somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে রাসুল সাঃ এর ভুমিকা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূচনাঃ রাষ্ট্রে সকল জনগনের জন্য সমান সুযোগ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হলে তাকে ন্যায়ভিত্তক রাষ্ট্র বলা হয় । পৃথিবীতে রাষ্ট্র প্রধান গন ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করার চেষ্টা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন । সত্যিকার অর্থে সফলতার সাথে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র যারা গঠন ও পরিচালনা করেছেন তাদের মধ্যে একমাত্র সফল এবং অনুকরনীয় রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাসুল সাঃ । ইনসাফের রাষ্ট্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হবে এ বিষয়ে রাসুল সাঃ হলেন অনন্য এবং অতুলনীয় উদাহরণ রেখে গিয়েছেন ।
প্রাক ইসলামী আরবঃ রাসুল সাঃ যে সময়ে জন্ম গ্রহন করেছেন সে সময়ে আরবের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ । সে সময় আরব ভুমি কোন শাসকের শাসনাধীন ছিল না, তারা গোত্রভিত্তিক বসবাস করত এবং গোত্রপ্রধান ছিল সে গোত্রের শাসক । তারা ভুলে গিয়েছিল সত্য মিথ্যার পার্থক্য, ভুলে গিয়েছিল ন্যায় নীতি । এমন কোন পাপাচার ছিল না যাতে তারা লিপ্ত ছিল না । উদাহরন হিসেবে বলা যায়ঃ যেনা-ব্যাভিচার, মুর্তি পুজা, জীবন্ত কন্যা শিশু হত্যা, বছরের পর বছরের যুদ্ধ বিগ্রহ চালিয়ে যাওয়া, নর হত্যা, এতিমের হক নষ্ট করা সহ আরো অনেক ধরনের অপরাধ । রাসুল সাঃ এর বয়স যখন ১৫ বা ২০ বছর সে সময় ফিজারের যুদ্ধ সংঘটির হয় । তিনি সরাসরি এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং এর ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেন । সে সময়কে বলা হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগ ।
ইসলামী আরবঃ রাসুল সাঃ মাদিনায় আগমনের পর সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে মুসলিম, অমুসলিম, ধনী, গরিব, ছোট, বড় সবার জন্য ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করেন । তিনি বিচারের ক্ষেত্রে সর্বদা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেন । কোন ব্যাক্তি মুসলিম অপরাধী হওয়ার কারনে তার শাস্তি হয়েছে এবং অমুসলিম ব্যক্তির পক্ষে বিচারের ফয়াসালা গিয়েছে । সে সময়ে প্রচলিত সমস্ত পাপাচার, কুসংস্কার ছিল মদিনায় তিনি এসবের মূলোৎপাটন করেন । ফলশ্রুতিতে আরবে এক নতুন ন্যায় এবং শান্তি পুর্ন সমাজ প্রতিষ্ঠা পায় যেখানে জীবন্ত শিশু হত্যা বন্ধ হয়, সমাজে নারী পুরুষের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়, বিচারের ক্ষেত্রে কে ধনী কে গরীব, কে মুসলিম কে অমুসলিম এবং আত্মীয় অনাত্মীয় এসব না দেখে সুবিচার নিশ্চিত করা হয় । যুদ্ধ নীতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানবিকতার উদাহরণ একমাত্র রাসুল সাঃ এর শাসনামলে দেখা যায়, যা ইতিপুর্বে কেউ দেখাতে পারেনি ।
ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে পদক্ষেপঃ রাসুল সাঃ মদিনায় ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম মদিনা সনদ । এ সনদের কারনে এক গোত্র আরেক গোত্রের সাথে এক সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয় এবং মদিনায় সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় । সিরাত ইবনু হিশাম অথবা আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ তে মদিনা সনদের ৪৭ টি ধারা দেখতে পাই । যা ছিল আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগ থেকে বের হয়ে এক আদর্শ রাষ্ট্রের অবকাঠামো । মদিনা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে সাম্য ও আদর্শের শহর ।
