২০১৩’র বইমেলা কেমন হবে, কী মনে হয় আপনাদের? হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন, তাঁর অবর্তমানে বইমেলা, প্রকাশনা শিল্প এগুলোর কী অবস্থা হবে? ভাবার মত একটা সমস্যা।
সস্তা,বাজারি ইত্যাদি অবমাননামূলক খেতাব প্রাপ্ত হুমায়ূন আহমেদই বইমেলা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একটা বিশাল বড় ভিত্তি। প্রতি বছর বইমেলায় যে মানুষের ভিড় বাড়ছে আর বাড়ছে, এর পিছনের তিনটা কারনের একটা ছিল তাঁর বই। আমাদের প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান আপাত শক্তিশালী অবস্থানে তাঁর অবদান অনেক। আপাত বলার কারন হল, তিনি এখন নেই, এখন কল্পনা করে দেখা যাক কী হতে পারে?
২০১৩ তে বইমেলা তেমন কোন সমস্যায় পড়বে না। কারন পাবলিক সেন্টিমেন্ট। মানুষ খেয়ে না খেয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে যাবে। কিন্তু মেলায় কি ধরনের বই থাকবে? তিনি তো নতুন কিছু লিখে যাননি এক ‘দেয়াল’ ছাড়া।
এইখানেই তো মজা। অন্যপ্রকাশের গোপন ঝুলি থেকে বের হতে থাকবে একের পর এক অপ্রকাশিত হুমায়ূন। পাশাপাশি তাঁর পুরোন বিভিন্ন লেখা বিভিন্ন নামে সংকলিত আকারে প্রকাশিত হতে থাকবে। আমরা পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে কিনবোও।
এই বই গুলোর কপিরাইট থাকবে শাওনের নামে। আর প্রকাশক অন্যপ্রকাশ। দারুন ব্যবসা। এখানেই কী শেষ? আরে নাহ! হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী, লেখালেখির ১০-২০-৩০-৪০ বছর পূর্তি ইত্যাদি ইত্যাদি নানা রকম-সকমের মূলা ঝুলতে থাকবে। আরেকটা দিক দিয়ে ২০১৩’র বইমেলা দারুন লাভজনক হবে। হুমায়ূন স্মৃতিকথা। সব্যসাচী লেখক (!!!) সৈয়দ সামসুল হকের মত কালজয়ী (!!!) লেখকরা লিখতে থাকবেন ‘হুমায়ূনকে যেমন দেখেছি’ বা ‘হুমায়ূন আমার লেখা চুরি করেছে’ বা ‘নুহাশপল্লীর ঔষধী গাছের গুণাগুণ’ ইত্যাকার নানা নামের, নানা ঢঙের স্মৃতিকথা। প্রকাশক? বেশীরভাগের অন্যপ্রকাশ। কপিরাইট? শাওন।
হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ অবশেষে নুহাশপল্লীতেই দাফন হল। জানা আছে কী নুহাশপল্লী কার নামে আছে? আমি জানি না। ধারনা করছি এটাও শাওনের নামে আছে। নুহাশপল্লী বর্তমানেই একটা বিশাল লাভজনক ব্যবসা। হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ ধারন করার পর এটা তীর্থস্থানে রূপ নেবে। মানে বিপুল মানুষের সমাগম। লাভে লাভে লাভালাভ।
শাওনের কয়েকটা আচরণ ভাল লাগে নাই, বরং সন্দেহ বাড়ায়। এয়ারপোর্টে যেভাবে বার বার ‘আমি তাঁর স্ত্রী,আমি তাঁর স্ত্রী’ বলা, গুলতেকিন আহমেদ ও তাঁর সন্তানদের এবং মুহম্মদ জাফর ইকবাল ইনাদেরকে উদ্দেশ্য করে যেভাবে বলছিল ‘পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও আমেরিকায় না দেখতে যাওয়া’ এই সব নাটুকেপনা মনে হয়েছে। তবে শেষ কথা হল, আমার মনে হওয়ায় কিছুই আসে-যায় না। এবং বৈধ স্ত্রী হওয়াতে শাওনেরই অধিকার বেশী।
কেউ কি ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ পড়েছেন? ওইটাতে থ্রি ডব্লিউ বলে একটা চ্যাপ্টার আছে, হুমায়ূন আহমেদের তিন কন্যা নিয়ে লেখা। পড়ে দেখেন কীভাবে তাদের ব্যাঙ্গ করা হয়েছে। একটা ব্যাপার হচ্ছে, হুমায়ূন আহমেদের আছে কলম। তিনি ইচ্ছা করলেই যেকোন বিষয়ে লিখে দিতে পারেন। কিন্তু তাঁর ছেলে-মেয়েরা কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও লিখতে পারছেন না। তিনি তাঁর পুত্র-কন্যাদের হিউমিলিয়েট করবেন,বই লিখবেন আবার তাদের দেখা পাওয়ার আশাও করবেন - রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে চাওয়াটা বেশী হয়ে যায় না ?
তাঁর শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ বের হবে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম থেকে। এখানেও ব্যবসা। দাফন নিয়ে ইমপ্রেসের লোকজনকে একটু বেশী অ্যাকটিভ দেখা গেল। কারনটা কী? বেশ সুন্দর দুইটা পক্ষ দেখা যাচ্ছে। শাওন-মাঝহার(অন্যপ্রকাশ)-ইমপ্রেস আর জাফর ইকবাল-নোভা-শীলা-নুহাশ। মারহাবা, কেয়া বাত হ্যায় !!!
মোটামুটি হুমায়ূন আহমেদের উপর আমার একটা চাপা রাগ আছে। সেই রাগ নিয়েও তাঁর বই বের হলেই ডাউনলোড করে পড়তাম, তবে কিনতাম না। না কিনে ডাউনলোড করছি, টাকা খরচ করছি না – এই ভেবে ভাল লাগত। সর্বশেষ কিনেছিলাম ৭০ দশকের সমগ্র, শুধুমাত্র ‘নন্দিত নরকে’ র জন্য।
গতকালের কোন চ্যানেলই দেখতে পারিনি। সবখানে নুহাশ-শীলাদের কান্নাকাটি। খুব,খুউউব খারাপ লাগছিল।
হুমায়ূন আহমেদ, আপনি ছিলেন বাংলাদেশের সত্যজিত রায়! আপনার প্রতি শ্রদ্ধা!
''নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ''
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:২৫