কলেজের চাপে প্রতিদিন সকাল ৭ টার ভিতর উঠে যেতে হয় রক্তিমকে। ৮ টা থেকে ক্লাস। একদম ৮ টায় কলেজের গেট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কলেজে প্রবেশের আর সুজগ নেই।
মেসে থাকে রক্তিম। মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়, মা কল দিয়ে জাগিয়ে দেয় প্রতিদিন। ঘুম থেকে উঠেই দুটো ডিম সিদ্ধ করতে দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নেয়। কিন্তু আজ কেন জানি আরেকটু ঘুমোতে ইচ্ছা করছে। বিছানায় শুতেই ঘুম নেমে এলো। ৮ টা বেজে পার, ডিমটাও বাস্ট হয়ে পুড়ে গেছে। ৮.৩৭ এ রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গে কড়া ডিম পুড়া গন্ধে।
কলেজের গেটের সামনে এসে দেখে দাড়োয়ান নেই। ভিতরে ঢুকেই দাড়োয়ানের অগোচরে সোজা চলে যায় ক্লাস রুমে। ততক্ষণে প্রথম ক্লাস শেষ হয়ে দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ক্লাসে ঢুকার অনুমতি না পেয়ে বাসায় ফিরে আসে সে। পরদিন তার অভিভাবক ডাকা হয়। অভিভাবক থাকে অনেকদূরে। ৫ ঘন্টার বাস জার্নি কিন্তু তা শুনতে রাজি নয় স্যার।
রক্তিম সত্য কথা বলে সবসময় কিন্তু কেন যে স্যার সেদিন রক্তিমের কথা বিশ্বাস করেনি সেটা বুঝে উঠতে পারেনা সে। টার অভিভাবককে সব বলা হলে তিনি বলেন আমি সব জানি কিন্তু রক্তিম এগুলো ইচ্ছা করে করেনি। রক্তিমের রুমমেটরা অত সকালে উঠেনা কিন্তু রক্তিম যে মিথ্যা বলেনি সে বিষয়ে তারাও কথা বলেছে কিন্তু স্যার এত কিছু শুনতে চাননা। তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল।
রক্তিমের কোন দোষ নেই কিন্তু সম্ভবত তার উপর স্যার ক্ষ্যাপা কারন একবার সে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গেছিলো যে ছুটি তার স্যার গ্রহণ না করলেও ভাইস প্রিন্সিপালের জন্য গ্রহণ তাঁকে করতেই হয়েছিল। সেখানেও সব প্রমাণ সঠিক ছিল কিন্তু স্যারের বক্তব্য তুমি অবৈধ কাজ করেছো ভাইস প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে। কথাটা রক্তিমের পছন্দ হয়নি তাই সে স্যারকে বলেছিল এটা অবৈধ কিভাবে ? এ প্রশ্নের জবাব স্যার রক্তিমকে দেয়নি।
রক্তিমের মা স্যারের কাছে পা ধরে রক্তিমকে মাফ চাইতে বলে তার ভুলের জন্য কিন্তু রক্তিম কিছুটা বিচলিত হয়ে যায়। সে কখনো কারো সামনে মাথা নত করেনা এক আল্লাহ্ ব্যাতীত আর সে নিজের কোন ভুলও খুজে পায়না যার কারনে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
স্যারকে আসতে করে সরি বলে সে । মা-ছেলে স্যারের রুম থেকে চলে আসে। ছেলে মায়ের উপর কিছুটা অভিমান করে কিন্তু পারেনা। মা তো কষ্ট করে ৫ ঘন্টার জার্নি করে এসেছে ছেলেকে দেখতে। মা সব বুঝে যায় আর ছেলের কাছে সরি বলে। সে বলে আব্বু আমি দুঃখিত আমার মুখ থেকে “পা ধরে মাফ চাউ বের হয়ে গেছে” এটা বলা ঠিক হয়নি কিন্তু আমি তোমার ভালো চাই। স্যারই তো। কিছু মনে করোনা।
রক্তিমের রাগ নেই মায়ের উপর তবে অভিমানটা স্যারের উপর। সে ভাবতে থাকে স্যার কি কারনে প্রায় ছেলেকে বিশ্বাস করেনা? স্যারদের চোখের সমনেই তাদের কাছ থেকেই শিক্ষা নিয়ে বড় হয় তবুও ইনারা মাঝে মাঝে আমাদের বিশ্বাস করেনা যদিও এমন কাজ কখনো করিনা যার কারনে বিশ্বাস ভঙ্গ হবে তবুও কিছু দুষ্ট বালকের জন্য অনেক সময় বিশ্বাসীদেরও বিশ্বাস করতে চায়না তারা।
এখন আর রক্তিমের সাথে স্যারের তেমন দেখা হয়না। রক্তিম নিয়মিত ক্লাসে যায়। স্যার একদিন ক্লাসে এসেছিল, রক্তিমের দিকে দু-তিনবার তাকিয়েছিল কিন্তু রক্তিম হাসিমুখে সব আড়াল করে নিয়েছিল। মাঝে মাঝে কারো কারো জ্বর হয় কিন্তু স্যার ছুটি দিতে চাননা। তিনি তার যুক্তি দেখাতে চান কিন্তু অন্যেরা যুক্তি দিলে সেটা তার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
কবে জানিনা তবে এমন মন মানুষিকতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতেই হবে। নয়তো আমাদের শ্রদ্ধা হয়তো কমে যাবে তাদের উপর থেকে যেটা কখনোই কাম্য নয়।