'সামু'-র সকল বন্ধুদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। এখানে এটি আমার প্রথম পোস্ট। প্রথম পোস্টেই এমন একটি বিষয় তোলা ঠিক হলো কিনা জানিনা, তবে আশাকরি মডারেট ভাইরা আমার প্রতি সহানূভুতিশীল হবেন এবং (ব্যান করার মতো পোস্ট হলে) একদম ব্যান না করে প্রথমে একটি সতর্কবানী দিবেন যাতে আমি সংশোধন করতে পারি।
এবার আসি আলোচ্য বিষয়েঃ
আজ (সোমবার - ২৩ নভেম্বর, ২০০৯) দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি রিপোর্ট দেখি, যা পড়ার পর থেকেই মনের ভিতর কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রিপোর্ট-টির কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করলাম, বাকীটার লিংক দিলাম যাতে কেউ চাইলে পুরোটা পড়তে পারেনঃ
“ রাস্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের শুরুতে দেশের সবকটি রাজৈনিতক দল নিষিদ্ধ করে দেশে একটি মাত্র দল ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)’ গঠন করেন। এই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতি এবং গণমাধ্যমের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় সৃষ্টি করে। বাকশালের দর্শন অনুযায়ী সরকার ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সবকটি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শুধু দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টাইমস-এ চারটি পত্রিকাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে সামিয়কভাবে প্রকাশনার সুযোগ দেয়া হয়। অবরুদ্ধ হয় বাকস্বাধীনতা। অন্যসব দৈনিক এবং সাপ্তহিক পত্রিকা বন্ধ করার ফলে অনেক সাংবাদিক এবং সংবাদকমী বেকার হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর খন্দকার মোশতাক আহমদের সরকার দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক সংবাদের প্রকাশনা আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছর (১৯৭৫) ২২ আগস্ট (শুক্রবার) বিকালে তৎকালীন তথ্য ও বেতার, শ্রম, সমাজকল্যাণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর ইত্তেফাক ও সংবাদ মালিকেদর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন এবং ২৪ আগস্ট থেকে পত্রিকা দুটি আগের মালিকানায় প্রকাশিত হতে শুরু করে।
................ এদিন (২৪ আগস্ট রেববার) দৈনিক ইত্তেফাক নব-প্ররিক্রমা শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এর চারিদন পর (২৮ আগস্ট, ১৯৭৫) ইত্তেফাকে “প্রসঙ্গঃ দেশ ও জাতি” শিরোনামে পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের একটি দীর্ঘ উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এতে তিনি ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের পতন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন বিষয়ে বলেন, এই পরিবর্তন আকস্মিক, তবে অস্বাভাবিক নয়। প্রকৃতির যে নিয়ম, সেই নিয়মের বাইরে কেউ যাইতে পারেনা। নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে যদি বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়, তবে নদীর জলরাশি অস্বাভাবিক উপায়ে হইেলও উহার গতিপথ সৃষ্টি করিয়া নিবে। ইহাই প্রকৃতির নিয়ম। পৃথিবীতে এই নিয়মের ব্যত্যয় কখনো ঘটে নাই, ঘটেতও পারে না। বাংলাদেশে মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের নাম করিয়া যে ব্যবস্থাটি দাঁড় করানো হইয়াছিল, সেখানে কার্যতঃ সর্বপ্রথমে উপেক্ষা ও অস্বীকার করা হইেতিছল আপামর দেশবাসীর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে। গোটা ব্যবস্থাটি সেখানে মুষ্টিমেয়র দ্বারা কুক্ষিগত করা হইয়াছিল, ভাঙ্গা বুকের যাতনা ও হতাশা তীব্র হইতে তীব্রতর হইতেছিল। এর যে কোথায় শেষ, কেহ ভাবিয়া পাইতেছিলনা। এই অবস্থায় প্রকৃতির নিয়েমই একটা পথ সৃষ্টি হইয়াছে। বর্তমানের রাজনৈতিক পরিবর্তনটি দেশের সর্বাত্মক পরিস্থিতির দুঃসহ অবস্থায় অবধারিত হইয়া উঠিয়াছিল। ব্যক্তি পর্যায়ে কাহারও জন্য দুঃখ, শোক বা সহানুভূতি প্রকাশের চাইতেও জাতীয় স্বার্থের দিকটা বড় করিয়া দেখার যে আবশ্যকতা, সেই বিবেচনায় এই নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হইবে। ”
পুরো রিপোর্ট এর জন্য ক্লিক
করেন।
এ ছিল রিপোর্টটির প্রথমাংশ। এরপর আনোয়ার হোসেনের পুরো সম্পাদকীয়টি দেয়া হয়। ১৫ আগস্ট যখন সেই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে তখন আমার জন্মই হয়নি। পরবর্তীকালে পাঠ্যবই এবং অন্যান্য মাধ্যমে সেই ঘটনার বিবরণ শুনেছি। কিন্তু আজ রিপোর্টটি পড়ে নতুন করে আবার ভাবতে বাধ্য হলাম, এবং এই ভাবনা থেকেই আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। আপনাদের কাছে হয়তো এর উত্তর পাবো।
১। “ রাস্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের শুরুতে দেশের সবকটি রাজৈনিতক দল নিষিদ্ধ করে দেশ একটি মাত্র দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন।”
এর দ্বারা কি তিনি নিজেকে স্বৈরাচারী হিসাবে প্রকাশ করলেননা? নাকি তিনি বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্র্র হিসাবে গড়তে চাচ্ছিলেন?
২। বাংলাদেশকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পরিচয় করাবার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জিয়াউর রহমানের অবদান এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য। এখনোও প্রায়ই প্রবীনদের বলতে শুনি যে ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাটের যা উন্নতি হয়েছে তা শুধু এরশাদের আমলেই হয়েছে।
শেখ মুজিবের সেই কীর্তিকে আমরা যদি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তার ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি দিই, তাহলে কি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং আরেক স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ-কেও তেমনিভাবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত নয়?