আবার রাজাদা। বহুদিন পর আবার আপনাদের পাড়ার রাজাদার আবির্ভাব। দীর্ঘদিন রাজাদা কোথায় ছিলেন বহুবার জিজ্ঞেস করে ও তা জানা যায়নি।
এবার রাজাদা গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। যে সে ডাক্তার নয়, না কোনো এলোপাথারি ডাক্তার নয় এই ডাক্তার হোমিওফাঁকি ডাক্তার। কোলকাতার নামকরা ডাক্তার, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পীড়িত মানুষ আসেন এই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। বিদেশ থেকেও প্রচুর মানুষজন এই ডাক্তারকে দেখাতে আসেন। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান থেকেতো আসেনই, আসেন শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ইত্যাদি জায়গা থেকেও।
মুস্কিল হচ্ছে এই ডাক্তারবাবু দিনে প্রথম নাম লেখানো দশ-বারোজন পীড়িত মানুষের সঙ্গেই কথা বলেন, তারপর তাঁর জুনিয়র ডাক্তার দেখেন । তিনিও দশ-বারোজনকেই দেখেন, তারপর তাঁর জুনিয়র ডাক্তার (ম্যাডাম) দেখেন বাঁকী পীড়িতদের। আর আছে সদ্য পাশ করে আসা নতুন ডাক্তার বাবুরা। তারা বাকী সব রোগীদের দেখেন কিন্তু কোনো ফি'স নেননা।
তা'হলে বুঝতেই পারছেন বড় ডাক্তারবাবুর দেখা পেতে গেলে আগের দিন রাত থাকতে নাম লেখাতে হবে, প্রথম দশে নাম লেখানো আর লটারী পাওয়া একই ব্যাপার। দ্বিতীয় জুনিয়র ডাক্তারবাবুর দেখা পেতে গেলেও ওই একই ব্যাপার। ম্যাডাম বা অন্যান্য ডাক্তারকে দেখাতে গেলেও আপনাকে রাত থেকেই নাম লেখাতে হবে। নইলে আপনার নাম আসবে বিকেলে বা সন্ধ্যে বেলায়। সারাদিন না খেয়ে-দেয়ে থাকুন লাইনে।
রাজাদা আমাকে খবর পাঠালেন, ভীষণ জরুরী এখ্খনই আইয়া পরো। আমি তড়িঘড়ি কাজ ফেলে চলে এলাম রাজাদার বাড়ীতে। জানেনতো আমি আবার রাজাদার ভীষণ ভক্ত।
রাজাদা বললেন - 'ক' ডাক্তাররে দেখামু, রাত্তির বেলা গিয়া লাইনে খাড়াইতে হইব, ব্যবস্থা করো। আমি বললাম, সেরেছেরে, 'ক' বা 'খ' ডাক্তারকে দেখানো আর লাখ-টাকার লটারী একই ব্যাপার।
অতশত বুঝিনা, 'ক' ডাক্তাররে দেখামু কইছি আমি হেরেই দেখামু।
একটা রেডিও ট্যাক্সি বলে দিলাম, রাত দু'টো-দশে বাড়ীর সামনে চলে আসবে, ডাক্তারের বাড়ী যেতে দশ মিনিট, লাইনে দাড়াতে দাড়াতে রাত আড়াইটে, আমি রাজারদাকে বললুম - হবেতো।রাজাদা বললেন খুব হইবো। রাত আড়াইটাতে গিয়ে আমি আর রাজাদা পনেরো-নম্বরে দাড়ালাম।
লাইনে আমি দাড়িয়ে, সকাল ন'টায় চেম্বার খুলবে, ততক্ষণ লাইনে থাকো। আমি রাজাদাকে বললাম আপনি বাড়ী চলে যান, সকাল ন'টা নাগাদ আপনি চলে আসবেন।
তরে একা ফালাইয়া আমি যামুনা।
হঠাৎই একজন কোথা থেকে এসে একজন বললেন আপনারা যারা লাইনে দাড়িয়ে এই খাতায় সিরিয়ালি নাম লিখে দিন, সকাল ন'টায় চলে আসবেন । আমরা নাম লিখে দিলাম। ততক্ষণে লাইনে প্রায় ষাটজন লোক দাড়িয়ে।
