গত দুটি পর্বে আমরা তাগুত শব্দটির মর্ম জানার গুরুত্ব্য নিয়ে আলোচনা কালে বলেছিলাম যে, এই তাগুতের সাথে কুফরি না করে কেউ সত্যিকারের ঈমানদার হতে পারে না। এই বিষয়ে আমাদের একজন মুবাল্লিগ ভাই ঘোর আপত্তি জানিয়ে আমার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, এতে অনেক মুখলেস ঈমানদার লোকের মনে আঘাত লাগতে পারে। তিনি বললেন, আমিও তো তাগুতের অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝি না, তার মানে কি আমিও মুসলমান নই। এটি স¤পূর্ণ রুপে বিভ্রান্ত কথা। যে কোন কথার একটি উদ্ধেশ্য থাকে। আয়াতের অর্থ সরাসরি প্রয়োগ করে সাধারন মুসলমানদের কে কুফরির খেতাব দেওয়া কোন অবস্থায় ভালো নয়।
বিষয়টি নিয়ে আমি তার সাথে কোন বিতর্ক করতে চাইনি। তার কারণ হচ্ছে এই যে, তিনি কোরআনের কোন আয়াত কে সরাসরি প্রয়োগ করতে নিষেদ করে দিয়ে তার জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার পরিচয় আমার সামনে তুলে ধরেছেন। দীর্ঘদিন ধরে দ্বীনের পতাকা হাতে নিয়ে তিনি বিদেশ সফরে ইসলাম কে কতটুকো বুঝতে শিখেছেন তার একটি নমুনা আমি তার বয়ানে খুজে পেয়েছি। সত্যিকার অর্থে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, যে সকল ভাইরা আমলে ইখলাসে অগ্রগামী তাদের আকীদার দুর্বলতা অত্যান্ত প্রকট, বিশেষত ইসলাম চিরন্তন হুকুম সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট কোন ধারণাই নেই। অন্যদিকে যাদের আকীদা বিশ্বাস তুলনামুলক ভাবে বিশুদ্ধ তাদের বেশির ভাগ আমলের কমতিতে ভুগছেণ। এ দেশের মুসলমানদের উন্নতির জন্য এই দুটি সাইটে কাজ করা অত্যান্ত জরুরী। আমি তার সাথে বিতর্ক করে কোন লাভ হবে না সেটা বুঝতে পারছিলাম । ইসলাম সম্পর্কে কতটুকো অজ্ঞ হলে একজন মুসলমান এমন দাবি করতে পারে যে, কোরআনের আয়াত কে সরাসরি প্রয়োগ করা যাবে না। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে বহু আয়াত এমন আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা বা তাহকিক ছাড়া আমল করা বা প্রয়োগ করা যাবে না বলে ফতোয়া দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাবে। এমন বহু হুকুম রয়েছে যেগুলো এ জাতিয় যুক্তি দিয়ে পুর্বের যুগের কাফের জন্য খাস করে বরাদ্দ করে নেওয়া হবে। এ ফল দাড়াবে এই যে, ইসলামের চিরন্তর শিক্ষার মধ্যেই বিকৃতি আসতে শুরু করবে এবং সত্যিকারের ইসলামী আকীদা বিশ্বাস একটু একটু করে বিনাশ হয়ে যাবে।
এই আয়াতগুলোর দিকে তাকান।
فمن يكفر بالطاغوت ويؤمن الله فقد استمسك بالعروة الوثقي لا انفصام لها
অর্থাৎ:- যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপন করে, সে ধারণ করে নেয় সুদৃঢ় রজ্জু যা কখনো ছিন্ন হবে না - আল বাক্বারাহ ২৫৬।
অন্য আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছন:-
ولقد بعثنا في كل أمة رسولا أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت.
