তাগুত শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। এই শব্দটির ব্যবহার প্রতিনিয়ত আমরা করে থাকি বিভিন্ন লেখা ও বয়ানে কিন্তু কম সংখ্যক মুসলমান এমন রয়েছেন যাদের কাছে এর আভিধানিক অথবা শরীয়াতের প্রামানিক অর্থ সমুহ অবশিষ্ট রয়েছে। সাধারন মুসলমান বাদ দিয়ে আমরা যদি আমাদের অনেক আলেম, ওয়ায়েজীন, মুবাল্লিগ বা দ্বীনের দায়ীদের দিকে তাকাই তাহলেও আমরা বুঝতে পারবো যে, এই শব্দটির গভিরে পৌছা ফিকির করা বা ধারনা নেওয়ার চিন্তাও আমাদের অনেক ভাইদের মধ্যে নেই। অথচ দ্বীনের মৌলিক দৃষ্টি ভংগি বুঝতে হলে এই শব্দটির অর্থ অনুধাবন করা অতি গুরুত্ব্যপূর্ণ। অন্য কথায় বলতে গেলে আল্লাহর প্রতি এবং তার দেয়া দ্বীনের ওপর ঈমানের পরিপক্কতা এবং স্থায়ীত্ব্য সর্বাংশে নির্ভর করে এই তাগুতের সংঞ্জা উপলদ্ধির ওপর। কোন এক বুজুর্গ সঠিকই বলেছেন যে, তাগুত কে যে চিনেনি, তার পক্ষে আল্লাহর হুকুমকে চেনাও দুষ্কর বা অসম্ভব। অথচ আমরা এই ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। তাগুতের এই আলোচনা করার পিছনে একটি কারণও রয়েছে। যদিও অনেকে জানেন যে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাজহাবী কোন্দল, ব্যক্তি বা দল গত বিরোধকে পুজি করে কারো বিরুদ্ধে কোন লেখা লিখতে পছন্দ করি না। ঘটনাটি শেয়ার করার কারনে আমাকে কেউ ভুল বুঝার চেষ্টাও করবেন না।
ফেসবুকের বিভিন্ন বন্ধুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আমি শেয়ার করেছি এবং তাদের মতামত জানতে চেয়েছি। আমি অবাক হয়েছি যে, ভালো ভালো আলেমরাও আমার অনুরোধের কোন জবাব দিতে পারেননি। ফেসবুকে যারা আমাকে চেনেন তারা খুব ভালো করেই জানেন যে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাযহাবী কোন্দল, বা সিলসিলাগত বিরোধ থেকে নিজেকে হেফাজত করার চেষ্টা করেছি। বাধ্য হয়ে গেলে কারো কারো কমেন্টের জবাব দিয়েছি মাত্র কিন্তু কোন আক্রমন করে কাউকে আঘাত করার চিন্তাও করিনি।
আমাদের মধ্যকার ছোট খাটো সমষ্যাগুলো এড়িয়ে না গিয়ে ব্যাপক মাজহাবী কোন্দলে জড়িয়ে পড়ার কারনে আজকে বাতিল আমাদের কে দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়ার সাহস করছে অথচ আমরা দাবি করছি যে, এই দেশ নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ। আমরা এমন এক মুসলিম দেশে বাস করি যেখানে নবীর অবমাননা করার প্রতিবাদে লংমার্চ করতে হয় এবং সেই লংমার্চে আবার মুসলমান নামধারী তরুনরাই ব্যাপক হারে বাধা দিয়ে নবী প্রেমিক হক্কানী আলেম ওলামা এবং মুসাফিরদের কে দারুন ভাবে জখম করেছে। রাতের আধারে নবী প্রেমীক জনতাকে তার টাকায় চলা পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে, কাউকে চিরস্থায়ী পংঙ্গুত্ব বরন করে নিতে হয়েছে। দেশ বরেণ্য আলেম ওলামাদের আহ্বানের পরেও এমন কিছু মুসলমান ছিলেন যারা এই মহতি কাজে জান মাল (?) দিয়ে বাধা দিয়েছেন। এমন অনেক মুসলমান দেখেছি যারা ব্যক্তিগত ভাবে নামাজ কালাম করছেন এবং মসজিদে বসে আল্লাহর দ্বীনের ফিকির করছেন কিন্তু শাহবাগের জাগরন কে যুগান্তকরী হিসেবে প্রশংসা করছেন এবং নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো কে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়ে আলেম ওলামাদের কে ধর্ম ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করতেও দ্বিধা করেননি।
