somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দরজা

৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বাইরে ঘোর অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। মা চুলায় খিচুড়ি দিয়েছে। ঘ্রাণে চারপাশ ছেয়ে আছে। সাথে বেগুন ভাজা, ইলিশের দো পিয়াজি, দই-কাতলা, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি ঘন্ট, ঝাল ঝাল মুরগি কষা। ভোজন রসিক দাদা গুড়ের জিলাপি, সন্দেশ এনেছে। দাদি বসে উনুনে পিঠে ভাজছে। মালপোয়া, কুলি, জামাইপিঠা, নকশি পিঠা... কতশত যে নামের বাহার! সবকিছু মিলিয়ে বেশ দারুন পরিবেশ।

আমাদের বাড়িটা দোতলা বাড়ি। সেই পুরানো বাড়ি। দাদার বাবা এক জমিদারের থেকে কিনে নিয়েছিলো বাড়িটা। বিশাল বাড়ি, সামনে পুকুর। পুকুরের গা ঘেসে বকুল, গন্ধরাজ, বেলি, শিউলি ফুলের গাছ। বাড়ির এক পাশে বড় আম বাগান, কাঠাল বাগান, দুই চারটে নারকেল আর জাম গাছ। বাড়ির সিঁড়িটা ভেতর দিয়ে দোতলায় চলে গিয়েছে। দোতলায় অর্ধেক ছাদ, অর্ধেক ঘর। ছাদ বললে ঠিক ভূল হবে। এখানেও ক'টা ঘর ছিলো, কোনো এক বৃষ্টির রাতে মস্ত একটা শেগুন গাছ হঠাত ভেঙে পড়লো। ভাগ্যিস কেউ ছিলোনা। ঠিক উলটো পাশেই একটা রুম৷ রুম তো না যেন গুদাম ঘর। কোনোদিনও এই রুমের দরজা খোলা হয়নি। জমিদারবাবু নাকি শুরুতেই এই রুমের তালা খুলতে নিষেধ করে দিয়েছেন। ধোয়া ওঠা কড়া লিকারের চা এক হাতে, আরেক হাতে বিভূতিভূষণ বাবুর পথের পাঁচালী নিয়ে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। পুরো বাড়ি অন্ধকার, ঘন ঘন বিজলি চমকায়। সে আলোয় আলোকিত এই ঘরটিকে দেখতে বড়ই অদ্ভুত লাগে। দাদার মুখে শুনেছি দোতলা অন্দরমহল ছিলো। জমিদারবাবুর বউ-ঝিয়েরা এখানেই থাকতো৷ আর নীচে বাইজিরা সন্ধ্যের পর নাচতো। সে নাচের জন্যও এলাহি কান্ড বাপু!! চারদিকে ধুপের গন্ধ, ঝুপুরের ঝুনঝুন শব্দে মেতে থাকতো চারদিকে। নাচের দিনে আয়োজনও থাকতো বিশাল। ঘি ভাত, ইলিশ মাছ ভাজা, আঙুরের মদ, আস্ত মুরগির রোষ্ট, গরুর মাংসের কালা ভূনা, খাসির রেজালা, ছানার জিলাপি, রুই মাছের দো পিয়াজি, রসগোল্লা, রাজভোগ, রসমালাইসহ বাহারি খাবারের আয়োজন থাকতো। মাঝেমধ্যে মনেহয় আমার বাড়ির লোকেরাও বুঝি জমিদার মশাইয়ের রক্তেরই হবে কেউ। নয়তো ভোজনরসিক হবে কই থেকে বৈকি!

