জনাব এড. Shahinoor Pasha Chowdhury স্যার! ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোটের অবস্থান নিয়ে আওয়ার ইসলাম ডট কমে বিভিন্নজনের একটা মতামত আর্টিকেলের মধ্যে আপনার মতামতটাও পড়লাম। সেখানে অনেক বরেণ্য ইসলামী রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা এই ভোটপ্রাপ্তীকে পজেটিভ হিসেবে দেখলেও কোন রাখ-ঢাক ছাড়া কেবল আপনিই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিগত তিন সিটি নির্বাচনের ভোটপ্রাপ্তীকে কাল্পনিক আওয়ামী আতাতের ফসল হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন। এ ব্যাপারটা আরো অনেকেই ভেবে থাকে সবকিছু সঠিকভাবে বিশ্লেষন না করেই। সেদিন জমিয়তের মধ্যে আপনি যে অংশে আছেন তার বিপরিতাংশের একজনও ফেসবুকে এ দাবিটা করেছিলো। সেজন্য স্পেসিফিক কিছু তথ্য এবং প্রমানের ভিত্তিতে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। আশা করি বেয়াদবি নিবেন না। এবং এটাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষন হিসেবেই দেখবেন।
স্যার! আপনি একসময় একজন এমপি ছিলেন। তখনকার এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আমার বয়সীদের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু আপনাকে ফেসবুকে এবং বিভিন্ন ভাবে এ্যানালাইসিস করে একজন প্রজ্ঞাবান এবং জ্ঞানী রাজনৈতি মনে হয়েছে। রাজনীতির "র-জ-ন-ত" আপনি খুব ভালোভাবে জানেন বুঝেন বলেই মনে হয়েছে। আপনার মনে আছে কি না জানি না স্যার। হিন্দুদের পুজা মন্ডপে আপনার একটা ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছিলো ফেসবুকে। তখন এটার পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে অনেক বড় একটা বিশ্লেষন লিখেছিলাম আমি কারন একজন জনপ্রতিনিধি তার নির্বাচনী এলাকায় জনগনের খোজ খবর নেবে এটাই স্বাভাবিক। হোক সে হিন্দু হোক সে মুসলমান।
স্যার! একজন প্রবীণ এবং প্রজ্ঞাবান ইসলামী রাজনৈতিক হিসেবে অন্য কোন ইসলামী রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে এ্যানালাইসিস না করে কোন বিভ্রান্তিকর তথ্য মিডিয়ায় দিয়ে দেয়াটা আপনার প্রজ্ঞার সাথে মানায় না স্যার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আওয়ামী আতাতের ক্ষেত্রে আপনি মোটামুটি দুটো তথ্য দিয়েছেন প্রমান হিসেবে।
এক. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পুলিশি পাহারায় সমাবেশ মিছিল করতে পারে।
দুই. হেফাজতের সময়ে তারা হেফাজত প্লাটফর্ম থেকে দুরে ছিলো।
স্যার! আপনার দ্বিতীয় পয়েন্টের ব্যাপারে কোন বিশ্লেষন করবো না কারন আপনার এই অভিযোগটা ভিত্তিহীন এবং প্রমানবিহীন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই সর্বপ্রথম এদেশে হেফাজত আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলো বিশাল জনসমাবেশ করে। ২০১৩ সালের ২৯-ই এপ্রিল ঢাকার পল্টনে সেই বিশাল সমাবেশের ভিডিও বক্তব্য সংগ্রহ করে দেখার অনুরোধ রইলো। কেবল তাই নয় এদেশের মিডিয়াও এটা স্পষ্ট আকারে বলে থাকে হেফাজতের সাথে এ সংগঠন যুক্ত ছিলো এবং কাজ করেছে। প্রমান হিসেবে আপনি স্যার একাত্তর টিভির এই প্রতিবেদনটা দেখতে পারেন। যেখানে তারা স্পষ্ট আকারে বলে দিয়েছে ৫-ই মে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হেফাজতের সাথে আন্দোলন করেছে এবং তারা এটাতে নাখোশ বেশ। কিন্তু এই ব্যাপারটাকে সোজা কথায় আপনি কেন অস্বিকার করলেন তা জানি না স্যার।
প্রতিবেদন লিংক : https://goo.gl/46ZhLK