এসব ঘটনা বলি সামনে রাখলে আমাদের সামনে কতগুলো প্রশ্ন এসে উকি মারে বার বার। নিজের মনকে যতই প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করেছি ততই উতলা হয়েছি। বার বার ভেবেছি , ইসলামের যে মৌলিক ঘোষনা রয়েছে, ইসলামে প্রবেশের যতগুলো শর্ত রয়েছে তার সবগুলো কি আমার মধ্যে আছে ? যত বার ভেবেছি ততবার কেবল মাত্র কিছু প্রশ্ন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। কিন্তু যত অধ্যায়ন করেছি তার জবাব কেবল মাত্র একটি পেয়েছি যে, আসলে আমরা এখনও ঈমান গ্রহণ করতে পারিনি। ঈমানের নামে যা কিছু পেয়েছি তা কেবল মাত্র বাপ দাদার ওয়ারিশ সুত্রে পাওয়া কিছু গল্প কাহিনী আর আনুষ্টানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কোরআন হাদিসের সুস্পষ্ট ঘোষনা অনুযায়ী যে কোন মানুষের জন্য বাপদাদার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ওয়ারিশ হবার স¤পূর্ণ সুযোগ থাকলেও তার ঈমানের ওয়ারিশ হবার কোন সুযোগ নেই। মিল্লাতের অংশিদারিত্ব্য কেবল ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল কেননা তার কর্মকান্ডের জন্য তাকেই জবাবদীহি করতে হবে, এ কারনে তার ঈমানের জন্য তাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কোন অবস্থায় জন্ম সুত্রে ঈমানদার দাবি করার মাঝে কোন ফায়দা নেই এবং ইসলামে সেই সুযোগও রাখেনি। ইসলাম বলে প্রত্যেক মানুষ জন্ম সুত্রে মুসলাম ফিতরাত নিয়ে জন্ম নেয় কিন্তু তার পিতা মাতা তাকে কাফের বানিয়ে দেয়। তাহলে বুঝা গেল যে, পিতা মাতা ভূমিকা একটি মানুষের কুফরির কারণ।
এখানে আরো একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া জরুরী ছিল যে, যদি পিতা মাতার কারনে কেউ কাফের হয়ে যায়, তাহলে এতে সেই ছেলেটি কি দোষ। তাকে কেন কুফরির গহ্বরে সারা জীবন কাটাতে হবে। এ সমস্ত কারনে বিষয়টি নিয়ে গভির ভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। আমার আলোচনার বিষয়টি এতটা জটিল যে, সাধারন কোন মানুষ শুনলে হয়তো বলতে থাকবে যে, নতুন কোন মতবাদ আমি আবিস্কার করছি বা মনগড়া কথা কে ধর্মের দোহাই দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছি। এ কারনে ঈমানের ওপর কিছু গভির আলোচনা হওয়া দরকার। হয়তো এতে আমাদের কিছু উপকার হতেও পারে। এর আগে কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া একান্ত জরুরী।
১. ইসলামে প্রবেশ করার শর্ত বলতে কিছু আছে কি না, যদি থেকেই থাকে তাহলে তা কি ?
২. সেই শর্তগুলো একজন মুসলমান ভাঙ্গতে পারেন কিনা ?