এ বাড়িতে আরেকটি রহস্য কামরা আছে। দরজার সামনে বিশাল তালা ঝুলানো৷ শুনেছি এই রুমেই এক বাইজিকে নিষ্ঠুরভাবে খুন করে মেঝেতে পুতে রাখা হয়। আর আরেক রুমে জমিদারের ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছিলো। জমিদারের ছেলের সাথে বাইজির এই সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে জমিদার বাইজিকে খুন করে। তার ছেলে এ ঘটনার পর পাগল হয়ে গেলে এই ঘরেই তাকে আটকে রাখা হয় যার সামনে আমি এখন দাঁড়িয়ে। পাশেই হারিকেনের আলো জ্বলছে টিপটিপ করে। এই বুঝি নিভে যাবে!
মনে অনেক ভাবনার উদয় হয়। ছেলের শেষ পরিনতি কি করেছিলো জমিদার মশাই জানতে বড্ড ইচ্ছে করে৷ কেউ বলে ছেলে এই রুমেই প্রেমিকার শোকে আত্বহত্যা করে৷ কেউ বলে পাগল হয়ে একাই মারা যায়। আবার কেউ বলে এই রুমেই নাকি তার লাশ পড়ে আছে। এই দুইটা কামরার দরজা খোলা নিষিদ্ধ।

এতোকিছু ভাবতে ভাবতে শরীরটা কেমন কাঁটা দিয়ে উঠলো। একে তো ঝড় বাদলার রাত তার উপর বিদ্যুৎ নেই। ঘোর অন্ধকারে এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা সমীচীন মনে হল না। তাই নিচে আমাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্যে ঘুরে দাঁড়ালাম। সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে যাবো ঠিক তখনি মনে হল রিমঝিম করে একটা শব্দ পেলাম। শব্দটা কোথা থেকে এলো বুঝতে না পারায় কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আরকিছু শুনতে পেলাম না। ভাবলাম ঝড় বৃষ্টির মধ্যে মনের ভুল ছিল হয়তো। এই ভেবে আবার যেই পা বাড়াতে যাবো ঠিক তখনি শব্দটা পেলাম। এবার অনেকটাই স্পষ্ট। মনে হল কেউ পায়ে নূপুর পড়ে দু’কদম হাঁটল। এবার শব্দটা পেলাম ঠিক পিছনে ঘর দুইটার দিক থেকে। শরীরটা কেমন যেন জমে গেল আমার। আমি কান খাড়া করে আরো ভালভাবে শোনার চেষ্টা করলাম। এবার শুনতে পেলাম কে যেন খুব আস্তে আস্তে গুনগুন করে গান গাইছে আর নূপুর পায়ে হাঁটছে। আমি মনে মনে ভাবলাম এমন ঝড় বৃষ্টির রাতে এখানে দাঁড়িয়ে এতোকিছু ভেবেছি বলেই আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। তাই ভুল শুনছি। আমার উচিত এখন এসবে পাত্তা না দিয়ে নিচে নেমে যাওয়া। কিন্তু আমার পা কোনো কারণে জমে গিয়েছে। আমি কান খাড়া করে আরো ভালভাবে শোনার চেষ্টা করলাম।
নূপুরের শব্দ আস্তে আস্তে বাড়ছে আর একই সাথে গানের গলার জোরও বাড়ছে। খুব সুন্দর গলায় একটা মেয়ে গান করছে আর নূপুর পড়ে ধীর লয়ে নৃত্য করছে। গানের আওয়াজটা এতোই শ্রুতিমধুর যে আমি কেমন বিমোহিতের মতো আস্তে আস্তে বন্ধ ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। বাইরে ঘনঘন বিজলী চমকাচ্ছে আর বন্ধ ঘরের দরজাটা সেইসাথে থেকে থেকে আলোকিত হয়ে উঠছে। যত দরজার কাছে যাচ্ছি ততো গানের শব্দ আর নূপুরের শব্দ আরো স্পষ্ট হচ্ছে। এখন নূপুর বললে ভুল হবে, বরং মনে হচ্ছে ঘুঙুর পায়ে নৃত্য করছে। হঠাৎ করেই পাশের ঘরে একটা গোঙানোর মতো শব্দ পাওয়া গেল। মনে হচ্ছে কেউ একজন মুখ দিয়ে গুঙিয়ে গুঙিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বলতে পারছে না। সেইসাথে আমার সামনের ঘর থেকে নাচ গানের শব্দ আরো জোরালো হতে শুরু করলো। এদিকে পাশের ঘরে যে গুঙিয়ে উঠেছিল সে ঐভাবেই কেমন ভাবে হাসা শুরু করলো। অনেকটা পাগল মানুষ ভাল লাগার মতো কিছু দেখে যেভাবে হাসে, অনেকটা তেমন শব্দ করেই হাসির শব্দটা আসছে। কিন্তু সেই হাসিতে খুব বেশি জোর নেই। একই সাথে সেই ঘর থেকে ঝনঝন করে কিছু একটা শব্দ করে উঠলো। ভারী লোহার কিছু পাথরের মেঝেতে পড়লে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন। সেই গোঙানোর শব্দ শুনে আমি ভয়ে শিউড়ে উঠলেও আমার সামনের ঘর থেকে সেই সুললিত কন্ঠের গান আর নাচের আওয়াজে আমি পালাতে পারলাম না। সম্মোহিতের মতো আমি তালা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

