ছবিঃ এআই
স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা এ দুটি শব্দ বর্তমানে খুব বেশী শোনা যায় । বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে এসব শব্দ হর হামেশায় শোনা যায় । চলুন দেখা যাক এসব শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয় ।
স্বাধীনতাঃ
স্বাধীনতা হলো একটি এমন বিশেষণ, যা একটি জাতি, দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অবস্থান বোঝায়; যেখানে তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা। তবে স্বাধীনতা কোনো অর্থেই যা খুশি তাই করা বোঝায় না। স্বাধীনতা সুদীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতা যেভাবেই হোক, এর উদ্দেশ্য থাকে সার্বভৌমত্ব অর্জন করা। যদিও কিছু বিপ্লবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন; তবে অধিকাংশই শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়।সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
বাকস্বাধীনতাঃ
বাকস্বাধীনতা হচ্ছে স্বতন্ত্র্য ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের; নির্ভয়ে, বিনা প্রহরতায় বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা, অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যতা ব্যতিরেকে নিজেদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার সমর্থিত মুলনীতি।"মত প্রকাশের স্বাধীনতা" (freedom of expression) শব্দপুঞ্জটিকেও কখনও কখনও বাকস্বাধীনতার স্থলে ব্যবহার করা হয়, তবে এক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতার সাথে মাধ্যম নির্বিশেষে তথ্য বা ধারণার অন্বেষণ, গ্রহণ এবং প্রদান সম্পর্কিত যেকোন কার্যের অধিকারকেও বুঝিয়ে থাকে।
বেসামরিক ও রাজনৈতিক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিয়ার) মানবাধিকার সনদ এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী অভিব্যক্তির স্বাধীন প্রকাশকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে "প্রত্যেকের অধিকার আছে নিজের মতামত এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করার। এই অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিজের স্বাধীনচেতায় কোনো বাধা ব্যতীত অটল থাকা; পুরো বিশ্বের যে কোনো মাধ্যম থেকে যে কোনো তথ্য অর্জন করা বা অন্য কোথাও সে তথ্য বা চিন্তা মৌখিক, লিখিত, চিত্রকলা অথবা অন্য কোনো মাধ্যম দ্বারা জ্ঞাপন করার অধিকার"। এই ১৯ নং অনুচ্ছেদ পরবর্তীতে আইসিসিপিয়ার দ্বারা সংশোধিত হয়, উদ্ধৃতিতে বলা হয়; এইসব অধিকারের চর্চা বিশেষায়িত নিয়ম এবং দায়িত্বকে ধারণ করে; তবে যদি এই চর্চার দ্বারা কারো সম্মান হানি হয় বা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় তবে কিছু ক্ষেত্রে এর অবাধ চর্চা রহিত করা হয়।
বাকস্বাধীনতাকে চূড়ান্ত হিসেবে স্বীকার নাও করা হতে পারে। মর্যাদাহানি, কুৎসা রটানো, পর্নোগ্রাফি, অশ্লীলতা, আক্রমণাত্মক শব্দ এবং মেধাসম্পদ, বাণিজ্যিক গোপনীয়তা, জননিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতা যদি অন্য কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে বা কারও অপকার করে তবে অপকার নীতির মাধ্যমে বাকস্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। এই অপকার নীতির ধারণাটি প্রণয়ন করেছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল তার অন লিবার্টি নামক গ্রন্থে। সেখানে তিনি বলেন, "একটি সভ্য সমাজে কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তার উপর তখনই ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করা যায়, যখন তা অন্য কোন ব্যক্তির উপর সংঘটিত অপকারকে বাঁধা দেয়ার জন্য করা হয়।"অবমাননা নীতির ধারণাও বাকসীমাবদ্ধতার ন্যায্যতা প্রতিপাদনে ব্যবহৃত হয়, এক্ষেত্রে যেসব কথায় সমাজে অবমাননার সৃষ্টি করে সেগুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে বক্তব্যের পরিমাণ, সময়, বক্তার উদ্দেশ্য, কতটা সহজে এড়িয়ে যাওয়া যায় - এসব বিবেচনায় আনা হয়। ডিজিটাল যুগের বিবর্তনের সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন উপায় আবিষ্কৃত হওয়ায় বাকস্বাধীনতার প্রয়োগ ও এর বিধিনিষেধ ব্যবস্থার বিতর্ক আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন চীন সরকারের উদ্যোগে নেয়া গোল্ডেন শিল্ড প্রোজেক্টে জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় সাম্ভাব্য অসন্তোষজনক তথ্যকে দেশের বাইরে যেতে বাঁধা দান করে। সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার পর্যালোচনাঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজবপন হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে । পাকিস্তান রাষ্ট্রে পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিমের যে বৈষম্য, শোষন চালানো হয়েছিল তা অসহনীয় । ফলে পুর্ব পাকিস্তানে নতুন স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । ১৯৭১ সালে বাংলার আপামর জনগনের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে পাক হানাদার মুক্ত হয় আমাদের এই বাংলাদেশ । স্বাধীনতার পর স্বাধীনতার সম্পুর্ন ক্রেডিট চুরি হয়ে যায়, এ স্বাধীনতার একক ক্রেডিট ছিনিয়ে নেয় মুজিবর রহমান । ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমি শেখ পরিবারের কোন ভুমিকা দেখতে পাইনা ( যেমন তাদের ভুমিকা হওয়া উচিত ছিল ) । তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সম্পুর্ন ক্রেডিট কেন তাকে ও তার পরিবারকে দেয়া হয়েছিল ? বা এখনো দেয়া হচ্ছে ? কেন মুক্তিযুদ্ধের নায়ক তাজউদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রব রা কেন স্বাধীনতার পর এদেশে মহান হয়ে উঠতে পারেনি ?