৩. শর্ত ভেঙ্গে ফেলার পরে একজন ঈমানদারের জীবনে কেমন পরিবর্তন লক্ষ করা যায় বা কিভাবে উপলদ্ধি করা যাবে কে ঈমানের শর্ত ভেংগেছেন।
৪. ঈমানের প্রাথমিক শর্তগুলোকে ভেংগে ফেলার পরে একজন মুসলমানের চরিত্র সার্বিক চিন্তাধারা কেমন হয় বা তাদের কার্যকলাপে কি রকম পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় ?
এসব প্রশ্নগুলোর সাথে আনুষাঙ্গিক যত প্রশ্ন আছে তার উত্তরও নির্ভর করে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তরের ওপর। অন্যদিকে আরো গুরুত্ব্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, ইসলাম, মুসলীম এবং ঈমান নামক শব্দগুলির সংজ্ঞার সাথে আমার এমন কি জুলম করেছি যাতে আজকে এমন সব মানুষকেও মুসলমান হিসেবে স্বিকৃতি দিতে হচ্ছে যাদে কাছে ইসলাম শব্দের সঠিক অর্থও পর্যন্ত নেই, তাদের কাছে নবীর সম্মানের কোন মুল্য নেই। কোরআনের প্রতি তাদের ঈমানের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র একটি ঘোষনাই অবশিষ্ট রয়েছে যে, এটি খোদাতায়ালার প্রেরিত পবিত্র কিতাব যা তেলাওয়াত করলে মানুষ কিছু নেকি পাবে। অথচ এই কিতাবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাষায় তারা বিদ্রোহ করে, এর হুকুম গুলো কে সেকেলে বা বেকডেটেড দাবি করে এর কিছু কিছু বিষয় কে গতানুগাতিক করার চিন্তাও করে বা এর হুকুম কে সংশোধন করে নিজের মর্জিমতো করার সাহস দেখায়।
এই সব মৌলিক প্রশ্ন সমুহকে এড়িয়ে গিয়ে আমরা যতই ঈমানের দাবি করি না কেন বা অন্যকে ঈমানের পথে ডাকি না কেন তাতে অবস্থার কোন পরিবর্তন হতে পারে না। হাজারো মিছিল মিটিং করে বা শত শত দিন হরতাল দিয়েও এই সমষ্যার কোন সমাধান হতে পারে না।
দ্বীন প্রচারের পুর্ব র্শত হচ্চে দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করা। কুফরের সাথে আপোষ করে বা ইসলামের মধ্যে সংযোজন বিয়োজন করে কোন অবস্থায় মুসলীম মিল্লাতের কোন কল্যাণ হতে পারে না। একজন মুসলমান কোন অবস্থায়ই ঈমানের সেই জজবা পেতে পারে না যে ঈমানের সংঞ্জা কোরআনের প্রতিটি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই কারনে আমার মনে হয়েছে যে, খোদা তায়ালা যে ক্ষুদ্র জ্ঞান দান করেছেন তার ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যেতে পারে।
তাবলীগ জামায়াতে একটি বড় জামায়াত আমাদের মসজিদে এসেছিল। তাদের একজন বয়ানে পরামর্শ দিলেন যে, ঈমান মজবুত করতে হবে, নবীর প্রেম ও তার সুন্নাতের মোহাব্বাত অন্তরে পয়দা করতে হবে ইত্যাদি। যথারিতি তিনি পরামর্শ দিয়ে তার বয়ান শেষ করলেন। ঈমান মজুবত করা এবং নবীর প্রেম অন্তরে প্রতিষ্টা করার জন্য সময় লাগানোর কথা বললেন। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি তাবলীগ জামায়াতের সাথে সময় লাগানোর কথা বললেন।
