জামাতশিবির দলীয়ভাবে শহীদ মিনারে, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যে গিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না, কারণ তাদের সে অধিকারটুকু নেই। তারা এসবে যেতে পারে না বলে শহীদ মিনারে, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোকে 'ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড, মূর্তি পূজা' ইত্যাদি আখ্যা দেয়। কিন্তু ক্যাম্পাস জীবনে দেখেছি, অনেক শিবির কর্মী নিজনিজ বিভাগের প্রভাতফেরিতে যোগ দিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিতো। তখন কি ধর্ম লঙ্ঘন হতো না!!
আমরা যেসব স্মারক/চিহ্নের মাধ্যমে আমাদের জয়ী হওয়ার ইতিহাস, চেতনা তুলে ধরতে চাই সেসব স্মারক/চিহ্ন জামাতশিবিরের মনে পরাজয়ের পীড়া তৈরি করে। তাই তারা দলগতভাবে এসব ভাস্কর্য/স্মারক/চিহ্ন ভাঙচুর করে। এর পেছনে ধর্মকে তারা স্রেফ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
ইসলাম ধর্মের গোড়াপত্তন যেখানে সেই সৌদি আরবেও অনেক ভাস্কর্য আছে। শুধু সৌদি আরব নয়; ইরাক, ইরান, কাতার, কুয়েতসহ অনেক ইসলামপ্রধান দেশে ভাস্কর্য আছে। তবে হ্যাঁ, ইসলামে মূর্তি পূজা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ঐশ্বরিক শক্তি ভেবে মূর্তির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে পূজা করা আর শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। ভাস্কর্য মানেই মূর্তি নয়। ভাস্কর্যের কাছে কাছে মাথা নত করে কেউ ইবাদত করতে যায় না, আনুগত্য প্রকাশ করতেও যায় না, আমরা এখানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যাই।
২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক নিবন্ধে হুমায়ুন আহমেদ লিখেছিলেন, "আমাদের মহানবী (সা.) কাবা শরীফের ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেয়ালের সব ফ্রেসকো নষ্ট করার কথাও তিনি বললেন। হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ল কাবার মাঝখানের একটি স্তম্ভে। সেখানে ব্রাজেন্টাইন যুগের মাদার মেরীর একটি অপূর্ব ছবি আঁকা। নবীজী (সা.) সেখানে হাত রাখলেন এবং বললেন, 'এই ছবিটা তোমরা নষ্ট করো না।' কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি অসীম মমতা থেকে। মহানবী (সা.) এর ইন্তেকালের পরেও ৬৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ খলিফাদের যুগে কাবা শরীফের মতো পবিত্র স্থানে এই ছবি ছিল, এতে কাবা শরীফের পবিত্রতা ও শালীনতা ক্ষুণ্ণ হয়নি।"
মহানবী (সা.) এর প্রথম জীবনীকার, আরব ইতিহাসবিদ ইবনে আসকারের বই থেকে এই ঘটনাটি তিনি উদ্ধৃত করেছিলেন।
এছাড়া তিনি আরও লিখেছিলেন, "আমরা সবাই জানি হযরত আয়েশা (রা.) নয় বছর বয়সে নবীজী (সা.)এর সহধর্মিনী হন। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতেন। নবীজীর তাতে কোন আপত্তি ছিল না, বরং তিনিও মজা পেতেন এবং কৌতুহল প্রদর্শন করতেন। (মুহাম্মদ আলী আল-সাবুনী, রাওযাইউল বয়ন, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১১৩)"
ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করার জন্য এধরণের অনেক উদাহরণ আছে। শুধু জামাতশিবির এই পার্থক্যকে অস্বীকার করে এবং শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙতে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
তারা আজ যে শহীদ মিনার ভাঙচুর করে সেই শহীদ মিনার প্রথম উদ্বোধন করেছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, শহীদ শফিউরের পিতা মৌলভী মাহবুবুর রহমান।