প্রবল পরাক্রমশালী মুঘল বাদশাহ আকবরের সম্মুখে বারভূঁইয়াদের প্রতিরোধ, কিংবা আলীবর্দী খানের হিন্দু তস্কর মারাঠা বাহিনীকে বিতাড়ন আজো আমাদের প্রেরণা যোগায়। এজন্য ইতিহাসে বাংলার একটি অনন্য অবস্থান রয়েছে আর তা হলো বাংলা চিরস্বাধীন। এই বাংলাদেশের ঢাকা শহরেই মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, যার তৎপরতায় ১৯শ’ সাতচল্লিশে মুসলিমদের স্বাধীন ভূমি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উদ্ভব হয়েছে। অর্থাৎ বাঙালি মুসলিম অপরের স্বাধীনতাও দিতে জানে। এর ফলশ্রুতিতেই একাত্তর এসেছে। পক্ষান্তরে হিন্দু বাঙালিরা হলো সম্পূর্ণ উল্টো!
বাংলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর আগে এখানের বাসিন্দা ছিলো বৌদ্ধরা। যালিম বৌদ্ধ পাল রাজাদের উৎখাতের পর আসে আরেক যালিম হিন্দু সেন রাজারা, যারা দক্ষিণভারতীয় অবাঙালি ছিলো। তারা ব্রাহ্মণ্যবাদ তথা হিন্দুধর্ম প্রচারের জন্য উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্রাহ্মণদের এনে তৎকালীন গৌড়ে ব্রাহ্মণবসতি স্থাপন করে। অর্থাৎ বাঙালি হিন্দুর জন্ম হয়েছিলো বিদেশীদের গোলাম হিসেবেই। এরপর মুসলিমশাসন প্রতিষ্ঠার পর তারা বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের আনুগত্য স্বীকার করলেও ভিতরে ভিতরে সর্বদা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো, কিভাবে মুসলিমশাসনের অবসান ঘটানো যায়। পলাশীর যুদ্ধের পর তারা ইংরেজদের লেজুড়বৃত্তি শুরু করলো। যেসব হিন্দু জমিদাররা মুসলিম রাজা-বাদশাহদের ক্যাশিয়ার কিংবা ট্যাক্স আদায়কারী কর্মচারী ছিলো তারাই ছিলো পলাশী ষড়যন্ত্রের হোতা।
বাম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, গোঁড়া হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদী উগ্র গোষ্ঠীরা একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে ইতিহাসকে নিজেদের ফায়দা হাছিলের জন্য ব্যবহার করে থাকে- যা আমরা সবসময়ই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাংলার স্বাধীনতা, বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার ইতিহাস বহু শতাব্দীর মুসলিমচেতনারই ফসল। এই চেতনার উৎস বখতিয়ার খলজী, ঈশা খাঁ, মজনু শাহ, হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত তিতুমীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা। বাঙালি মুসলিমগণ উনাদের উত্তরসূরী।
অর্থাৎ একাত্তরের স্বাধীনতার যে প্রেরণা তা কিন্তু হঠাৎ করে আসেনি।