রাষ্ট্র প্রধান হিশেবে রাসুল সাঃ :- মদিনায় আগমনের পর রাসুল সাঃ মসজিদে নববি থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এখান থেকেই পরিচালনা করতেন । প্রধান হিশেবে তিনি রাষ্ট্র থেকে কোন ধরনের প্রোটকল, উপঢোকন বা বিশেষ সুযোগ সুবিধা গ্রহন করতেন না । একজন শাসক হওয়ার পরও তাঁর কাছে যতুটুকে সম্পদ আসত তিনি তা থেকে বেশীর ভাগ সম্পদই সাদাকা করে দিতেন । কিন্তু তিনি কখনই সাদাকার মাল গ্রহন করতেন না । তবে তিনি হাদিয়া বা উপহার পাঠাতেন এবং গ্রহন করতেন আর একাজে তিনি সাহাবীদের উৎসাহিত করতেন ।
সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় কখনই তিনি তাড়াহুড়ো করতেন না । ভিন্নমত কে তিনি শ্রদ্ধার সাথে দেখতেন । এক দুর্গ অবরোধ কালে রাসুল সাঃ অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য বললেন কিন্তু সাহাবীরা অবরোধ চালিয়ে যেতে চাইলে তিনি সাহাবীদের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেন, পরের দিন দেখা গেল সাহাবীরা অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য রাসুল সাঃ কে অনুরোধ করলেন এবং তিনি তাদের এ মতামত মেনে নিলেন । আরেকটি উদাহরণ হিশেবে খন্দক যুদ্ধের কথা বলা যায় । এক সময় রাসুল সাঃ যখন জানতে পারলেন কুরাইশরা তাদের যোদ্ধাদের নিয়ে মদিনা আক্রমন করতে আসছে সে সময় তিনি কোথায় যুদ্ধ করবেন তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন । সালমান ফারেসি রাঃ সিদ্ধান্ত দিলেন মদিনার চারিদিকে পরিখা খনন করার জন্য এবং তিনি কেন এ সিদ্ধান্ত দিলেন তাও ব্যাখ্যা করলেন । রাসুল সাঃ সাহাবীর পরামর্শ শুনে এ সিদ্ধান্তটি তাঁর কাছে যৌক্তিক মনে হল এবং তিনি মদিনার চারিদিকে পরিখা খনন করতে শুরু করলেন । এমন বহু উদাহরণ আমরা সিরাত গ্রন্থে দেখতে পাই ।
মহানুভবতায় অনন্য রাসুল সাঃ -: কোন ব্যক্তি রাসুল সাঃ সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও তিনি কখনই তাঁর জীবদ্দশায় এর প্রতিশোধ গ্রহন করেন নি । রাসুল সাঃ কে উপহাস করে অনেকে কবিতা রচনা করা হয়েছে। মক্কায় অবস্থানকালে রাসুল সাঃ কে অনেকেই হত্যার চেষ্টা করেছে কিন্তু মক্কা বিজয়ের পরে তিনি তাদের ক্ষমা ঘোষণা করেন । রাসুল সাঃ যখন মক্ষা থেকে মদিনায় হিজরত করেন সে সময় পথি মধ্যে এক ব্যক্তি কুরাইশের ঘোষণাকৃত পুরষ্কারের লোভে তাকে হত্যা চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয় তখন সে ব্যক্তি তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে রাসুল সাঃ তাকে ক্ষমা ঘোষণা করেন ।
উহুদ যুদ্ধে রাসুল সাঃ এর চাচা হামজা রাঃ কে হত্যা করে জুবাইর ইবনে মুতইমের দাস ওয়াহশি ইবনে হারব দাসত্বের শিকল থেকে মুক্তি পান । পরে ওয়াহশি মদিনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহন করলে রাসুল সাঃ তাকে ক্ষমা করে দেন । মৃত হামজা রাঃ এর নাক, কান কেটে হিন্দা লাশ বিকৃত করে ফেলে এবং লাশের ওপরে নৃত্য করতে থাকে । মক্কা বিজয়ের পর আবু সুফিয়ান এবং তাঁর স্ত্রী হিন্দা মুসলিম হলে তিনি তাদের ও ক্ষমা করে দেন ।
আবার মদিনায় এক ইহুদি মহিলা রাসুল সাঃ এর জন্য বিষ মিশ্রিত ছাগল রান্না করে নিয়ে আসেন, খাবার সময় রাসুল সাঃ বুঝতে পারেন যে এতে বিষ দেয়া হয়েছে তিনি এসময় সবাইকে খেতে নিষেধ করেন । কিন্তু একজন সাহাবী আগেই সেটি থেকে কিছু অংশ খায় এবং সে মৃত্যু বরন করেন । এর কারন জিজ্ঞেসা করলে সে মহিলা উত্তরে বলেন রাসুল সাঃ সত্য নবী কিনা তা তিনি যাচাই করছেন । এ সময় রাসুল সাঃ সে মহিলাকে ক্ষমা করে দেন । কিন্তু যে সাহাবী মারা গিয়েছে তার প্রতিশোধ হিশেবে সে মহিলাকে হত্যা করা হয় ।
নবুয়ত পাওয়ার পর রাসুল সাঃ মক্কায় দীর্ঘ ১৩ বছর নিজের গোত্রের কাছে চরম নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে ছিলেন । তিনি মক্কা বিজয়ের দিন প্রতিশোধ না নিয়ে সবাইকে সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন । তায়েফে যখন মুহাম্মাদ সাঃ ইসলাম এর দাওয়াত দিলেন তায়েফ বাসী তাঁর উপর চরম জুলুম নির্যাতন করতে থাকে, তাঁর শরীর রক্তাক্ত করে ফেলে । চাইলে তিনি আল্লাহর কাছে তাদের ধ্বংসের দোয়া করতে পারতেন অথবা মদিনায় রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার পর তাদের ওপরে প্রতিশোধ নিতে পারতেন । কিন্তু তিনি তাদের ক্ষমা করেছেন এবং ইসলামের সুমহান দাওয়াত তাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন ।