অর্থাৎ:- আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো - আন-নাহল-৩৬
এসব আয়াত হচ্ছে মুহকামাত আয়াত। যেসবের অর্থ ও ভাবের মধ্যে বক্রতা সন্ধান করার কোন সুযোগ নেই। উম্মাতের মধ্যে নবী প্রেরনের উদ্ধেশ্য হচ্ছে আল্লাহ ও তাগুতের পরিচয় তুলে ধরে একমাত্র আল্লাহর গোলামী করার জন্য লোকজন কে আহ্বান করা। আল্লাহর গোলামী কে পরিপূর্ণ করার শর্ত হিসেবে যোগ করা হয়েছে তাগুত এর পরিচয় জেনে তাকে অস্বিকার করাকে। প্রথম আয়াত আামাদের কে দ্ব্যার্থহীন ভাবে বলছে যে, তাগুতের সাথে কুফরির না করে কেউ তাওহীদের কথা উচ্চারন করতে পারে না। এই হিসেবে নবী ওয়ালা কাজ বলতে আমরা বুঝতে পারছি, আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরে তাগুতের সাথে কুফরি শিক্ষা দিয়ে তার সাথে শিরক বিহীন একনিষ্ট ইবাদতের শিক্ষা দেওয়া। এই হিসেবে আমাদের পর্যালোচনা করা দরকার যে, হুজুর (স) রেখে যাওয়া কাজ কে আমরা তার মতো করে আঞ্জাম দিতে পারছি কি না। বর্তমান জামানায় তাগুতকে পাশ কাটিয়ে, তাগুতের আলোচনা এড়িয়ে গিয়ে কথিত নবী ওয়ালা কাজ করার প্রবনতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে তাগুতের সাথে আপোষ করে, নিজের ভিতরকার তাগুত কে জাগ্রত রেখে বহু মানুষ ইসলাম কায়েমের জন্য প্রাণ দিচ্ছে অকাতরে। সত্যি অবাক করা আমাদের ইসলাম। এই সবের কারণ একটাই, সেটা হলো তাগুতের সংঞ্জাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে আতœতৃপ্তিতে ভুগতে থাকা। মনে রাখা দরকার যে, যে কোন প্রকার তাগুতের সাথে যতটা আপোষ করা হবে, প্রত্যেকের ঈমান এবং আমলে ততটুকো বিকৃতি আসতে শুরু করবে। এক সময় কেবল খোলশ পাওয়া যাবে, দেহটি চলে যাবে। প্রানহিন দেহের যেমন কোন মুল্য নেই, তেমনি মজুবত ঈমান ছাড়া কোন আমলেরও কানাকড়ি মুল্য নেই। দ্বীনকে খালেস না করে আল্লাহর ইবাদত করে কোন লাভ নেই। অন্যের দ্বীনের বেড়ি গলায় ঝুলিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আল্লাহর দ্বীনের ফেরি করার আগে কোরআনের এই আয়াতটি পড়ে নেওয়া দরকার।
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে , তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে , নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দীন। সুরা আল বাইয়্যেনাহ-৫।
প্রথমে দ্বীনকে খালেস করো, তারপরে নামাজ রোজা, যাকাতের চিন্তা করো। আর দ্বীনকে আল্লাহর জন্য খালেস করার অর্থ হচ্ছে সকল প্রকার তাগুতকে পরিত্যাগ করে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো। তাগুতের সাথে সম্পর্ক রেখে, তার সাথে আপোষ করে, তার সহযোগীতা নিয়ে, তার হুকুমের নির্ভেজাল আনুগত্যের অধিনে জীবন যাপন করে আল্লাহর জন্য দ্বীনকে খালেস করার কোন সুযোগ নেই।
তাগুতের প্রকার ভেদ।
প্রথমে জানা দরকার যে, তাগুতের নিজস্ব কোন রং বা রূপ নেই। তাগুতের রং হচেছ পানির মতো। পানি যেমন নিজস্ব অবস্থার পরিপক্ষেতী রং পরিবর্তন করে, তেমনি তাগুতও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থানের পরিবর্তনের কারনে নিজের অবয়বের পরিবর্তন সাধন করে সময়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেয়। তাগুত যে কোন রূপ ধারন করুক না কেন তার কর্মপরিকল্পনা বা কর্মের ধাচ একই থাকে বিধায় যুগে যুগে জ্ঞানী লোকেরা তাগুতের সমালোচনায় পিছপা হননি। তারা প্রত্যেক যুগের নূতন রূপে আর্বিভুত তাগুত সম্পর্কে মুমিনদের সতর্ক করেছেন। এই কাজে তারা নিন্দুকের নিন্দা আর অত্যাচারীর অত্যাচার কে আমলে নেননি। ইতিহাস খুললে তার ভুরি ভুরি প্রমান পাওয়া যাবে।
