আমার মা মোবাইল ব্যবহার করছেন ১৯৯৭ সাল থেকে। তিনি অত্যন্ত স্মার্ট শিক্ষীতা ও সুন্দরী সোশালজির প্রফেসর ছিলেন এবং পি এইচ ডি হোল্ডার।
অনেক বার চেষ্টা করেও তাকে কি করে এস এম এস করতে হয় তা শেখাতে পারিনি। তিনি আলকেটেল সেট ইউজ করতেন প্রথম দিকে। ওতে এস এম এস করা খুব ঝামেলার ছিল তাই ভাবলাম অনেক শেখাবার পরও এস এম এস করতে না পারার কারন আছে সেট টাই যত নষ্টের মুল।

বছর দুয়েক আগে তাকে একটা নোকিয়া সেট কিনে দিলাম কারন তাতে এস এম এস করা সহজ। কাগজে কলমে লিখে শেখালাম কি করে েস এম এস করতে হয়। কিন্তু কোন লাভ হলো না। যে কার সেই!! তো ভাবলাম উনি পি এইচ ডি হোল্ডার স্মার্ট লুকিং প্রফেসর হলে কি হবে এস এম এস করা তাকে দিয়ে হবে না। তিনি ইমেল করতে পারেন বা অন লাইনে আমার সাথে ইয়াহু বা স্কাইপে চ্যাট ও করতে পারেন, সব কাজ যে সবাই জানবে এমনত নয়..তাই এস এম এস করতে না পারাকে মাফ করে দিলাম।

গত মাসে কাজের চাপে অনেকটা চ্যপ্টা হয়ে গেছিলাম। রোজ কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা, ১টা, ২টা, ৩টা ও বেজেছে কখনো কখনও

এমনই এক ব্যস্ত দিনে সকালে সবে মাত্র কাজ শুরু করেছি ... কাজের চাপে পানি খাওয়র বা কথা বলার ও সময় পাচ্ছিলাম না। এমন সময় মার মোবাইল থেকে ম্যসেজ পেলাম লেখা..." I love you"

আমার তো আক্কেল গুরুম!!!


তাই যে কথাটা আমার মনে প্রথম এলো সেটা হলো "মা আমার মারা যাচ্ছেন নাতো?" হয়তো মারা যাবার আগে শেষ বারের মত এস এম এস করার চেষ্টা করে আমাকে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি আমাকে কতটা ভাল বাসেন। আহ্ মহা চিন্তায় পরলাম। সেই মূহুর্তে ফোন করাটা অত্যন্ত জরুরি মনে হলো। কিন্তু আমি অন্য একটা জায়গাতে আরেক জনের আফিসে এমন একটা জরুরি কাজে আটকে ছিলাম যে ফোন করার সুযোগ পেলাম না... পরিস্থিতি ছিল না ফোন করার মত। তাই মহা চিন্তা নিয়ে উত্তর দিলাম েস এম এস দিয়ে " I love you too very very much even more than you ever know. are you ok? is everything ok with you?"
কোন উত্তর পেলাম না। সারাদিন অসহ্য টেনশনে দিন গেল। বাড়ি ফিরতে দেরি হলো বরাবরের মত। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক অশুভ কথা মনে এলো। খারাপ খরব টা পথে নিতে চাইলামনা তবে মনে মনে রেডি হলাম যেকোন খারাপ খবর শোনার জন্য।
বাড়ি ফিরেই ফোন কারলাম মাকে।
মা আমার হাসি মুখে ফোন তুলে হ্যলো বলতেই মনে হলো বুকের ভেতের ১০০০০ কবুতর উরাল দিল মুক্তি পেয়ে। তার পর হেসে হেসে সে যা বলল তা হলো...
" আমিত জানি তুমি আমার এস এম এস পেয়ে টেনশনে পরেছ। আজ সকালে ড্রাইভার খোকন কে ডেকে তার কাছে েস এম এস করা শিখলাম। আমার বন্ধুরা সবাই েস এম এস করতে পারে...সবাই আমাকে এস এম এস করে আমিই শুধু পারিনা....খুব লজ্জা লাগে তাই খোকন কে ডেকে বললাম এই আমাকে এস এম করা শেখা। আর শেখার পরেই প্রকটিস করার জন্য সবাইকে এস এম এস করলাম, তো তোমাকেও করলাম চমকে দেবার জন্য। তুমিত ভয় পেয়ে গেছ হা হা হা ...সারপ্রাইজ দিলাম তোমাকে, আর কাল ছবি পাঠান শিখে আবার তোমাকে ছবিও পাঠিয়ে আরেক সারপ্রইজ দেব।"




তো এই আমার মা...বুঝেন...এখনও সে বাচ্চা মেয়েটাই রয়ে গেছে, তার জন্মদিনে ভোর বেলা ফোন না করলে ই-কার্ড না পাঠেলে সে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, আমার জন্মদিনে আমার চাইতে সেই বেশি এক্সাইটেড থাকে....। আরো অনেক তার এমন ধরনের ছেলে মানুষির গল্প আছে কিন্তু তার ছেলেমানুষির মাঝ দিয়ে আমি জেনে যাই সে আমাকে কতটা ভাল বাসে

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৫:০৫