ইসলাম ধর্মের মিথ নিয়ে তেমন ঘাটাঘাটি করিনি। যদিও পড়াশোনার প্রয়োজনে গ্রীক মিথ প্রায়ই এসে পড়ে। তবে ইসলামী মিথ, মিশরীয় মিথ ইত্যাদি মিথসমূহ ব্যপক আনন্দের। এই মিথ বিশ্বাসী অবিশ্বাসী উভয়ের জন্যই। যেমনটা গ্রীক মিথোলজি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী উভয়ের জন্য। কাজেই জানার আগ্রহ নিয়ে এই পোস্ট পড়বেন। ধর্মীয় বিশ্বাসের নীতিকথা এখানে না কপচানোই ভালো!
--------------------------------------------------------------------------------------------------
পৃথিবী ধ্বংস ও পুনরায় তৈরির ফেরেস্তা -হজরত ইসরাফিল (আঃ)-
হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত রাসূলে আকরাম (দঃ) বলেছেন-
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা ফেরেস্তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হজরত ইসরাফিল (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। ইসরাফিল ফেরেস্তার চারটি বিরাট পাখা আছে। এর একপ্রান্ত পূর্বের শেষ সীমা পর্যন্ত ও অপরপ্রান্ত পশ্চিমের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এবং একটি পাখা নিচে বিস্তারিত ও অপরটি তার মাথার উপরে প্রসারিত হয়ে আছে।
তার শরীর এতো বড় যে, যদি দুনিয়ার সাত সমুদ্রের পানি তার মাথার উপরে ঢেলে দেয়া হয় তবে এর এক ফোঁটা পানিও মাটিতে গড়িয়ে পড়বে না; সবই তার শরীরে শুকিয়ে যাবে!
হজরত ইসরাফিল (আঃ) এর মাথা হতে পা পর্যন্ত সারাদেহ অগণিত বড় বড় জাফরানি লোমে আবৃত। তার অসংখ্য মুখ এবং প্রত্যেক মুখে অগণিত জিহ্বা আছে। তিনি প্রত্যেক জিহ্বার দ্বারা সহস্রাধিক ভাষায় কথা বলতে সক্ষম! তিনি তার সর্বপ্রধান ও বৃহৎ মুখে একটি বিরাট শিঙ্গা বা বাঁশি নিয়ে বসে আছেন। যেদিন আল্লাহর আদেশ হবে, সেদিন তিনি সেই বাঁশি ফু দিয়ে সারা মহাবিশ্ব উড়িয়ে ধূলিকণায় পরিণত করে দিবেন।
হজরত ইসরাফিলের প্রত্যেক নিঃশ্বাসে একজন করে ফেরেশতা জন্মগ্রহণ করেন এবং জন্মানো মাত্রই তারা আল্লাহ তা’আলার জিকরে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
ইসরাফিল ফেরেস্তাই আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি। তার অবস্থানের জায়গায় অন্যকোনো ফেরেস্তার আসার হুকুম বা অধিকার নেই। আর ইসরাফিল ফেরেশতার কাঁধের উপরে আল্লাহ তা’আলার আরশের পায়া স্থাপিত আছে!! (ব্যপক প্রশ্নের ব্যপার!!)
ইসরাফিল ফেরেস্তা এবং আল্লাহ তা’আলার আরশের মধ্যে মাত্র ৭টি পর্দার ব্যবধান। এই পর্দাগুলির একটি হতে অপরটির দূরত্ব একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার পাঁচশ বছরের রাস্তা! ইসরাফিল এবং জিব্রাইল ফেরেস্তার অবস্থানের মধ্যে একাধিক্রমে ৭০টি পর্দা অবস্থিত। উক্ত পর্দাগুলির দূরত্বও একটি হতে অপরটি পাঁচশ বছরের রাস্তা।
আল্লাহ তা’আলার আরশ বহনকারী ৮জন ফেরেস্তা এবং কেরামন ও কাতেবীন উপাধিধারী ফেরেস্তাগণ সবাই হজরত ইসরাফিল (আঃ) ফেরেস্তার অবয়ব বিশিষ্ট, তবে আকারে তারচেয়ে ছোট। ইসরাফিল ফেরেস্তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে যেসব ফেরেস্তার জন্ম হচ্ছে, তারা সকলেই ইসরাফিল ফেরেস্তার মতো দৈহিক অবয়ব নিয়ে জন্ম নিচ্ছে, শুধু আকৃতিতে তারা ছোট।
হজরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন যে, যে সর্বশক্তিমান আল্লাহপাকের হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, আমি তার কসম করে বলছি যে, যখন ইসরাফিল ফেরেস্তা শিঙ্গায় ফুঁ দিবেন, তৎক্ষণাৎ কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। তখন এমনই কঠিন অবস্থা হবে যে, যে ব্যক্তি খাবার বা পানীয় মুখে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বা মুখে দিয়েছে, সে তা মুখে দেয়ার অথবা রেখে দেয়ার অবসর পাবে না, খাবার বা পানীয় মুখেই থেকে যাবে। যে ব্যক্তি কাপড় পড়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সে তা পরিধান করার অথবা রেখে দেয়ার অবসরও পাবে না। মূহুর্তের মধ্যে সারা জগৎব্যাপী একটা হুলস্থূল পড়ে যাবে।
