ক্রিসমাস এসে গেল আর সেই সাথে এসে গেল ইন্টারনেট আর টিভি কনেকশন। ছোট হয়ে এলো আমার পৃথিবী আবার। ক্লিফের ও টানা দশ দিনের ছুটি। ঠিক করলাম আমরা সানশাইনকোস্টে ক্যম্পিং এ যাবো কদিনের জন্য।
ঠিক করলে কি হবে ওয়েদার খুবই খারাপ হতে শুরু করল। বন্যায় ভেসে গেছে সানশাইনকোষ্টে যাবার পথ। মানুষ বাড়ি ঘরহীন হয়ে পরেছে এখানে। মনে পরে আমার দেশের বন্যার কথা। মানুষ যখন বিপদে পরে তখন দেশ জাতি নির্বিশেষে সবাই একই রকম অসহায় হয়ে পরে। বিশাল একটা জায়গা রকহ্যাম্পটনের সবার বাড়ি পানির নিচে।
কি আর করা ঘরে বসে বসে সমুদ্রের উথাল পাথাল ঝড় আর সাগরে জোয়ার ভাটার খেলা দেখি। এর মাঝে আমাদের হোদল রাজার নাম্বার পেয়ে উনাকে ফোন দিলাম। অনেক দিন পর আবার বাংলায় কথা বলাবার সুযোগ হলো । উনি উনার লেখার মতনই মজার মানুষ বলে মনে হলো কথা বলে। খুব মজা করে কথা বলেন। জানা গেল উনি আমার কাজিনের স্টুডেন্ট ছিলেন
হোদোল রাজা পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের আরেকজন ব্লগার ম্যাকানিক্স এর সাথে উনিও ব্রিসবেনে থাকেন । উনি আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন কোথায় বাংলাদেশি দোকান আছে যেখানে আমি বাংলাদেশি মশলা পাবো.....আরো কিছু ইম্পর্টেন্ট ইনফরমেশন। যা সত্যিই আমার দরকার ছিল। অনেক ধন্যবাদ এই দুজন মানুষকে সাহায্যের জন্য। আর উনাদের সাথে কথা বলেও মনটা কিছুটা ভাল লাগল।
ক্রিসমাসে রান্না বান্না না করে আমরা ঠিক করলাম শহরে কোথাও গিয়ে লাঞ্চ করব। শেষ মুহুর্তের ডিসিশনে ওয়েব দেখে বুকিং দিলাম ব্রিসবেন রিভারে কুকাবুরা প্যডেল বোটে ক্রিসমাস লাঞ্চের জন্য। ভাগ্য ভাল থাকায় জায়গা পেলাম ওখানে।
সেই পুরোনো দিনের প্যডেল বোট। তিন তলা জুরে রেস্টুরেন্ট। চমৎকার দৃশ্য নদির দুপাশে!
আর খাবারও খুব চমৎকার। আমরা দুজন কাউকেই চিনিনা তাই নিজেদের ছবি নিজেরাই তুললাম
আর লাঞ্চ করতে করতে নদির দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল।
পরের দিন বক্সিং ডে সেল। দুজন গা ঘিন ঘিনে বৃষ্টিতে ভিজে শহরে গেলাম কিছু কেনাকাটার আশায়। পরের ক'টা দিন আসলে শপিং করেই কাটল। বড়ির জন্য কিছু জিনিস কেনা আর তার সাথে নিজেদের
ক'দিন পরে সূর্য়ের মুখ দেখলাম আবার। চলে এলো নিউ ইয়ার ইভ। ২০১০ এর শেষ আলোর দেখলাম আমাদের ব্যালকনি থেকে।
আমাদের বাড়ির পাশের হোটেলে গেলাম নিউ ইয়ার ইভ সেলিব্রেট করতে আর সবার সাথে। সেখানে পরিচয় হলো এ্যালিসন এর সাথে। মজার মেয়ে সে।
কিছুটা পাগলি টাইপের তবে চমৎকার মানুষ।
প্রচুর ফায়ার ওয়ার্কস দিয়ে আমাদের ছোট্ট বে তে সাবাই মিলে নিউ ইয়ারকে সেলিব্রেট করলাম।
