Survival of the fittest.
চার্লস ডারউ্ইনের এই অবিস্মরণীয় থিওরী অনুযায়ী প্রাণী জগতের survive বড়ই আশ্চর্যময়।
একটি তিমি মাছ নাকি প্রতিদিন ২৫টন খাবার সংগ্রহ করে ও তা খেয়ে বেঁচে থাকে। পক্ষান্তরে একটি মানুষের প্রতিদিন মাত্র কয়েকশ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন। অথচ পৃথিবীর বহু মানুষ সেই খাবার পায় না! সম্ভবত “The Daily Star” এর কোনো ক্রোড়পত্রে পড়েছিলাম যে, সারা পৃথিবীর ক্যাপিটালিস্টরা যে পরিমাণ খাবার অবহেলায় নষ্ট করে, তার ১০০ ভাগের মাত্র ২৫ ভাগও যদি বাঁচানো যায়, তবে এই পৃথিবীর একটি মানুষও অভুক্ত থাকবে না।
খোদ রাজধানী ঢাকাতেই অনেক বন্ধুদের মেসে গিয়ে দেখেছি। মাসের শেষদিকে কোনো কোনো রাত তাদের চাল কিনার পয়সা থাকে না। ওয়াসার পানি ঢকঢক করে গিলে হাসিমুখে রাত কাবার করে দেয়। গণপরিবহণে চলতে গিয়ে টুকরো টুকরো অনেক গণজীবনের চিত্র দেখেছি। যে ৩/৪ বছরের কচি বাচ্চা ছেলে-মেয়েগুলোর মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে ‘অ-আ’ শিখতে না চাওয়ার বায়না করার কথা, তারাই আমার মতো অপদস্থ ও অপদার্থ ছেলের হাঁটুর কাছে পাত্র উঁচিয়ে বলে,
“দুইডা টেকা দিবেন? খিদা লাগছে, কিছু খামু!”
জনতা হাউজিং আমার বাসা থেকে খুব কাছে ওই বস্তির (বস্তি বলতে লজ্জা লাগছে। চেনার সুবিধার্থে বলতে বাধ্য হলাম) মানুষগুলোকে দেখেছি অবাক বিস্ময়ে। ওখানকার বাবা-মা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আধুনিক পিশাচ সভ্যতার প্রতিভা দেখতে চায় না। ওরা চায়, ওদের সন্তান দু’টা পয়সা কুড়িয়ে আনুক লোকের করুণায় আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে!
আমার নিজের ফুপুর কথাই বলি। প্রায়ই শুনি গ্রামে তাদের চুলোয় নাকি আগুন জ্বলে না। অসুস্থ ফুপা আর রিক্সা চালাতে পারে না। তাদের ঘরের বড় বড় মেয়েগুলো দেশের জনসম্পদ হতে পারে, কিন্তু সমাজের অবহেলিত উচ্ছিষ্ট মাত্র!
খাদ্যের ব্যপারটা বর্তমানে পুরোই Give and Take পলিসির উপরে আছে। অগাধ টাকা-পয়সা হলে মাজার, মসিজিদ, মন্দির, গির্জা আর প্যাগোডায় উজাড় করে ঢালা হয় ধর্মের প্রহরীদের খাইয়ে দিয়ে ঈশ্বরের তুষ্টি অর্জনের জন্য। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের একটা ছবি দেখেছিলাম, দু’জন লোকের কোমড় পর্যন্ত উঁচু টাকার স্তূপ। কাদের জন্য? ক্ষুধার্তদের জন্য?
মিরপুর শাহ আলী মাজারে গত বছরই নাকি গড়ে প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা আসতো। এসব মাজারগুলো লিজ নেয় সরকারের কাছ থেকে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী। কোনো ক্ষুধার্ত সেই টাকার ভাগ পায় কিনা জানি না। পাওয়ার কথাও না। এতো উদার কে আছে গাটের পয়সা খরচ করে লিজ নিয়ে কামাইকৃত পয়সা জনতাকে বিলাবে??
এতক্ষণ যা বললাম সব মিথ্যা। আসল ঘটনা শুনবেন?
পৃথিবীতে কোনো ক্ষুধা নেই। শুধু জন্মদিন, বার-বি-কিউ পার্টি, ফেস্টিভ্যাল আর DJ পার্টি আছে। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, মাজার, দেব-দেবী প্রমুখ সম্মানিতদের পদতলে হৃদয় উজাড় করে পয়সা-কড়ি দিয়ে আসতে হয়।
কারণ DJ পার্টি করার পর ঈশ্বরের ব্যাপক ক্ষুধা লাগে! মানুষের কোনো ক্ষুধাবোধ আছে নাকি? এসব রূপকথা।
কার্ল মার্ক্স এর তত্ব, “জীবনধারণের জন্য মানুষের প্রয়োজন খাদ্য ও আশ্রয়। ধর্ম বা রাজনীতির কোনো ভূমিকা নেই এখানে।”
এগুলো পৌরাণিক যুগের বিভ্রান্ত গল্প। সময় হয়েছে গল্প শেষ করার। DJ পার্টি আর উপাসনালয় পার্টিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও হে মানব মণ্ডলী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