চা শুধু বাঙ্গালী কেন বিশ্বের তাবৎ জাতি গোষ্ঠীর কাছে অাকাঙ্খিত সুস্বাদু পানীয়। চা এর রকমফেরও কম নয়, দুধ চা, রং চা, কফি চা, ঝাল চা, মাল্টা চা, কমলা চা, সাত রং এর চা সহ অারো অনেক। ব্রিটিশ বাংলায় চায়ের চাষ শুরু হয় ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে। বর্তমানে চা চাষে সিলেট সর্বেসর্বা। চা কিভাবে অাবিষ্কার হল সেই গল্প কম অাকর্ষনীয় নয়।
চা উৎপত্তির ইতিহাসটি অনেক পুরনো, জটিলও। সঠিক উত্পত্তিস্থল সম্পর্কে ইতিহাসবিদরা এখনো অন্ধকারে। তবে মনে করা হয়, চায়ের আদিভূমি চীন। সেখান থেকে জাপান, ভারত হয়ে পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় উপমহাদেশে চা আবিষ্কারের জন্য একজন বৌদ্ধ রাজকুমারের ভূমিকার কথা বলা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫২০ অব্দে ভারত ছেড়ে চীনে পাড়ি জমান ওই বৌদ্ধ রাজকুমার।
বলা হয়ে থাকে, চীনে চা আবিষ্কৃৃত হয় খ্রিস্টপূূর্ব ২৭৩৭ অব্দে। চীনের সম্রাট তখন শেননং। একদিন তিনি বাগানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সামনে রাখা ছিল একটি গরম পানির পাত্র। হঠাত্ একটি জংলি গাছের পাতা ঝরে পড়ে সেই পাত্রে। শেননং দেখলেন, মুহূর্তেই পানির রঙ বদলাতে শুরু করেছে। কৌতূহল দমাতে পানিতে চুমুক দিয়ে পরখ করা। সম্রাট শেননং চুমুক দিয়ে অভিভূত। এ রকম অস্বাভাবিক ও সুস্বাদু পানীয় এর আগে তিনি পান করেননি। এভাবে অপ্রত্যাশিতভাবে উদ্ভব ঘটে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চায়ের।
চীনে প্রথম দিকে চা ব্যবহার হতো ‘ঔষধি পানীয়’ হিসেবে। অষ্টম শতকের মাঝামাঝিতে এসে পানীয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। চীনের পাশাপাশি এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় উপমহাদেশেও চা শুরুর দিকে ঔষধি পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের বণিকরা চায়ের প্রতি উত্সাহী হয়ে ওঠেন। তাদের হাত ধরেই চীন ও ভারতের এ পানীয় পৌঁছে যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। তবে সেসব দেশে চা সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লব চলাকালে।
ইউরোপে শিল্প বিপ্লব শুরু হলে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ, জটিল ও বিরক্তির সব যন্ত্রপাতি চালাতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতেন তারা। শ্রমিকরা যেন কাজের সময় একঘেয়েমি বোধ না করেন, সেজন্য কাজের বিরতিতে পানীয় হিসেবে বিয়ার সরবরাহ করা হতো। তবে শ্রমিকরা বিয়ার পান করার পর বেশ চঞ্চল হয়ে উঠতেন। কাউকে কাউকে সামলানোও কঠিন হয়ে পড়ত। আবার কেউ কারখানার মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়তেন। ফলে বিয়ারের বিকল্প ভাবতে শুরু করেন মালিকরা। এমন সময় ভারত থেকে আসা চায়ের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। কাজের বিরতির সময় শ্রমিকদের বিয়ারের বদলে চা সরবরাহ করে ইতিবাচক ফল আসতে শুরু করে। এক সময় দেখা গেল, বেশির ভাগ কারখানাতেই শ্রমিকদের কাজের বিরতিতে চা সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইউরোপে তো আর চা উৎপাদন হয় না। এদিকে শ্রমিকদের জন্য প্রচুর পরিমাণ চায়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল ইউরোপজুড়ে। স্বভাবতই তা ভারত ও চীনের বাজারে এক ধরনের চাপ তৈরি করতে শুরু করল। ইউরোপের কারখানাগুলোয় সরবরাহের জন্য ভারত ও চীনে চা প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করল। চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদনও প্রসারিত হতে শুরু করে সে সময় থেকে।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তার অনুবাদকৃত ইন্ডিয়া টুডের খবর
http://bonikbarta.com/news/2017-01-01/101048/
ছবি: গুগল ইমেজ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৩