somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে গেছে আমার শাহজাদী

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক বছরের বেশী সময় হয়ে গেল এ মেসে উঠেছি । কিছু দিন পর দেখি ছোট একটি বিড়াল দূর থেকে মেউ মেউ করছে । এক সময় সে আপন হয়ে গেল, কোলের মধ্যে, জ্যাকেটের মধ্যে ঢুকে থাকত । কিছু দিন হল তাকে আর দেখতে পাচ্ছি না । মেস ম্যানেজার থেকে শুনলাম সে তাকে বাজারে ফেলে এসেছে ।
কয়েকদিন পর বাইরে দেখলাম সে বিড়ালের মতই নতুন বিড়াল চলে এসেছে একদম ছোট বাচ্ছা, সবেমাত্র দৌড়ঝাপ শুরু করেছে । প্রথম দিকে দুরে দুরে থাকত, কাছে গেলেই দৌড়ে পালিয়ে বা মায়ের কাছে যেত নয়ত কোথাও লুকিয়ে পড়ত । একসময় দেখলাম ব্যালকনিতে চলে এসেছে কিন্তু কাছে গেলে আগের মতই দৌড় দিত ।
বেলকনির সিড়িতে খাবার দিতাম তার সাথে ভাব জমানোর জন্য । প্রথম দিকে আমি থাকলে কাছে আসত না । কিছুদিন পর দেখলাম খাবার শুকে চলে যাচ্ছে । কয়েকদিনের মধ্যে তার সহস বেড়ে অলরেডি রুমে ঢুকতে শুরু করেছে । কিন্তু ধরতে গেলে আগের মতই দৌড় দিত । একসময় ধরা দিল, সেই যে ধরা দিল শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই ধরা ছিল ।


প্রথম দিকে খাবার দিতাম সে শুধু মাছ বা মুরগি খেত, ভাত খেত না । সেকারনে তার নাম দিয়েছিলাম শাহজাদী । এসময়ের মধ্যে তার সাথে আমার ভাব অনেক হয়ে গেছে । সে এখন আমার কোলে ঘুমায়, আমার বিছানায় গা পরিষ্কার করে, শুয়ে থাকে, কিবোর্ডের ওপরে এসে বসে থাকে, লেপ গাঁয়ে দিয়ে শুয়ে থাকলে আমার শরীরের ওপরে এসে শুয়ে থাকে, আমার মাথার কাছে এসে শুয়ে থাকে । আমার রুমে ২ টা দরজা ছিল, বেলকনির দরজা শুধু শাহজাদীর জন্য সবসময় খোলা রাখতাম । অন্য কোন সময় রুমে না আসলেও রুটিন মাফিকভাবে খাবারের ৩ সময়ে রুমে হাজির হয়ে যেত । খাওয়ার সময় যদি হাড়ে কামড় পড়ে শব্দ হত তাহলে সে তখনি মেও মেও শুরু করে দিত, খাবার শেষে বাটি রাখতে যাব তখন সে আমার চারি দিকে ঘুর ঘুর করতে শুরু করে দিত । প্রত্যেক বেলা আমার খাবার শেষে তাকে ব্যালকনিতে খাবার দিতাম । প্রত্যেক বেলা বলা ঠিক হবে না কারন সকালে খিচুড়ি থাকত শাহজাদী আবার খিচুড়ি খেত না । তবুও সে সকালে চলে আসত ।


রাতে সে টেবিলে, ব্যাগের ওপরে, চেয়ারে, পাপোষে ঘুমাত । এসব জায়গা তার খুব প্রিয় । আমার রুমে রাতে থাকলে খুব সকালে মেও মেও শুরু করে দিত বাইরে যাওয়ার জন্য । মানে প্রকৃতির ডাক আসত তাই । একদিন খুলে দিতে পারিনি তার আমার রুমমেটের লেপের ওপরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলেছে ।
বড় বড় ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার সময় মন খারাপ হয়ে যেত । রুমে তালা দিয়ে যখন চলে যাব তাকে কোলে নিয়ে বাইরে রেখে আসি, তখনি সে দৌড়ে আবার রুমে মধ্যে চলে আসত । জোর করে বাইরে রেখে তালা দিলে আমার দিকে তাকিয়ে মেও মেও করত । আমি বাড়িতে থাকাকালিন তার বাচ্চা হয়েছিল । জানিনা তার বাচ্চার কি হয়েছে । আমি শহরে আসার পর বাচ্ছা দেখতে পায়নি কিন্তু সে অনেক শুকিয়ে গিয়েছিল। বাড়ি থেকে আমি শেষ বিকেলে শহরে আসতাম, এসে দেখি সে ব্যলকনি বা বাইরে বসে আছে অথবা পাশের রুমে আছে । আমার গলা শুনলেই সে দৌড়ে আমার রুমে চলে আসত ।


তাকে কয়েকবার জোর করে নখ তুলে দিয়েছিলাম । গত সপ্তাহেও জোর করে নখ তুলে দিয়েছি । নখন তোলার পর যখন তাকে ছেড়ে দিয়েছি সেসময়ে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক সময় নিয়ে মেও মেও করেছে মনে হচ্ছিল যেন ঝগড়া করছে ।
সে শাহজাদী গত সপ্তাহ থেকে আমার রুমে আর আসছে না । অনেক জনকে জিজ্ঞেস করলাম তাকে দেখেছে কি না । সবাই বলেছে অনেক দিন থেকে দেখেনি । ভেবেছিলাম পাশের বাড়িতে আছে হয়ত চলে আসবে । কিন্তু না সে আসেনি । কোথায় গিয়েছে, কোথায় থাকছে, কি খাচ্ছে আল্লাহ্‌ ভাল জানেন । কেন জানি অনেক খারাপ লাগছে । তার শুন্যতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে । জানিনা সে বেঁচে আছে কি মারা গেছে ।
অনেক স্মৃতি আছে তার সাথে একদিনে শেষ করার মত না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাথর চোখের কান্না- ৩

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১

অন্ধকারের ভাবনা.....

চোখের সমস্যার জন্য নানাবিধ টেস্ট করিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম Ophthalmoscopy, Funduscopy, Optic fundus, OCT (Optical Coherence Tomography এছাড়াও যেহেতু মাথায় যন্ত্রণা থাকে সেজন্য CT Scan এবং MRI করতে হয়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাল মার্কস, পুঁজিবাদ ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: কমিউনিজম কি এখনো প্রাসঙ্গিক?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আজ ১৪ মার্চ, কাল মার্কসের মৃত্যুবার্ষিকী। দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর চিন্তাধারা শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির লক্ষ্যে গড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুরহা ধাওয়াইল্লেহ, আন্ডা ভোনছে…….

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০০



২৪’এর জুলাই আগষ্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারতো দেশটিতে তা আর হতে দিলো কই কিছু কিছু রাজনীতিবিদ আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিনাকি আসলে কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৬



গেছদাদা্ মনে করেন পিনাকি আসলে ‘র’ এর এজেন্ট। কারণ ‘র’ তাকে হত্যা করে নাই।শেখ হাসিনা ভারতে গেছিলেন সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আবার ক্ষমতা দখল করার জন্য। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×