মিথোলজিক্যাল কাহিণীসমূহ ব্যপক আনন্দের। এই মিথ বিশ্বাসী অবিশ্বাসী উভয়ের জন্যই। যেমনটা গ্রীক মিথোলজি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী উভয়ের জন্য। কাজেই জানার আগ্রহ নিয়ে এই পোস্ট পড়বেন। ধর্মীয় বিশ্বাসের নীতিকথা এখানে না কপচানোই ভালো!
আল্লাহর বার্তা তথা আদেশ বহনকারী ও পয়গম্বরগণের বন্ধু ফেরেস্তা -হজরত জিব্রাইল (আঃ)-
---------------------------------------------------------
হজরত জিব্রাইল (আঃ)
হজরত ইসরাফিল (আঃ) এর জন্মের এক হাজার বছর পরে এবং হজরত মিকাঈল (আঃ) এর জন্মের পাঁচশ বছর পরে হজরত জিব্রাইল (আঃ) এর জন্ম হয়। দুনিয়ার যাবতীয় নবী, রাসূল ও পয়গম্বরগণের নিকট আল্লাহ তা’আলার আদেশ বা বাণী পৌঁছিয়ে দেয়াই হজরত জিব্রাইল ফেরেস্তার সর্ব প্রধান কাজ ছিলো। তাছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশ ও আল্লাহর নাফরমান জাতিদের ধ্বংস করার ভার ওনার উপরেই অর্পিত হয়েছিলো। আবার কেয়ামতের পরে বেহেস্ত সুসজ্জিত করার কাজে বেহেস্তের রক্ষক রিজওয়ান ফেরেস্তার সর্বপ্রধান উপদেষ্টা ও সাহয্যকারী হবেন হজরত জিব্রাইল (আঃ)।
হাশরের মাঠে কোটি কোটি মানুষের বিচারের দিনে হাশরের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সর্বত্র আল্লাহর আদেশসমূহ ঘোষণা করার এবং হাশরের মাঠের যাবতীয় শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন হজরত জিব্রাইল (আঃ)। হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কে কেয়ামত ও হাশরের পরে ৭০ হাজার ফেরেস্তার মিছিলসহ বেহেস্তে পৌঁছিয়ে দেয়ার সময় “লেওয়ায়ে হামদ” নামক যে বিরাট পতাকা উত্তোলন করা হবে, হজরত জিব্রাইল (আঃ) সে পতাকা উত্তোলন করে সমগ্র ফেরেস্তাদের মিছিলের আগে আগে থাকবেন।
হজরত রাসূলে আকরাম (সঃ) যখন মেরাজ শরীফে গমন করেছিলেন, তখন জিব্রাইল (আঃ) ফেরেস্তাই তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত নবী সেখানে অবস্থান করেছিলেন, ততক্ষণ সর্বদা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থেকে আসমান, জমিন, বেহেস্ত, দোজখ এবং এর মধ্যে অবস্থিত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে হজরত রাসূলে আকরাম (সঃ) এর লক্ষ লক্ষ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে তিনি সব বিষয়ে হজরতকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এবং যাবতীয় ফেরেস্তাগণের সাথে হজরতকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
হজরত রাসূলে আকরাম (সঃ) বলেছেন-
‘মেরাজের রাতে জিব্রাইল ফেরেস্তা আমাকে নিয়ে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামক স্থান পর্যন্ত যেয়ে বললেন যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ), এই পর্যন্তই আমার জন্য সীমানা নির্দিষ্ট। এর অতিরিক্ত গমনের সাধ্য আমার নাই। আমি যদি আর এক পাও অগ্রসর হই, তবে আল্লাহর নূরের তাজাল্লীতে আমার ৭০ হাজার পাখা সবই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে; একটি পালকও অবশিষ্ট থাকবে না।
আমি তখন বললাম যে, হে ভাই জিব্রাইল। আপনি আমাকে এখানে একাকী ফেলে কোথায় যাবেন? আমি তো এখানকার কোনো কিছু সম্পর্কেই জানি না, চিনি না। সবকিছুই আপনাকে জিজ্ঞেস করে করে জেনে নিচ্ছি। আপনি চলে গেলে আমি কাকে কি জিজ্ঞেস করবো?