মদিনায় রাসুল সাঃ যখন রাষ্ট্র প্রধান একবার তিনি এক সাহাবীর প্রয়োজন পুরনের জন্য ইহুদীর কাছে থেকে ঋণ নেন । সে ইহুদী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাছে পাওনা ফেরত চান এবং তিনি রাসুল সাঃ এর গলায় চাদর পেচিয়ে ধরে রাগত স্বরে বিভিন্ন অপবাদ দিতে থাকে । এসব দেখে উমর রাঃ সে ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাইলে বরং রাসুল সাঃ উমর রাঃ কে ধমক দেন এবং জরিমনা সরূপ ইহুদীকে বিশ ছা খেজুর ধার্য করেন । সে ইহুদী রাসুল সাঃ এর এমন মহানুভবতা দেখে ইসলাম গ্রহন করেন । একজন রাসুল এবং রাষ্ট্র প্রধান হয়েও তিনি মন্দের জবাব উত্তম রূপে দিতেন আর অমুসলিমদের মন জয় করে নিতেন । এমন মহানুভব ছিলেন আমাদের রাসুল সাঃ ।
ন্যায় বিচারে অটল তিনিঃ পৃথিবীতে ন্যায়পরায়নতায় অনন্য নজির স্থাপন করেছেন মুহাম্মাদ সাঃ । তাঁর বিচার ব্যবস্থা এততাই ইনসাফ পুর্ন ছিল যে মুসলিম বা অমুসলিম, ধনী বা গরীব, পুরুষ অথবা নারী সবাই সমানভাবে আস্থা রাখতেন । তিনি ছিলেন একজন নিরপেক্ষ বিচারক ।
সিরাত গ্রন্থে এমন অনেক ঘটনায় দেখা যায় । এক মুসলিম মুনাফিক ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর বর্ম চুরি করেছিলেন । চুরির দায় তিনি কৌশলে এক ইহুদীর উপরে চাপিয়ে দেন । ঘটনায় ইহুদী ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে রাসুল সাঃ এর কাছে বিচার প্রার্থনা করেন । চোর মুনাফিক ব্যক্তির গোত্রের লোকজন মুহাম্মাদ সাঃ এর কাছে ইহুদীর বিপক্ষে ও মুসলিম মুনাফিক ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন । এসময় আল্লাহ্‌ সুরা নিসার ১০৫ নাম্বার আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দেন “ অবশ্যই আমি সত্য সহকারে তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যেন তুমি যা আল্লাহ তোমাকে জানিয়েছেন, সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার ফায়সালা কর এবং খিয়ানতকারীদের পক্ষে তর্ক করো না “। রাসুল সাঃ এ বিচারের রায় ইহুদীর পক্ষে দিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করলেন ইহুদী ব্যক্তিটি নির্দোষ এবং মুসলিম ব্যক্তি হল আসল চোর ।
এমনি আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে যা জাবির রাঃ এবং এক ইহুদীর ঘটনা । তিনি এক ইহুদীর কাছে থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিছু পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন । এসময়ের মধ্যে জাবির রাঃ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন এবং ইহুদী ব্যক্তি উক্ত সময়ের মধ্যেই তার টাকা ফেরত চান । ঘটনাটি রাসুল সাঃ এর কাছে পৌঁছে যায় । তখন তিনি ইহুদী কে সময় ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন । কিন্তু সে ব্যক্তি তা প্রত্যাখ্যান করেন । পরে সে ইহুদীর ঋণ পরিশোধ করা হয় । রাসুল সাঃ তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিটি বিচারের সুষ্ঠু ফয়সালা করেছেন । তাঁর বিচারে কোন স্বজনপ্রীতি বা মুসলিম অমুসলিম দেখা হয় নি ।
অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন সমাজ তৈরিঃ মদিনায় রাসুল সাঃ এমন এক অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেন যেখানে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয় । সুষম ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য আল্লাহর নির্দেশে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হলঃ
