জীবন ব্যপারটা আমরা সবাই খুব কঠিন ভাবেই ভাবি। উমম..........জীবন তো কঠিনই। কত যে চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে যেতে হয....... কারো কারো জীবন যে সহজ নয় তা বলবো না তবে সাধারন ভাবে জীবনে কোন কিছুই সহজ ভাবে হয় না। যার জীবন সে'ই সব চাইতে ভাল জানে তার জন্য জীবন কতটা কঠিন বা সরল। যার যার কাছে তার তার জীবন তার তার মত করে কঠিন হয়ে এসেছে। কেউ এই কঠিন জীবন কে সরল করে যাপন করার চেষ্টা করেন, কেউ আবার এই কাঠিন্য কে সামলে উঠতে পারেন না। আমার সারা জীবনে মাত্র একজন মানুষ কে বলতে শুনেছি যে তার জীবন খুবই একটা সরল জীবন, কষ্ট ছারা একটা জীবন, আমি অবাক হয়ে তাকে দেখেছি সেদিন। আসলে এই ভাবে জীবন কে দেখাটাই হলো একটা বড় সরলতা বড় জয়.....আমি ভাবি, তার মত করে জীবনের কাঠিন্য কে অতিক্রম করা একটা অনেক বড় ব্যপার বা সত্যিই তার জীবন জটিলাতাহীন একটা সুখি জীবন। তার সাথে আমার আর যোগাযোগ নেই থাকলে এতদিন পরে আবারও একবার তাকে সেই কথা জানতে চাইতাম - এখনও কি তোমার জীবন তেমনই আছে?
আমার জীবনকে আমি সব সময় সরল ভাবে ভাবার বা রাখার চেষ্টা করেছি। জানি না কতটা পেরেছি....প্রতিনিয়ত আমরা জীবন পরিক্ষায় বসছি, কেউ পাশ করছি কেউ করিছিনা। তবু চাই বা না চাই পরিক্ষা দিতে হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্তে। আমি নিজে বহুবার ফেল করেছি, এখনও ফেল করেই যাচ্ছি। এক একবার ফেল করে প্রচন্ড হতাশায় ডুবে গেছি, আবার উঠে দাড়িয়েছি, আবার পরিক্ষায় বসেছি....পরেরবার পাশও করেছি। মজার ব্যপার হলো আজ জীবনের এই প্রান্তে এসে এই পরিক্ষা পরিক্ষা খেলা ব্যপারটায় খুবই মজা পাচ্ছি!! হঠাৎ করেই রিয়ালাইজ করলাম আরে এটা তো একটা মজার খেলা!! যতবারই ফেল করছি ততবারই খেলাটা আরো বেশি মজার হয়ে উঠছে, আরো এনজয়এবল্ হয়ে উঠছে, আরো জমে উঠছে। কারন যত বার ফেল করছি ততবার সেই একই পরিক্ষা আবারও দিতে বসছি আর নেক্সট টাইম ৪/৫ গুন ভাল রেজাল্ট করে পাশ হয়ে যাচ্ছি!! আমি নিজেকে জীবন স্কুলের একজন মেধাবী স্টুডেন্ট বলে দাবি করি এখন, জীবন আমাকে প্রতিদিন শেখায়, শেখার যেন কোন শেষ নেই, আমিও মন দিয়ে শিখি, ভুলে যাই আবার শিখি...... আর এই অন্তহীন শেখাটায় একটা আনন্দও আছে ! জীবনের এই নতুন নতুন ব্যপার, চড়াই উৎড়াই গুলো শিখতে ভালই লাগছে এখন আমার। এ যেন হাইকিং এর মত একটা ব্যপার, উঠতে উঠতে কখনও পা মচকে পরে যাচ্ছি, বা কখনও পরে গিয়ে গায়ের চামড়া ছিড়ে যাচ্ছে, কখনও বা কেটে রক্ত বেরুচ্ছে........ তবে নেক্সট টাইম যখন একই ধরনের উৎড়াই পেরচ্ছি তখন আগের অভিঙ্গতা কে কাজে লাগিয়ে পরের পরিক্ষাটা টপকে যাচ্ছি যতটা ভাল করব আশা করি তার চাইতে বেশি ভাল করে । আগের বার যদি ব্যথাটা না পেতাম তবে পরেরটা এত ভাল করে উৎরে যেতে তো পারতাম না! আর এক একবার ব্যথা পেয়ে শিখে যাচ্ছি কতভাবে ব্যথাদানকারিকে বা প্রতিপক্ষকে পরেরবার আটকে দেয়া যায় ব্যথা দেয়া থেকে। পরিক্ষায় খুব ভাল করে পাশ করার যে আনন্দ তার সাথে আর কোনো কিছুর কি তুলনা হয়?? যখন স্টুডেন্ট ছিলাম মনে আছে সিংগাপুরে একবার পরিক্ষা দিয়ে কনফার্ম হয়ে গেলাম যে ফেল তো করবই করব এখানে আর কোনো অপশন নেই, পড়াশোনায় ফাকিবাজদের কপালে আর কি থাকবে এছাড়া । ৩ মাস পর যখন রেজাল্ট বের হল দেখি ডিসটিংশান নিয়ে পাশ করেছি.......!!! সে মুহুর্তে এই খুশির আমার সীমা ছিল না, আমি তখন গংগা ফরিং!!
