‘বহু’ ও ‘বহুল’ ঝামেলা করে বিলকুল:
বহু শব্দ কখনও একসঙ্গে আবার কখনও পৃথক বসে। তাই শব্দটি ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। যেমন:
বহুকাল, বহুগুণ, বহুদর্শী, বহুদিন, বহুদূর, বহুপ্রকার, বহুভাষী, বহুমুখী, বহুমূল্য
কিন্তু; বহু লোক, বহু আশা, বহু কষ্ট,
বহু মালপত্র, বহু যন্ত্রণা ইত্যাদি।
তেমনি বহুল শব্দটিও কখনও একসঙ্গে আবার কখনও পৃথক বসে। যেমন:
ঘটনাবহুল, জনবহুল, বিলাসবহুল, ব্যয়বহুল, সঙ্গীতবহুল
কিন্তু; বহুল কথিত, বহুল পরিচিত, বহুল পরিমাণ,
বহুল প্রয়োগ ইত্যাদি।
আগামী ও গত:
‘আগামী’ ও ‘গত’ শব্দের পরের শব্দ সর্বদা পৃথক বসবে। যেমন:
আগামী কাল, আগামী দিন, আগামী পরশু, আগামী বছর, আগামী বার, আগামী মাস,
গত কাল, গত দিন, গত বছর, গত বার,
গত মরশুম, গত রাত, গত মাস,
গত জীবন ইত্যাদি।
‘বিনা’ পৃথক বসে:
‘বিনা’ শব্দটি পরবর্তী সম্পর্কিত শব্দ হতে পৃথক বসবে। যেমন:
বিনা যুদ্ধে, বিনা কষ্টে, বিনা ব্যয়ে
বিনা পরিশ্রমে ইত্যাদি।
নানা/নানান:
‘নানা/নানান’ শব্দ সাধারণত পৃথক বসে। যেমন:
নানা কারণ, নানা অসুবিধে, নানা ঝামেলা,
নানান রকম, নানান জাত ইত্যাদি।
একসঙ্গে জড়াজড়ি/ একযাত্রায় বাঁচি-মরি:
একসঙ্গে, একসাথে, একযাত্রায় শব্দসমূহে ‘এক’ সংখ্যা বোঝায় না;
সহিততত্বের বা সম্মিলনের ধারণা দেয়। তাই এ সকল
শব্দের ‘এক’ কখনও পৃথক বসবে না।
পর যখন পর হয়; কাছে টেনে নিতে হয়:
‘পর’ শব্দের অর্থ যদি /পরের, পরবর্তী, পরকে নিয়ে, অন্য বা ভিন্ন/ বোঝায়
তা হলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দটি পৃথক না বসে একসঙ্গে বসবে। যেমন:
পরকাল, পরজীবী, পরচর্চা, পরদিন, পরধর্ম, পরনারী,
পরনিন্দা, পরপুরুষ, পরবাস, পরলোক
পরবাসী, পরজনম ইত্যাদি।
প্রতি, কাছে রাখুন অতি:
‘প্রতি’ শব্দে যদি ব্যাপ্তি বোঝায়, তা হলে এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী শব্দ পৃথক বসবে না। যেমন:
প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতিবছর, প্রতিবার, প্রতিমাস, প্রতিমুহূর্ত
ছাত্রপ্রতি, জনপ্রতি, লেখাপ্রতি, বছরপ্রতি, বিঘাপ্রতি,
দ্রব্যপ্রতি, বইপ্রতি ইত্যাদি।
‘প্রতি’ শব্দের অর্থ /উদ্দেশ্য বা লক্ষ/ বোঝালে পূর্ববর্তী শব্দ পৃথক বসবে। যেমন:
দেশের প্রতি ভালোবাসা, গরিবের প্রতি দয়া,
ভাষার প্রতি প্রেম ইত্যাদি।
বানানে ই, ঈ, উ, ঊ এর ব্যবহার
১)যেসব তৎসম শব্দের বানানে হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয় স্বর (ই ঈ উ ঊ) শুদ্ধ সে ক্ষেত্রে (তৎসম) এবং অতৎসম (তদ্ভব দেশি বিদেশি মিশ্র) শব্দে হ্রস্ব হয় । যেমন তৎসম শব্দে অঙ্গুরি, অটবি, আশিস,কিংবদন্তি
কুটির, গ্রন্থাবলি, তরণি,শ্রেণি, সরণি, পদবি । অতৎসম শব্দে - আদমি,আপিল, আলমারি, কারিগর, গরিব,দাবি,পড়শি,
বাঁশি, বেআইনি, লটারি,লাইব্রেরি,শিকারি,সবজি, সরকারি,জানুয়ারি, হিজরি ।
২) কয়েকটি স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার
যোগ হবে । যেমন কিশোরী, কল্যাণী, তরুণী, জননী,সতী,দেবী,নারী, পত্নী, বিদুষী, মানবী, লক্ষ্মী,শ্রীমতী, সরস্বতী পিশাচী
৩) ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই-কার হবে । যেমন- বাঙালি, ইংরেজি,আরবি,ফরাসি,ইরাকি, জাপানি,ইতালি, নেপালি ।
তবে 'ঈয়' প্রত্যয় যুক্ত হলে লিখতে হবে - আরবীয় , ইতালীয় , অস্ট্রেলীয় , ফরাসীয় , নেপালীয় , বঙ্গীয় ।
৪) বিশেষণবাচক ''আলি'' প্রত্যয় যুক্ত হলে শব্দে ই-কার হবে । যেমন - মিতালি , চৈতালি , বর্ণালি , সোনালি , রূপালি ,
খেয়ালি
বানানে অনুস্বার সম্পর্কে
বাংলা ং এর উচ্চারন প্রায় ঙ এর মতো।তবে এটি কখনও স্বতন্ত্রভাবে উচ্চারিত হয় না এবং শব্দের শুরুতেও এটি বসে না............ সন্ধিতে" ম" এর বিকল্পে অনুস্বর>> পূর্বপদের অন্তে "ম" থাকলে এবং পরপদের প্রথমে ক, খ,গ,ঘ এর যে কোন বর্ণ থাকলে সন্ধির ফলে 'ম' স্থলে 'ং ' কিংবা বিকল্পে 'ঙ' বসে। যেমন ---অহম+কার=অহংকার, সম+কট=সংকট , কিম+কর=কিংকর, অলম+কার=অলংকার, ঝম+কার=ঝংকার, শম+কর=শংকর.........।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৯