১। সম্পদ উৎপাদন ও বণ্টনঃ ইসলাম এই নির্দেশ দেয় যে প্রত্যেক মানুষ হালাল পথে যত খুশি উপার্জন করবে । মুহাম্মাদ সাঃ তাঁর সাহাবীদের এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন । এছাড়া সম্পদের উত্তারিধার কে হবে তা আল্লাহর নির্দেশে রাসুল সাঃ আমাদের বলে দিয়েছেন । পিতার সম্পদ উত্তারিধার সুত্রে ছেলে সন্তান কতটুকু, মেয়ে সন্তান কতটুকু পাবে তা আমাদের তিনি বিশদ ভাবে বলে দিয়েছেন । ফলে ব্যক্তির সম্পদ তার বংশানুক্রমে ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে ।
২। সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থাঃ বর্তমান পৃথিবীতে সুদ ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত আছে । যার কারনে রাষ্ট্রের সম্পদ এক শ্রেণীর মানুষের হাতে জিম্মি হয়ে আছে । সুদ ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারনে ধনীরা আরো ধনী এবং দরিদ্ররা অভাবের ভেতরে নিষ্পেষিত হয় । সুরা বাকারা আয়াত ২৭৫এ আল্লাহ্‌ বলেছেন “ আল্লাহ্‌ ব্যবসাকে হালাল করেছেন ও সুদকে হারাম করেছেন “ । এজন্য রাসুল সাঃ মদিনায় সুদ মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রচলন করেন । এতে সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ দ্বারা সম্পদ গ্রাস করা বন্ধ হয়ে যায় এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে ।
৪। জাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থাঃ মদিনায় রাসুল সাঃ আল্লাহর নির্দেশে সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা বিলুপ্ত করে জাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রচলন করেন । এর কারনে সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয় । জাকাত হল ধনীদের সম্পদে গরীব দুঃখী সহ বিভিন্ন মানুষদের হক । এটি ধনীদের কোন ধরনের দয়া নয় । আল্লাহ্‌ কুরআনে জাকাতের ব্যয়ের খাত বলে দিয়েছেন । রাসুল সাঃ সেটির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মদিনায় অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করেন ।
৫। ব্যবসার সম্প্রসারণঃ রাসুল সাঃ নিজেই একজন ব্যবসায়ী ছিলেন । তিনি মক্কাতে অবস্থানকালে সততার সাথে ব্যবসা করেছেন এবং মদিনাতে তিনি সাহাবীদের ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন । তিনি মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট, প্রতরনা, মিথ্যা আশ্বাস, চোরাই ব্যবসা, ওজনে কম দেয়া, পন্যে ভেজাল মেশানো প্রভৃতি ধরনের অনায় কাজ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন । এর সাথে সাথে এই ধরনের অনায় কাজ করলে আমাদের কি কি ক্ষতি হবে তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ।

রাসুল সাঃ এর সমর নীতিঃ রাসুল সাঃ অহেতুক যুদ্ধ, অশান্তি এসব পছন্দ করতেন না । তিনি চেষ্টা করতেন সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে সমঝোতা করার জন্য । মাদানি জীবনে রাসুল সাঃ সরাসরি ২৭ টি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন । এর মধ্যে ১৯ টি গাজওয়া এবং ৮ টি সারইয়া । তবে এসব যুদ্ধ ছিল মজলুমের জন্য সাহায্যের এবং প্রতিরক্ষার । তিনি চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের বিপরীতে আত্মরক্ষার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন । তাঁর সমর নীতি ছিল নির্যাতন, জুলুম নিপীড়ন কে উৎখাত করে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং ইনসাফ পুর্ন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা ।
সিরাত গ্রন্থগুলো এবং হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে রাসুল সাঃ শত্রুর সাথে যুদ্ধ শুরুর আগে শত্রু বাহিনীকে ইসলাম কবুলের দাওয়াত দিতেন । খায়বার যুদ্ধের সময় তিনি আলি রাঃ কে শত্রুদের ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য এবং তারা যদি তা কবুল করে তা হবে আলি রাঃ এর জন্য লাল রঙের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক ।