তো জীবনের এই ফেল মারার বা কষ্ট পাবার ব্যপারটা এখন আমার কাছে মজার একটা এনজয় করার ব্যপার হয়ে গেছে। আমি যখনই কোন ব্যপারে কষ্ট পাচ্ছি বা হতাশ হচ্ছি মনকে আরো নতুন করে তৈরি করে তুলছি!! মজা পাচ্ছি এই ভেবে যে পরের পরিক্ষায় আমি নিশ্চিত ডাবল ডিসটিংশন নিয়ে পাশ করতে যাচ্ছি! উমম বাল যায় না ট্রিপল্ ডিসটিংশনও পেয়ে যেতে পারি । লাভ হলো আমারই আর লস হলো যে আমাকে কষ্ট দিল বা যে কারনে কষ্ট পেলাম......নিজে যে নতুন একটা কিছু শিখলাম এটা ভেবে মনে যে আনন্দ পাচ্ছি তার তুলনা অন্য কিছুতে নেই.....আর পরের পরিক্ষায় সত্যিই পাশ করছি যেমন আশা করছি তার চাইতেও অনেক ভাল করে, ইউজ করছি আগের বারের ভুল গুলো থেকে শেখা ভুল না করার টেকনিক গুলো !! যারা অংক নিয়ে পড়াশুনা করছেন তারা আমার আমার এই অনুভূতিটা বুঝতে পারবেন হয়ত.....জীবনটা অনেকটা বানর এর তেল দেয়া বাঁশে ওঠার অংক মেলানোর মতন। এই অংক মেলানোর সময় রাগ হয়, হতাশা হয়, দুঃখ হয় এই ভেবে যে এই পচা অংকটা কেন আমার ভাগ্যে পরল, যে মানুষটা এই অংক বানিয়েছেন তার চোদ্দৌ গুস্টি উদ্ধার করে ফেলি.......কিন্তু এক সময় যখন অংকটা মিলে যায় কি যে আনন্দ লাগে মনে প্রানে তা যারা পরিক্ষার খাতায় এই অংক পেরেছেন তারাই বুঝবেন। আমি নিজে এই অংককে জীবনে সব চাইতে ঘৃনা করি যতবারই এই অংক করিনা কেন কতদিন পর আমি আবারও ভুলে যাই কি করে এর সমাধান করতে হয়......ঠিক যেমন করে অনেক সময় আমি ভুল করে, ভুলে যাই সেই ভুলের কথা, আর আবারও সেই একই ভুল আরেকবার করে ফেলি......... ! পার্থক্যটা হলো দ্বিতীয় বার করা একই ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে আগের বারের চাইতে ভাল করে সিচুয়েশন হ্যন্ডেল করতে পারি........এটাওত কম পাওয়া নয়, কম মজার নয়!