আলোচনা শেষ হলে আমি মসজিদের বারান্দায় তার সাথে মিলিত হলাম। তিনি আগ্রহ নিয়ে আমাকে তার পরিচয় দিলেন। বহু বছর তিনি তাবলীগের সাথে আছেন বলে জানালেন। তার বর্ননা অনুযায়ী তিনি ভারত এবং পাকিস্তানেও সফর করে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আমি প্রশ্ন করলাম যে, ভারত এবং পাকিস্তানে আপনি কি দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন নাকি দ্বীন শিখতে গিয়েছিলেন ? তিনি বললেন, দাওয়াত দিতে গেলেই তো দ্বীন শেখা হয়ে যায়। আমি আপত্তি করে বললাম যে, কোন কিছুর দাওয়াত দিলেই যে তা শিখা হয়ে যাবে তা মনে হয় যুক্তি সংগত নয় কারণ এমন অনেক বিষয় আছে যা বাইরে এবং ভিতর থেকে উপলদ্ধি করতে হয়। ঈমানের বিষয়টি এমননি।
উদাহারন হিসেবে ধরুন মাকরসার বাসার কথা। কোরআনে আয়াত অনুযায়ী এই মাকরসার বাসাই সব থেকে দুর্বল এবং ভঙ্গুর, অথচ দেখুন কত কারুকার্য সম্বলিত একটি বাসা সে বানায় যা দেখতে কতই সুন্দর লাগে। অথচ যা কিনা সামান্য ঝড়েই লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। ঈমানদার বা ঈমানের বিষয়টিও এমনি হয়। উদাহারন হিসেবে আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করবো যদি কিছু মনে না করেন। কারণ আপনার বয়ানের সময়ই প্রশ্নটি আমার মনে উকি দিয়েছে কিন্তু আপনাদের তাবলীগের উসুলে সুন্নাতের রাসুলের (স) এই পদ্ধতিটি একেবারে গায়েব হয়ে গেছে যে, কোন বক্তার আলোচনা কালিন সময়ে কোন ভুল কথা বা ভুল তথ্য প্রদান করলে বা তার কোন কথা বুঝতে ব্যর্থ হলে সংঙ্গে সংঙ্গে প্রশ্ন করে জেনে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ আমরা যদি গভির ভাবে সুন্নাতে রাসুলে (সা) দিকে তাকাই তাহলে এরকম অসংখ্য বর্ননা পাওয়া যাবে যে, সাহাবারা হুজুর (স) এর বয়ানের মাঝেই তাকে প্রশ্ন করেছেন এবং তিনি হাসি মুখে তার জবাব দিয়েছেন।
নবী করিম (স) পরবর্তি খোলাফায়ে রাশেদাও একই সুন্নাতের ওপর প্রতিষ্টিত ছিলো যে, খলিফার জুমার খুতবা কালিন সময়েও জনতা যে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছেন, সাধারন আলোচনা বা বয়ানের কথাতো বলাই বাহুল্য। এই ব্যবস্থা যতদিন ছিল ততদিন দ্বীন সুরক্ষিত ছিলো। দ্বীনের মধ্যে মনগড়া কোন মতবাদ অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। যে যা ইচ্ছে মতো বলার বা কোন উদ্ভট বেদয়াত প্রচার করার সাহস করতো না। কারো কথা কোরআন এবং সুন্নাহর ব্যতিক্রম হলে মুসলমানরা প্রতিবাদ করতো বা প্রশ্ন করে জেনে নিত। এসব ক্ষেত্রে একজন মহিলাকেও মুল্যায়ন করা হতো।
