প্রেমিকের কাছে কোমলমতি মা যেন কিছুই নয়, প্রেমিকাই মুখ্য। আর তাই প্রেমিকার জন্য ‘গিফট’ কেনার টাকা সংগ্রহ করতে প্রেমিক নিজে লুকিয়ে থাকে মায়ের ও পরিবারের কাছ থেকে। মাকে ফোনে জানায় তাকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে দু’লাখ টাকা দাবি করে মায়ের কাছে। পরিবারের কাছে অপহরণ নাটক সাজানো এবং মুক্তিপণ দাবি করা ওই প্রেমিকের নাম ইসমাইল রাসেল। নগরীর মাঝির ঘাট এলাকার যুবক ইসমাইল রাসেলের বয়স ২১ বছর। পরে এ ঘটনায় রাসেলের পিতা মোহাম্মদ মিরাজের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ রাসেলকে উদ্ধার করে। শুক্রবার বিকেলে উদ্ধারের পর গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে তার পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। কোতোয়ালী থানা সূত্রে জানা যায়, ইসমাইল রাসেল গত ১১ জুলাই রাত আটটায় কয়েকজন বন্ধুসহ টেরিবাজারে কেনাকাটা করে। তারা টেরি বাজারের মোড়ে আসামাত্র রাসেলের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তখন রাসেল আড়ালে গিয়ে কথা বলে। এরপর তার বন্ধুরা তাকে আর খুঁজে পায়নি। এ ঘটনায় তার পিতা মিরাজ কোতোয়ালী থানায় একটি জিডি করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের কাছে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। তার ছেলে এয়ারটেল’র একটি নম্বর থেকে ফোন করে তার স্ত্রীর কাছে বিষয়টি অবহিত করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ ঘটনা পুলিশের কাছে রহস্যজনক মনে হওয়ায় ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেফতার এবং ভিকটিমকে উদ্ধারের লক্ষ্যে সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মহিউদ্দিন সেলিমসহ ছয় সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়।
তদন্ত টিম গোয়েন্দা তৎপরতা ও কৌশলের মাধ্যমে গত শুক্রবার বিকালে নগরীর টাইগার পাস এলাকা থেকে ইসমাইল রাসেলকে উদ্ধার করে।
উদ্ধারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানায়, সে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র। দুবাইয়ে বসবাসরত আয়েশা নামের এক মেয়ের সঙ্গে ইন্টারনেটে রাসেলের প্রায় দুই বছর আগে পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রেমের সম্পর্ক। তাদের প্রেমের সম্পর্ক এমন যে প্রতি মুহুর্তে যোগাযোগ রক্ষা করতে তার প্রয়োজন একটি ল্যাপটপ। একই সঙ্গে সামনে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে তার ভালোবাসার মানুষকে উপহার দিতে দরকার কিছু টাকার। এ লক্ষ্যে গত ১১ জুলাই সন্ধ্যায় বন্ধুদের নিয়ে মার্কেটিংয়ে গেলে এক পর্যায়ে সে নিজেই সরে পড়ে বন্ধুদের কাছ থেকে। এরপর নিজের নম্বর পরিবর্তন করে একটি নতুন সিম কিনে নেয়।
পরে সে লালদীঘির পাড়ের একটি আবাসিক হোটেলে কক্ষ ভাড়া নেয়। সেখানে কণ্ঠ পরিবর্তন করে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মায়ের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে। অপহরণ নাটকের কাহিনী সৃষ্টি করে। মুক্তিপণ হিসেবে তাদের কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মহিউদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, জিডি দায়েরের পরই আমাদের কাছে বিষয়টি একটু রহস্যজনক বলে মনে হয়। তাই আমরা বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করি। ঘটনার কয়েকদিন পরই মূল রহস্য উদঘাটন হয়। তিনি বলেন, নিয়ম মতে কথিত অপহৃতের বিরুদ্ধে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা যেত। কিন্তু পিতার অনুরোধে মামলা না করে ছেলেকে তার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।