somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুদের জন্য চলো গড়ি রঙিন শৈশব

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত শতাব্দীর আশির দশকে যাদের জন্ম, তাদের শৈশবটা মনে হয় অনেকটাই অন্যরকম কেটেছে। বিশ্বের রাজনীতি টালমাটাল থাকলেও শিশুদের জন্য এবং নানা বয়সী সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো এক আশীর্বাদের নাম। রাদুগা ও প্রগতি প্রকাশন হাজার হাজার মানসম্পন্ন বই নিজেদের অর্থে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করে বিভিন্ন দেশে তা নামমাত্র বা বিনামূল্যে সরবরাহ করতো।

সেই সময় মজার মজার সব ছবি আর গল্পের বই পড়ে শৈশব কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে আশির দশকের শিশুদের।

কিন্তু ১৯৯১-এ যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়, সেই স্বপ্নের রথও থেমে যায়।

(আজো আমার চারপাশের মানুষদের লক্ষ্য করলে প্রগতির বই পড়ে বড় হওয়া মানুষদেরকে প্রগতির বই না পড়ে বড় হওয়া মানুষদের কাছ থেকে তাদের মন-মানসিকতা বা বিশ্লেষন করার প্রবণতা থেকে অনেকটাই পার্থক্য করতে পারি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ায় এদেশের সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখা মানুষদের রাজনৈতিক ভাবে যতটুকু না ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হয়েছে এদেশের শিশুদের।

শিশুদের বই যে শক্ত-পোক্ত, রঙীন এবং আকর্ষনীয় হতে হবে তাও এদেশে কেউ বিশেষভাবে ভাবেন না। যা পাওয়া গিয়েছিল তা সব ঐ প্রগতি থেকে। শিশুদের বই যে বেশী দামী হওয়া চলবে না তা এই বৈশ্যযুগে কে কাকে বোঝাবে?

এখন বাজার দখল করেছে ডিজনীর বইয়ের অখাদ্য অনুবাদ, ডোরেমনের মতো শিশুদের ধূর্ত বানাবার কৌশল, নানা প্রকল্পের টাকা হালাল করার জন্য এনজিওদের বের করা নিম্নমানের শিশুতোষ বই, নিম্নমানের অনুবাদ করা কমিক, বটতলার ছাপা নিউজপ্রিন্টের অদ্ভুত ভাষার রূপকথার বইয়ে।

এসব বইয়ের কাগজ, ছাপা, বাঁধাই, রঙই শুধু খারাপ না, এদের ভাষা, বর্ননারীতি, প্রকাশভঙ্গীও শিশুদের অনুপযুক্ত। কিছু কিছু দেশী প্রকাশনী ভালো শিশুতোষ বই বের করে বটে, তবে তা সংখ্যায় খুব অল্প, বেশ দামী এবং একুশের বইমেলা শেষ হবার পর তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না।

তাই শিশুদের মধ্যে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো ভায়োলেন্সপূর্ণ কার্টুন বা অ্যানিমেশন মুভি জনপ্রিয়। তাদের মনোযোগ নতুন নতুন গেমের প্রতি যেগুলোকে ঠিক শিশুতোষ বলার উপায় নেই।

ফলে শিশুরা ধীরে ধীরে বইবিমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর গর্ব করার মত বিষয়ে তারা অজ্ঞ থেকে যাচ্ছে। শিশুতোষ বইয়ের অভাবে বাবা-মারাও শিশুদের ভিডিও গেম, মোবাইল গেম দেয়া ছাড়া উপায় দেখেন না। শিশুরা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে একথা বলব না, বরং তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।



ডালিমকুমার, কঙ্কাবতী, লালকমল-নীলকমল, পান্তাবুড়ি, চালাক জোলা, ধূর্ত শেয়াল আর বোকা কুমিরদের জায়গা দখল করেছে মিকি, মিনি, গুফি, নডি, পুহ, ডোরেমন আর লায়ন কিং-রা। এই শিশুরা যখন বড় হবে তখন নিজেদের অতীতের দিকে তাকালে দেখতে পাবে ধার করা সব জিনিষে তা ভরা। নিজেদের ঐতিহ্য ততদিনে জাদুঘরে ঠাঁই পাবে।)

কিন্তু এভাবে কি চলতে দেয়া যায়? বিশ্বায়নের এই যুগে একটি শিশুরও অধিকার আছে বিশ্বের অপর প্রান্তে অন্য শিশুদের রূপকথা, উপকথা, লোককথা জানার। সব ঘুমপাড়ানি গল্পই যেনো কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি না হয়ে যায়।

২০১৫ সালে রং পেনসিল নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা এমনই একটা স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছে। সোভিয়েত আমলের সেই ভুলে যাওয়া, আউট অব প্রিন্ট শিশু সাহিত্যগুলোকে আবার বাজারে নিয়ে আসছে একদল যুবক-যুবতী।

১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে, তখন আনাড়ির কাণ্ডকারখানা নামে শিশুদের একটি ৩০ পর্বের সিরিজ প্রকাশিত হচ্ছিলো। কিন্তু সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ায় ১৭ পর্ব প্রকাশিত হয়েই তা বন্ধ হয়ে যায়। রং পেনসিল পূর্বপ্রকাশিত সেই ১৭ পর্ব পুনঃপ্রকাশের পাশাপাশি প্রকাশ না হওয়া ১৩ পর্বও বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। আর এই কর্মযজ্ঞে তাদের সাথে আছেন বিখ্যাত অনুবাদক, একদা সেবা প্রকাশনীর কিশোর ক্ল্যাসিকের জনপ্রিয় নিয়াজ মোরশেদ।

রং পেনসিল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিশ্বের সবগুলো দেশের এবং দেশের সবগুলো নৃগোষ্ঠীর লোককথা, রূপকথা ও শিশুসাহিত্য বাংলাদেশের সব শিশুদের উপযোগী করে প্রকাশ করার।

এই কর্মযজ্ঞে সামিল হোন। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এখন 'আনাড়ির কাণ্ডকারখানা' সিরিজের ১০টি পর্ব পাওয়া যাচ্ছে 'জনান্তিক'-এর স্টলে। বাকি পর্বগুলোও বের হলো বলে। নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন। চলুন সবাই মিলে সেই হারানো শৈশব আবারও ফিরিয়ে আনি।

রং পেনসিল-এর সাথে যোগাযোগ রাখুন http://www.facebook.com/rangpencilpage এই পেজের মাধ্যমে।

(ব্রাকেটযুক্ত অংশটুকু সহমনা Click This Link ব্লগপোস্ট থেকে আংশিক সম্পাদনাসহ কপি করা। ২০০৮ সালের সেই ব্লগে লেখক তার মনের কথা তুলে ধরেছেন। আরো ৮ বছরে পেরিয়ে গেছে, পরিস্থিতিও পালটেছে। তবে সেই পালটানো ভালো নয়, সম্ভবত খারাপের দিকেই।)


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×