সত্যের সন্ধানী লেখক গন তাহলে কি অর্থের মাপকাঠিতে ক্রয়যোগ্য কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের ক্রয়-কৃত বস্তু, যা থেকে শুধু মাত্র ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য লেখা উৎপাদিত হয় । আর সেই লেখার বাজার চাহিদা হ্রাস করতে দেশের প্রধান মন্ত্রীকে প্রচারণা চালাতে হয় । প্রধান মন্ত্রী দ্বারা এই রকম অবমাননার নজির এই মানব সভ্যতার ইতিহাসে আছে বলে জানা নেই । এই লজ্জা কার ? নিশ্চয় আমাদের, যারা ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য উৎপাদিত লেখার ভোক্তা ! আর কিছুই বলতে চাই না ।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সম্পাদকীয় লেখা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলামঃ
লেখকদের প্রতি অবমানার শুরু যেভাবেঃ
ভালো চাই, ভালো
ভালো নেবেন গো ভালো?
আরও ভালো...
আরও ভালোর পসরা নিয়ে কলম ধরেছেন অনেকে। যতই কাজ করেন।
তাঁদের কিছুই ভালো লাগে না। তাঁদের বক্তব্য হলো, ‘এই সরকার (আওয়ামী লীগ) কিছুই করছে না, মানুষের অনেক আশা ছিল, কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে, দেশ একদম ভালো চলছে না। দেশের অবস্থা খুবই খারাপ।’
লেখালেখি, মধ্যরাতের টেলিভিশনে টক শো, গোল টেবিল, লম্বা টেবিল, চৌকো টেবিল, সেমিনার—কোথায় নেই তাঁরা?
তিরস্কারঃ
তাঁদের এসব কথায় সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা প্রভাবও পড়ছে। বিভ্রান্ত হচ্ছে, অনেক সময় নিজের অজান্তে এই ডায়ালগ বলে দিচ্ছে।
যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের এই ‘বলার’ কথার ফুলঝুরি কি সব সময় অব্যাহত থাকে? সব সরকারের আমলে?
না না, তা শোনা যায় না। যেমন ধরুন, সামরিক সরকারের সময় তাঁদের কলমের কালি বা রিফিল থাকে না। কলম চলে না। মুখে কথা থাকে না।
তখন বাঘের গর্জন বিড়ালের মিউ মিউয়ে পরিণত হয়।
এখন যাঁদের কথায় টেলিভিশনের পর্দা ফেটে মনে হচ্ছে বেরিয়ে পড়বেন লাফ দিয়ে এক্কেবারে সরকারের ঘাড়ের ওপর। ‘সর্বনাশ’! পারলে এই মুহূর্তে সরকারের ঘাড়টাই ভেঙে দেবেন আরও ভালো কিছুর আশায়। এঁরাই আবার কখনো কখনো চুপ থাকেন।
অভিযোগঃ
১. তাঁদের ডায়ালগ বা বাক্যবিন্যাস অথবা উপদেশ শোনা যায়নি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর বা ৩ নভেম্বর জেলহত্যা, একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, সিপাই-জনতার বিপ্লবের নামে একটার পর একটা ক্যু, তাণ্ডব ও হত্যাকাণ্ডে।
২. অন্যায়ভাবে ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াডে সামরিক অফিসার ও সেনাদের হত্যা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্যাতন, রিমান্ড ও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় তাঁরা চুপ থেকেছেন। তাঁদের বিবেক জাগ্রত হয়নি ভালো না মন্দ, তা দেখার জন্য। বরং ঘাপটি মেরে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বাতাস কোন দিকে যায়, সেটা বুঝে নিয়ে সময়ের সুযোগে উদয় হওয়ার জন্য।
৩. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময়ে তাদের সোচ্চার হওয়ার একটা নির্দিষ্ট ক্ষণ ছিল, সেটা হলো মিলিটারি ডিক্টেটরদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতা কেনাবেচার সময়। যাঁরা নিজেদের উচ্চ দরে বিক্রি করতে পারলেন তাঁদের একধরনের সুর। আর যাঁরা কপালে কিছু জোটাতে পারলেন না তাঁদের সুর হলো দৃষ্টি আকর্ষণীয়-অর্থাৎ ‘আমরাও আছি, ক্রয় করুন, সেল-এ পাবেন।’ অর্থাৎ (‘use me’.)|