বাইচা গেলাম, চল বাড়ী যাইয়া একটু ঘুমাইয়া লই, ন'টার সময় আসুমনে।নাম লিখে নিশ্চিন্ত মনে আমরা বাড়ী চলে এলাম। সকাল সাড়ে আটটায় আবার ট্যাক্সি নিয়ে চলে এলাম। ওমা, এসে দেখি কিসের নাম লেখানো, সকাল ন'টায় চেম্বার খোলার আগে যারা লাইনে থাকবেন তারাই প্রথম ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ডাক্তারকে দেখাতে পারবেন।নাম লেখানোটা স্থানীয় দালালদের কারসাজি। আমরা ঠকে গেলাম। সকাল ন'টায় রাজাদার সিরিয়াল এলো সাতাত্তর নম্বরে।'ক' এবং 'খ' ডাক্তারের কুড়ি জন বাদ দিলে সাতান্ন নম্বরে। দেখবেন ম্যাডাম ডাক্তার।
ঠান্ডা অপেক্ষা ঘরে বসে আমি ঝিমুচ্ছি।রাজাদা এর ওর সঙ্গে কথা বলছেন।এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এলেন তিনজন। যেহেতু তারা ভিন-দেশের, তাদের নাম আগে চলে যাবে, তারা আগে দেখাতে পারবেন। রাজাদা চলে এলেন ষাট নম্বরে। আসাম থেকে এলেন দু'জন- রাজাদা বাষট্টি নম্বরে।আমি চা খাচ্ছি আর ঝিমুচ্ছি।একজন এলেন যার ইমার্জেন্সি কেস - রাজাদা তেষট্টিতে। আর ও দু'জন এলেন, তারাও ইমার্জেন্সি - রাজাদা পয়ষট্টি। বাংলাদেশ থেকে আর ও দু'জন - রাজাদা সাতষট্টি। বাংলাদেশ থেকে আর ও তিনজন - রাজাদা সত্তুর।আমি বাইরে গিয়ে একটা সিগারেটে টান দিতে দিতে ভাবলাম -স্থানীয় দালালের খোঁজ করলে কেমন হয় - কিন্তু হালে পানি পেলাম না। আবার ভেতরে এসে ঠান্ডা ঘরে বসে আছি। বাংলাদেশের তিনজন ডাক্তার দেখিয়ে এলেন।ওষুধ নেবার জন্য অপেক্ষা করছেন।রাজাদা তাঁদের সঙ্গে গল্প জুরে দিলেন।
তিনজনের দু'জন ভাই-ভাই। একজন তাদের বন্ধু। তিনজনই অত্যন্ত সজ্জন এবং রুচিশীল। তিনজনই থাকেন যশোহরে। গাড়ী ইমপোর্টের ব্যবসা। আছে টয়োটা গাড়ীর শো-রুম।ব্যাটারী চালিত অটো'র শো-রুম আছে ঢাকাতে একটি। যিনি বন্ধু-তিনি বাংলাদেশের তৈরী পোষাক ভারতে রপ্তানি করেন।প্রত্যেকের কাছে দু'টো করে এ্যাপল মোবাইল।ব্যাগে ল্যাপটপ। হাতে দামী বিদেশী সিগারেট। ভাই দু'জনের চোখে রিমলেশ সোনার চশমা।বন্ধুর চোখে রে-ব্যানের দামী রোদ চশমা। আমরা যারা সাধারণ রোগী ঠিক তাদের মতই সাধারণ ভাবে বসে আছেন, কোনো অহংকার নেই, অত্যন্ত বিনয়ী। আমার খুব ভালো লাগলো এদের ব্যবাহার। আমি বসে বসে এদের কথা ভাবছি - হঠাৎই একজন ধুপ করে পড়ে গেলেন - হই চই চেচামেচি- ম্যাডাম এলেন - দেখলেন - বললেন - হার্ট ব্লক - এক্ষুণি হাসপাতালে নিতে হবে, তাদের এ্যাম্বুলেন্স করে পাঠিয়েও দেওয়া হলো। রাজাদা ঊনসত্তুর। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের তিনজনের ওষুধ চলে এসছে, তাঁরা যাবার আগে শুভেচ্ছো বিনিময় করলেন- বললেন আজ রাতের 'বিমান'-এ তাঁরা ব্যবসার কাজে দিল্লী যাবেন।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙ্গলো, বিকেল গড়িয়ে গেছে। রাজাদা আর তিনজনের পরে।
রাজাদা শেষ পর্যন্ত ডাক্তার দেখালেন। রাজাদার পরে আর কেউ ছিল কিনা খোঁজ করিনি। সন্ধ্যে বেলায় আমরা বাড়ী ফেরার ট্যাক্সি নিলাম। সারাটাদিন কিভাবে কাটলো ভাবতে ভাবতে আমি ট্যাক্সিতে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