রাসুল সাঃ যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিক হত্যা, প্রাকিতিক সম্পদ ও উপাসনালয় ধ্বংস করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন । তাঁর নীতি ছিল নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষদের সুরক্ষা দেয়া । তিনি আদেশ করতেন যুদ্ধ বন্দিদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে । সাহাবীদের এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা নিজেরা না খেয়ে যুদ্ধ বন্দীদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন, নিজেরা কম ও খারাপ খাবার খেয়ে বন্দীদের ভাল খাবার দিতেন । অবশেষে মুক্তি পনের মাধ্যমে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতেন । যদি কোন বন্দীর মুক্তি পন দেয়ার সামর্থ্য না থাকত তাহলে এমনও উদাহরণ রয়েছে বিনা মুক্তি পনে তিনি তাদের মুক্ত করেছেন ।
উপসংহারঃ রাসুল সাঃ এর নেতৃত্বে মদিনায় যে যে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল তা ছিল মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, সমতা এবং শান্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । মানব ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যত বাদ মতবাদ তৈরি হয়েছে সমাজে তথা রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা বা ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে আজ পর্যন্ত একটিও সফল হতে পারেনি । এসব মতবাদ রাষ্ট্রে সবার অধিকার অক্ষুন্ন রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে নি । এসব দিক দিয়ে একমাত্র সফল ব্যক্তি হলেন তিনি আমাদের রাসুল সাঃ । আল্লাহ্‌ সুরা আল আহযাবের ২১ আয়াতে বলেছেন “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ “ । রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মদিনা সনদ এবং তাঁর পরবর্তি প্রত্যেক পদক্ষেপ পৃথিবীতে প্রত্যেক রাষ্ট্র প্রধানের জন্য উত্তম আদর্শ হিশেবে বিবেচিত হবে । কেউ যদি রাষ্ট্রে ন্যায়ের কাঠামো তৈরি করতে চায়, ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে চায় তাহলে রাসুল সাঃ এর আদর্শ লালন করা তার জন্য বাঞ্ছনীয় । রাসুল সাঃ এর আদর্শ আজও ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে প্রাসঙ্গিক, যা পৃথিবীতে শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় বিবেচিত হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাথর চোখের কান্না- ৩

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১

অন্ধকারের ভাবনা.....

চোখের সমস্যার জন্য নানাবিধ টেস্ট করিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম Ophthalmoscopy, Funduscopy, Optic fundus, OCT (Optical Coherence Tomography এছাড়াও যেহেতু মাথায় যন্ত্রণা থাকে সেজন্য CT Scan এবং MRI করতে হয়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাল মার্কস, পুঁজিবাদ ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: কমিউনিজম কি এখনো প্রাসঙ্গিক?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আজ ১৪ মার্চ, কাল মার্কসের মৃত্যুবার্ষিকী। দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর চিন্তাধারা শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির লক্ষ্যে গড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুরহা ধাওয়াইল্লেহ, আন্ডা ভোনছে…….

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০০



২৪’এর জুলাই আগষ্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারতো দেশটিতে তা আর হতে দিলো কই কিছু কিছু রাজনীতিবিদ আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিনাকি আসলে কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৬



গেছদাদা্ মনে করেন পিনাকি আসলে ‘র’ এর এজেন্ট। কারণ ‘র’ তাকে হত্যা করে নাই।শেখ হাসিনা ভারতে গেছিলেন সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আবার ক্ষমতা দখল করার জন্য। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×