প্রথম পয়েন্টে যে যুক্তি দিয়েছেন এটা খুবই লেইম একটা যুক্তি কারন বিশ দলীয় জোটের বাইরে থাকা কেবল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেই সরকার মাঝে মাঝে তাদের আন্দোলন সংগ্রামে বাধা দিয়েছে। এই সেদিনও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর সরকারী হামলা মামলার প্রতিবাদে মিছিল করতে দেয়া হয়নি এই সংগঠনের ছাত্র সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনকে। এমন আরো বিশ থেকে ত্রিশটা কার্যক্রম দেখানো যাবে যে কার্যক্রমগুলো করতে দেয়া হয়নি এ সংগঠনকে। বড় দাগে মায়ানমার অভিমূখে লংমার্চ কর্মসূচিও দেখতে পারেন। এছাড়াও "ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মসূচিতে পুলিশী বাধা" লিখে গুগল সার্চ করলে শত শত নিউজ পাবেন সরকারী বাধা এবং মারধরের। আওয়ামী সরকার বিশ দলীয় জোটকে রাজনৈতিক প্রথম প্রতিপক্ষ ভেবে তাদেরকে বাধা দিয়ে থাকে। আপনারা সে জোটের অংশ হিসেবে এ বাধার সম্মুখিন হয়েছেন। জোট ছেড়ে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ এখন প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম করছে এটাও খেয়াল করা উচিত আপনার। সে ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অসংখ্য বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। এখন বিশদলীয় জোটে না থাকলেই সে আওয়ামী আতাতের দল এটা কোন জ্ঞানীর কথা হতে পারে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোটপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা যাচাই না করেই একজন প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক হিসেবে আপনি একটা কথা বলে দিয়েছেন এটা মোটেও পছন্দ হয়নি স্যার! ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এ সংগঠন সারাদেশ ব্যাপী ১৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে মোট ভোটের এক শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে এটা হয়ত আপনি জানেন না বা জানার চেষ্টা করেননি। সে এক শতাংশ কারা দিয়েছিলো? তখন তো আওয়ামী সরকার ছিলো না। এই ভোট প্রাপ্তির হিসেব নিয়ে নিউজ টোয়েন্টি ফোরের টিভি প্রতিবেদনটি দেখতে পারেন স্যার।
প্রতিবেদন লিংক : https://goo.gl/X4Df4r
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই ভোটপ্রাপ্তি হুট করে পাওয়া কোন আলাদিনের চেরাগ নয় স্যার! এই ভোট প্রাপ্তির পেছনে রয়েছে অসংখ্য ত্যাগ আর সাংগঠনিক পরিশ্রম। সব জরিপ দিতে পারবো না কারন লেখা বিশাল হয়ে যাবে তাই। কেবল গাজীপুরের কথাটা বলি স্যার!
... ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রর্থী ২৬৩৮১ ভোট পয়েছেন। যা প্রদত্ব ভোটের ৪.২ পার্সেন্ট। গাজীপুর সিটিতে এটাই ইসলামী আন্দোলনের প্রথম নির্বাচন। এর আগে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর সদরের ৩১ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর ২ আসনে ইসলামী আন্দোলন ৩০০০ এর মতো ভোট পেয়েছিল।
২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আপনি যদি গাজীপুরে এই সংগঠনের কার্যক্রম বিশ্লেষন করেন তবে দেখবেন এই দশ বছরে জনগনের কাছে কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ সংগঠনের কমবেশি দশশত সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিলো! গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এ সংগঠনের আমীর নায়েবে আমীর থেকে শুরু করে এমন কোন দায়িত্বশীল নেই যারা গনসংযোগ করেনি। শ'খানেকের উপর পথসভা থেকে শুরু করে অসংখ্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এইসব পরিশ্রমের পর এই ফলাফল এসেছে স্যার!