আবার রাজাদা। বহুদিন পর আবার আপনাদের পাড়ার রাজাদার আবির্ভাব। দীর্ঘদিন রাজাদা কোথায় ছিলেন বহুবার জিজ্ঞেস করে ও তা জানা যায়নি।
এবার রাজাদা গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। যে সে ডাক্তার নয়, না কোনো এলোপাথারি ডাক্তার নয় এই ডাক্তার হোমিওফাঁকি ডাক্তার। কোলকাতার নামকরা ডাক্তার, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পীড়িত মানুষ আসেন এই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। বিদেশ থেকেও প্রচুর মানুষজন এই ডাক্তারকে দেখাতে আসেন। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান থেকেতো আসেনই, আসেন শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ইত্যাদি জায়গা থেকেও।
মুস্কিল হচ্ছে এই ডাক্তারবাবু দিনে প্রথম নাম লেখানো দশ-বারোজন পীড়িত মানুষের সঙ্গেই কথা বলেন, তারপর তাঁর জুনিয়র ডাক্তার দেখেন । তিনিও দশ-বারোজনকেই দেখেন, তারপর তাঁর জুনিয়র ডাক্তার (ম্যাডাম) দেখেন বাঁকী পীড়িতদের। আর আছে সদ্য পাশ করে আসা নতুন ডাক্তার বাবুরা। তারা বাকী সব রোগীদের দেখেন কিন্তু কোনো ফি'স নেননা।
তা'হলে বুঝতেই পারছেন বড় ডাক্তারবাবুর দেখা পেতে গেলে আগের দিন রাত থাকতে নাম লেখাতে হবে, প্রথম দশে নাম লেখানো আর লটারী পাওয়া একই ব্যাপার। দ্বিতীয় জুনিয়র ডাক্তারবাবুর দেখা পেতে গেলেও ওই একই ব্যাপার। ম্যাডাম বা অন্যান্য ডাক্তারকে দেখাতে গেলেও আপনাকে রাত থেকেই নাম লেখাতে হবে। নইলে আপনার নাম আসবে বিকেলে বা সন্ধ্যে বেলায়। সারাদিন না খেয়ে-দেয়ে থাকুন লাইনে।
রাজাদা আমাকে খবর পাঠালেন, ভীষণ জরুরী এখ্খনই আইয়া পরো। আমি তড়িঘড়ি কাজ ফেলে চলে এলাম রাজাদার বাড়ীতে। জানেনতো আমি আবার রাজাদার ভীষণ ভক্ত।
রাজাদা বললেন - 'ক' ডাক্তাররে দেখামু, রাত্তির বেলা গিয়া লাইনে খাড়াইতে হইব, ব্যবস্থা করো। আমি বললাম, সেরেছেরে, 'ক' বা 'খ' ডাক্তারকে দেখানো আর লাখ-টাকার লটারী একই ব্যাপার।
অতশত বুঝিনা, 'ক' ডাক্তাররে দেখামু কইছি আমি হেরেই দেখামু।
একটা রেডিও ট্যাক্সি বলে দিলাম, রাত দু'টো-দশে বাড়ীর সামনে চলে আসবে, ডাক্তারের বাড়ী যেতে দশ মিনিট, লাইনে দাড়াতে দাড়াতে রাত আড়াইটে, আমি রাজারদাকে বললুম - হবেতো।রাজাদা বললেন খুব হইবো। রাত আড়াইটাতে গিয়ে আমি আর রাজাদা পনেরো-নম্বরে দাড়ালাম।
লাইনে আমি দাড়িয়ে, সকাল ন'টায় চেম্বার খুলবে, ততক্ষণ লাইনে থাকো। আমি রাজাদাকে বললাম আপনি বাড়ী চলে যান, সকাল ন'টা নাগাদ আপনি চলে আসবেন।
তরে একা ফালাইয়া আমি যামুনা।
হঠাৎই একজন কোথা থেকে এসে একজন বললেন আপনারা যারা লাইনে দাড়িয়ে এই খাতায় সিরিয়ালি নাম লিখে দিন, সকাল ন'টায় চলে আসবেন । আমরা নাম লিখে দিলাম। ততক্ষণে লাইনে প্রায় ষাটজন লোক দাড়িয়ে।