মুক্তিযুদ্ধকে আম্লিক বা বাল(BAL) নিজস্ব সম্পত্তি করে । শেখ মানুষের বাকস্বাধীনতা হরন করে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিল । যার ফল ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ । যাইহোক তারপর আম্লিকের দেশে রাজনীতিতে ফিরতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে । কিন্তু ভারতের সহতায় ১/১১ সফল হলে বালের দল আবার ক্ষমতায় চলে আসে । ক্ষমতায় আসার পর বালের দল ও তাদের নেত্রী খুনি হাসিনা আমাদের বুঝাতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ শুধু আম্লিক ও শেখ মুজিবের । বিগত ১৬ বছর দেশে এমন কোন খারাপ কাজ বাদ নেই যা আম্লিক করে নাই ।
খুন, ধর্ষন, লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি সব প্রতিষ্ঠান শেখ পরিবারের নাম করন করা আরো কত কি । এসময় তারা মনে করত তারা ২০৫০ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে । একাজে সহযোগীতা করেছিল শাহবাগ ২০১৩ সাল । তারা ফ্যাসিবাদের মুলভিত মাটির অনেক গভীরে পুতে দিয়েছিল । আপনারা একটু ভাল করে খেয়াল করে দেখবেন খুনি হাসু ও তাদের বালের দল সর্বদা ৭১ রের চেতনা, রাজাকার রাজাকার করে এদেশে রাজনীতি করেছে । এর বাইরে তারা কোন কথা বলত না এবং তারা আরো বুঝাত দেশ গড়তে বালের দলের বিকল্প নাই । এসময়ে দেশের প্রত্যেক সেক্টরে তাদের অনেক মুরিদ জন্ম নিয়েছিল । এ মুরিদরা মুলত ফ্যাসিবাদের দোষর । বিগত বছরগুলোতে এসব শাহাবাগী ছানা, মুরিদ, ফ্যাসিবাদের দোষর মনে করত আম্লিকের বিরোধীতা করা মানে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করা । তাহলে তার এ চিন্তার মানদন্ড কি ? খুনি হাসুর সময়ে বাকস্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না । অনলাইন বা অফলাইনে কোন জায়গাতেই তাদের কোন সমালোচনা করা যেত না । শিবির সন্দেহে মানুষদের নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হত, জঙ্গি নাটক সাজিয়ে মানুষদের ক্রস ফায়ার দেয়া হত । মনে পড়ে আবারর ফাহাদের কথা? (আবারার ফাহাদ হত্যা ) ? মনে কি পড়ে বিশ্বজিৎ এর কথা ( বিশ্বজিৎ হত্যা ) ? এমন হাজার হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে । সেসময়ে এসব নিয়ে কথা বলার কোন অনলাইনে, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট, ব্লগার বাল ছাল কিছুই ছিল না । অর্থাৎ শিবির করলেই অথবা আলেমদের হত্যা করা এরাই জায়েজ করেছে । তাদের কেন বেঁচে থাকার অধিকার ছিল না ? তাদের কেন স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হল ? আবরার ফাহাদের বাকস্বাধীনতা ছিল না কেন ?
