মাত্র পড়া শেষ করলাম “নিষিদ্ধ অরণ্য” নামে চমৎকার একটি উপন্যাস। লেখক “সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ” অত্যন্ত চমৎকার আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে মানবজীবনের চলমান টানা-পোড়েন, প্রথা, একগুঁয়েমি ও অসংলগ্নতা তুলে ধরেছেন এ বইতে।
বইয়ের প্রতিটি চরিত্রতে একধরণের আকর্ষণ পেয়েছি পড়তে যেয়ে। মজহার চাচা, যিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন সঙ্গীত সাধক ও দার্শনিক। শিক্ষক দিনমণি, যার নেশাই নতুনকে জানা। দিনমণির মেয়ে প্রজ্ঞা, যার প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিদীপ্ত কথায় স্বার্থপর ও লোভী জমিদারের ভালো মানুষ টাইপের উদাস শিকারি ছেলে ইন্দ্র মূহুর্তে শিকারের ছলাকলা ভুলে আরো উদাস হয়ে যায়।
ইন্দ্রকে গ্রামের মানুষরা ভালোবাসে তার মানুষের প্রতি সহজাত সরলতাপূর্ণ ভালোবাসার জন্য। তাছাড়া সে জমিদারের ঔরশজাত সন্তান হয়েও গাঁয়ের মানুষের হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঘ হত্যা করে বীর বনে গেছে। সেই ইন্দ্র যখন দিনমণির মেয়ে প্রজ্ঞার সাথে পরিচিত হয়, তখন শিক্ষক দিনমণির অত্যন্ত পড়ুয়া মেয়ে প্রজ্ঞার প্রগাড় বুদ্ধিদীপ্ত দুরন্তপনায় ইন্দ্র ভুলে যায় সে কতো বড় শিকারি।
প্রজ্ঞা ইন্দ্রকে কটাক্ষ করে বলে, বাঘ মেরেছেন বলে বন্দুক দাগিয়ে লোকদের দেখাতে হবে নাকি আপনার প্রতিভা? আপনি কি শিশু নাকি??
ইন্দ্র হতবাক হয় প্রজ্ঞার বাক্যবাণে।
প্রজ্ঞা জঙ্গলে ঘুরতে ইন্দ্রের সাহায্য নেয়। কারণ তার মৃতা মায়ের একটি হারানো জমি আছে এ জঙ্গলে। ইন্দ্রকে সেটা খুঁজে দিতে হবে। কেউই জানে না জঙ্গলের কোথায় সে টাঁড় বা জমি। সেই জমি আছে কি নেই তা নিয়েই সংশয়। ইন্দ্র বুঝে নেয় যে, বাঘ মারা ইন্দ্রের জন্য এ এক অন্যরকম চ্যলেঞ্জ। যা নেই, তা খুঁজে বের করা তার কম্ম নয়। তবুও প্রজ্ঞার আকর্ষণে সে নিজের অস্তিত্বকে প্রজ্ঞার কাছে সঁপে দেয়। তাকে যেভাবেই হোক প্রজ্ঞাকে সাহায্য করতে হবে।
মজহার চাচা, যিনি ইন্দ্র ও প্রজ্ঞাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। তিনি অসৎ জমিদারের বিরুদ্ধে গিয়ে অত্যন্ত সুচারুরূপে ইন্দ্র ও প্রজ্ঞাকে মিলিত করার ব্যবস্থা করে দেন। গল্পের শেষে হঠাৎ প্রজ্ঞার বাবা দিনমণির অন্য এক পরিচয় আবিষ্কার হয়। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজ সে পরিচয় পেয়ে দিনমণিকে বাড়ি ছাড়া করতে উঠে পড়ে লাগে। সবাই যখন এদিকে ব্যস্ত, ইন্দ্র আর প্রজ্ঞা তখন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় প্রজ্ঞার মায়ের হারানো জমির খোঁজে। এর মধ্যে আরেকটি বিরাট বাঘ এসেছে জঙ্গলে। গাঁয়ের লোকেরা ইন্দ্রের উপর ভরসা রাখে। ইন্দ্রই পারবে বাঘ মেরে দিতে।
প্রজ্ঞা ইন্দ্রের জীবনটাকে আশা আর স্বপ্নের রেশ দিয়ে বদলে দেয়। ইন্দ্র যখন নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েও প্রজ্ঞাকে আপন করে পেতে চায়, তখন বুদ্ধিমতী প্রজ্ঞা ইন্দ্রকে নিষেধ করে। সে কটাক্ষ করে ইন্দ্রকে। ইন্দ্র অভিমানে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে যায়।
এরমধ্যে প্রজ্ঞার মায়ের জমি বা টাঁড় পাওয়া যায়। প্রজ্ঞার কথাই সত্য হয়। এদিকে সবকিছুর ঝামেলা মিটিয়ে মজহার চাচা যখন ইন্দ্র আর প্রজ্ঞাকে সেই হারানো গোপন জমিতে যেয়ে থাকতে বলবেন, তখন হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে যায় প্রজ্ঞা আর ইন্দ্র।
কোথায় হাওয়া হয়ে যায় তারা? কেউ কেনো খুঁজে পায় না তাদের??
মজহার চাচা, দিনমণি, গ্রামবাসী- এবং আরো যারা যারা ইন্দ্র ও প্রজ্ঞাকে ভালোবাসতো তারা খুঁজে বেড়ায় দু’জনকে। কেনো যেনো পাওয়া যায় না ওদের। বড় টুইস্টেড ফিনিশিং!!
পড়লে পস্তাইবেন, না পড়লে আরো বেশি পস্তাইবেন- কথা দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:১২