নাড্জি নামের একটা জায়গায় গেলাম ওয়েট ল্যান্ডে হাঁটতে।
গিয়ে দেখি তার অর্ধেকটার বেশিই বন্যায় ডুবে আছে। শেষে নদির পাড় দিয়ে ঘোরাঘুরি করলাম। এখানে প্রায় ৭০% মানুষের মাছ ধরার নেশা। হলিডেতে আমাদের বাড়ির সামনে প্রতিদিন মানুষ মাছ ধরতে আসে সাগরে ছিপ আর জাল নিয়ে, চমৎকার দক্ষতায় সাগরে জাল ছোড়ে ওরা। নাড্জিতেও দেখলাম মানুষজন নদির পারে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা মাছ ধরে সময় কাটাচ্ছে। ক্লিফকেও এবার ক্রিসমাসে একটা মাছ ধরবার গিয়ার কিনে দিলাম। আর সেটা নিয়ে দুজন একদিন আমাদের জেটিতে মাছও ধরতে গেলাম ঘন্টা দু'য়েকের জন্য, যদিও শেষ পর্যন্ত কিছু ধরতে পারিনি
একদিন পরে সূর্য ওঠায় গেলাম টুউম্বা নামের একটা শহরে। আমাদের বাসা থেকে ২ ঘন্টার ড্রাইভ। পথে এখানে সেখানে ছোট শহর গুলোতেও ঢু মারলাম। সময় যেন থেমে গেছে এই শহর গুলোতে। সেই আগের মতন পুরোনোই রয়ে গেছে বার রেস্টুরেন্ট গুলো। কোন পরিবর্তন নেই। মনে হয় অতিতের কোন ওয়েস্টার্ন শহরে চলে এসেছি।
দুপাশে সবুজ আর পাহাড়ি আঁকাবাকঁা পথ ধরে টুউম্বা পৌছালাম। চমৎকার জায়গা! পাহাড়ের উপর সবুজে ভড়া। চমৎকার সব পাখি আর বাড়ি। এককেটা বাড়ি আরেকটার চাইতে যেন সুন্দর।
এক কুকাবুরা দম্পতির সাথে দেখা হওয়ায় তাদের কিছু ছবি তুললাম ।
আর উনারাও খুব গর্ব করে পোজ দিলেন আমাকে।
ওরা যখন ডাকে মনে হয় যেন হা হা হা করে অট্ট হাসি দিচ্ছে মনে ওদের খুবই আনন্দ সারাক্ষন
এর পরদিন গেলাম গোল্ডকোষ্টে। তবে শুধু ড্রাইভ করে যাওয়া আর আসাই হয়েছে। নেমে তেমন করে ঘুরে দেখা হয়নি লাঞ্চ করা ছারা। বলা চলে যাষ্ট এ ডে ট্রিপ শুধু কি করে যেতে হয় টা দেখবার জন্য। পরের বার ঘুরে দেখব বলে ঠিক করলাম।
দু'দিন পরে ফোনে পরিচয় হলো আরেকজন আমাদের ব্লগার নাআমি'র সাথে। তাও আবার হোদোল রাজার বদৌলতে। মনটা আরো ভাল হয়ে গেল। কি বলে যে হোদল রাজা পরিবারকে ধন্যবাদ দেব
কথা বলে নাআমি - কে অসাধারন লেগেছে। দেখা এখনও হয়নি তবে আশা করি খুব শিঘ্রি হবে। এর মাঝে আমি চরম দাঁাতে ব্যথায় ভুগছি। একটা দাঁতকে বিদায় জানাতে হবে খুবই শিঘ্রি উমমম বয়স বাড়ছে ......
দাঁতে ব্যাথা শুনে এ্যালিসন এল ক্লোভ ওয়েল আর দঁাতে ব্যথার পেইন কিলার নিয়ে আমাকে দেখতে। যদিও পারভিন আপুর কথা মত ক্লোভ আগে থেকেও মুখে রাখছিলাম। তবে এই স্বজনহীন পরিবেশে এ্যলিসনের বন্ধুতা আর কেয়ার অনেক ভাল লাগলো।
ক্রিসটিন নামের মেয়েটার সাথেও পরিচয় হলো। ও আমাদের বিল্ডিং এর ইন চার্জ। এই বিল্ডিং এই থাকে। চমৎকার নরম আর বন্ধুতা মনের মানুষ। আস্তে আস্তে এখন ভাল লাগতে শুরু করেছে আমার নতুন আবাস অবশেষে