টিফিনের ঘন্টা পড়তে না পড়তেই ক্লাশের সবাই ছুটলো খেলার মাঠে। মনে হচ্ছে ওরা ঘন্টা পড়ার অপেক্ষাতেই ছিলো। সবাই বের হয়ে গেলেও হামীম বাইরে বের হলো না। এমনকি টিফিন খাওয়ার কোনো তাড়াহুড়োও তার নেই। সে যেভাবে বসে ক্লাস করছিলো, ঠিক সেভাবেই বসে আছে। ও যেন বসে অপেক্ষা করছে, ক্লাসটা কখন পুরো ফাঁকা হবে! একে একে সবাই বের হয়ে গেল। প্রিয় বন্ধুদের কয়েকজন বাইরে যেতে ডাকও দিল। কিন্তু হামীম কোন উত্তরই দিলো না। মনে হলো কোন কথা সে শুনতেই পাচ্ছে না। সমস্ত মনোযোগ তার নিজের মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের দিকে। কি আছে ওর হাতে?
এখন রুমে কেউ নেই। হামীম তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাতটা আস্তে আস্তে খুললো। ওমা তার হাতের মধ্যে একটা মাছি! হ্যাঁ মাছি। কাঁঠাল পাকলে যে মাছিগুলো ভন ভন করে মাথা খারাপ করে দেয়, সেই মাছি। এই নিয়ে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক মাছি এ পর্যন্ত তার মুষ্ঠিবদ্ধ করা হলো। কিন্তু হাত খুলতেই দেখা যায়, মাছিটা প্রায় অর্ধমৃত বা মৃত কিংবা হাত খুলতেই ফুড়ুৎ। তবে আজকের মাছিটা বেশ ভদ্র, দিব্যি জীবিত থেকেও কোন উড়াউড়ির তাগিদ নেই। মনে হচ্ছে হামীমের হাতের মধ্যে সে বেশ আরামেই ছিল। হাত খুলতেই যেন চোখে আলো এসে পড়েছে। চোখে মুখে তার রাজ্যের বিরক্তি।
কিন্তু হামীম কেন মাছি ধরে, তা নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে। হামীম মনে করে ভিন গ্রহের প্রাণী মানে এলিয়েনরা মাছির রূপ নিয়ে তাকে একদিন দেখা দেবে। তাই সে সুযোগ পেলেই মাছি ধরে পরীক্ষা করে। তার স্কুলব্যাগের মধ্যে ম্যাগনিফাইং গ্লাসও আছে। আরো আছে ছোট্ট টুল বক্স। টুল বক্স কেন? এলিয়েন পৃথিবীতে আসার পর তার শিপ নষ্ট হয়ে গেলে সে যেন তাকে সাহায্য করতে পারে। তাই এই পূর্ব প্রস্তুতি।
আজ এই একান্ন নম্বর মাছিটা নিয়ে সে খুবই আশাবাদী। ওর এই মাছি ধরা নিয়ে বাড়ির লোকজন থেকে শুরু করে বন্ধু বান্ধবীরা খুব হাসি তামাশা করে। এমনকি ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সিয়াম ও অবনি ওকে পাগল বলেছে। আর জেমিমা, বুশরা, রিয়াশা, সিন্ধু তাদের কি হাসি। মনে হয় হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে। এমনকি লাবণ্য আপু সেতো ভার্সিটিতে পড়ে। তারও কি হাসি তা যদি তোমাকে বলে বোঝাতে পারতাম। আর লাজুক আপু সে নাকি বিজ্ঞানী হবে সেও আমাকে বুঝলো না!
তবে লালিত্য আপু কিছুই করেনি। হাসেওনি আবার আমাকে সার্পোটও করেনি। আর ছোটচাচা কি বলেছে জানো, সে বলে পারবি রে, হামীম পারবি। তোর সাথে এলিয়েনদের দেখা হবেই। তখন তুই একটা এলিয়েনকে বিয়ে করে নিস। ওরাই শুধু আমাদের গ্রহে আসবে কেন! তুইও গেলি, আবার মাঝেমাঝে আমারও যাওয়া হলো। তুই কি জানিস, তোর বড়চাচা পরীর সাথে গল্প করতো। শুধু তোর বড় চাচা কেন! তোর বাবাও পরীর গল্প সাথে করতো...
-ভাবো একবার কি প্রকারের ফাজিল। আমিও বলেছি- হুম তুমি যে পাগলীর সাথে গল্প করতে। আর তখন সে বলে- তোর মত ছেলেকে কিছু বলার নেই। যা ভাগ...
-হুম তুমি বলবা, আর আমি বললেই দোষ! আপন মনে কথাগুলো বলছে হামীম।তার মনোযোগী শ্রোতা যেন সেই মাছি।কিন্তু সে কি হামীমের কথা বুঝতে পারছে?
হামীম বললো- তুমি কি আমার কথা বুঝতো পেরেছো?
হ্যালো...
মাছিটা হামীমকে চমকে দিয়ে হ্যালো হামীম, আমি স্কাইপি। তুমি এতক্ষণ যা বললে আমি সব বুঝতে পেরেছি।
হামীম বললো- কি তুমি বাংলা বুঝো!
-হুম আমরা সব ভাষা বুঝি।
-তুমি এতদিন পরে আমাকে দেখা দিলে কেন?
-এতদিন পরে কেন, আমিতো তোমাকে সবসময়ই দেখতে পাই। তুমি আমাকে দেখতে পাও না।
-কেন
-আমিতো তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখা দিতে চাই না তাই।
-ও আচ্ছা।
-এবার বলো, তুমি আমাদের দেখতে এত আগ্রহী কেন?
-আমি বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী পড়তে খুব পছন্দ করি, তাই তোমাদের দেখতে খুব ইচ্ছা করে।
হামীমের কথা শেষ হতে না হতেই মাছিটা ওর হাত থেকে উড়ে গিয়ে টেবিল জুড়ে বসলো। এত বড় মাছি দেখে হামীমের চোখ পুড়ো ছানাবড়া। এ কি! এটা কি! কৌতুহল থাকলেও হামীম একটু ভয় পেল। এত বড় মাছি! ওর চোখ জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ির লাল নীল লাইটিং। এবার মাছির পাখাটা ঠিক প্রাইভেটকারের দরজা খোলার মত করে খুলে গেল। আর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো মানুষ আকৃতির ছোট্ট একটা প্রাণী।
হামীম বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো।বললো- কে তুমি?
-আমি স্কাইপি। ওটা আমার শিপ। তুমিতো আমার সাথেই এতক্ষণ কথা বললে।
-কি মাছিটা তোমার শিপ!
-হুম মাছির পেটে চড়ে আমি পৃথিবীতে এসেছি।
হামীম আর ভাবতে পারে না। আনন্দে ও পাগল হয়ে যাচ্ছে। এলিয়েন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, সে বাংলায় কথা বলছে! এতদিনের আশা এভাবে পূরণ হলো!
স্কাইপি বলে- কি তুমি কথা বলো না কেন?
হামীম কি বলবে বুঝতে পারে না। তার খুব ইচ্ছে করছে, একজনকে অন্তত এলিয়েনকে দেখাতে। সাত পাঁচ না ভেবে সে সিয়ামকে ডাকতে বাইরে গেল। মিনিট কয়েকের মধ্যে ফিরে এসে দেখে টেবিল ফাঁকা।একটা মাছি ওদের মাথার উপর দিয়ে কয়েক পাক ঘুরে জানালা দিয়ে বের হয়ে গেল।
সিয়াম বললো- কিরে এই মাছিটা দেখতে ডেকে আনলি!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০