বাইচা গেলাম, চল বাড়ী যাইয়া একটু ঘুমাইয়া লই, ন'টার সময় আসুমনে।নাম লিখে নিশ্চিন্ত মনে আমরা বাড়ী চলে এলাম। সকাল সাড়ে আটটায় আবার ট্যাক্সি নিয়ে চলে এলাম। ওমা, এসে দেখি কিসের নাম লেখানো, সকাল ন'টায় চেম্বার খোলার আগে যারা লাইনে থাকবেন তারাই প্রথম ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ডাক্তারকে দেখাতে পারবেন।নাম লেখানোটা স্থানীয় দালালদের কারসাজি। আমরা ঠকে গেলাম। সকাল ন'টায় রাজাদার সিরিয়াল এলো সাতাত্তর নম্বরে।'ক' এবং 'খ' ডাক্তারের কুড়ি জন বাদ দিলে সাতান্ন নম্বরে। দেখবেন ম্যাডাম ডাক্তার।
ঠান্ডা অপেক্ষা ঘরে বসে আমি ঝিমুচ্ছি।রাজাদা এর ওর সঙ্গে কথা বলছেন।এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এলেন তিনজন। যেহেতু তারা ভিন-দেশের, তাদের নাম আগে চলে যাবে, তারা আগে দেখাতে পারবেন। রাজাদা চলে এলেন ষাট নম্বরে। আসাম থেকে এলেন দু'জন- রাজাদা বাষট্টি নম্বরে।আমি চা খাচ্ছি আর ঝিমুচ্ছি।একজন এলেন যার ইমার্জেন্সি কেস - রাজাদা তেষট্টিতে। আর ও দু'জন এলেন, তারাও ইমার্জেন্সি - রাজাদা পয়ষট্টি। বাংলাদেশ থেকে আর ও দু'জন - রাজাদা সাতষট্টি। বাংলাদেশ থেকে আর ও তিনজন - রাজাদা সত্তুর।আমি বাইরে গিয়ে একটা সিগারেটে টান দিতে দিতে ভাবলাম -স্থানীয় দালালের খোঁজ করলে কেমন হয় - কিন্তু হালে পানি পেলাম না। আবার ভেতরে এসে ঠান্ডা ঘরে বসে আছি। বাংলাদেশের তিনজন ডাক্তার দেখিয়ে এলেন।ওষুধ নেবার জন্য অপেক্ষা করছেন।রাজাদা তাঁদের সঙ্গে গল্প জুরে দিলেন।
তিনজনের দু'জন ভাই-ভাই। একজন তাদের বন্ধু। তিনজনই অত্যন্ত সজ্জন এবং রুচিশীল। তিনজনই থাকেন যশোহরে। গাড়ী ইমপোর্টের ব্যবসা। আছে টয়োটা গাড়ীর শো-রুম।ব্যাটারী চালিত অটো'র শো-রুম আছে ঢাকাতে একটি। যিনি বন্ধু-তিনি বাংলাদেশের তৈরী পোষাক ভারতে রপ্তানি করেন।প্রত্যেকের কাছে দু'টো করে এ্যাপল মোবাইল।ব্যাগে ল্যাপটপ। হাতে দামী বিদেশী সিগারেট। ভাই দু'জনের চোখে রিমলেশ সোনার চশমা।বন্ধুর চোখে রে-ব্যানের দামী রোদ চশমা। আমরা যারা সাধারণ রোগী ঠিক তাদের মতই সাধারণ ভাবে বসে আছেন, কোনো অহংকার নেই, অত্যন্ত বিনয়ী। আমার খুব ভালো লাগলো এদের ব্যবাহার। আমি বসে বসে এদের কথা ভাবছি - হঠাৎই একজন ধুপ করে পড়ে গেলেন - হই চই চেচামেচি- ম্যাডাম এলেন - দেখলেন - বললেন - হার্ট ব্লক - এক্ষুণি হাসপাতালে নিতে হবে, তাদের এ্যাম্বুলেন্স করে পাঠিয়েও দেওয়া হলো। রাজাদা ঊনসত্তুর। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের তিনজনের ওষুধ চলে এসছে, তাঁরা যাবার আগে শুভেচ্ছো বিনিময় করলেন- বললেন আজ রাতের 'বিমান'-এ তাঁরা ব্যবসার কাজে দিল্লী যাবেন।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙ্গলো, বিকেল গড়িয়ে গেছে। রাজাদা আর তিনজনের পরে।
রাজাদা শেষ পর্যন্ত ডাক্তার দেখালেন। রাজাদার পরে আর কেউ ছিল কিনা খোঁজ করিনি। সন্ধ্যে বেলায় আমরা বাড়ী ফেরার ট্যাক্সি নিলাম। সারাটাদিন কিভাবে কাটলো ভাবতে ভাবতে আমি ট্যাক্সিতে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।