একদিন রোববার সকালে স্বপন এসে বললো, সিগারেট খাবি? সিগারেট তো খাবো কিন্তু পাবো কোথায়? কিনবো কোথা থেকে, কে দেবে? যেখান থেকেই কিনিনা কেন, দোকানদার তো বড়ীতে বলে দেবে।
স্বপন বললো,সেসব আমার ওপর ছেড়ে দে, খাবি কিনা বল? আমরা রাজী হয়ে গেলাম ।
রোববার দিন বন্দরে হাট বসতো । স্বপন হাট থেকে তখনকার দিনের জনপ্রিয় এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিয়ে এল ।
সেদিন বিকেলের খেলা বাদ দিয়ে সঙ্গে লেবু পাতা, ধনে, মৌরী আরো কত কি সব নিয়ে আমরা সব কটা রেল লাইনের ধার ধরে প্রায় দু'কিলোমিটার চলে গেলাম। রেল লাইনের ধারেই একটা পুকুরের পারে নির্জন জায়গা দেখে আমরা জীবনের প্রথম সিগারেট ধরালাম । কাশতে কাশতে জান জায় আরকি? আমাদের মাথা ঘুরে টুরে একাকার।
সিগারেটের পুরো প্যাকেটটা শেষ করে পুকুরের জলে মুখ ভালো করে ধুয়ে লেবু পাতা চিবিয়ে ধনে মুখে দিয়ে সন্ধ্যেবেলা আমরা বাড়ীতে এলাম।
বাড়ীতে আসা মাত্র আর যাই কোথা, ছোটকাকু তৈরী হয়েই ছিলেন। বেতটা পুরো আমার পিঠেই ভেঙ্গে গেল ।
জীবনের প্রথম সিগারেটের টানের অভিজ্ঞতা সুখের হ'লনা।
পরদিন স্কুলে গিয়ে জানতে পারলাম সবারই আমার মতো দশা । সবকটাই বাড়ীতে ধোলাই খেয়েছে । কিন্তু প্রশ্ন হ'লো, বাড়ীতে কে জানালো এবং সবার বাড়ীতেই । সব চেয়ে মুস্কিল হ'লো আমাদের গতিবিধির ওপর বাড়ীর লোক নজর রাখতে শুরু করে দিয়েছে।
শুরু হয়ে গেল আমাদের নিজস্ব তদন্ত । খোঁজ খোঁজ, শেষে আমরা আসল দোষীকে জানতে পারলাম।
রাজাদা সেদিন পাশের শহরে গিয়েছিল। বিকেলের ট্রেনে ফিরছিল। ট্রেনের জানালা দিয়ে আমাদের সিগারেট টানা দেখে ফেলেছিল । তখনতো আমাদের হুশ ছিলনা!
আর আমাদের মতো ভালো ছেলেদের বখে যাওয়া আটকাতে রাজাদা বাড়িতে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। বাড়ীর লোক ভালোই ব্যবস্থা নিয়েছিল সেদিন।
তবে আমরা কেউই জীবনে বখে যাইনি।