রাজতন্ত্রের যুগ শুরু হলে মুসলমানদের মধ্যে থেকে এই মুল্যবান সুন্নাতটির পতন ঘটে, শাষকের সামনে হক কথা বলার সাহস মানুষ হাড়িয়ে ফেলে। পথে ঘাটে দ্বীনের নামে নতুন নতুন বেদয়াতের প্রচলন করে তার ওপর সত্যিকারের মুমিনদের নিরবতার সিল লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ কারনে অসংখ্য হাদিস আমাদের মধ্যে এসে গেছে যেগুলো আদতে হাদিসই নয়। অথচ খোলাফায়ে রাশেদার যুগে কেউ হাদিস হিসেবে কিছু বললে তাকে তার স্বপক্ষে স্বাক্ষী হাজির করতো হতো। এসব ক্ষেত্রে দেখা হতো না যে, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তিনি আশরায়ে মুবাশ্শরা কি না অথবা তিনি বড় বুজুর্গ সাহাবী কিনা। বরং সুন্নাতের নিরাপত্তার স্বার্থ্যে প্রত্যেকের কথাকে যাচাই করা হতো । যদিও স্বেচ্ছায় মিথ্যে হাদিস বলা থেকে সাহাবারা সর্বোত ভাবে মুক্ত ছিলেন। কিন্তু স্মৃতি শক্তির কারনে তাদের বর্ননায় স্মরনগত কোন ভুলের আশংকা করা থেকেই তাদের কেও স্বাক্ষী আনার কথা বলা হতো। এ কারনে এই সুন্নাতটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি যা কিছু বয়ান করবেন তার ওপর আনিত অভিযোগের জবাব সাথে সাথে দিয়ে নিজের বয়ানের পবিত্রতা রক্ষা করবেন। এটাই বয়ানের সুন্নাত।
অথচ তাবলীগের মুরব্বিদের ক্ষেত্রে তার স¤পূর্ণ উল্টো। ঘন্টর পর ঘন্টা বয়ান করার পরেও আপনাদের কে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না। সাহস করে কেউ যদি প্রশ্ন করতে চায় তাকে ফেতনা বাজ বলে এড়িয়ে যান। এ কারনে আমি বার বার ইতস্ত করছিলাম যে, আপনাকে প্রশ্ন করে কোন অনাকাংখীত সমষ্যায় পড়ি কি না। তিনি হেসে দিয়ে বললেন যে, আসলে মুরব্বিরা কিছু সমষ্যার কারনে এই ব্যাবস্থাটি রাখতে চাননি। আমি বললাম যে, সমষ্যা হবে জেনেই তো দ্বীন প্রচারের পথে নেমেছেন। তাহলে এখানে ভয় কিসের। সেই যাই হোক, তা নিয়ে আমার মাথ্যা ব্যাথা নেই। আমি যে বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাচ্ছি তাহলো এই যে, আপনি বয়ানে খুব গুরুত্ব্য দিয়ে বললেন যে, ঈমানকে মজবুত করতে হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ঈমান মজবুত করার উপায় কি তা কিন্তু আপনি বলেননি। তাছাড়া কোন ব্যক্তি কি ভাবে উপলদ্ধি করবে যে, তার ঈমান খুবই মজবুত সেটাও আপনি বলেননি। আমাকে একটু সংক্ষেপে বলুন যে, ঈমান আনার প্রাথমিক শর্ত কি ? ঈমানের মজবুতি যাচাইয়ের উপায় কি ?
আমি অবাক হয়ে গেলাম যে, তিনি কোন জবাব দিতে পারছেন না। প্রাথমিক দাবি হিসেবে তিনি বললেন যে, কাউকে মুসলমান হতে হলে কলেমার প্রতি ঈমান আনতে হবে আন্তরিকতার সাথে। আমি বললাম যে, কলেমা তো একটি দোয়া। এই দোয়া তখনি পড়ানো হয় যখন কেউ স্বিকৃতি দেয় যে, সে মুসলামন হতে চায়। কিন্তু আমি আন্তরিকতার সাথে কলেমা পড়েছি তা জানার উপায় কি ? অথবা ঈমান আনার পরে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলে বুঝা যাবে যে এই ব্যক্তিটি সত্যিকারের ঈমানের দাবি করছেন। এই বিষয়টি কোরআনের আয়াতের ভিত্তিতে আমাকে বলূন। যেহেতু আপনি একজন আলেম এবং মোবাল্লিগও সেহেতু আপনার দায়িত্ব্যও অনেক বেড়ে গেল।
আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি বিব্রত হয়েছেন। আমি তাকে আবারো আশ্বস্ত্য করলাম যে, আল্লাহ জানেন যে, আপনাকে বিব্রত করার জন্য এই প্রশ্নটি করছি না বরং আমার ধারণা ছিল এই সহজ কথাটি আপনার জানা থাকবে সবার আগে। কারণ আপনি একটি জামায়াতের সাথে থেকে ঈমানের দাওয়াত দিচ্ছেন যাদের কে সারা পৃথিবীর মানুষ সম্মান করে। এমন একটি জামায়াতে কয়েক সাল লাগানো কোন ব্যক্তি যদি এই প্রাথমিক জ্ঞানটিও না পান তাহলে এর চাইতে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে। ঈমানদার হওয়ার প্রাথমিক শর্তটি যদি না জানেন এবং ঈমানের দাবি পুরনে আপনি এখন প্রস্তুত বা আপনার ঈমান এখন কতটা মজবুত তা যাচাইয়ের পদ্ধতি গুলো না জানলে আপনার অবস্থা হবে এমন এক ছাত্রের মতো যে সারা জীবন স্কুলে যাওয়া আসা করে অনেক বই পুস্তক পড়লো কিন্তু কোন কালেও সে জানতে পারলো না যে, সে যে কারনে পড়ালেখা করছে সেটা তার দ্বারা সম্ভব কি না।
ঘটনা ক্রমে যদিও সে কোন পরীক্ষার মুখে পড়ে যায়, তাহলে সেখানেও সে পরাস্ত হয় দারুন ভাবে। সেখানে তার সারা বছরের স্কুলে আসা যাওয়া কোন অবস্থায় কাজে দেয় না। এ অবস্থায় বলতে হয় যে, তার পুথি বিদ্যা বা সারা বছরের মেহনত সমুলে বিনষ্ট হয়ে গেল, কারণ পরীক্ষার সময় তা কোন কাজে আসলো না। এমন বিদ্যা মনে হয় আপনিও আয়ত্ব্যে আনতে চাইবেন না। এবার আমাকে বলুন যে, এমন ঈমান দিয়ে সে দিন কোন কাজে আসবে কি যে ঈমান কে এখনো যাচাই করার সুযোগ হয়নি আসলেই কি সে ঈমান পেয়েছে না কি সে কিছু বিশ্বাস আর উসুল কে ধারন করে নিয়েছে, অথচ আখেরাত এমন একটি জায়গা যেখানে ঈমানের ভিত্তিতে প্রতিটি কাজের মুল্যায়ন করা হবে। সেদিন কি আমরা এমন দুবল ঈমানের ভিত্তিতে কোন কল্যাণ আশা করতে পারি।
অথচ আমার আল্লাহ কোরআনের একাধিক জায়গায় জোড় দিয়ে বলেছেন যে, কেবল ঈমানের কথা বললেই হবে না বা ঈমান গ্রহণ করলেই হবে না, পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে যথাযথ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে, তবেই ঈমানদার হিসেবে পরিচয় দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় এই ঈমান কেবল মেকি আমল করতে শিখাবে। আল্লাহর সৈনিক হতে বাধা দিবে পদে পদে। আল্লাহর দ্বীনের প্রয়োজনে, দ্বীনের কঠিন মুহুর্ত্যে এমন ঈমান আমাকে দুর্বল করে দিবে, আমার সামনে হাজারো যুক্তি আর গেড়াকল হাজির করে দিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করবে যে, আমার ঈমানের ব্যাপারে চিন্তিত হয়ার কোন কারণ নেই। শয়তান মানুষকে খারাপ পথে বিভ্রান্ত করার চাইতে তার ভালো কাজ গুলোর মধ্যে খারাপী ডুকিয়ে দিয়ে যথেষ্ট সফলতা পায়। কারণ সরাসরি খারাপের দিকে আহ্বান করলে একজন দুর্বল মোমিনও রাজি হবে না। এই সব কারনে আমাদের জানা দরকার যে, ঈমানের প্রাথমিক শর্ত কি এবং সেই শর্ত আমার মধ্যে মজবুত ভাবে প্রবেশ করেছে কিনা তা যাচাইয়ের পদ্ধতি কি তাও জানা দরকার।
