদের সাথে শত্রুতা পোষন করে, তাগুতের সহযোগী হয়ে বা তাগুতের গুনকির্তনে লিপ্ত থেকে হাজারো আমল কোন কাজে আসেনা। এই সত্যটি মুসলমানরা বিশেষ করে হক্কানী দাবিদার মুসলমানরা অন্তরে ধারন করতে পারলেন না। আল্লাহ আমাদের কে হেদায়েত দান করুন।

আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে মানুষ শয়তানরা আমাদের কাছ থেকে শুধু সম্মান আর মর্যাদার মালিকই হয়নি বরং আগ বাড়িয়ে গিয়ে আমরা তাদের নির্ভেজাল আনুগত্য করছি। তাদেরকে নেতৃত্ব্যের আসনে বসিয়ে দিয়েছি। তাদের দেখানো পথে নিজের জীবনের বিস্তৃত অংশ পরিচালিত করছি। এ অবস্থায় আমাদের সামান্য নামাজ রোজা দোয়া কালাম যে আমাদের কোন উপকার আসবে না সেটা তো আমরা বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। মুসলমানদের বর্তমান অবস্থার জন্য তাদের এই কর্ম পদ্ধতিই দায়ী। তারা একদিকে দ্বীনের বাহক দাবি করে, অন্যদিকে দ্বীনের শত্রু মানুষ শয়তানদের কে সম্মানের সাথে নেতৃত্ব্যের আসনে বসিয়ে দেয়। এই অবস্থাকে কোরআন মোনাফেকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

হাদিস শরীফেও এর সমর্থনে রেওয়াত খুজে পাওয়া যায়।

ইমাম আহমাদ , নাসাঈ ও ইবনে হিব্বান হযরত আবু যার গিফারী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন : আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হলাম। তখন তিনি মসজিদে বসেছিলেন। তিনি বললেন , আবু যার ! তুমি নামায পড়েছো ৷ আমি জবাব দিলাম , না। বললেন , ওঠো এবং নামায পড়ো ! কাজেই আমি নামায পড়লাম এবং তারপর আবার এসে বসলাম। তিনি বললেন :

" হে আবু যার ! মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর পানাহ চাও!" আমি জিজ্ঞেস করলাম , হে আল্লাহর রসূল ! মানুষের মধ্যেও কি আবার শয়তান হয় ৷ বললেন হাঁ।

এই হিসেবে আমরা শয়তান কে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।

১। জ্বীন শয়তান

২. মানুষ শয়তান।

প্রথম শ্রেণীর শয়তানের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি ভংগি কিছুটা বিকৃত হলেও দ্বীতিয় শ্রেণীর শয়তান নিয়ে আমরা প্রচন্ড গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছি। আমাদের ধারনা মতে কেবল মাত্র জ্বীন শয়তানই মানুষের দুশমন। অথচ বিষয়টি তেমন নয়, বরং কোরআন শরীফ কোন প্রকার শ্রেণীভেদ ছাড়াই আমাদের কে শয়তানের বিষয়ে সতর্ক করেছে। কোরআন থেকে জানা যায় যে, মানুষের ওপর শয়তান তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং তাকে নিজের অধিনে নিয়ে নেয়। শয়তানের ক্ষপ্পরে কেবল মাত্র সেই লোকেরাই পড়তে পারে যারা দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত বিক্রি করে দেয়। এরা চরম মিথ্যাবাদি হয়।

এই বিষয়ে আল্লাহ পাক বলেন-

هَلْ أُنَبِّئُكُمْ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ ٱلشَّيَـٰطِينُ

تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍۢ

আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে?

তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, গোনাহগারের উপর। সুরা আশশুয়ারা-২২১-২২২।

وَقُل لِّعِبَادِى يَقُولُوا۟ ٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ كَانَ لِلْإِنسَـٰنِ عَدُوًّۭا مُّبِينًۭا

আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম কথাই বলে। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সুরা আল ইসরা-৫৩।

শয়তান নিজে তাগুত হয়ে বসে থাকেন বরং মানুষদের মধ্য থেকে বহু মানুষদের কে নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়, অতপর তারাও স্বাক্ষাত তাগুতের রূপ ধারন করে এবং সর্বোতউপায়ে আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধাচারন করতে থাকে। আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়া থেকে মুছে দিয়ে নিজেদের খায়েশ মতো দুনিয়ায় রাজত্ব্য করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়। এ জাতিয় লোকেরা তাগুত এবং শয়তান তাদের অবিভাবক। কোরআন বলছে-

ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱلطَّـٰغُوتِ فَقَـٰتِلُوٓا۟ أَوْلِيَآءَ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۖ إِنَّ كَيْدَ ٱلشَّيْطَـٰنِ كَانَ ضَعِيفًا

যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর পথে। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।

সুরা নিসা-৭৬।

এখানে মক্কার নেতাদের কে তাগুত হিসেবে চিহ্নিত করে শয়তানকে তাদের অভিবাক হিসেবে পরিচয় করে দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম কে জানিয়ে দেওয়া হলো যে, যুগে যুগে যারাই শয়তানের পদাংক অনুশরন করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্টায় বিরোধীতা করবে এই সমস্ত লোকদের কে তাগুত হিসেবে গ্রহণ করবে এবং নিজেদের ঈমান কে পূর্ণতা দিতে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজের ঈমানের ঘোষনা দিতে হবে।

একথা মনে রাখতে হবে যে, মানুষ শয়তান বা মানুষরুপি তাগুতদের কে চিনতে হলে কোরআনের সাহায্য নিতে হবে। কেননা কোরআনের বহু জায়গায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ননা রয়েছে। এ কারনে ইলম সম্পন্ন হকপন্থীরা মুহুর্ত্যে মধ্যে মানুষ শয়তান কে চিহ্নিত করতে পারেন। এতে করে তারা তাদের বিরুদ্ধচারন করতে পিছ পা হন না। যে কারনে প্রত্যেক যুগে ঈমানদার লোকের পরিচয় জানতে হলে কি করতে হবে এই বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ বলেন- হর পরস্ত লোকের সন্ধান পেতে চাও, বেশি দুরে যাবার দরকার নেই, তাগুতের তীরের নিশানা খুজে নাও।

মানুষরূপী শয়তানের পরিনতি অত্যান্ত ভয়াবহ। সাথে সাথে তাদের অনুশারীদের করুন অবস্থাও চিত্রিত হয়েছে কোরআনের বিভিন্ন জায়গায়। এই বিষয়ে কয়েকটি আয়াত দিয়ে আজকের আলেচনা শেষ করছি। আল্লাহ বলেন-

احْشُرُوا الَّذِينَ ظَلَمُوا وَأَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ

مِن دُونِ اللَّهِ فَاهْدُوهُمْ إِلَىٰ صِرَاطِ الْجَحِيمِ

وَقِفُوهُمْ ۖ إِنَّهُم مَّسْئُولُونَ

مَا لَكُمْ لَا تَنَاصَرُونَ

بَلْ هُمُ الْيَوْمَ مُسْتَسْلِمُونَ

وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ

قَالُوا إِنَّكُمْ كُنتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ الْيَمِينِ

قَالُوا بَل لَّمْ تَكُونُوا مُؤْمِنِينَ

وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُم مِّن سُلْطَانٍ ۖ بَلْ كُنتُمْ قَوْمًا طَاغِينَ

فَأَغْوَيْنَاكُمْ إِنَّا كُنَّا غَاوِينَ

فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَا ۖ إِنَّا لَذَائِقُونَ

فَإِنَّهُمْ يَوْمَئِذٍ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ

“(হুকুম দেয়া হবে) ঘেরাও করে নিয়ে এসো

সব জালেমকে, তাদের সাথিদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব প্রভুদের তারা আনুগত্য করতো তাদেরকে তারপর তাদের সবাইকে জাহান্নামের পথ দেখিয়ে দাও।

আর এদেরকে একটু থামাও, এদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে।

“ তোমাদের কি হয়েছে, এখন কেন পরস্পরকে সাহায্য করো না?

