সেদিন ব্লগার পারভীন আপুর পিৎজ্জা রেসিপি পোস্ট দেখে Click This Link পিৎজ্জা বানাবার ও খাবার খিদে পেয়ে গেল। কি করি তখন ?? সেদিনের ডিনার বানানো হয়ে গেছিল। ঠিক করলাম পরের দিন পারভীন আপুর রেসিপি দিয়ে পিৎজ্জা বানাব। সব সময় তো পিৎজ্জা হাট থেকেই পিৎজ্জা কিনে খাওয়া হয়। কখনও জীবনে নিজে পিৎজ্জা বানাইনি। বানাবার দরকার পরেনি। ভাবলাম এই বার একটা ট্রাই করে দেখা যাক কেমন হয়।
যেই ভাবা সেই কাজ । আগের দিন রাতে ডিনারের পরে হাটতে গিয়ে ক্লিফকে বললাম আমি কাল ডিনারে পিৎজ্জা বানাতে চাই। ক্লিফের মুখটা হা হয়ে গেল অটোমেটিকলি, বললো "আগে কখনও বানিয়েছ?" আমি বললাম "বানাই নি, তবে তাতে কি, এবার নাহয় বানাব" ক্লিফের মুখে আতংকের ছায়া। বেচারা মনে মনে হয়ত ভাবছে "আহ না জানি কাপালে কি আছে আগামিকালের ডিনারে, কি অখাদ্য যে খেতে হয় হাসি মুখে " তবে মুখে বলল "ওকে নো প্রবলেম, ইউ ওয়ান্ট মি টু বায় এনিথিং এল্স টু ইট উইথ দ্যাট" বাললাম "অন্য কিছু কেন, আমার বানানো পিৎজ্জাই তো ইনাফ" তাই শুনে বেচারের মুখ শুকনো হলো আরো বেশি ।
যাই হোক তখনই পাশের জেলিটা কোল্ড স্টোরেজ থেকে ইস্ট আর ময়দা কিনলাম। বাড়ি ফিরে মনের আনন্দে আমি পিৎজ্জা বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ঘুমুতে গেলাম আর ক্লিফ আমার বানানো পিৎজ্জা খাবার ভয় নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমতে গেল ।
সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে পারভীন আপুর পোস্ট খুলে দেখে নিলাম কি করতে হবে। পোস্ট মত ময়দার গোলা ডো বানিয়ে তাকে ঘুমুতে দিলাম। এর পরে কিছু ইমেল চেক, ফেসবুকিং ও সামুয়িং সেরে গেলাম পিৎজ্জার টপিং বানাতে। টোমেটো কুচি, পিয়াজ কুচি, আদা কুচি, গ্রেটেড চিজ, স্কুইড (বেবি অক্টিপাস) ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিলাম। ফ্রিজে রোস্টেড চিকেন ছিল কিছুটা, ওটাও ছোট ছোট টুকরো করে নিলাম।
টোমেটো সসের বদলে নিলাম আমার দুরকমের পাস্তা সস, একটা টোমেটো ও মাশরুম বেইস ( পেরগো) অন্যটা মাশরুম ও হার্ব বেইস (ডলমিও)।
পিৎজ্জা বোর্ডে ফুলে ওঠা ময়দার ডো কে বেলে লম্বাটে চারকোন শেপ দিলাম। আমি পাতলা পিৎজ্জা পছন্দ করি তাই রুটিটিকে একটু পাতলা করে বেললাম।
তার উপরে প্রথমে ডলমিও ও পরে পরগো দিয়ে পাতলা করে লেয়ার দিলাম।
তার উপরে পিয়াজ কুচির লেয়ার ও আদা কুচির লেয়ার। টোমোটেো কুচি ও ক্যপাসিক্যামের লেয়ার তার উপরে গ্রেটেড চিজ।
এর পরে ছড়িয়া দিলাম স্কুইড কুচি। এবার দিলাম চিকেন টুকরো আর তার উপরে আবারও গ্রেটেড চিজ।
ধনেপাতা কুচো ছড়িয়ে দিলাম। তার পরে আবারও ক্যাপসিক্যাম ও গ্রেটেড চিজ।
ব্যাস হয়ে গেছে আমার জগা খিচুড়ি পিৎজ্জা - এখন শুধু বেক করা।
প্রথামটা বানিয়ে এক পাশে রেখে দিয়ে পরের টা বানালাম ও দুটোকে পাশাপাশি শুইয়ে আভেন অন করে প্রি হিট দিলাম।
ক্লিফ অফিস থেকে বেরোনোর সময় স্কাইপে আমাকে মেসেজ করল "বেরুচ্ছি এখন, হেই পিৎজ্জা লেইডি তোমার পিৎজ্জার খবর কি, আমি কি অন্য কোন খাবার আনব বাইরে থাকে পিৎজ্জার সাথে খাবার জন্য?" আরেক বার অপচেষ্টা আমার বানানো পিৎজ্জা না খাওয়ার । বললাম " বলেছি না আর কিছু লাগবেনা আমি দু দুটো পিৎজ্জা বানিয়েছি তো!!!" তাই শুনে বেচারার কম্ম কাবার ।
ক্লিফ অফিস থেকে বেড়িয়েছে জেনে আমি পিৎজ্জা দুটো আভেনে ঢুকিয়ে দিলাম। কারন পিৎজ্জা গরম গরম খেতে হয় আর ক্লিফের ড্রাইভ করে বাড়ি পৌছুতে ২০ মিনিট লাগে।
পারভীন আপুর কথা মত আভেনের টেম্পারেচার দিয়ে টিভির সামনে আমি। আধা ঘন্টা পরে ক্লিফ বাড়ি ফিরতেই বলল " আই এম স্টার্ভিং" আভেন থেকে পিৎজ্জা বের করে ধনে পাতা কুচি উপরে ছড়িয়ে সামনে দিতাই ও তো অবাক !!
দেখেই বলল "দেখে ত চমৎকার লাগছে!! উমমম ইয়াম্মি!!" পিৎজ্জা কেটে প্লেটে একটুকরা নিয়ে বসল টিভির সামনে।
মুহুর্তেই শেষ পিৎজ্জা, আর অবাক হয়ে বলল "এটা তো খুবই মজা হয়েছে, গুড জব!!" আমি দু টুকরো ভাগে পেলাম মাত্র , ক্লিফ সব খেল বসে বসে আবার বক্সে ভরে ফ্রিজে আলাদা করে রাখল পরের দিন অফিসে লাঞ্চ নিয়ে যাবে বলে।
অনেক ধন্যবাদ পারভীন আপুকে রেসিপিটির জন্য। আমার বানানো প্রথম পিৎজ্জা আসলেই খুবই মজা হয়েছে ।