বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস নিমার্ণকারী একটি সভ্যতা হল পারস্য সভ্যতা। সভ্যতার ইতিহাসে পারসিরা সর্বপ্রথম সষ্ট্রার একত্ববাদের ধারণা দেন। পারসি দার্শনিক জরথুষ্ট্র এই মতবাদ প্রচার করেন। ষষ্ঠ শতকের শেষের দিকে অারবে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (স) এর অাগমন ঘটে,তার প্রচারিত জীবণ বিধান সভ্যতার ইতিহাসের একটি মাইলফলক,অাঁধার দুনিয়ায় অালোর রশ্মি। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ইসলামের সুমহান বাণী চিঠির মাধ্যমে বেশ কয়েকজন রাষ্টপ্রধানের নিকট প্রেরণ করেন, পারস্য সম্রাটও তাদের একজন ছিলেন। তৎক্ষনাৎ সম্রাট বার্তা ছুড়ে ফেলেও পরবর্তীতে ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে পারস্যবাসী বঞ্চিত হয় নি। ইসলাম পরবর্তী পারস্য জন্ম দিয়েছে জগদ্বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকের, তাদের একজন ওমর খৈয়াম।
ওমর খৈয়াম চার লাইনের বিশেষ ধরনের কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়ে অাছেন। তার কবিতাগুচ্ছ রুবাইয়াৎ নামে সমাদৃত হয়েছে। পেত্রার্কের সনেটের মত রুবাইয়াৎ এক বিশেষ ধরনের চতুষ্পদী কবিতা। খৈয়ামের কবিতাগুচ্ছের বিষয়বস্তুু প্রেম, উপভোগ, পরকালের সুখ দু:খের অবিশ্বাস,জাগতিক বিষয়ে উদাসীনতা,মাদকতা প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে। তৎকালীন পারস্যের (বর্তমান ইরান) রাজধানী খোরাসানের নিশাপুরে ১০৪৮ সালে এই অমর কবি জন্মগ্রহণ করেন, ১১২৩ তার মৃত্যু সাল।
রুবাই হলো একপ্রকার ঠাসবুনোটের কবিতা, এর মাধ্যমে মূলত স্রষ্টার স্তুতি বা জীবনের গভীর দর্শনকে ফুটিয়ে তোলা হয়। আরবীতে রুবাই বলতে বুঝায় চার লাইনের কবিতা, যার শেষ অক্ষরের বিন্যাস a a b a; অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ লাইন ছন্দবদ্ধ , আর তৃতীয় লাইনে হয় ব্যতিক্রম । রুবাই এর গঠন প্রতিটি লাইনের শেষ অক্ষর দেখে চেনা যায়। কোনও রুবাই এর শেষ অক্ষর যদি a হয় তাহলে এর দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরনের শেষ অক্ষর-ও a হবে। মাত্রা অনির্দিষ্ট, তবে প্রতিটি চরনে সমান রাখতে হয়। মধ্যযুগের আরবী ও ফার্সী সাহিত্যে এই কবিতারীতি সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায়। রুবাই এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরন হতে পারে ওমর খৈয়ামের কালজয়ী গ্রন্থ রুবাইয়াত, যা আসলে একগুচ্ছ রুবাই এর সংকলন।
খৈয়ামের রুবাইয়াৎ বাংলাভাষায় বেশ কয়েকজন তরজমা করেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা অালী, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং পরবর্তীকালে অারো অনেকে। নজরুলের অনুবাদকে অনেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন। নজরুল সরাসরি পারসি থেকে তরজমা করেছেন,খৈয়ামের দেয়া অন্তমিল ঠিক রেখেছেন,তার সহজাত কাব্য প্রতিভার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।
খৈয়ামের খুব চমৎকার একটি রুবাই যে কোন মুগ্ধ পাঠককে বিমোহিত করবে। নজরুলের অনুবাদ করা রুবাই টি দিলাম।
এক সোরাহি সুরা দিও, একটি রুটির ছিলকে অার,
প্রিয় সাকি, তাহার সাথে একখানি বই কবিতার,
জীর্ণ অামার জীবণ জুড়ে রইবে প্রিয়া অামার সাথ,
এই যদি পাই চাইব নাকো তখত্ অামি শাহেনশার।
সৈয়দ মুজতবা অালীর একই রুবাইয়ের তরজমা করেছেন। ভাষার সহজবোধ্যতা তার তরজমা অারো বেশি শ্রুতিগ্রাহ করেছে।
এইখানে এই তরুর তলে,তোমায় অামায় কৌতুহলে,
যে ক'টাদিন কাটিয়ে যাবে প্রিয়ে,
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র, অল্পকিছু অাহারমাত্র,
অারেকখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