State University of Bangladesh এর সামনে এসেই আমি বান্ধুবীকে বললাম-ফিজিক্যাল কলেজের পাশেই না র্যাব-২ এর অফিস!ও ফ্যাকাশে মুখে মাথা নাড়ল।ফিসফিস করে বলল-আমাদের কি বাসায় চলে যাওয় উচিৎ?পেছন থেকে তখন নানান কথা আসছে।কখনো ডাইনে কখনো বায়ে বাইকটা যাচ্ছে।আমি রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম-র্যাব-২ এর অফিসের সামনে নিয়ে যান।তড়িৎ গতিতে রিকশা টেনে সে মিনিট তিনেকের মাঝেই আমাদের কে নিয়ে গেল র্যাব-২ অফিসের সামনে।তাকে থামিয়ে বললাম-এখানে অপেক্ষা করেন,আমরা আসছি।আর বাইকের ছেলেটা যদি আমাদের কে নিয়ে কোন প্রশ্ন করে তবে কিছু বলেন না।হাতের মুঠো শক্ত করে সে বলল-জেপন থাকতে কমু না কিসু।সাহস থাকলে একবার আসুক না সামনে।
আমার তখনো কিছু চিন্তা করার মত অবস্থা ছিল না।নিজের বান্ধুবীকে টেনে আমি নিয়ে গেলাম র্যাব-২ এর অফিসে।তারপর দুইজন ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বললাম।রিপোর্ট করলাম।এরমাঝে দেখি রিকশাওয়ালা এসে হাজির।এক গাল হেসে সে বলল-আপা,আপনাদের কে এইখানে আইতে দেইখাই সে পোলাইসে।তারপর সে আমাদের আমাদের সাথে রিপোর্ট করতে সাহায্য করল।র্যাবের অফিসার-রা ছেলেটির বাইক চারপাশে খুঁজে পায়নি।আমরা প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে আসলাম। অফিস থেকে আমাদের কে বলা হল এরপর মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করে রাখতে।
নীলক্ষেতে যাবার সময় সারাটি পথ আমাদের রিকশাওয়ালা কথা বলে চলেছিল।–“আপা, জিডি করার সময় আমারে ডাইকেন।লাগলে আমি আইসা সাক্ষী দিমু।আমার বাসার ফুন নাম্বার দিয়া যামু।আমি তো ভাবতেসিলাম ১৫ নাম্বার বাস ষ্ট্যান্ডের সামনে আইলেই এই পোলাটারে আমাগো সমিতির সামনে আইন্না মারমু।কত্ত বড় সাহস ইভ টিজিং করে।আমার রিকশারে ৩বার ধাক্কা দিসে।যেইহানেই পামু পিটামু”।তার সব কথা আমার কানে আসছিল আবার আসছিল ও না।আসলে আমি তখন অনেক অনেক অবাক হয়ে ভাবছিলাম,এত প্রচার,এত্ত লেখালেখি করেও এই সব ইভটিজিং বন্ধ হল কই?খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হল,আমার বান্ধুবীটির মতই অনেক অনেক মেয়েরা এইসব ব্যাপার মেনে নিয়ে এক অদ্ভুত ট্রমায় থাকে।প্রতিবাদী হতে ভয় পায়,তারা বোঝেনা তাদের আজকের এই নিরবতা আগামীতে আরও কত্ত কত্ত মেয়েদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।কবে সব মেয়েরা তাদের নারীস্বত্তা নিয়ে দাড়ানোর আগে একজন মানুষ হয়ে মাথা তুলে স্বগর্বে উঠে দাড়াবে!!!কবে!!
রিকশা থেমে যায়।আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে বলি-মামা,আপনার নামটা কি?বাসা কোথায়?সে বলে-মোহাম্মদ আব্দুল আলিম।আমি ধানমন্ডি ১৫ বাস ষ্ট্যান্ডের কাছে থাকি।আফা,এই ব্যাপারে আমারে যে কোন কাজে ডাকবেন।এই সব খারাপ পোলাগো কেমনে শায়েস্তা করতে হয় আমরা জানি।আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে একজন মিজানুর রাহমানের চেহারা।যিনি বখাটেদের কবল থেকে তাঁর ছাত্রীদের রক্ষা করতে যেয়ে গত বছর ২৬শে অক্টোবার মারা যান।না মৃত্যু আসলে তাঁকে হারাতে পারেনি।বরং বলা যায় যে তিঁনি শহীদ হয়েছিলেন।
আজকে আমাদের কে উতক্ত্য করা ছেলেটি,একটি নামকরা প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করছে,শিক্ষিত,প্রতিষ্ঠিত...অথচ মানুষ হিসেবে কতটা জঘন্য।আর রোদে পোড়া চেহারা এই আব্দুল আলীম রিকশাওয়ালা হয়েও কত বড়।ছেলেটি কতটা কাপুরুষ আর একজন আব্দুল আলীম কতটা সাহসী।আমরা রিকশাওয়ালা মামার ফোন নাম্বার নিয়ে আসি।এমনকি তাঁকে অনেক সেধেও আমি তার ন্যায্য পাওনার চেয়ে বেশি টাকা দিতে পারিনি।
আজকের এই লেখাটি ইভটিজিং নিয়ে না।আমার বান্ধুবীকে নিয়েও না।এই লেখাটি আসলে স্বপ্ন নিয়ে।যে দেশে মিজানুর রাহমানের মত শিক্ষক আছে,যে দেশে আব্দুল আলীমের মত মানুষ আছে...সে দেশে কি আর অনেক দিন ধরে খারাপ কিছু চলতে পারে???না পারেনা।আমাদের সবার মাঝেই আসলে একজন সত্যিকারের ভাল মানুষ বেঁচে আছে।কেউ সেটা অনুভব করতে পেরে,স্বত্তাটাকে জাগিয়ে তুলতে পারে আর কেউ পারেনা।এইটাই হল তফাৎ।তবুও স্বপ্ন দেখি সবার মনের ভেতরের সেই সত্যিকারের মানুষটি জেগে উঠুক আর উদ্ভাসিত করে তুলুক এ বিশ্ব।
***একটি অনুরোধ-কেউ কখনো ইভটিজিং এর শিকার হলে,কাউকে শিকার হতে দেখলে কিংবা আজকের মত পরিস্থিতিতে পরলে,অবশ্যই গাড়ির নাম্বারটি ও যত প্রয়োজনীয় তথ্য পারেন টুকে রাখবেন,আর ততক্ষনাৎ কাছের যে কোন থানা বা র্যাব অফিসের সাথে যোগাযোগ করবেন।নিজের মুঠোফোনে অবশ্যই র্যা ব অফিসের নাম্বার রাখবেন।
এখানে র্যাব অফিসের নম্বরগুলো দিচ্ছিঃ
র্যাব ১ - 01199816210 (ঢাকা)
র্যাব ২ - 01711800429 (ঢাকা)
র্যাব ৩ - 01714093501 (ঢাকা)
র্যাব ৪ - 01614093568 (ঢাকা)
র্যাব ৫ - 01711800434 (রাজশাহী)
র্যাব ৬ - 01711800420 (খুলনা)
র্যাব ৭ - 01730335505 (চট্টগ্রাম)
র্যাব ৮ - 01714063624 (বরিশাল)
র্যাব ৯ - 01713142950 (সিলেট)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:২৭