খুলনা, নারায়নগঞ্জ, রংপুরের দিকে তাকালেও আপনি এই দৃশ্যই দেখবেন। এখন আপনাদের সিলেটে এ সংগঠনের মেয়রপ্রার্থীর গনসংযোগের দিকে তাঁকালেও আপনি এটা খেয়াল করে থাকবেন। তো! স্যার এই ভোট প্রাপ্তী আওয়ামী লীগের দেয়া নয় বরং ভোটচুরির ধারাবাহিকতা হিসেবে আওয়ামীলীগ এ সংগঠনের ভোটও চুরি করেছে স্যার! এটাই বাস্তবতা। নয়ত ভোট সংখ্যা আরো অনেক বেশিই থাকতো।
সিলেট এবং বরিশাল সিটি নির্বাচনেও দেইখেন স্যার এ সংগঠন ভালো কিছু করে দেখাবে। কারন সে ভাবেই তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাছাড়া সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছে একজন ভদ্র, শিক্ষিত হাই প্রোফাইল প্রার্থী ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন স্যার। এবং উনার গন সংযোগও চোখে পড়ার মত। এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বরিশালের সর্ববৃহত এবং ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদরাসা মাহমূদীয়া মাদরাসার মুহতামিম মুফতি উবায়দুর রহমান মাহবুব সাহেবের মত যোগ্য ব্যাক্তি। আপনি ব্যাক্তিগত ভাবে এই দুই প্রার্থীকেই চিনে থাকবেন। উনারা যদি উল্যেখযোগ্য হারে ভোট পেয়ে যান তাহলে সেটাকে আপনি আওয়ামী দান-দক্ষীণা কি বলতে পারবেন স্যার! এটা প্রশ্ন রইলো অবনত মস্তকে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতির উত্থাণটা মিডিয়া এখন কভারেজ করছে সে জন্য অনেক কিছু মিলিয়ে উঠতে পারতেছে না কিন্তু মিডিয়ার এই কভারেজ যদি আরো অনেক আগেই থাকতো তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক লাগতো। বিগত দশ বছর এ সংগঠন সারাদেশ ব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং জনমনে ভোটের রাজনীতিতে ইসলামকে নির্বাচিত করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এগুলো এ্যানালাইসিস করে দেখুন আপনার কাছে কিছুই অস্বাভাবিক লাগবে না স্যার! সর্বপরি বর্তমানের মিডিয়ার বিশ্লেষনগুলো পড়লেও আপনি অবাক হবেন। তারা অনেকটাই পজেটিভ হয়ে এই বিশ্লেষন করতে বাধ্য হচ্ছে এবং করছে। আপনাকে একটা স্পষ্ট পয়েন্ট দেই স্যার! প্রথম আলো এ সংগঠন নিয়ে একটা প্রতিবেদন ছাঁপিয়েছে সেখানের এ্যানালাইসিস বিশেষ করে কমেন্ট সেকসনে জনগনের উম্মুক্ত কমেন্ট অংশটা দেইখেন। আশা করি অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে।
প্রথম আলো প্রতিবেদন লিংক : https://goo.gl/VMD9uN
এছাড়াও একটা ইংলিশ প্রতিবেদন দেখুন ঢাকা ট্রিবিউনের।
লিংক : https://goo.gl/5B4V1U
বাংলা ট্রিবিউন এর প্রতিবেনটাও দেখতে পারেন : https://goo.gl/1HxYs9
এই সব কিছু পড়ে এবং এ্যানালাইসিস করেও যদি মনে হয় আপনার দাবিটা সঠিক তাহলে স্যার মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ. এর ভাষায় বলতে হবে,
.... আসলে মোদের হলো বদ-নসীব আর কপাল ফাঁটা। :'( :'(
তবে সর্বশেষে আপনাকে এবং এই ধারনা পোষন করা ইসলামী রাজনৈতিক লোকদের একটা লজ্জাজনক পয়েন্ট দেখাই।
এড. শাহিনুর পাশা সাহেবের নামের পাশে সংগঠনের নাম লেখার ক্ষেত্রে ব্রাকেটে লিখতে হয় "অমুক অংশের"! এই লজ্জাটা আপনাদের ঢাকা উচিত কারো ব্যাপারে কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ দেয়ার আগে।।
সংযুক্তি : যে আর্টিকেলে শাহিনুর পাশা স্যারের মতামতটি রয়েছে সেটার লিংক : https://goo.gl/gonC54
হাসিব আর রহমান এর ফেসবুক ওয়াল থেকে..