আরে, আজ তো এরা নিজেরাই নিজেদেরকে (এবং একজন অন্যজনকে) সমর্পণ করে দিয়ে যাচ্ছো।” এরপর এরা একে অন্যের দিকে ফিরবে এবং পরস্পর বিতর্ক শুরু করে দেবে। (আনুগত্যকারীরা তাদের নেতাদেরকে) বলবে, “ তোমরা তো আমাদের কাছে আসতে সোজা দিক দিয়ে। ” তারা জবাব দেবে, “না, তোমরা নিজেরাই মু’মিন ছিলে না। তোমাদের ওপর আমাদের কোন জোর ছিল না। বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে বিদ্রোহী। শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের রবের এ ফরমানের হকদার হয়ে গেছি যে, আমরা আযাবের স্বাদ গ্রহণ করবো৷ কাজেই আমরা তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম কারণ আমরা নিজেরাই বিভ্রান্ত ছিলাম।”এভাবে তারা সবাই সেদিন শাস্তিতে শরীক হবে।

সুরা সাফফাত-২০-৩০।”

قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ فِي النَّارِ ۖ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰ إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَٰؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ

وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لِأُخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ

إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ

আল্লাহ বলবেনঃ যাও, তোমরাও সেই জাহান্নামে চলে যাও, যেখানে চলে গেছে তোমাদের পূর্বের অতিক্রান্ত জিন ও মানবগোষ্ঠী৷ প্রত্যেকটি দলই নিজের পূর্ববর্তী দলের প্রতি অভিসম্পাত করতে করতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অবশেষে যখন সবাই সেখানে একত্র হয়ে যাবে তখন পরবর্তী প্রত্যেকটি দল পূর্ববর্তী দলের ব্যাপারে বলবে, হে আমাদের রব! এরাই আমাদের গোমরাহ করেছে, কাজেই এদেরকে আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি দাও। জওয়াবে বলা হবে, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে কিন্তু তোমরা জানো না ।

প্রথম দলাটি দ্বিতীয় দলকে বলবেঃ (যদি আমরা দোষী হয়ে থাকি) তাহলে তোমরা কোন দিক দিয়ে আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ছিলে?এখন নিজেদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।

নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তাদের জন্য কখনো আকাশের দরজা খুলবে না। তাদের জান্নাতে প্রবেশ এমনই অসম্ভব ব্যাপার যেমন সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করানো। অপরাধীরা আমার কাছে এভাবেই বদলা পেয়ে থাকে।

সুরা আ’রাফ-৩৮-৪০।

নিজের ঈমান যদি সত্যিই প্রিয় হয় তাহলে ভালো করে নিজের কর্মপদ্ধিতির দিকে তাকান আর ভাবুন যে, আপনার জীবনের কোন অংশে তাগুতের প্রতি মোহাব্বাত বা তার অনুসরন আছে কিনা। মানুষরূপী তাগুতরা আপনার জীবনে নেতৃত্ব্যের আসনে বসা আছে কিনা ? আল্লাহ আমাদের কে বুঝার তৌফিক দান করুন।

পরবর্তি পর্বে তাগুতের অন্যান্য প্রকার ভেদ নিয়ে সংক্ষিপ্ত করে আলোচনা করবো ইনশায়াল্লাহ। চেষ্টা করেছি বিরোধপূর্ণ আলোচনা এড়িয়ে যেতে, আমি জানি না আমি ভুল কিছু বলছি কিনা। পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে কমেন্টের মাধ্যমে আমার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আল্লাহ আমাদের কে সহিহ পথে রাখুন। আমিন।

(চলবে)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×