আমাদের মাঝে বহুল পঠিত কিতাব,ফাযায়েলে আমলে এই তাগুতের অনুবাদ করা হয়েছে এবাবে- যে মুতিকে অস্বিকার করলো এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো....।
এই অনুবাদের প্রতিক্রিয়া অত্যান্ত করুন হয়েছে। তাগুত কে সংকির্ন অর্থ করার কারনে অনেকের কাছে এখনো ঈমানের সঠিক সংঞ্জাই পৌছে নাই। যে কারনে তারা সারাদিন ঈমানের মেহনত করে রাতের বেলা অজ্ঞাতসারে তাগুতের সাথে ডিনার খায়। বিষটি সবার ক্ষেত্রে সমাভবে প্রযোজ্য তা নয়, বরং অধিকাংশের অবস্তা তার থেকেও খারাপ। তাগুতের এই অর্থের ফলাফল এটাই দাড়ালো যে, মুসলমানরা মনে করছে আমরা তো মুর্তিকে ঘৃনা করি অতএব আমাদের ঈমান পরিপূর্ণ আছে, কিন্তু অন্য যে সকল অর্থে তাগুতের পরিচয় পাওয়া যায়, সেই সব তাগুত তার গলায় দিবানিশি ঝূলতে থাকে, অথচ বেচারা বেচারা অজ্ঞতার কারনে বুঝতেও পারেনা। এটা হয়েছে তাগুত কে সংকির্ন অর্থে তুলে ধরার কারনে।
পরবর্তিতে কোরআনের মুহকামাত আয়াতের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি কে আরো পরিস্কার করে দেবো ইনশায়াল্লাহ।
অনেকে বলেন তাগুত পাঁচ প্রকার। কেউ বলেন ছয় প্রকার। এই বিষয়ে মতবিরোধের কারণ হলো সমসাময়িক যুগের সাথে মিশে গিয়ে তাগুতের নতুন অবয়বে আতœপ্রকাশ করা। তাগুতের নতুন রূপ আর অবয়ব কে যদি নতুন নাম দেওয়া হয় তাহলে তাগুতের প্রকার ভেদ দাড়াবে কয়েক হাজারে। কিন্তু তাগুতের সংজ্ঞার মধ্যেই তার প্রকার ভেদ নিহীত রয়েছে। আমরা বিষয়টি কে পরিস্কার করে দেওয়ার জন্য সরাসরি কোরআনের সহায়তা নেবো।
তাগুত শব্দটি শব্দের ক্রিয়া মুল ত্বগা র বহুবচন। এটি কোরআনের নিজস্ব পরিভাষা থেকে উৎসারিত। হযরত নুহ আ এর যুগের জ্বলচ্ছাসের ঘটনাটিকে আল্লাহ পাক এভাবে বলেন-যে সময় পানির তুফান সীমা অতিক্রম করলো, তখন আমি তোমাদেরকে জাহাজে সওয়াব করিয়েছিলাম- সুরা হাক্কাহ-১১।
এই আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন পানির সিমালংঘনের শব্দটি কে ত্বগা দিয়ে প্রকাশ করলেন। পানি তাগুত হয়ে গেল অর্থ্যাৎ সে তার সিমার বাইরে চলে গেলো এবং বিপর্যয় তৈরি করলো। এই থেকে তাগুতের ভাবধারা জন্ম লাভ করেছে এবং বিষয়টি কে মাথায় রাখলে তাগুতের প্রকার ভেদ বুঝতে সহজ হবে।
এবারে কিছু কমন, পরিচিতি তাগুতের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. শয়তান।
সমস্ত তাগুতের শিরোমনী। সত্যিকার অর্থে যতপ্রকার তাগুতের আলোচনা হোক না কেন, তার সব গুলোর সাথে শয়তানের সরাসরি যোগসুত্র রয়েছে। শয়তানের প্ররোচনা ছাড়া কোন শক্তিরই তাগুত বনে যাবার সুযোগ নেই।
শয়তানের তাগুত হবার প্রথম কারণ হচ্ছে সে নিজে খোদা তায়ালার হুকুম অমান্য করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং আল্লাহর বান্দাদের কে গোমরাহ করে নিজের হুকুমের আনুগত্য করানোর চ্যালেঞ্জ প্রদান করেছে এবং এই কাজে আল্লাহ পাকের সহায়তা চেয়েছে। বিশেষ পরিকল্পনাও শয়তানের কৃত কর্মের প্রতিদান হিসেবে তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়। সেই থেকে শয়তান মানুষকে গোমরাহ করার জন্য নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে যেস নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
সুরা আ’রাফে এই বিষয়ে বলা হচ্ছে-
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيم
مَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَّدْحُورًا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ
সে(ইবলিশ) বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করছো তেমনি আমি ও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্যে ওঁত পেতে বসে থাকবো,
সামনে-পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না।
আল্লাহ বললেনঃ “বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত অবস্থায়৷ নিশ্চিতভাবে জেনে রাখিস ,এদের মধ্য থেকে যারাই তোর অনুসরণ করবে তাদেরকে এবং তোকে দিয়ে আমি জাহান্নাম ভরে দেবো। সুরা আ’রাফ-১৬-১৮।
এ থেকে প্রমানিত হচ্ছে যে, শয়তান কেবল হুকুম অমান্যই করেনি, সাথে সাথে অন্যকে হুকুম অমান্য করানোর চেষ্টাও করছে এবং নিজের পথে লোকদের কে আহ্বান করে তাদের আনুগত্য গ্রহণ করতে চাচ্ছে । তাই দুনিয়ার প্রথম শ্রেণীর তাগুত হচ্ছে শয়তান। আর যত তাগুত উৎপত্তি হবে এগুলো শয়তানের শাখা প্রশাখা বা শয়তান কৃর্তক এজাজত প্রাপ্ত বলতে হবে।
কেয়ামতের ময়দানের শয়তানের ইবাদত করার কারনে কিছু সংখ্যক বনী আদম কে যখন জাহান্নামে দেওয়া হবে তখন তারা অবাক হয়ে যাবে যে, কি এমন কারণ ঘটলো যে আমাদের কে জাহান্নামে দেওয়া হচ্ছে। আমরা তো দুনিয়াতে অত্যান্ত ধর্মভিরু আমলদার ছিলাম, সামজিক ভাবে আমাদের কে ধার্মিক মনে করা হতো, অথচ আজ আমাদের কোন আমল কবুল হলো না কেন, কি এমন কারণ ছিল। তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দিযে বলা হবে-
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
وَأَنِ اعْبُدُونِي ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ
হে আদম সন্তানেরা!আমি কি তোমাদের এ মর্মে হিদায়াত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু এবং আমারই বন্দেগী করো, এটিই সরল-সঠিক পথ? সুরা ইয়াসিন-৬০-৬১।
এই আয়াতের চমৎকার ব্যাখ্যা রয়েতে তাফসিরে কবিরে।
দুনিয়াতে এমন কোন ধর্ম বা জনপদ পাওয়া যাবে কি যেখানে লোকজন শয়তান কে ভালো বেসে তার ইবাদত করছে। বরং দুনিয়ার চতুরদিক থেকে তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ কেয়ামতের ময়দানে আদম সন্তানের ওপর সব থেকে বড় যে অভিযোগটি আনা হবে সেটি হলো শয়তানের ইবাদত করা। অথচ দুনিয়ার সকল ধর্মের লোকেরা শয়তান কে প্রতিনিয়ত লা’নত করে এবং তার থেকে বাচাঁর জন্য নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী কাজ করে যায়। তারপরেও কি ভাবে বলা যেতে পারে যে, মানুষ শয়তানের ইবাদত করছে ?
এখানে মুলত ইবাদত শব্দটি নির্ভেজাল আনুগত্য অর্থে ব্যবহ্রত হয়েছে। কাউকে সিজদা দিয়ে তার পায়ের নিকট প্রসাদ দেওয়াই ইবাদত নয়,বরং তার আনুগত্য করাও একই রকমের ইবাদত। শয়তানের দেখানো যে কোন মতবাদ, রসম রেওয়াজ বা হুকুম কে চোখ কান বন্দ করে ধর্ম বা প্রগতি মনে করে আনুগত্য করাই হচেছ শয়তানের ইবাদত। কেউ স্বিকার করুক বা না করুক, শয়তান কে লা’নত করেও কোন লাভ হবে না যদি শয়তানের আনুগত্য বন্দ না করা হয়। তাগুতের এই পরিচয় পাওয়ার পরে একজন মানুষের ঈমানদার হওয়ার জন্য প্রথম দায়িত্ব্য হচ্ছে শয়তানের দেখানো বা শয়তানের উদ্ভাবিত যে কোন চিন্তা চেতনা, সামজিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা ধর্মীয় প্রথা কে স¤পূর্ণরুপে অস্কিকার করা এবং তার বিরুদ্ধ বিদ্রোহ ঘোষনা করে ঈমানের ঘোষনা দেওয়া এবং সে সেব ক্ষেত্রে আল্লাহ বিধান কে তালাশ করা এবং তারই আনুগত্য করা। এ বিষয়ে কোরআনের আরেক জায়গায় বিষয়টি এভাবে এসেছে- তোমরা শয়তানের পদাংক অনুশরন করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুষমন। সুরা বাকারা।
এই শয়তানের মধ্যেও প্রকার ভেদ আছে। পরবর্তি পবে আমরা সেটা নিয়ে সামান্য আলোচনা করবো ইনশায়াল্লাহ। (চলবে)