আমার এই মেঘনাকে প্রথম খুব কাছ থেকে দেখেছি সেই ক্লাশ ফাইভে পড়ি যখন, লঞ্চে করে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় আসার সময়। কি বড়!!!!! ছোটবেলার চোখে সে কি বিস্ময়, সাথে একটু একটু ভয় লাগা......
প্রতিবছর বাসে করে ঢাকায় আসার সময় কুমিল্লার কাছে দুইবার ফেরী পার হতাম, তখন দেখেছি আরো বেশ কয়েকবার, আরো কাছে থেকে। এরপর একসময় ব্রীজ হয়ে গেল, দূরত্ব বেড়ে গেল নদীর সাথে। অনেক উপর থেকে দেখি, মিনিটেই দেখা শেষ হয়ে যায়, তবুও অনেক ভালো লাগে, বিশেষ করে পানিতে ঝিলমিলে রৌদ ......জেলেদের ছোট ছোট নৌকা......
অনেকদিন পর আবারও লঞ্চে চাঁদপুর যাওয়া, লঞ্চের বারান্দা থেকে অবাক বিস্ময়ে পানির খেলা দেখে যাওয়া, বড়দের মুখে শুনেছি পদ্মা আর মেঘনার জল নাকি মিশ খায় না। আমি অতশত বুঝিনি , আমি শুধু দেখেছি নদীর একপাশে ঢেউ, আরেকপাশ শান্ত-গম্ভীর।
প্রচন্ড কুয়াশায় না দেখতে পেয়ে গেল লঞ্চ চরে আটকে......আরেক সময় বড়স্টেশনের পাশে তোমার তীরে বসে বেলা শেষের সূর্যকে দেখা, ছোট ছোট ঢেউগুলো গুণতে থাকার ছেলেমানুষী............অথবা ডাকাতিয়া-মেঘনার মোহনায় সেই ভয়ংকর ঘূর্ণি দেখা, যা কিনা প্রতিবছর পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়......
এরপরে যে আরো কত যাওয়া হলো, আসা হলো...বার বার , অনেক বার ......যেন আমার জীবনের প্রতিটি সময়ের, প্রতিটি ক্ষণের সাক্ষী তুমি, আমার মেঘনা।
এই তো গেল বার আয়োজন করে দেখতে গিয়েছি তোমার শেষ সীমানা, তখন তোমার জোয়ারের সময়, কি যে ভাল লাগছিল যখন মোহনা থেকে তিরতির করে পানি কাটা খালে উল্টোস্রোতে ঢুকছিল......
আমার মেঘনা, তুমি কি জানো এক বিশাল আয়োজন চলছে তোমাকে নিয়ে, আর কিছুদিন পর তোমাকে আমরা নতুন আরেক রূপে দেখবো, যা তুমি এখন ভাবতেই পারছো না???? কি ভয়ংকর সেই রূপ !!! শীতকালে আর চরায় লঞ্চ আটকাবে কি, লঞ্চই চলবে না তোমার বুকের উপর, চৈত্রের প্রচন্ড দাবদাহে তুমি একফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করবে......বর্ষায় আবার হঠাৎ প্রচন্ড স্রোতে দু'কূল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে......
তোমার চৈত্রের সেই বুক ফাঁটা কান্না শোনার জন্য আমি আমার কানকে প্রস্তুত করছি, তোমার সেই টুকরো টুকরো করে ফেটে যাওয়া মাটির সেই রূঢ় শৈল্পিকতা দেখার জন্য আমি আমার চোখকে এখন থেকে সইয়ে নিচ্ছি। যেন আমার বুক না কাঁপে, আমি যেন সেই কান্না শুনতে না পাই, আমার যেন চোখ বুজতে না হয়.........
[ছবিগুলো নেটে পাওয়া]