হঠাৎ করে গান থেমে গেল। সেই সাথে নাচও। একইসাথে সেই কামরার মধ্যে আমি একটি পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। কাঠের খড়ম পড়ে কেউ যেন খুব গাম্ভীর্যের সাথে হাঁটছে ঘরের মধ্যে। যে মেয়ে গলার গান শুনতে পাচ্ছিলাম সেই মেয়ে গলা হঠাৎ কাতর কন্ঠে বলতে শুরু করলো, “দয়া করে আমাকে মারবেন না। আমি আপনার পায়ে পড়ি জমিদার বাবু। দয়া করুন আমার উপর।”
কথাটা শুনে আমি বিচলিত হয়ে পড়লাম। আমার মনে হল ঘরের মধ্যে মেয়েটার বিপদ। তাকে বাঁচাতে হবে যেভাবেই হোক। ঘরের ভিতর আরেকজন যে আছে, জমিদার বাবু হোক বা যেই হোক, সে কোনো কথা বলছে না। মেয়েটা কান্না করছে আর ঘুঙুরের শব্দটা আস্তে আস্তে শোনা যাচ্ছে। হয়তো মেয়েটা নিজেকে বাঁচাতে পিছিয়ে যাচ্ছে। এদিকে আরেকটা অদ্ভুত ব্যপার হলো আরেকটি বন্ধ ঘর থেকে যে গোঙানীর শব্দটা শোনা যাচ্ছিল এখন সেখানে গর্জনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। যেন কেউ প্রচণ্ড আক্রোশে চিৎকার করে যাচ্ছে। লোহার আর পাথরের বাড়ি খাওয়ার শব্দটা আরো জোরালো হতে লাগলো। আমার হঠাৎ মনে পড়লো এই ঘরে জমিদারের ছেলেকে লোহার শিকলে আঁটকে রাখা হয়েছিল। তার মানে নিজের প্রিয়তমার বিপদের আঁচ পেয়ে তাকে বাঁচানোর জন্যে সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু শেকলে বন্দী থেকে সে কিছুই করতে পারছে না, তাই প্রচণ্ড আক্রোশে ভয়ঙ্কর চিৎকার করে যাচ্ছে। এদিকে আমারো মনে হচ্ছে মেয়েটাকে বাঁচানোর দরকার। হাত থেকে চায়ের কাপটা ফেলে দিয়ে আমি এঘরের বন্ধ পুরনো বিশাল আকারের তালা ধরে টানাটানি শুরু করলাম। কিছু করতে না পেরে আশেপাশে ভারী কিছু খোঁজার চেষ্টা করলাম বাড়ি দিয়ে তালা ভাঙ্গার জন্যে। কিন্তু কিছুই না পেয়ে আমি জোরে জোরে দরজায় আঘাত করতে থাকলাম আর চিৎকার করে দরজা খুলতে বললাম। ভিতরে মেয়েটার কান্নামিশ্রিত কন্ঠে আকুতি মিনতি বেড়ে চলেছে তাকে না মারার জন্যে। কিন্তু খড়ম পড়া পায়ের আওয়াজটা থামছেনা। এদিকে অন্য ঘর থেকে অমানুষিক চিৎকারটাও বেড়ে চলেছে। হঠাৎ করে ঘরের ভিতর থেকে মেয়ে কন্ঠে একটা আত্মচিৎকার ভেসে এলো। একইসাথে পাশের ঘর থেকে প্রচণ্ড জোড়ে অমানুষিক চিৎকার দিয়ে উঠলো ছেলেটি। এরপর সবকিছু কেমন যেন একেবারেই চুপচাপ হয়ে গেল। আর কোনো শব্দ নেই। সব শুনশান নিরবতা। বাইরে ঝড় বৃষ্টির শব্দও কেমন যেন থেমে গেছে। সিঁড়িতে কতোগুলো পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। প্রচন্ডভাবে মাথাটা ঘুরে উঠতে ওখানেই পড়ে গেলাম।