ইসরাফিল আল্লাহ তা’আলার কাছে সাত আসমান ও সাত জমিনের, এর মধ্যে অবস্থিত যাবতীয় জ্বিন-মানুষ, পশু-পাখি ও দানবের শক্তি প্রার্থনা করেছিলেন। সে অনুযায়ী আল্লাহ তা’আলা তাকে সারাবিশ্বের সব প্রাণী তথা জড় ও জীবের শক্তি দান করেছিলেন। এ কারণেই তিনি যখন সেই শক্তি দিয়ে শিঙ্গায় ফুঁ দিবেন, তার প্রচণ্ড তীব্রতায় ও ভাইব্রেশনে গ্রহ-নক্ষত্র কক্ষচ্যুত হয়ে যাবে, পাহাড়-পর্বত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পেঁজা তুলার মতো উড়ে যাবে; সমুদ্র শুকিয়ে যাবে, সারা পৃথিবীতে ভীষণ ভূমিকম্প হয়ে পৃথিবীর মাটি বিধ্বস্ত ও উলট পালট হয়ে যাবে। এমনকি ৪০ গজ নিচের মাটি উপরে, আর উপরের মাটি ৪০ গজ নিচে চলে যাবে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর যাবতীয় পদার্থ, মানব-দানব, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, সবকিছু ধ্বংস হয়ে মাটির সাথে মিশে যাবে। জগতের বুকে আর কোনো প্রাণ বা নিস্তেজ জড় পদার্থের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কোথাও একটুও ছায়া বা একবিন্দু পানি থাকবে না, দুনিয়ার মাটিতে একটুও উঁচুনিচু থাকবে না। পুরো জগতের মাটি এক সমতল ভূমিতে পরিণত হবে।
হাদিসে উল্লেখ, ইসরাফিল (আঃ) প্রতিদিন তিনবার দোজখের দিকে দৃষ্টি দেন। তখন ভয়ে তার বিরাট শরীর ছোট হতে হতে চড়ুই পাখির সমান হয়ে যায়। তিনি দোজখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে এতো কান্না করেন যে, তার চোখের জল যদি আল্লাহ দ্রুত শুকিয়ে না দিতেন, তবে তা পৃথিবীতে এসে সারা শহর, নগর, দেশ, অট্টালিকা, পাহাড়- সবকিছু তুমুল বন্যায় ভাসিয়ে ডুবিয়ে নিতো!
পৃথিবী ধ্বংসের ৪০ হাজার বছর পর পর্যন্ত একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না। ৪০ হাজার বছর পরে আল্লাহ সর্বপ্রথমে হজরত ইসরাফিল ফেরেস্তাকে পুনরায় জীবিত করে তাকে আদেশ করবেন যে, হে ইসরাফিল! সমস্ত মৃত সৃষ্টিজগতকে পুনর্জীবিত করার জন্য পুনরায় শিঙ্গায় ফুঁ দাও।
আল্লাহর আদেশ পাওয়া মাত্র ইসরাফিল দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দিবেন। এবং সেই সাথে সৃষ্টির প্রথম হতে শেষ কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষ, জ্বিন, পশু-পাখি, দানব তথা সৃষ্টিজগত সবাই জীবিত হয়ে উঠবে।
এ সম্পর্কে আল কুরআনেও বিস্তারিত লিখা আছে।
হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত রাসূলে আকরাম (সঃ) বলেছেন যে, পৃথিবীতে যত সংখ্যক জন-প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে, হজরত ইসরাফিল ফেরেস্তার শিঙ্গায় ঠিক ততোটি ছিদ্র আছে। এর এক একটি ছিদ্র হতে নির্গত শব্দ এক একজনের কানে প্রবেশ করবে, এবং সেই শব্দে তারা পুনরায় জীবিত হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেছেন যে, ইসরাফিলের শিঙ্গার ৪ টি শাখা আছে। এর এক শাখায় যাবতীয় পয়গম্বরগণ বা নবীগণ বা মহাপুরুষগণ, এক শাখায় অন্যান্য যাবতীয় মানুষ, এক শাখায় জ্বিন-পরী এবং এক শাখায় যাবতীয় ফেরেস্তাগণের সমান সংখ্যক ছিদ্র আছে!
(তাহলে পশুপাখিদের শিঙ্গার শাখা কই!
বিঃদ্রঃ পর্যাপ্ত আবদার করলে এই মিথ সিরিজে একের পর এক অভিনব সব তথ্য দিতে থাকবো ইসলামের ফেরেশতাকূল, আল্লাহ ও সৃষ্টিজগত নিয়ে। কাজেই আপনাদের উপর নির্ভর করে এটার দ্বিতীয় পর্ব আনবো কিন। আর অনেকেই রেফারেন্স চাইবেন। কিন্তু কি দিব তা ভাবার বিষয়। কারণ বইটির নাম "চার ফেরেস্তার জীবনী "। একটি বইকে রেফারেন্স হিসেবে দিলে অনেকেই এর পরবর্তী পর্যায়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। যেমনঃ বইটি কি ইসলামী গবেষকদের কতৃক অনুমোদিত কিনা, কিংবা এই কাহিনী কি কুরআনে আছে? কুরআনে না থাকলে বিশ্বাস করবো না ইত্যাদি।
এসব ঝামেলা এড়ানোর জন্য সরাসরি মিথ বলে উল্লেখ করলাম। আর বইটির নাম হচ্ছে "চার ফেরেস্তার জীবনী "
খুবই পুরানো একটি বই। সম্ভবত : ১৯৬০ /৭০ এর হবে।
বিজয় সফটওয়্যার শুরু হবার আগেকার দিকের একটি প্রকাশনা। অনেকগুলো পেজ ছিড়ে গেছে। তারমধ্য থেকে যা পেরেছি উদ্ধার করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:২২