★ সারাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো প্রথম সাময়িক পরীক্ষার আগ মুহুর্তে আছে। তিন চার দিনের মধ্যেই সব মাদরাসাগুলোতে পরীক্ষা আরম্ভ হবে। পরীক্ষা রেখে মাদরাসা ছাত্ররা মহাসমাবেশে আসছে এমনটা অকল্পনীয়। তাই ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ মাদরাসা ছাত্র দিয়ে পরিপূর্ন ছিলো এমনটা ভাবার কোন অবকাশই নাই। মহাসমাবেশে আগতদের মধ্যে ৯৯.৫০% লোকই এদেশের বৈধ ভোটার। তারা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকে।
★ ইতিপূর্বেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকার মাটিতে এমন বড় বড় গনজমায়েত দেখাতে পেরেছে। কিন্তু পুর্বের সকল গনজমায়েতগুলো কোন না কোন ধর্মীয় ইস্যূতেই ছিলো। কিন্তু এবারের মহাসমাবেশ কেবলমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডায় আহুত ছিলো। আমির, নায়েবে আমির থেকে নিয়ে মহাসচিব সাহেবসহ সকলের বক্তব্যই ছিলো নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য। কোন ধর্মীয় এজেন্ডা এখানে স্থান পায়নি। রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে এমন মহাসমাবেশ এবং সে ইস্যূতে এমন গনজমায়েত খুবই আশ্চর্যের অবতারনা করাতে পেরেছে সকলের মধ্যে।
★ প্রিয়জন আদিল ভাইয়ের একটা মন্তব্য হৃদয় কেড়েছে আমার! মন্তব্যটা ছিলো এমন;
"সংখ্যার সঙ্গে প্রজ্ঞার যোগ হলে বাংলাদেশে এই দলটি অন্যরকম ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবে"
কথাটা সত্যিকারেই চিন্তার খোরাক জোগানোর মত একটি কথা। এ সংগঠনে প্রজ্ঞাবান লোকের সত্যিকারেই অভাব নেই। এখন কেবল সে প্রজ্ঞা দেখানোর সময়। কয়েক যুগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখাতে পেরেছে তা যদি পরিপুর্ন ভাবে কাজে লাগাতে পারে তাহলে অন্যরকম ইতিহাসটা সত্যিকারেই তৈরি হয়ে যাবে।
★ মুহতারাম এডভোকেট Shahinoor Pasha Chowdhury চৌধুরী সাহেব একটি ফেসবুক পোষ্ট করেছেন মহাসমাবেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে। সেখানে তিনি বলেছেন উনার সংগঠন জমিয়ত এককভাবে এরচেয়ে বড় গনজমায়েত করতে সক্ষম হবে। রাজনীতি করে এমন সকল দলেরই এ ধরনের স্বপ্ন থাকাটাই যৌক্তিক এবং বাস্তবতা। কিন্তু জোট-ফোট এবং ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মত্ত হয়ে জমিয়ত তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় এমন অবস্থান ক্রিয়েট করার দিকে মনোযোগী হয়নি কোনকালেই! তাই এ ধরনের গনজাগরণ তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয় এটা রাজনৈতিক বিশ্লেষনে বলাই যায়। কারন কিছুদিন পুর্বে এ মাঠেই বিএনপির মহাসমাবেশ ছিলো। জমিয়ত বিএনপি জোটের সাথে রাজনীতি করছে। এবং সে মহাসমাবেশটি ছিলো নির্বাচন পুর্ববর্তি বিএনপির শক্তি প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ! জমিয়তও সে চ্যালেঞ্জের সমান অংশীদার। কিন্তু কি হয়েছে.. কতটুকু হয়েছে তা পরিস্কার সবার কাছেই। তাই উনার স্বপ্নকে সাধুবাদ জানাই এবং উনার ফেসবুক পোষ্টের একটু ছোটখাটো সংশোধনী আনতে চাই,
... আমার বিশ্বাস সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামের যে গনভিত্তি তৈরি হয়েছে তাতে সরকারের অনুমোদন লাগবে না কেবল ইসলামি সকল দলগুলো যদি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাথে মিলে ঐক্যের কাতারে চলে আসে তাহলে এরচেয়েও বিশাল সমাবেশ ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে দেখানো যাবে। তখন সরকার এদের অনুমোদন দেবে না বরং এরাই এদেশের সরকারকে অনুমোদন দেবে কারা সরকার গঠন করবে সে বিষয়ে।
♦- আমি দায়ভার নিয়ে বলছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ একটি বৃহত আবেদন তৈরি করতে পেরেছে। কেবল আবেদনই নয় বলতে গেলে এ সংগঠনের বিরোধীদেরও নতুন করে অনেক কিছু ভাবাতে বাধ্য করেছে। মহাসমাবেশে লোক সমাগম অনেক হবে এটা সবাই-ই জানতো কিন্তু সেটা এত হবে তা অনেকেই জানতো না। ভাবতেই পারেনি। কয়েকটা নিউজ মিডিয়ার নিউজ কভারেজ ছিলো এমন,
★ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের দশ কিলোমিটার এলাকা ছিলো এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে।
★ বিএনপি আওয়ামীলীগের সমাবেশকেও ছাড়িয়ে গেলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ।
★ ক্যামেরার লেন্স ধারন করতে সক্ষম হয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশকে।
তাই, এই মুহুর্তে এসে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মী সমর্থকদের খুবই সন্তর্পণে এগুতে হবে যাতে এই জাগরণকে কেউ ভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে না পারে। যাতে করে এ জাগরণের বিশ্লেষনে কেউ বিদ্ধেষ পোষন না করতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিরোধীদের পরম মমতায় বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা বড়জোড় আশাবাদী মোটেও অহংকারী নই। আমাদের স্বপ্ন অনেক বড় এবং আমাদের লক্ষ অনেক দুর পর্যন্ত। যে লক্ষ বাস্তবায়নে আপনারাও সমান অংশীদার এবং সমানভাবে প্রয়োজনীয়। আমরা রেভ্যূলেশন ঘটাতে চাই। পলিটিক্যাল রেভ্যূলেশন। যেখানে এদেশের প্রতিটি ভোটার সমানভাবে প্রয়োজনের কাতারে রয়েছেন যেভাবে প্রয়োজনের কাতারে রয়েছে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মহাসমাবেশে একটা গুরুত্বপুর্ন কথা ছিলো এমন,
.... আমরা কোন দলের সাথে জোটে করে নয় বরং জনগনের সাথে জোট করে আনন্দিত। তাই, জনগনকে আমাদের দরকার। অতএব জনগনের যে কোন কথাকে হোক সেটা বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং আমাদের সঙ্গে মিশে পলিটিক্যাল রেভ্যূলেশন ঘটানোর আহবান জানাই।
পরিশেষে,
মুফতি ফয়জুল করীম সাহেব হযরতের একটা বক্তব্য অংশ দিয়ে শেষ করি।
সোনার বাংলা চাই না! সবুজ বাংলা চাই না!! ডিজিটাল বাংলা চাই না!!! আমরা চাই ইসলামের বাংলা। হাতপাখার বাংলা। কারন হাতপাখার বাতাসে ইসলামের বাংলায় এদেশ হবে সোনার বাংলা, সবুজ বাংলা এবং ডিজিটাল বাংলা।
ছবি ক্যাপশন : ছবিটার ডান পাশে আরো ব্যাপক বিস্তৃতি রয়েছে মানুষের! ক্যামেরায় যা ধারন করা সম্ভব হয়নি।
সংকলনঃ হাছিব আর রহমান