জ্ঞান ফিরতে দেখি আমি আমার ঘরে খাটের উপর শুয়ে আছি। মাথার কাছে মা বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সামনে তাকিয়ে দেখি বাড়ির প্রায় সবাই এঘরে দাঁড়িয়ে বসে আছে। বাবা মাথায় একটা হাত দিয়ে চুপচাপ চেয়ারে বসে আছেন। একজন হুজুর মতো মানুষকে দেখলাম আমার খাটের পাশে চেয়ারে বসে আছেন। তার হাতে একটা গ্লাসে পানি আর উনি দোয়া পড়ে সেই পানিতে ফুঁ দিচ্ছেন। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই ঘরের সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো। হুজুর মা কে বললেন, “এই পানিটা ওকে খাইয়ে দিন। ইনশা আল্লাহ্‌ আর কোনো সমস্যা নেই।” আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম মায়ের সাহায্যে। পানিটা তিন বারে খেয়ে গ্লাসটা মায়ের হাতে দিলাম। এর মধ্যে হুজুর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এখন কেমন লাগছে বাবা?” আমি মাথা নেড়ে বললাম ভাল লাগছে।

বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোর কি হয়েছিল? উপরে ঐ ঘরগুলোর সামনে কেন গিয়েছিলি তুই? আর এভাবে চিৎকার করে দরজা খুলতেই বা বলছিলি কাকে?” আস্তে আস্তে সব মনে পড়লো কি হয়েছিল। সব খুলে বললাম সবার সামনে। এতোকিছু যে হয়েছে এতো শব্দ আমি পেলাম, কিন্তু নিচে থেকে কেউ কিছুই শুনতে পায়নি, শুধু আমার চিৎকার ছাড়া। মা শুনেই কেমন ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বাবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। হুজুর আস্তে করে হাত তুলে সবাইকে শান্ত হতে বললেন। তারপর বললেন, “দেখুন এই জমিদার বাড়ি জুড়ে যেসব কাহিনী আছে সেগুলো অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়না। কিন্তু যা রটে তার কিছুটা তো বটে। আজ আপনাদের বাড়িতে অনেক খানা পিনার আয়োজন করেছেন আপনারা। একইসাথে ঝড় বাদলার রাত। ঠিক এমনি রাতগুলোতেই এই বাড়িতে নাচ গানের আসর জমতো। জমিদার বাবু আর বড় বড় মানুষেরা পেট পুরে খাওয়া দাওয়া করে, সরা*ব পান করে বাইজিদের নাচ গান দেখতেন। আর এমনি এক রাতে নাচ শেষে জমিদার বাবু নিজের হাতে সেই বাইজিকে একটা তলওয়ার দিয়ে হ*ত্যা করেন তার ছেলের সাথে সম্পর্ক করার অপরাধে। এরপর পাশের ঘরে নিজের ছেলেকে লোহার শেকল দিয়ে আঁটকে রাখেন। তার ছেলে সেখানেই খাওয়া দাওয়া না করে করে নিজেকে শেষ করে দেন। আজ এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে এমন পরিবেশে বাবাজী উপরে গিয়ে যা কিছু শুনেছেন তার সবকিছুই সেরাতে সত্যি সত্যি ঘটেছিল। আমার দাদাজান সে আমলে এই এলাকার বড় হুজুর ছিলেন। তার কাছেই সব শুনেছি আমরা।”