বালের দল আম্লিক, দোষর, শাহাবাগির ছানারা দেখবেন আম্লিকের প্রতি একচোখা । খুনি হাসু এদেশের স্বাধীনতা ভাড়তের কাছে ক্ষমতার ঠুনকো মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিল এবং ক্ষমতার পাওয়ার পর বাকস্বাধীনতা হরন করেছিল । মনে কি পড়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কথা ? জুলাই ২০২৪ এ খুনি হাসুর বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা আন্দোলন গড়ে তোলে । শুরুতে এটি কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল, কিন্তু খুনি হাসুর ক্ষমতার মসনদ ছিল বালির বাধের মত । সে ছিল খুবই ভীত, যার কারনে সে ভেবেছিল তার ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে । খুনি হাসুর নির্দেশনায় জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র হত্যা করা হয় । সেসময়ে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল যাতে গনহত্যা চালাতে সুবিধা হয় । কিন্তু এছাত্র জনতা তো দমে যাবার পাত্র নয় । তারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে । ফলে ৫ ই আগস্ট ২০২৪ খুনি হাসু তার বালের দল আম্লিক, দোষর, শাহাবাগির ছানাদের দেশে রেখেই ভাড়তে পালিয়ে চলে যায় । বর্তমানে এসব ফ্যাসিবাদের দোষররা, শাহবাগির ছানারা জুলাই ২০২৪ কে অস্বীকার করে । তারা এ বিপ্লব কে ধারন করতে পারেনি, সরাসরি তারা ছাত্রদের বিপক্ষে কথা বলে । এরা নাকি চুশীল সমাজ । বাহ সেলুকাস ।
বালের দল আম্লিক, দোষর, শাহাবাগির ছানাদের দেখবেন তারা বলবে এসব দোষ ছাত্রদের । তারা নিজেরা নিজেদের হত্যা করেছে । হাস্যকর ভাই । এসব ফ্যাসিবাদের দোষর, শাহাবগু ছানারা এখন দেশের বড় বড় জায়গায় বসে আছে । যারা খুনি হাসুর এতদিনের জুলুম নির্যাতনে মুখে ফিডার দিলে রাখলেও বর্তমানে ইউনুস সরকার যখন খুনিদের দোষরদের ধরতে "ডেভিল হান্ট" চালাচ্ছে তখন তাদের জ্বলে যাচ্ছে । এখানে যে তারাও জড়িত । ছাত্র জনতা খুনি হাসুর ভাষণের প্রতিবাদে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার পরিষ্কার করেছে তখনও এসব চুশীলদের জ্বলে যাচ্ছে । কেন জ্বলছে আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
আপনার যদি আম্লিকের পক্ষে বলার অধিকার থাকে আরেকজন মানুষের অধিকার রয়েছে বিএনপি, জামাত, খেলাফত মজলিস, আহলে হাদিসের পক্ষে বলার । আপনি যদি মনে করেন ইসলামকে আক্রমন করা বাকস্বাধীনতা তাহলে আপনি মুক্তমনা না আপনি ইসলাম বিদ্বেষী । আপনি আম্লিককে সাপোর্ট করতে পারেন কিন্তু আপনার বিবেক দিয়ে একবার ভাবা উচিত বিগত সময়ে আম্লিক কি করেছে । কেন ৫ই আগস্ট ২০২৪ আসল । আমাদের অধিকার আছে জুলাই ২০২৪ আন্দোলনকে ধারন করার ।
আপনার যদি অধিকার থাকে গনতন্ত্র নিয়ে কথা বলার তাহলে আমারও অধিকার রয়েছে খেলাফত নিয়ে কথা বলার । মেঘ মল্লার বসুরা লাল সন্ত্রাসের ডাক দিলেও তাদের গ্রেফতার করা হয় না, রাষ্ট্র বিরোধী মামলা হয় না কিন্তু আমি যদি জিহাদের কথা বলি, খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলি তাহলে আপনি আমাকে বলেন আমি গঙ্গি । কেন ভাই ?
এবার আসি সামুর দিকে । সামুতে দেখি বালের দল আম্লিক, দোষর, শাহাবাগির ছানারা সবচেয়ে বেশী । এ ব্লগের নিচে দেখতে পাবেন লিখা আছেঃ "সামহোয়্যার ইন...ব্লগ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ, মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল্যাটফমর্। এখানে প্রকাশিত লেখা, মন্তব্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর..." ।
এ নিয়ে পরে একদিন লিখব । ইনশাআল্লাহ্ ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৮