আমরা মানুষ, আর মানুষই ভুল করে, পশু পাখি সম্ভবত ভুল টুল কিছু করে না বা করার চান্সটা তাদের থাকে না - অনেকটা "সুযোগের অভাবে চরিত্রবান" ব্যপারটার মতন .......এটা আমার ধারনা, তবে কখনও কোন পশু বা পাখির সাথে কথা বলার সুযোগ পেলে ব্যপারটা জেনে নিতাম। কখনও কখনও আমার বাড়ির সামনের গাছের বাস করা কাকাতুয়া যুগল কে ডেকে সত্যিই জানতে ইচ্ছে করে "আচ্ছা তোরা কি ভুল করিস, তোদেরও কি মন খারপ হয়?" উমমম.........মাঝে মাঝে মাঝরাতে এই দুজনের কান্না বা ঝগড়া বা ভালবাসায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবি এরা কি ঝগড়া করছে নাকি ভালবাসছে? প্রকৃতি এক বিশাল রহস্য আমার কাছে সব সময়......কত কিছুই আছে যা জানবার কোন উপায় নেই কোনো ভাবেই।
আমি নিজে একজন নির্ভুল মানুষ না। বরং বলব ভুলে ভরা একটা কলসি আমি....... এই কলসি ভরা ভুলের বোঝা নিয়ে এত দুর পর্যন্ত এসে আজ পিছন ঘুরে দেখলে দেখি আমার এই ভুল গুলোই আমাকে এত দুরে এনেছে আর যারা আমার ভুল করা দেখে আমার ভুলের ভার লাঘব করা তো দুরের কথা বরং কটু কথা বলতে এক মুহুর্ত দ্বিধা করেন নাই তাঁরা কিন্তু সেখানেই রয়ে গেছেন আর আমি এগিয়ে গেছি তাঁদের চাইতে অনেকটা সামনে। গর্ব করে বলছিনা তবে আমার ভুলের বোঝা, দ্বায় ভার আর আমার ভুলের জীবনটা আমি একাই যাপন করেছি, করতে বাধ্য হয়েছি বলা যায়.....তবু কাউকে কোনোদিন এজন্য দোষারোপ করিনাই। আমি নিজের ভুলের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে বা অন্যকে দোষারোপ করতে পছন্দ করিনা। নিজের ভুলের জন্য নিজে সাফার কারাটাই আমি ঠিক বলে মনে করি। যাতে সেই ভুল থেকে আমি শিখতে পারি, নিজেকে গরতে পারি আরো ভাল করে, আর যখন নিজেকে আরো ভাল করে গরব তখন সেই ক্রেডিটা আমি অন্য কাউকে দিতে চাইনা।
আমার এই ভুলে ভড়া জীবনে যদি একটু সামান্য কিছুও আমি ভাল করে থাকি তবে তার সমস্ত ক্রেডিট আমি আমার নিজের বলে মনে করি, আর এজন্য যদি ভাল কিছু আমার কাছে আসে তবে আমি তা ডিজার্ভ করি বলেই মনে করি। আমি একজন সেল্ফ মেইড মানুষ বলে আজ নিজেকে নিয়ে আমার ভাল লাগার অনেক কিছুই আছে। হলামই নাহয় ভুলে ভরা একটা কলসি তবু সেই কলসিতে তো এক চুমুক ঠান্ডা পানি পাওয়া যায় আজ ।
ক'দিন আগে বন্ধুর কাছে শুনে "বারফি" নামে মুভিটা দেখলাম। হিন্দি বুঝিনা, ছবিটা দেখতে গেছিলাম ইংরেজি সাবটাইটেল আছে শুনে। তবে ছবিটা বুঝতে ভাষার দরকার খুব সামান্যই হয়। ছবিটা সেল্ফ এক্সপ্লেইন্ড। জীবনের দুঃখ কষ্ট গুলোকে যে কতটা সাধারন ভাবে দেখতে পারা যায় এই মুভিটা দেখে আমার সেই রিয়েলাইজেশন হয়েছে। জানি মুভি আর জীবন এক নয়, তবু যদি ছবিটার শুধু এই দিকটা দেখি, যে কষ্টা পেয়েও হাসি মুখে সেই কষ্টকে কষ্ট মনে না করার মাঝে যে কষ্টকে জয় করার শান্তি আছে সেটা তো অনেক বড়......! মুভিটা দেখবার পরে কষ্ট কে অতিক্রম করার মাঝে যে অনন্দ, যে ভাললাগা, জীবনের সুন্দর দিক গুলোকে ভালবাসায় যে শান্তি তা আমি নতুন করে অনুভব করলাম। কষ্টকে অতিক্রম করে যাওয়ার ব্যপারটা আমি আবারও নতুন করে শিখলাম.......।