এরপর যাঁরা অবশিষ্ট থেকে গেলেন, তাঁরা তখন বাতাস ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সুর পাল্টিয়ে বিপ্লবী হয়ে গেলেন। সুর পাল্টিয়েছেন তাও দেখেছি। ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭৫, ১৯৮২, ১৯৯১ সালসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে।
৪. ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর যারা ভালো থেকে আরও ভালো, আরও ভালোও হয় না কেন বলে লেখালেখি করেছেন, মুখের বুলি আর কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েছেন, সমালোচনায় জর্জরিত করেছেন, তাঁরাই সুর পাল্টিয়ে ফেলেছেন। যেমন একটা উদাহরণ দিচ্ছি:
৫. দুই দশক ধরে চলা অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধান করে শান্তি চুক্তি করলাম। অথচ একশ্রেণীর কাছ থেকে কখনো এ বিষয়ে ভালো কথা শুনিনি।
৬. পাঁচ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা যে কিছু করতে পারেনি, সে সম্পর্কে এই ‘ভালোর আশাবাদীরা’ কী ভূমিকা পালন করেছিলেন?
৭. তারা তখন আরও ভালো মানুষের সন্ধানে ব্যস্ত ছিল, সৎ মানুষের সন্ধানে সার্চ লাইট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্রের সৎকার, অর্থাৎ কবর দেওয়া।
এই ধরনের আরও অনেক দৃষ্টান্ত আমরা দিতে পারব। সব থেকে মজার কথা হলো, এই আরও ভালোর সন্ধানকারীদের নিশ্চুপ থাকতে দেখেছি ২০০১ সালের নির্বাচনের উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই।
৮. গণভবনের টেলিফোন লাইনও কেটে দেওয়া হয়। আরও ভালোর ভক্তরা তখন এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ না করে বরং বাহবা দিয়েছিল।
৯. রেহানার বাড়ি দখল করে যখন পুলিশ স্টেশন করা হলো, তখনো কারও কাছ থেকে এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
১০. আওয়ামী লীগের রিসার্চ সেন্টার থেকে ১৫টা কম্পিউটার, ১০ হাজার বই, ৩০০ ফাইল, এক লাখ ফরম, নগদ টাকা নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেন্টারটা তালাবদ্ধ করে রাখা হয় পাঁচটা বছর। এটা কি গণতন্ত্রচর্চা? তাদের কাছ থেকে একটা প্রতিবাদও শুনিনি এর পরই শুরু হলো র্যাব গঠন ও ক্রসফায়ার। তখন তো সবাই র্যাবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
১১. একটা সুখবর হলো পূর্ণিমা ধর্ষণ কেসের আসামিরা সাজা পেয়েছে। শুধু এটুকুই বলতে চাই, তখন দেখেছিলাম অনেক বিবেকবান চুপ করে আছেন। মুখে কথাও নেই। কলমের জোরও নেই। তাদের জোর বাড়ে শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
১২. ঠিক স্বাধীনতার পর যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে সবাই ব্যস্ত। তখনো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য ঘাটতি, দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। আর বাংলাদেশে তো ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়া। দিনরাত পরিশ্রম করে শূন্যের ওপর যাত্রা শুরু করে দেশকে গড়ে তুলতে ব্যস্ত, তখন ‘আরও ভালোর’ দলের সমালোচনা শুনেছি।
-------------------
লেখটিঃ
সম্পাদকীয় ভালোর পসরা
শেখ হাসিনা:
প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
টরন্টো, কানাডা ২২.৫.২০১১
-----------------------------------------------------------------------------
কেন এত অবমাননা ?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ রাত ১২:২৩