মামা যাবেন ঢাকা কমার্স কলেজ? রিক্সা করে যাচ্ছি। রিক্সাচালকের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল মামা আপনার বাসা কোথায় ? আমি উত্তরে বললাম রাজশাহী । রাজশাহী শুনে রিক্সাওয়ালা মামা বললেন আমি রাজশাহীর মানুষ পছন্দ করিনা। রাজশাহীর এক ছেলে আমার বউকে নিয়ে পালিয়ে গেছে !
১২ বছরের সংসার ছিল তাদের। ঘরে দুটি সুন্তান আছে । বিয়ের সময় মেয়ের বয়স ছিল ১৫ এর কম। তার ভাষায় মেয়ে তখনো বাচ্চা। প্রেম ভালোবাসা কিছুই বোঝেনা। তার পরিবারে তার বৌ এর মত সুন্দরী কেউ নাই। যে দেখবে সেই পছন্দ করে ফেলবে।
১২ বছর পর পালিয়ে গেছে এক কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি ড্রাইভারের সাথে। কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি ড্রাইভারের নাম ছোটন ( ছদ্দনাম ) । ছোটনের আরেকটা বউ আছে রাজশাহীতে। রিক্সাচালকের বৌ এর সাথে পরিচয়ের পর প্রেম চলে এবং এক পর্যায়ে পালিয়ে যাই ।
ছোটন মেয়েটিকে এখনো বিয়ে করেনি। ঢাকার একটা বাসায় একাই থাকে মেয়ে । ছোটন সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা পাঠায় সেই টাকাতেই চলে মেয়েটির খরচ। মাঝে মাঝে সে আসে, মেয়েটির সাথে মজা করে, মাস্তি করে, রাত কাটায় কিন্তু বিয়ে করেনা।
একবার মেয়েটিকে পেয়েছিল রিক্সাওয়ালা। তাকে ধরে নিয়ে এসে রেখেছিল বাসায়। তখনো ডিভোর্স হয়নি তাদের। দুজন আগের মতই সুখের সাগরে হারিয়ে গিয়েছিল এক রাতের জন্য। কিন্তু সকাল গড়াতেই মেয়েটি আবারো পালিয়ে যায় ছোটনের কাছে। এর এক সপ্তাহ পরে মেয়েটি রিক্সাচালককে ডিভোর্স লেটার দেয় এবং ডিভোর্স হয়।
রিকশাচালককে মেয়েটি প্রায় ফোন দেয় আর তার সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করে। সে বলে “সন্তান” দিয়ে দিয়েছি অন্যের কাছে। মরে গেছে। তুই পালাইছোস, যেখানে আসোস থাক, আমার সন্তানদের খবর নেওয়া লাগবেনা !
আমি জিজ্ঞেস করলাম মামা আপনি চাইলে তো আরো এক রাত কাটাতে পারেন মেয়েটির সাথে ।
জবাবে মামা বললঃ সেইটা অবৈধ কেননা এর আগে আমাদের ডিভোর্স হয়নি কিন্তু এখন ডিভোর্স হয়ে গেছে। তার এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। যেখানে মানুষের মাংসের গন্ধে মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে সেখানে এই রিক্সাওয়ালার নীতি কতটাই শক্ত এখনো । অথচ মেয়েটি ডিভোর্স হওয়ার আগেই অন্যের কাছে চলে গেছে। জড়িয়ে গেছে অবৈধ সম্পর্কে ।
তবে মেয়েটি স্বামীর ঘরে থেকে পরক্রিয়া করেনি বরং চলে গেছে যাকে সে ভালবাসে তার কাছে। এক সাথে দুটি অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়নি সে। রিক্সাওয়ালা বলে মেয়েটি একদিন পস্তাবে কেননা ছোটন সুধুই তাকে ব্যবহার করছে।
যেদিন ব্যবিহার শেষ হবে সেদিন ছুড়ে ফেলে দিবে। সেদিন আর উপায় থাকবেনা । ১৫ বছর বয়সে মেয়েটি ভালবাসার হয়তো কিছুই বুঝতোনা তাই রিক্সাওয়ালাকে বিয়ে করেছিল পরিবারের চাপেই। আজ ২৭ বছর বয়সে যখন সে ভালবাসা বুঝে তখনো মাথার ঘেলুটাকে না খাটিয়ে চলে গেছে অনিরাপদ যায়গায় । ভালবাসা মানেনা বাধা কিন্তু ঘেলুটাকে চালু রাখলে ভালবাসায় হয় চিরজীবনের সঙ্গী।
রিক্সাচালক মামা রেগেই বললেন দুনোটায় খারাপ নয়তো এক যায়গায় বৌ আছে তবুও কেন আরেক যাইগায় আরেক মেয়েকে ব্যবহার করবে তাও বিয়ে করা ছাড়া আর মেয়েটিও খারাপ নয়তো জেনে শুনে এমন ছেলে কেন বেছে নিবে।
আমার মাথায় সুধু প্রশ্ন ঘুরছে “মা” শব্দটা আজ কোথায় ? মেয়েরা সন্তানের জন্য স্বামীকে ছাড়তে পারে কিন্তু ২৭ বছরের একটি মেয়ে দুটি সন্তান ছেড়ে কিভাবে চলে গেল ? একবারও সে তার সন্তানের কথা ভাবলোনা ? এটা কিভাবে সম্ভব ? নিজের পেটে জন্ম দেওয়া সন্তানের প্রতি এমন অবহেলা আমি এই প্রথম দেখলাম বাস্তবে।
গন্তব্যে চলে এসেছি। মামাকে ভাড়া দিয়ে হাটছি আর ভাবছি। কিন্তু কিছুতেই মেলাতে পারছিনা সেই “মা” নামে ছদ্দবেশী ২৭ বছরের মেয়েটার কথা। হয়তো রিক্সাওয়ালার থেকে টাকা বেশী ড্রাইভারের কিন্তু সুখ তো টাকা দিয়ে কেনা যায়না কিংবা সন্তানের প্রতি ভালবাসা তো টাকা দিয়ে কেনা যায়না তাহলে কিভাবে পারল সে ?
মেলেনা অংক আমার মেলেনা...ভালবাসা বড়ই অদ্ভুত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৫০