কাওসার আহমেদ চৌধুরী কে হয়ত অনকেই চেনেন......উনি প্রথমআলো পত্রিকায় "ছুটির দিনে" রাশি নিয়ে লেখেন। জোতিষি ছারাও তিনি অন্য অনেক কারনে সন্মানিত ও পরিচিত একজন মানুষ। অসাধারন সব গান লিখে তিনি প্রচুর পরিচিত বাংলাদেশে। এই মানুষটা ও তার পরিবার এক সময় আমাকে চুরান্ত হতাশা থেকে উঠে আসতে সাহায্য করেছেন, সময় দিয়েছেন। এই কাওসার ভাই আমাকে বলতেন মীন রাশির মানুষরা মাছের মতনই পিছলে কঠিক কষ্টকর অবস্থা থেকে নিজেদের বের করে আনতে পারেন, তারা যে কোন বড় ধরনের কষ্টকে সামলে ওঠেন দ্রুত আর সামনে এগিয়ে চলেন মাথা উচু করে। অনেক ভবিষ্যত বানীও উনি করেছিলেন সেই সময় আমার ব্যপারে যার ১০০% ঠিক হয়েছে.......আমাকে শুধু ধৈর্য ধরতে হয়েছে কষ্টের সময় গুলোতে। আমি কোনদিনও সেই সময় উনার সাহায্য ও সহানুভুতির কথা ভুলবো না। না ভবিষ্যত বলে উনি আমাকে সাহায্য করেন নাই, বরং সাহায্য করেছেন মানসিক ভাবে। ঘন্টার পর ঘন্টা আমাকে সময় দিয়েছেন, কথা বলেছেন। আমার চুরান্ত পর্যায়ের মন খারাপ করা অবস্থায় উনি যদি ফোন করে জানতে পেরেছেন যে আমার মন খারাপ আমাকে অনুরোধ করে বলেছেন কোন ভাবে একটা রিক্সা বা ট্যক্সি চেপে তার বাড়ি চলে যেতে উনি ভাড়া দিয়ে দেবেন.......। আমি যেতে না চাইলে উনি জোর করে যেতে বলেছেন, আমি তাকে অসন্মান করে না বলতে পারি নাই.......দিন শেষে আমি মুখে হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।
এই মানুষটার সাথে আমার অনেকদিন যোগাযোগ ছিল তবে এক সময় কেমন করে যেন উনি হারিয়ে গেলেন......। তাকে এই কৃতজ্ঞতাটা আমার তেমন করে জানানো হয়নি। কেউ যদি তাকে জানেন তবে আমার কৃতজ্ঞতা পৌছে দেবেন নিশ্চই। এই মানুষটা আরো কিছু চমৎকার মানুষের সাথেও আমাকে জুরে দিয়াছিলেন সেই সময়, যারা আমাকে উনার মত করেই বুকে তুলে নিয়েছিলেন - তারা হলেন - নুমা আপু, মোর্শদ ভাইয়া, নিপো ভাইয়া, স্মিতা আপু.......আরো অনেকে.......।
তো আসল ব্যপার হলো জীবন কে "বারফি'র" মত করে দেখা সহজ করে নেয়া - এই জিনিসটা আজ অনুভব করে আমার মন আরেক ধাপ এগিয়ে গেল জীবন স্কুলে শিক্ষার লেভেলে......। যেমন একধাপ উঠে এসেছিলাম "Eat Pray Love" বই টা পড়ে। "বারফি" আমাকে হাত ধরে নিয়ে এলো আরেক শান্তির দেশে। আজ মন খুলে বলতে পারি তুমি বা তোমারা আমাকে যত কষ্টই দাওনা কেন পরাজয়টা তোমার/তোমাদের ঝোলায় রইল আর জয়টা এল আমার ভাগে........তাই বলি Take it Easy and Be Barfi............জীবনটা আসলেই সুন্দর!!!
বারফি