বাবা বললেন, “আমি যতো দ্রুত সম্ভব এ বাড়ি ছাড়ব। কারো কাছে বাড়িটা বেঁচে দিয়ে শহরে চলে যাবো। এমন একটা ভূতুরে বাড়িতে বাস করা সম্ভব না।”

আমি দ্রুত খাট থেকে নেমে বাবার কাছে গিয়ে বলি, “এমন কাজ করোনা বাবা। বাড়িটা আমাদের বংশের স্মৃতি। দাদাজানের স্মৃতি আছে। আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। দেখো কিছুদিন পর আমি এমনিতেই চাকরির জন্যে শহরে চলে যাবো। মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যাবো। গ্রামের এমন পরিবেশ আমরা আর পাবোনা কোথাও।”

আমার কথাটা শুনে বাবা চুপচাপ মাথা নাড়ালেন। বললেন, “যে ক’টা দিন আছিস আর দোতলা যাসনা বাপ। তোর কিছু হলে আমরা কি করতাম আজ বলতো?” আমি মাথা নেড়ে আশ্বাস দিলাম আর দোতলা যাবনা।

** শহরে একটানা ক’মাস চাকরি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই ক’টা দিন ভাবলাম গ্রাম থেকে ঘুরে আসি। বাবা মাকেও শহরে আমার কাছে নিয়ে রেখেছি। গ্রামে দাদী থাকেন সাথে আমার ছোট চাচাকে নিয়ে। আমি ছুটিতে গ্রামে আসতে চাইলেও বাবা চাইলেন না গ্রামে আমার সাথে যেতে। ভ্রমণ করলে শরীরে ধকল সহ্য হয়না তাই। বাবা যেহেতু যাবেন না তাই মাও বাবাকে একা রেখে যাবেন না। তাই একাই রওনা দিলাম। বাবা মা দুজনেই বারবার করে আমাকে সাবধান করলেন আমি যেন ঘুণাক্ষরেও দোতলা না যাই। গ্রামে ক’মাস পরে এসে বেশ ফুরফুরা লাগলো। সারাদিন দাদীর কাছে খাওয়া দাওয়া করলাম আর আশে পাশে ঘুরে পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটালাম। রাতে দেখি আমার আসার উপলক্ষ্যে দাদী এক গাদা ভুড়িভোজের আয়োজন করেছেন। ভরপেট খেয়ে দাদীর সাথে গল্প টল্প করে ঘুমোতে গেলাম তখনি বিদ্যুৎ টা চলে গেল। বাইরে শুনলাম গুড়্গুড় করে মেঘ ডাকছে। ঘরে ভ্যাঁপসা গরম লাগায় বাইরে চলে এলাম। বাইরে এসে আকাশের দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ পড়লো দোতালার ঘর গুলোর দিকে। কেমন যেন টানছে ঘরগুলো আমাকে। বাড়ির সবাই শুয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। আমি আস্তে আস্তে পা টিপে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম। সেই ঘর, যে ঘর থেকে গানের আওয়াজ পেয়েছিলাম তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছিল কেউ যদি আজ আবার আমাকে সেদিনের মতো গান শোনায়! শুধুই গান শোনাবে। আমি আর কোনো খারাপ কিছু শুনতে চাইনা সেদিনের মতো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন বুঝলাম আজ কিছু শুনতে পাবো না, অনেকটা হতাশ হয়েই ঘুরে ফিরে আসতে গেলাম। ঠিক তখনি ঘুঙুরের আওয়াজ পেলাম। সেইসাথে গুনগুন করে সেই সুললিত কন্ঠের গান। আমি ধীরে সুস্থে দোতলার বেলকনির মোটা রেলিঙে বসে পড়লাম। আজ সারারাত আমি গান শুনবো। আমি জানি, আমি যদি শান্ত থাকি তাহলে এই গান আর ঘুঙুরের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো অশুভ শব্দ আমি শুনতে পাবোনা। আর মেয়েটাকেও কেউ হত্যা করতে পারবেনা। আমি দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে ঘরের বন্ধ দরজার ওপাড়ের গান শুনতে থাকি।

সমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×