অন্যথায় আমাদের মুসলমানদের মধ্যে এমন একদল মুসলমানের উদ্ভব ঘটবে যারা কেবল সেই মানে মুসলমান হবে যে মানের ঈমান আপনি প্রচার করবেন বা যে মানের ঈমানকে আসল ঈমান বলে চালিয়ে দেবেন। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি দ্বীন ইসলামের হিতাকাংখী হই তাহলে আল্লাহর দেয়া দ্বীনের মধ্যে কোন কাট ছাট না করে আমাদের কে সোজা সাপ্টা ভাষায় দ্বীনের দাবি সমুহ উপস্থান করতে হবে। এই ক্ষেত্রে যার ইচ্ছে মিল্লাতের মধ্যে থাকবে, আর যার ইচ্ছে নিজের নফসের পুজারী হয়ে অন্য দ্বীন অবলম্বন করবে। এর বাইরে কিছুই নেই, যা কিছু আছে তার সব কটি কুফরি। আমদের কে খুবই স্পষ্ট ভাবে, সাহাবায়ে কেরামের মতো ঈমানের ঘোষনা দিতে হবে, নইলে আমাদের কে যুগে যুগে এই মোনাফিকদের হাতে প্রতারিত হতে হবে।
মাওলানা সাহেব কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন। নিরবতা ভেংগে আমি যোগ করলাম যে, আপনাকে জ্ঞান দেবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। আপনার সাথে বিতর্ক করার মতো কোন যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু একটি কথা আমি বিশ্বাস করি যে, অনেক বড় বড় বিষয়ে মানুষ তার দৃষ্টিভংগিকে যাচাই বাছাই করার পরিবর্তে সিলসিলার দিকে বেশি ধাবিত হয়। যে কারনে তারা ভুল গুলোর জন্য যুতসই যুক্তিও খুজে পেয়ে যায়। অথচ আমাদের স্বিকার করতে হবে যে, এমন অনেক বিষয় রয়েছে যে বিষয়ে বড়দের জ্ঞান ছোটদের কাছেও মজুদ থাকতে পারে। ছোটরাও তাদের ভুলগুলোকে নজরে আনতে পারে। আমাদের প্রিয় নবী তার সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেছেন এবং অনেক বিষয় এমনও ছিল যে, তিনি তার মত ত্যাগ করে ছোট একজন সাহাবার পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। তাহলে আমরা কেন নিজেদের কে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখতে পারছি না।
তিনি অপরাগতা প্রকাশ করে বললেন যে, আপনার বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করলে কয়েক ঘন্টায়ও কুলাবে না। আমি বললাম যে, এই দাবিটি অত্যান্ত দুর্বল। সময় লাগবে বলে কি আমার ঈমানের পরিচয় কেও কাট ছাট করে নেব। অতপর সেই জামায়াতের ভাইরা আমার কাছে অনুরোধ করলেন যেন বিষয়টি আমি পরিস্কার করে দেই। সেদিন আমি সংক্ষেপে কিছু কথা বলেছিলাম। অবশেষে তাদের সবাই স্বিকার করলেন যে, আসলে এভাবে আমরা ভেবে দেখিনি। যদিও কোরআনের তেলাওয়াত আমরা করছি কিন্তু তার অব্যার্থ ভাব থেকে মাহরুম থেকে গেছি। সেখানে থাকা একজন বলল, ভাই এই বিষয়টির ওপরে একটি পোষ্ট দেন। ভাবলাম যে, আসলে কিছু লেখা দরকার। বিশেষ করে এমন একটি মুহুর্ত্য আমরা পার করছি যখন ঈমানদার আর মোনফিক, হক্কানী ওলামা আর দরবারী ওলামা চেনা জরুরী হয়ে গেছে। বিভ্রান্ত মত ও পথের প্রচারনায় আমাদের অনেক ভাইরাও বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন যে, এই মুহুর্ত্যে কিছু লেখা দরকার। তাই এই প্রচেষ্টা
(চলবে)