উত্তরে হজরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ), আপনি চিন্তিত হবেন না। এখনই ইসরাফিল ফেরেস্তা এসে আপনাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে এবং তাঁর নিকটেই আপনি সবকিছু জানতে পারবেন। ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ এর সীমা অতিক্রম করে একটুও সামনে যাবার ক্ষমতা আমার নেই। তা থাকলে অবশ্যই আমি আপনার সঙ্গে যেতাম। তবে আমি এইখানেই আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। আপনি আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ ও কথোপকথন করে ফিরে আসলে আবার আমি আপনার সাথে মিলিত হবো।’
আগের পর্বে জেনেছেন যে, ফেরেস্তাদের মধ্যে হজরত ইসরাফিল ফেরেস্তা আল্লাহ তা’আলার সবচেয়ে সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান করেন, তাঁর পরেই হজরত জিব্রাইল (আঃ) এর স্থান। অর্থাৎ একমাত্র ইসরাফিল ফেরেস্তা ব্যতীত অন্যান্য ফেরেস্তাদের মধ্যে হজরত জিব্রাইল ফেরেস্তাই আল্লাহ তা’আলার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করেন। ইসরাফিল (আঃ) ও জিব্রাইল (আঃ) এর মধ্যে ৭০ হাজার পর্দার ব্যবধান। এর একটি পর্দা হতে অপরটির দূরত্ব একটি দ্রুতগামী আরবী ঘোড়ার জন্য পাঁচশ বছরের রাস্তা।
হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে যে, হজরত রাসূলে আকরাম (সঃ) এর ইন্তেকালের পূর্বে জিব্রাইল (আঃ) শেষবারের মতো হজরতের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, হে ভাই জিব্রাইল। আমার মৃত্যুর পর আপনি কি আর দুনিয়াতে আসবেন?
তদুত্তরে জিব্রাইল ফেরেস্তা বলেছিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ), আপনার ইন্তেকালের পরেও আমি দশবার এই দুনিয়াতে আসবো এবং এক একবার এক একটি বস্তু দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। প্রথমবারে সবর বা ধৈর্য্য, দ্বিতীয়বারে লজ্জা, তৃতীয়বারে ভালোবাসা, চতুর্থবারে ন্যায় বিচার, পঞ্চমবারে বরকত, ষষ্ঠবারে দানশীলতা, সপ্তমবারে সত্যবাদিতা, অষ্টমবারে হালাল রুজি, নবমবারে দীনি এলেম এবং দশমবারে কোরআন শরীফ দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার জন্য দুনিয়াতে আসবো। আমি দশমবারে দুনিয়ায় আসার পরেই কেয়ামতের পূর্ব আলামত প্রকাশ পাবে এবং ইসরাফিল ফেরেস্তা প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দিয়ে দুনিয়া ধ্বংস করে দিবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-
জিব্রাইল ফেরেস্তার সর্বমোট বিরাট বিরাট ৭০ হাজার পাখা আছে এবং তাঁর মাথা হতে পা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ জাফরানী রঙের বিরাট সুদৃশ্য পালকে আবৃত। প্রত্যেক পালকের অগ্রভাগে একটি করে উজ্জ্বল আলো সংলগ্ন আছে। জিব্রাইল ফেরেস্তার চক্ষুদ্বয় সূর্যের সমান। এটাই জিব্রাইল ফেরেস্তার স্বাভাবিক রূপ। কিন্তু তিনি যখন পয়গম্বরদের নিক্কট ওহি নিয়ে আগমন করতেন, তখন সুন্দর সাদা পোষাকে সুসজ্জিত সুফী মোত্তাকীন মানবের আকৃতি ধারণ করে আগমন করতেন।
হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে যে, হজরত জিব্রাইল (আঃ) প্রত্যেকদিন ৩৬০ বার নূরের সমুদ্রে অবগাহন করে থাকেন। অবগাহন এর পর তিনি যখন স্বীয় পালকসমূহ ঝাড়তে থাকেন তখন তাঁর পালক হতে যত ফোঁটা নূরের পানি ঝরে পড়ে, তাঁর প্রত্যেক ফোঁটা হতে একজন করে ফেরেস্তা পয়দা হয়। এরা সকলেই দৈহিক অবয়বে অবিকল জিব্রাইল ফেরেস্তার মতো, কিন্তু আকৃতিতে অনেক ছোট হয়ে থাকে। এরা জন্মগ্রহণ করা মাত্রই আল্লাহর গুণগানে লিপ্ত হয় এবং কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর প্রশংসায়ই লিপ্ত থাকবে
বিঃদ্রঃ পরবর্তী পর্বে মৃত্যুর ফেরেস্তা হজরত আজরাইল (আঃ) এর জন্ম, দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে লিখা নিয়ে আসছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:০৭